সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পতনের কারণ পরকীয়া!

আকস্মিক কিন গ্যাংয়ের নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়া ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ খোয়ানোর বিষয়ে চীন সরকারের পক্ষ থেকে বিস্তারিত কিছুই জানানো হয়নি। এর আগে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একবার বলা হয়েছিল, 'শারীরিক কারণে' কিন গ্যাং জনসমক্ষে আসতে পারছেন না। আসলে কি তাই? তাহলে কেন তাকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হলো?
যাযাদি ডেস্ক
  ২৭ জুলাই ২০২৩, ০০:০০
কিন গ্যাং

সদ্য অপসারিত চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিন গ্যাং চীনের রাজনীতিতে উদীয়মান এক নক্ষত্র। প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং সরকারে প্রভাবশালী একজন ব্যক্তি তিনি। কিন্তু বছর না ঘুরতেই সেই উদীয়মান নক্ষত্র যেন আকাশ থেকে খসে পড়েছে। মঙ্গলবার তাকে সরিয়ে দিয়ে ওয়াং ই-কে নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী করা হয়েছে। তিনি এতদিন চীনের শীর্ষ কূটনীতিকের দায়িত্ব পালন করছিলেন।

গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হয়েছিলেন কিন গ্যাং। বছর না ঘুরতে তার চাকরি হারানোর ঘটনা বিশ্বজুড়ে শোরগোল ফেলেছে। তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কিন গ্যাং কার্যত নিখোঁজ। মাসখানেক ধরে জনসমক্ষে দেখা যাচ্ছে না তাকে। কোথাও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না তার।

আকস্মিক কিন গ্যাংয়ের নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়া ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ খোয়ানোর বিষয়ে চীন সরকারের পক্ষ থেকে বিস্তারিত কিছুই জানানো হয়নি। এর আগে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একবার বলা হয়েছিল, 'শারীরিক কারণে' কিন গ্যাং জনসমক্ষে আসতে পারছেন না। আসলে কি তাই? তাহলে কেন তাকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হলো? তাহলে কি অন্যকিছু। এমন কী তার অপরাধ, কেনইবা বর্ণাঢ্য পেশাজীবনের তুঙ্গে থাকা অবস্থায় এমন পরিণতি এসব নিয়েই এখন চলছে গুঞ্জন। গুঞ্জন রয়েছে, এক নারী টিভি উপস্থাপকের সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক বা পরকীয়ার জেরে পদ খুইয়েছেন কিন গ্যাং।

যদিও এই গুঞ্জন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছে, অকাট্য প্রমাণ নেই। যে নারীকে ঘিরে কিন গ্যাংয়ের সম্পর্কের গুঞ্জন ছড়িয়েছে, তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ সক্রিয় ছিলেন। এমন গুঞ্জনের পর তিনিও হঠাৎ 'অদৃশ্য' হয়ে গেছেন। ফলে গুঞ্জন আরও জোরালো হয়েছে।

সম্পর্ক ও নিরুদ্দেশ হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে চীনের বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করছেন, কিন গ্যাংয়ের এমন কর্মকান্ডকে কমিউনিস্ট পার্টিতে তার প্রতিদ্বন্দ্বীরা গুরুতর নৈতিক অবক্ষয় হিসেবে উপস্থাপন করছেন। মওকা মতো তারা কথিত নৈতিক অবক্ষয়ের ইসু্যটি ব্যবহার করেছেন। তাই কিন গ্যাংয়ের ওপর শাস্তির খড়্‌গ নেমে এসেছে।

বলা হচ্ছে, নারী টিভি উপস্থাপকের সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে কিন গ্যাং কোনো আইন লঙ্ঘন করেননি।

কিন্তু এমন কর্মকান্ড রাজনীতিতে শৃঙ্খলার লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। এ ছাড়া স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণেও লোকচক্ষুর আড়ালে থাকতে পারেন ৫৭ বছর বয়সি কিন গ্যাং। এসব কারণের কোনোটিই যেমন স্বীকার করে নেওয়া সম্ভব নয়, তেমনি খারিজ করার উপায়ও থাকে না।

অবাক করা বিষয় হলো, চীনের সর্বোচ্চ ক্ষমতা কেন্দ্রের সবচেয়ে কাছের মানুষ ছিলেন কিন গ্যাং। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার আগে তিনি ওয়াশিংটনে চীনের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। সেখান থেকে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং। এরপর তাকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী করা হয়। শি জিন পিংয়ের ঘনিষ্ঠ ছিলেন তিনি।

বিশ্লেষকদের অনেকেই কিন গ্যাংয়ের নাটকীয় উত্থানের দিকে নজর রাখছিলেন। কিন গ্যাং কত দ্রম্নত একজন 'উলফ ওয়ারিয়র' বা 'নেকড়ে যোদ্ধা' হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারেন, সেটাই ছিল দেখার বিষয়। চীনের একদল কূটনীতিককে 'নেকড়ে যোদ্ধা' বলা হয়। তারা চীনের পক্ষে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ সরব। সরকারের মুখপাত্র হিসেবে কিন গ্যাং দেশের প্রতিরক্ষা সক্ষমতার বিষয়ে জোরাল অবস্থান নিয়েছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের আগে যুক্তরাজ্যেও কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে কিন গ্যাংয়ের। তিনি সাবলীল ইংরেজি বলতে পারেন। ব্যক্তিজীবনে একজন ক্রীড়া অনুরাগী হিসেবে তিনি পরিচিত। যুক্তরাষ্ট্রে এনবিএ গেমসে তাকে শট নিতে দেখা গেছে। যুক্তরাজ্যে থাকাকালে আর্সেনালকে সমর্থন করতেন তিনি।

কমিউনিস্ট পার্টির কিছু মানুষ হয়তো ভাবতেন, 'নেকড়ে যোদ্ধা' হওয়ার জন্য এমন ব্যক্তি যোগ্য নন। তাই শুধু পদচু্যত নয়, বরং চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট থেকে কিন গ্যাংয়ের অস্তিত্ব মুছে ফেলা হয়েছে। একজন উদীয়মান নক্ষত্র থেকে পূর্ণাঙ্গ আলো ছড়ানোর আগেই খসে পড়লেন তিনি।

নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাশা

এদিকে চীনের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-এর সঙ্গে 'ভালোভাবে' কাজ করার প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি বিস্নঙ্কেন। বুধবার তিনি এই মন্তব্য করেছেন।

গত মঙ্গলবার চীনের শীর্ষ আইনপ্রণেতাদের ভোটাভুটিতে দেশটির শীর্ষ কূটনীতিক ওয়াং ই-কে নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এর আগে প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের স্বাক্ষরিত এক আদেশে পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিন গ্যাংকে সরিয়ে দেয় বেইজিং।

এর প্রতিক্রিয়ায় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি বিস্নঙ্কেন বলেন, 'আমি ওয়াং ই-কে এক দশকের বেশি সময় ধরে চিনি। আমি তার সঙ্গে বেশ কয়েকবার সাক্ষাৎ করেছি। আশা করছি, অতীতে যেমন করেছিলাম, তেমনি এখনো তার সঙ্গে ভালোভাবে কাজ করতে পারব।'

তবে চীনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদে হঠাৎ কেন এমন রদবদল, সে বিষয়ে কিছুই জানায়নি বেইজিং। বিস্নঙ্কেনও বিষয়টি নিয়ে কিছু বলতে চাননি। শুধু বলেছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদলে ফেলা চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়।

বিস্নঙ্কেন বলেন, 'দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক দায়িত্বশীলভাবে এগিয়ে নেওয়া আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাই পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদে যিনিই থাকুক না কেন, তার সঙ্গে আমরা কাজ করব।'

চীনের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিষয়ে বিস্নঙ্কেন আরও বলেন, 'কিন গ্যাং ওয়াশিংটনে চীনের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। তখন থেকেই তার সঙ্গে পরিচয় রয়েছে। আমি তার মঙ্গল কামনা করছি।'

নতুন দায়িত্ব পাওয়া ওয়াং ই আগেও চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। গত ডিসেম্বরে তাকে সরিয়ে দিয়ে কিন গ্যাংকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী করা হয়েছিল।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে