রোববার, ১২ মে ২০২৪, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১
হামাসের সঙ্গে সংঘাত

গাজা নিয়ে পরিকল্পনা প্রকাশ ইসরাইলের

গাজা পুনর্গঠনের কোনো দায়ভার নেবে না ইসরাইল গাজার অভ্যন্তরে অভিযান চালানোর অধিকার তাদের থাকবে
যাযাদি ডেস্ক
  ০৬ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
ইসরাইলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ত

ইসরাইল ও হামাসের মধ্যকার 'যুদ্ধ' শেষ হলে ভবিষ্যতে কীভাবে গাজা শাসন করা হবে, তার একটি পরিকল্পনা প্রকাশ করেছেন ইসরাইলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ত। তিনি বলেছেন, ওই এলাকায় ফিলিস্তিনি শাসন থাকবে সীমিত। হামাস আর গাজার নিয়ন্ত্রণে থাকবে না এবং ইসরাইল সার্বিক নিরাপত্তার নিয়ন্ত্রণে থাকবে। তিনি যখন এই পরিকল্পনা প্রকাশ করেছেন, তখন গাজায় লড়াই অব্যাহত রয়েছে। হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় এসব হামলায় কয়েক ডজন মানুষ মারা গেছেন। তথ্যসূত্র : বিবিসি, টাইমস অব ইসরাইল

গত মঙ্গলবার লেবাননের রাজধানী বৈরুতে হামাসের শীর্ষ নেতা সালেহ আল-আরুরির হত্যাকান্ডের পর কঠোর উত্তেজনার মধ্যেই এই খবর এলো। তার এই হত্যাকান্ডের জন্য ইসরাইলকে দায়ী করা হচ্ছে। ইসরাইল এই অভিযোগ স্বীকারও করেনি, আবার অস্বীকারও করেনি।

পরিকল্পনায় বাদ দেওয়া হয়েছে বিধ্বস্ত গাজা পুনর্গঠনের বিষয়টি। অর্থাৎ গাজা পুনর্গঠনের কোনো দায়ভার নেবে না ইসরাইল। নিজের এই প্রস্তাবের বিষয়ে ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ত জানিয়েছেন, তিনি ধরেই নিয়েছেন, গাজা থেকে হামাসকে নির্মূল করে ফেলবে ইসরাইল ও সংগঠনটি তাদের জন্য আর হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারবে না। তিনি আরও বলেন, গাজা সীমান্তে ইসরাইলি সশস্ত্র বাহিনীর উপস্থিতি বজায় থাকবে ও প্রয়োজনে যে কোনো সময় গাজার অভ্যন্তরে অভিযান চালানোর অধিকার তাদের থাকবে। এ বিষয়ে গ্যালান্ত সাংবাদিকদের বলেন, গাজাবাসী যেহেতু ফিলিস্তিনি, তাই ফিলিস্তিনিরাই গাজার শাসনে থাকবে। তবে শর্ত হবে, কোনো ধরনে ঝুঁকি বা হুমকি ইসরাইলের বিরুদ্ধে তৈরি করা যাবে না।'

গ্যালান্তের বর্তমান 'চতুর্মুখী' পরিকল্পনার আওতায় গাজার সার্বিক নিরাপত্তার নিয়ন্ত্রণও ইসরাইলের হাতে থাকবে। বহুজাতিক একটি বাহিনী ওই এলাকার পুনর্গঠনে কাজ করবে। কারণ ইসরাইলের বোমা হামলায় গাজায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পরিকল্পনার আওতায় প্রতিবেশী দেশ মিশরের একটি ভূমিকা থাকবে, তবে তা কী হবে, সেটি এখনো নির্ধারণ করা হয়নি।

এদিকে গাজার 'ভবিষ্যৎ' নিয়ে এই আলোচনায় নিয়ে ইসরাইলের মধ্যে গভীর মতভেদ দেখা দিয়েছে। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকারের কিছু কট্টর ডানপন্থি সদস্য বলেছেন, ফিলিস্তিনের নাগরিকদের গাজা ছেড়ে নির্বাসনে চলে যেতে বলা উচিত। আর ওই এলাকায় ইহুদি বসতি আবার গড়ে তোলা উচিত।

এদিকে বিতর্কিত এই প্রস্তাবকে 'চরমপন্থি' এবং 'অকার্যকর' বলে উলেস্নখ করে তা বাতিল করে দিয়েছে ওই এলাকার অন্য দেশগুলো, যাদের মধ্যে ইসরাইলের মিত্র দেশও রয়েছে। যদিও গ্যালান্তের প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় তার অন্য সহকর্মীদের আনা প্রস্তাবের তুলনায় বেশি বাস্তব সম্পন্ন বলে মনে করা হচ্ছে, তারপরও হয়তো এই প্রস্তাব বাতিল করে দেবেন ফিলিস্তিনি নেতারা। তারা বলছেন, এই বিধ্বংসী যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ওই এলাকা পরিচালনার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ গাজাবাসীর থাকা উচিত।

নেতানিয়াহু অবশ্য গাজা কীভাবে শাসন করা হবে, তা নিয়ে জনসম্মুখে এখনো কোনো মন্তব্য করেননি। তিনি বলেছেন, হামাসকে নিশ্চিহ্ন করার অঙ্গীকার নিয়ে শুরু হওয়া গাজার এই যুদ্ধ এখনো কয়েক মাস ধরে চলতে পারে।

গ্যালান্তের পরিকল্পনায় আরও বলা হয়েছে, গাজায় পরবর্তী ধাপের যুদ্ধে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী কীভাবে এগিয়ে নেবে, সেই লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী-আইডিএফ গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলে আরও সুনির্দিষ্ট পদ্ধতিতে এগিয়ে যাবে। সেখানে অভিযান চালানোর পাশাপাশি সুড়ঙ্গ ধ্বংস করা এবং বিমান ও স্থল হামলা চালানো হবে। দক্ষিণাঞ্চলে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী হামাসের নেতাদের খোঁজ পেতে এবং বন্দিদের উদ্ধারে চেষ্টা অব্যাহত রাখবে।

অন্যদিকে বৃহস্পতিবার আইডিএফ বলেছে, গাজার উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের গাজা শহর ও খান ইউনিস শহরে হামলা চালিয়েছে তারা। বলেছে, তারা 'সন্ত্রাসী অবকাঠামোগুলোতে' হামলা চালিয়েছে এবং কথিত জঙ্গিদের হত্যা করেছে। তাদের দাবি, ওই ব্যক্তিরা সেনাদের পাশেই বিস্ফোরক ঘটানোর চেষ্টা করছিল। বিমান হামলার মাধ্যমে ইসলামিক জিহাদের সদস্য মামদুহ লোলোকে হত্যা করার দাবিও করেছে তারা।

গাজায় থাকা হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, উপত্যকাজুড়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ১২৫ জন নিহত হয়েছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, খান ইউনিসের পশ্চিমে আল-মাওয়াসি এলাকায় ইসরাইেল বিমান হামলায় ৯ শিশুসহ ১৪ জন নিহত হয়েছেন। তবে হামাসের এই দাবির বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি ইসরাইল।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে