আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হবিগঞ্জ-১ আসনে হেভিওয়েট দুই প্রার্থীর একজন ডাঃ মুশফিক হুসেন চৌধুরী। তিনি সংসদ সদস্য হওয়ার জন্য পূর্ণ মেয়াদের চার বছর আগেই ছেড়ে দিয়েছেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের পদ। আরেকজন, ২৮নং সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী; এই প্রার্থী আলোচনায় এসেছেন দীর্ঘদিন নির্বাচনী এলাকা ঘুরে।
এদিকে, নবীগঞ্জ-বাহুবল উপজেলা নিয়ে গঠিত আসনটিতে সংসদ সদস্য পদে ৮ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও মূল আলোচনায় মুশফিক এবং কেয়া। তাঁরা অর্থবিত্তে প্রায় সমানে সমান।
ডাঃ মুশফিক হুসেন চৌধুরীর বাৎসরিক আয় ২৯ লাখ ৩ হাজার ৮৯ টাকা এবং সবমিলিয়ে তিনি ৪ কোটি ১ লাখ ৮৪ হাজার ১১০ টাকা সম্পদের মালিক।
অপর প্রতিদ্বন্দ্বি আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরীর বাৎসরিক কোন আয় না থাকলেও তিনি এবং তাঁর স্বামীর হাতে রয়েছে ৪ কোটি ৭৯ লাখ ৫৩ হাজার টাকা মূল্যের সম্পদ।
নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া দুই প্রার্থীর হলফনামা বিশ্লেষণে এ তথ্য জানা গেছে। সে অনুযায়ী ডাঃ মুশফিকের শিক্ষাগত যোগ্যতা এমবিবিএস এবং কেয়া চৌধুরী স্নাতকোত্তর ডিগ্রী নিয়েছেন সমাজবিজ্ঞানে।
মুশফিক হোসেন চৌধুরী আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী; অন্যদিকে দলীয় টিকেট না পাওয়ায় কেয়া চৌধুরী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে নেমেছেন। হলফনামা অনুযায়ী জেলা পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যানের হাদে নগদ টাকার পরিমাণ ৫১ লাখ ৭৭ হাজার ৬৬৭ টাকা। আসবাবপত্র ৫০ হাজার, অন্যান্য আরও ৭৬ লাখ ৩৬ হাজার ৯৮০ টাকার সম্পদ রয়েছে। হবিগঞ্জ শহরে ডাঃ মুশফিকের একটি বাড়ির ক্রয়কালীন মূল্য ৩১ লাখ ১৭ হাজার ৫০০ এবং ঢাকায় আরেকটি বাড়ি করেছেন ২ কোটি ৫ লাখ ৬৮৬ টাকায়। হলফনামায় তিনি কোন গাড়ির কথা উল্লেখ করেননি।
তাঁর বাৎসরিক আয়ের মধ্যে রয়েছে, কৃষিখাতে ২৬ হাজার, বাড়ি/দোকান ভাড়া ১৯ লাখ ৪৪ হাজার ৮৯ টাকা, ব্যবসা থেকে ১ লাখ, চাকুরী খাতে ৫ লাখ ২০ হাজার এবং অন্যান্য আরও ৩ লাখ ১৩ হাজার টাকা। তবে কোন দেনার কথা উল্লেখ করেননি।
আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরীর কোন বাৎসরিক আয় নেই বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন এবং সম্পদের বর্ণনা দিয়েছেন স্বামীরসহ। সাবেক নারী এই সংসদ সদস্যের হাতে নগদ টাকার পরিমাণ ৬০ লাখ ২২ হাজার ১৯৮ টাকা, ৪০ ভরি স্বর্ণ এবং অন্যান্য আরও ২ লাখ ১৪ হাজার টাকা রয়েছে।
কেয়া চৌধুরীর ব্যাংকে জমা ১২ লাখ ৩৮ হাজার ১৫৯ টাকা, গাড়ির মূল্য ৩৪ লাখ ৭০ হাজার, স্বামীর সঞ্চয়পত্র ৫০ লাখ এবং কোম্পানীতে শেয়ার আরও ৭২ লাখ টাকার। যৌথভাবে ব্যাংকে রয়েছে আরও ৪২ লাখ ৮৩ হাজার ৭৪৫ টাকা।
তার মালিকানাধীন কৃষি জমির মূল্য ৭ লাখ ২০ হাজার টাকা এবং স্বামীর নামে রয়েছে আরও ১ লাখ ৪৭ হাজার টাকার কৃষি জমি। অকৃষি জমি কেয়া চৌধুরীর নামে ১ কোটি ১৩ লাখ ৫৬ হাজার ২৫০ টাকা মূল্যের এবং যৌথভাবে রয়েছে আরও ৮৩ লাখ ২ হাজার ৩৬ টাকার অকৃষি জমি। হলফনামা অনুযায়ী ডাঃ মুশফিকের নামে সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালতে একটি মামলা চলমান রয়েছে। তবে কেয়া চৌধুরীর বিরুদ্ধে কোন মামলা নেই।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হবিগঞ্জ-১ আসনে যারা আলোচিত প্রার্থী তাদের মধ্যে সম্পদের দিক থেকে পিছিয়ে আছেন সাবেক এমপি ও জাতীয়পার্টি মনোনিত প্রার্থী এমএ মুনিম চৌধুরী বাবু।
অন্যজন হলেন, বর্তমান সংসদ সদস্য গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজের সহোদর এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী গাজী মোহাম্মদ শাহেদ। এ দুজন উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছেন।
নির্বাচন কমিশনে দেওয়া হলফনামা অনুযায়ী গাজী শাহেদের একমাত্র বাৎসরিক আয়ের খাত ব্যবসা। সেখান থেকে তিনি প্রতি বছর ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা আয় করেন। তাঁর হাতে নগদ ৭ লাখ ১০ হাজার টাকা, স্বর্ণালকার ১ লাখ এবং আরও ১ লাখ ১০ হাজার টাকার আসবাবপত্র রয়েছে।
এদিকে, সাবেক এমপি মুনিম চৌধুরী বাবু কৃষি ও ব্যবসা খাত থেকে বাৎসরিক আয় দেখিয়েছেন ৫ লাখ ২৫ হাজার টাকা। তার হাতে নগদ ২০ লাখ, স্বর্ণালঙ্কার ১৫ ভরি, একটি বাড়ির মূল্য ৫ লাখ ৪০ হাজার, কৃষি জমি ২৭ একর, অকৃষি জমি ৬ কাঠা এবং তাঁর ৫০ লাখ টাকার একটি সঞ্চয় পত্র রয়েছে।
সাবেক এই জনপ্রতিনিধির নামে দুইটি মামলা থাকলেও সেগুলো আপোষগণ্যে প্রত্যাহার হয়েছে।
যাযাদি/ এস