সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

উপজেলা নির্বাচনে থাকতে পারেন বিএনপির নেতারা 

হাসান মোল্লা
  ১৭ জানুয়ারি ২০২৪, ১০:১৯

দলীয় সরকারের অধীনে সব ধরনের নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছে বিএনপি। সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করলেও আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়ে দলটি ইতিবাচক ঘোষণা দিয়ে সরাসরি দলীয় প্রতীকে অংশ না নিলেও দলের আগ্রহী নেতাদের বাধা দেওয়া হবে না। স্থানীয় সরকার (উপজেলা পরিষদ) আইন অনুযায়ী, উপজেলা পরিষদের মেয়াদ পরিষদের প্রথম সভা থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর। ওই পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্তির আগের ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান রয়েছে। সে অনুযায়ী, এর মধ্যে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ক্ষণ গণনা শুরু হয়েছে। এর আগে ২০১৯ সালের ১০ মার্চ নির্বাচন শুরু হয়ে পাঁচ ধাপে জুনে গিয়ে শেষ হয়।

সফলভাবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করার পর এরই মধ্যে স্থানীয় সরকারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রস্তুুতি নিতে শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামী সপ্তাহে এই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে। মার্চ মাসে শুরু হয়ে কয়েক দফায় এই নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলবে। মার্চে প্রথম দফায় ভোটগ্রহণ করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ। মঙ্গলবার বিকালে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ভবনে তিনি বলেন, রোজা শুরুর আগে প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হতে পারে।

অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, উপজেলার তালিকা পেয়েছেন। সেই অনুযায়ী কমিশন প্রস্তুত আছে। কমিশন সিদ্ধান্ত নিলে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন তফসিল ঘোষণা হতে পারে। কীভাবে করবে, ধাপে ধাপে নাকি একবারে এসব যদি সিদ্ধান্ত নেয়, ইসি সচিবালয় প্রস্তুত আছে। রোজা শুরু হওয়ার আগে হয়তো প্রথম ধাক্কার হতে পারে।

এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাতিলের দাবিতে এখনো আন্দোলনে থাকা বিএনপি আগামী মার্চে অনুষ্ঠিতব্য উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া না নেওয়া নিয়ে জনমনে ব্যাপক কৌতূহল আছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে বিএনপিতে দুই ধরনের মত আছে। তবে অংশগ্রহণের পক্ষে অধিকাংশ নেতকর্মী।

অংশ নেওয়ার পক্ষে থাকা নেতারা বলছেন, নির্বাচনে অংশ না নিলে মাঠপর্যায়ের হতাশাগ্রস্ত নেতাকর্মীরা অন্য দলে যোগ দিতে পারেন। ফলে দলের সাংগঠনিক শক্তি আরও দুর্বল হয়ে পড়বে। এছাড়া নির্বাচনে না গেলে রাজনৈতিকভাবেও ক্ষতির মুখে পড়তে পারে দল। আর বিপক্ষে থাকা নেতারা বলছেন, সংসদ নির্বাচন বর্জন করে এখন উপজেলা নির্বাচনে যাওয়া ঠিক হবে না। কারণ, নির্বাচনে গেলে নেতাকর্মীদের ওপর নতুন করে হামলা-মামলা বেড়ে যাবে। তাছাড়া, এই সরকারের অধীনে যে সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না তা বারবার প্রমাণিত। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তা প্রমাণিত হয়েছে। ফলে নির্বাচনে গিয়ে যেমন জয়লাভের কোনো সম্ভাবনা নেই, তেমনি সংসদ নির্বাচন পুনরায় অনুষ্ঠানের যে দাবি তোলা হয়েছে তা দুর্বল হয়ে পড়বে।

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে বিএনপির অবস্থান প্রসঙ্গে দলের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, বিএনপি কলঙ্কিত জাতীয় নির্বাচন বর্জনের আন্দোলনে আছে। এখন উপজেলা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করা না করা নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের তেমন কোনো আগ্রহ নেই্। ঘোষণা দিয়ে নির্বাচন বর্জন বা অংশ গ্রহণেরও কিছু নেই। এরপরেও কৌশলগত কোনো বিষয় থাকলে দলের নীতি নির্ধারণী ফেরাম আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।

একই বিষয়ে চেয়ারপানসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবেদিন ফারুক বলেন, এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারেনা তা ৭ জানুয়ারি প্রমাণিত হয়েছে। সিইসি জাতীয় নির্বাচনের দিনে ঘুম থেকে উঠে একবার ২৮, আরেকবার ৪১ শতাংশ ভোট পড়েছে বলের ঘোষণা দেয়। বাস্তবে ৪ শতাংশ ভোট পড়েছে। তাই তাদের ওপর আস্থা রাখার আর কোনো সুযোগ নেই। উপজেলা নির্বাচনে দলর অংশ নেবে কি নেবেনা সেই সিদ্ধান্ত বিএনপির নীতি নির্ধারণী ফোরাম নেবে। তবে তার ব্যক্তিগত মতামত হচ্ছে, কোনো অবস্থাতেই সরকার ও ইসির অধীনে নির্বাচনে অংশ নেওয়া উচিত নয়।

এ বিষয়ে বিএনপির প্রভাবশালী এক নেতা জানান, মঙ্গলবার রাতেও বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে চলমান রাজনীতি নিয়ে নেতারা কথা বলেছেন। সেখানে উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি ওঠে। অনেকে নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করেন।

এই নেতার মতে, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে এরই মধ্যে জেলার নেতাদের সঙ্গে কথা বলবেন দলের নীতি নির্ধারণী ফোরামের নেতারা। তাদের কাছ থেকে পাওয়া মতামত পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এতে দলের বিভিন্ন সূত্রে বলা হয়। ঘোষণা করি বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলেও দলের নেতারা ভোট করতে চাইলে দল বাধা দেবে না। যে কেউ ব্যক্তিগতভাবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন।

প্রসঙ্গত, সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবি আদায়ে ২০২২ সাল থেকে রাজপথে নামে বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো। দলটি ২০২১ সালের মার্চের পর থেকে সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেনি।

দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তৃণমূলের অনেক নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করে বিএনপি। এরমধ্যে ২০২২ সালে বিএনপি নেতা তৈমুর আলম খন্দকার ও মনিরুল হক সাক্কু নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে দল থেকে তাদের বহিষ্কারের ঘটনা ছিল উল্লেখযোগ্য।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে