রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
লোকসভা থেকে বরখাস্ত

ঘটনার শেষ দেখে ছাড়বেন মহুয়া

যাযাদি ডেস্ক
  ১০ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০
তৃণমূল নেত্রী মহুয়া মৈত্র

বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছিল দুর্গাপূজার আগে, ১৫ অক্টোবর। তারপর সেই বিতর্ক নিয়ে ভারতের রাজ্য ও জাতীয় রাজনীতিতে কম 'জলঘোলা' হয়নি। 'অর্থের বিনিময়ে লোকসভায় প্রশ্ন' ঘিরে বিতর্কের জেরে শুক্রবার ভারতের তৃণমূল এমপি মহুয়া মৈত্রের সাংসদ পদ খারিজই হয়ে যায় লোকসভায়। ভোটাভুটিতে পাস হয় সরকার পক্ষের বহিষ্কারের প্রস্তাব। বহিষ্কারের পর মহুয়া বললেন, 'আমার বয়স ৪৯, আগামী ৩০ বছর পার্লামেন্টের ভেতরে ও বাইরে লড়ব।'

পূজার আগে তৃণমূল এমপি মহুয়ার বিরুদ্ধে সংসদে 'ঘুষের বিনিময়ে প্রশ্ন' তোলার অভিযোগ এনেছিলেন বিজেপি এমপি নিশিকান্ত দুবে। দুবাইয়ের ব্যবসায়ী দর্শন হীরানন্দানির কাছ থেকে উপহার ও নগদ অর্থ নিয়ে লোকসভায় আদানির বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলার অভিযোগ জানিয়ে পৃথকভাবে সিবিআই প্রধানকে চিঠি লেখেন জয় অনন্ত দেহাদ্রাই। তারপর থেকে এই বিতর্ক দেশটির রাজ্য ও জাতীয় রাজনীতিতে আলোচনার অন্যতম কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়।

তৃণমূল এমপি মহুয়ার বিরুদ্ধে অর্থ-উপহারের বিনিময়ে প্রশ্ন করার অভিযোগ তুলে লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লার কাছে চিঠি পাঠান বিজেপি এমপি দুবে। সেই চিঠিতে অবিলম্বে পশ্চিমবঙ্গের কৃষ্ণনগরের এমপির বিরুদ্ধে তদন্তের দাবি করা হয়। তার এমপি পদ কেড়ে নেওয়ারও আবেদন করা হয়। বিজেপি এমপির বক্তব্য ছিল, হীরানন্দানির কাছ থেকে 'ঘুষ' নিয়ে লোকসভায় আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে জুড়ে দিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন মহুয়া। একই সঙ্গে মহুয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে সিবিআই প্রধানকে চিঠি দেন আইনজীবী দেহাদ্রাই।

যদিও সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মহুয়া। কৃষ্ণনগরের তৃণমূল এমপির দাবি ছিল, বিজেপি এমপি ও সাবেক বন্ধুর তোলা অভিযোগ মিথ্যা। ২০২১ সালেও মহুয়ার এমপি পদ খারিজের দাবি তুলেছিলেন দুবে। এনেছিলেন স্বাধিকার ভঙ্গের অভিযোগও। নেপথ্যে ছিল দুবের 'হলফনামা'। ঝাড়খন্ডের গোড্ডা আসনের এমপি দুবের তরফে লোকসভা নির্বাচনের সময় জমা দেওয়া হলফনামায় যে শিক্ষাগত যোগ্যতার উলেস্নখ রয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন মহুয়া।

তাকে নিয়ে বিতর্ক যখন দানা বাঁধতে শুরু করেছে, তখনই বিবৃতি দেয় আদানি গোষ্ঠী। বলা হয়, তাদের 'নাম, সুখ্যাতি এবং বাজারের অবস্থান' নষ্ট করতে 'অনেকে বাড়তি কাজ করছেন'।

তৃণমূল এমপি মহুয়ার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ কতটা সত্যি, তা খুঁজে বের করতে লোকসভার স্পিকার 'এথিক্স কমিটি'কে দায়িত্ব দেন বিষয়টি খতিয়ে দেখার। তার মধ্যেই মহুয়ার বিরুদ্ধে নতুন অভিযোগ তোলেন বিজেপি এমপি দুবে। প্রত্যেক এমপির একটি করে 'লগ ইন আইডি' এবং পাসওয়ার্ড রয়েছে। লোকসভার সচিবালয়ে কিছু জানাতে গেলে তার মাধ্যমে জানাতে হয়। দুবের অভিযোগ ছিল, মহুয়া তার লগ ইন আইডি এবং পাসওয়ার্ড হীরানন্দানিকে দিয়েছিলেন। ওই ব্যবসায়ী দুবাইয়ে বসে প্রশ্ন লিখে দিতেন। যা দেশের নিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক বলেও অভিযোগ করেন বিজেপি এমপি।

এরপরই প্রকাশ্যে আসে দুবাইয়ের ব্যবসায়ী হীরানন্দানির 'হলফনামা'। স্বীকার করে নেওয়া হয়, তিনি মহুয়াকে ব্যবহার করে লোকসভায় আদানি গোষ্ঠী সম্পর্কিত প্রশ্ন তুলিয়েছিলেন। মহুয়া তাকে পার্লামেন্টের লগ ইন আইডি দিয়েছিলেন বলেও স্বীকার করেন হীরানন্দানি। মহুয়ার বিরুদ্ধে বিভিন্ন উপহার নেওয়ার যে অভিযোগ উঠেছে, তাও স্বীকার হয় হীরানন্দানির 'হলফনামা'য়। মহুয়ার অবশ্য দাবি ছিল, হীরানন্দানিকে জোর করে এই হলফনামা লেখানো হয়েছে। গোপন নথি কীভাবে প্রকাশ্যে এলো, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মহুয়া।

মহুয়া ২০ অক্টোবর জানান, সিবিআই বা লোকসভার এথিক্স কমিটি (যেখানে বিজেপির নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা রয়েছে) যদি ডাকে, তাদের জবাব দেবেন। শেষ পর্যন্ত লোকসভা থেকে বহিষ্কার হন তিনি। লোকসভা থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পরই পার্লামেন্টর বাইরে গর্জে ওঠেন মহুয়া। তিনি জানিয়েছেন, এ ঘটনার শেষ দেখে তিনি ছাড়বেন। আগামী ৩০ বছর লোকসভার ভেতরে ও বাইরে লড়াই করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তৃণমূলের বহিষ্কৃত এমপি। মহুয়ার পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতাও। সংবাদসূত্র : ইনডিয়ান এক্সপ্রেস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে