সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্বে পশ্চিমা দেশগুলোর প্রভাব কমছে!

যাযাদি ডেস্ক
  ০৬ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
সাম্প্রতিক সাফল্য সত্ত্বেও রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ ইউক্রেনের পক্ষে আসেনি

আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক মঞ্চে গত এক বছরে বেশ কিছু বাধা বিপত্তির মুখোমুখি হয়েছে আমেরিকা, ইউরোপ এবং অন্য পশ্চিমা শক্তিশালী গণতান্ত্রিক দেশগুলো। এখন পর্যন্ত এই বিপত্তি চরম বিপর্যয়ের আকার না নিলেও দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা আমেরিকা নিয়ন্ত্রিত পশ্চিমা মূল্যবোধের প্রভাব বলয় থেকে ক্ষমতার ভারসাম্যের পরিবর্তনের দিকেই ইঙ্গিত দিচ্ছে। একাধিক ক্ষেত্রে পশ্চিমা স্বার্থের ঠিক বিপরীতে হাওয়া বইছে। দেখে নেওয়া যাক, কেন এই পরিবর্তন আর এর ভবিষ্যতই বা কী?

ইউক্রেন যুদ্ধ

কৃষ্ণ সাগরে সাম্প্রতিক কিছু সাফল্য পাওয়া সত্ত্বেও রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ ইউক্রেনের পক্ষে যায়নি। অর্থাৎ যুদ্ধ যদি আরও চলতে থাকে, তাহলে তা ন্যাটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠবে। এরই মধ্যে তারা (ন্যাটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন) এই যুদ্ধ চালাতে ইউক্রেনের অর্থনীতিকে লাখ লাখ ডলার ঢেলেছে।

অথচ গত বছর এই সময় পর্যন্তও ন্যাটো ইউক্রেনের বিষয়ে বেশ আশাবাদী ছিল। তারা ভেবেছিল, আধুনিক যুদ্ধাস্ত্র এবং পশ্চিমা প্রশিক্ষণ পেলে ইউক্রেনের সেনারা রাশিয়াকে হারিয়ে তাদের দখলে থাকা অংশ ফিরিয়ে আনতে পারবে, ঠিক যেমনটা আগে পেরেছিল। তবে বলা বাহুল্য, ইউক্রেনের পক্ষে তা সম্ভব হয়নি। সব সমস্যার মূলে ছিল সময় নির্ধারণের বিষয়টি।

ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো যুক্তরাজ্যের 'চ্যালেঞ্জার-২' এবং জার্মানির 'লেপার্ড-২'-এর মতো অত্যাধুনিক ট্যাংক ইউক্রেনে পাঠানোর সাহস আদৌ দেখাবে কি-না, তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতেই অনেকটা সময় চলে গিয়েছিল। এর পেছনে ছিল একটাই আশঙ্কা। যদি তাদের এই পদক্ষেপ প্রেসিডেন্ট ভস্নাদিমির পুতিনকে প্রতিশোধ নিতে প্ররোচনা জোগায়। যদিও শেষ পর্যন্ত পশ্চিমারা ট্যাংক সরবরাহ করেছিল এবং প্রেসিডেন্ট পুতিন কিছু করেননি। তবে বেশ কিছুটা সময় চলে যাওয়ার পর যখন জুন মাসে যুদ্ধের জন্য তারা প্রস্তুত হয়েছে, ততদিনে রাশিয়ার কমান্ডাররা মানচিত্র পর্যবেক্ষণ করে সঠিকভাবে অনুমান করে ফেলেছেন, ইউক্রেন ঠিক কোন্‌ দিক থেকে জোরালো চেষ্টা চালাবে। রাশিয়া আন্দাজ করতে পেরেছিল, ইউক্রেন জাপোরিঝিয়া ওবলাস্ত হয়ে আজোভ সাগরের দিকে দক্ষিণে এগোতে চায়। তারা এটাও অনুমান করতে পেরেছিল, ইউক্রেন চাইছে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা বু্যহের মধ্যে দু'টি ভাগ করে ফেলতে এবং মূল ভূখন্ড থেকে ক্রিমিয়াকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে।

২০২২ সালে কিয়েভ দখল করতে রুশ সেনাবাহিনী বিফল হলেও তাদের প্রতিরক্ষা ক্ষমতা এখনো নজিরবিহীন। ইউক্রেনের সেনাবাহিনী ২০২৩ সালের প্রথমার্ধে যুক্তরাজ্য ও অন্য জায়গায় বিশেষ প্রশিক্ষণ নিতে আর যুদ্ধের জন্য ট্যাংকগুলোকে পূর্ব থেকে সম্মুখ সমরে পাঠাতে যে সময় নিয়েছে, ততদিনে রাশিয়া আধুনিক ইতিহাসের সবচেয়ে বড় এবং দীর্ঘ বিস্তৃত প্রতিরক্ষামূলক বূ্যহ তৈরি করে ফেলেছে। ইউক্রেনের পরিকল্পনা ব্যর্থ করতে অ্যান্টি-ট্যাংক মাইন, অ্যান্টি-পার্সোনাল মাইন, বাংকার, খাদ, ট্যাংক ফাঁদ, ড্রোন এবং আর্টিলারি মজুত করে রাশিয়া ততদিনে যুদ্ধের জন্য তৈরি। ফলে ইউক্রেনের বহুল আলোচিত পাল্টা আক্রমণ ব্যর্থ হয়।

ফলে সবমিলিয়ে ইউক্রেন ও পশিমাদের সমীকরণ ভুল দিকে যাচ্ছে। ইউক্রেনের গোলাবারুদ ও সেনা সংকট দেখা দিয়েছে। একদিকে ইউক্রেনকে সাহায্য করতে হোয়াইট হাউসের ছয় হাজার কোটি ডলারের সামরিক সহায়তার প্রচেষ্টাকে আটকে রেখেছে কংগ্রেস। অন্যদিকে হাঙ্গেরি আটকে রেখেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পাঁচ হাজার কোটি ইউরোর তহবিল। এর মধ্যে একটি বা দু'টি সহায়তা প্যাকেজই হয়ত শেষ পর্যন্ত সবুজ সংকেত পেয়ে যেতে পারে। কিন্তু তাতে হয়তো ইউক্রেনের জন্য অনেকটা দেরি হয়ে যাবে। এরই মধ্যে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীকে রণকৌশল বদলে প্রতিরক্ষামূলক পন্থা নিতে হয়েছে।

মস্কোর অর্থনীতি কিন্তু যুদ্ধের বিষয়টাকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। রাশিয়া তাদের বাজেটের এক-তৃতীয়াংশ প্রতিরক্ষায় ব্যয় করেছে ইউক্রেনের ফ্রন্ট লাইনে হাজার হাজার সেনা মোতায়েন করতে আর বিপুল পরিমাণ ক্ষেপণাস্ত্রের ওপর। স্বাভাবিকভাবেই এই পরিস্থিতি ইউক্রেনের জন্য খুবই হতাশাজনক। তারা ভেবেছিল, এতদিনে হয়ত যুদ্ধের ফল তাদের পক্ষে হবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, পশ্চিমাদের কাছে কেন এটা গুরুত্বপূর্ণ?

এটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ ভস্নাদিমির পুতিন, যিনি ব্যক্তিগতভাবে প্রায় দুই বছর আগে এই আক্রমণের আদেশ দিয়েছিলেন। বিজয় ঘোষণা করার জন্য যে অঞ্চল রাশিয়া দখল করেছে (ইউক্রেনের প্রায় ১৮ শতাংশ), শুধুমাত্র সেটা ধরে রাখতে হবে। ন্যাটো তার মিত্রপক্ষ ইউক্রেনকে সমর্থন করতে অস্ত্রাগার খালি করে দেওয়ার পাশাপাশি যুদ্ধের জন্য আর যা যা প্রয়োজন সবই করেছে। তবে রাশিয়ার 'আগ্রাসন'কে প্রতিহত করতে ন্যাটোর এই প্রচেষ্টা হয়ত 'বিব্রতকর ব্যর্থতায়' পরিণত হতে পারে।

এদিকে বাল্টিক রাষ্ট্র এস্তোনিয়া, লাটভিয়া ও লিথুয়ানিয়ার মতো ন্যাটোর সদস্য দেশগুলো নিশ্চিত যে, ভস্নাদিমির পুতিন যদি ইউক্রেনে সফল হতে পারেন, তাহলে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে তাদের (ন্যাটোর অন্তর্গত ওই তিনটি দেশ) দিকেও ধেয়ে আসবে। অপরদিকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভস্নাদিমির পুতিন 'ওয়ান্টেড'-এর তালিকায় রয়েছেন। দ্য হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত এবং তার শিশু অধিকার কমিশনার ইউক্রেনীয় শিশুদের বিরুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ২০২৩ সালের মার্চ মাসে তাকে অভিযুক্ত করেছে। পশ্চিমারা আশা করেছিল, এরপর হয়তো আন্তর্জাতিক স্তরে পুতিনকে 'একঘরে' করে দেওয়া যাবে। একই সঙ্গে, গ্রেপ্তার এবং দ্য হেগে নির্বাসনের ভয়ে তিনি নিজের দেশেই সীমাবদ্ধ থাকবেন। তবে তা হয়নি। এই অভিযোগের পর থেকে প্রেসিডেন্ট পুতিন বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করেছেন। কিরগিজিস্তান, চীন, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরবে তিনি সমাদরও পেয়েছেন। দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিক্সের শীর্ষ সম্মেলনেও ভার্চুয়ালি অংশ নিয়েছেন তিনি।

মনে করা হয়েছিল, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) জারি করা একের পর এক নিষেধাজ্ঞা রাশিয়ার অর্থনীতিকে প্রায় ভেঙে ফেলবে, যা পুতিনকে 'আগ্রাসন' প্রত্যাহার করতে বাধ্য করবে। তবে রাশিয়া যে এই নিষেধাজ্ঞাগুলো মোকাবিলা করতে সক্ষম, তা প্রমাণ করে দিয়েছে। তারা চীন ও কাজাখস্তানের মতো অন্যান্য দেশের মাধ্যমে বিভিন্ন পণ্যও সংগ্রহ করেছে। এটা ঠিক যে, পশ্চিমারা নিজেদের সরিয়ে নিলেও, মস্কো তেল ও গ্যাসের গ্রাহক হিসেবে অন্যদের পেয়েছে। বাস্তবে দেখা গেছে, ইউক্রেনে পুতিনের 'আগ্রাসন ও দখলের' সময় দেখানো নৃশংসতা পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে ঘৃণ্য হলেও বাকি বিশ্বের কাছে তা মোটেই তেমনটা নয়। অনেক দেশ এটাকে ইউরোপের সমস্যা হিসেবে দেখছে। কেউ আবার বলছে, রাশিয়াকে উসকানোর জন্য ন্যাটোই দায়ী। এই দেশগুলো অবশ্য রাশিয়ার সেনাবাহিনীর অত্যাচার ও হেনস্তার পর ইউক্রেনের যে অবস্থা হয়েছে, সেদিকে বিশেষ নজর দেয়নি।

ফিলিস্তিনের গাজা

সম্প্রতি রিয়াদে এক শীর্ষ সম্মেলনে আরব দেশের মন্ত্রীরা বলেন, পশ্চিমা দেশগুলো দ্বিচারী। তারা বলেন, তোমাদের সরকার সব ভন্ড। কী আশা করেন- আমরা ইউক্রেনে বেসামরিক নাগরিকদের হত্যার জন্য রাশিয়ার নিন্দা করব, যেখানে আপনারা গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রত্যাখ্যান করেছেন। সেখানেও তো হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিককে মারা হচ্ছে।

ইসরাইল-হামাস সংঘাত স্পষ্টতই গাজার সব বাসিন্দার ওপরই চালানো হচ্ছে। গত ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরাইলে হামাসের প্রাণঘাতী আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত ইসরাইলিদের জন্য বিরাট বিপর্যয়। পশ্চিমাদের জন্যও এই যুদ্ধ ক্ষতিকারক। এই যুদ্ধ বিশ্বের মনোযোগ ন্যাটোর মিত্র গোষ্ঠী ইউক্রেনের ওপর থেকে সরিয়ে নিয়েছে। রাশিয়ার আগ্রাসন থামাতে ইউক্রেন এখন হিমশিম খাচ্ছে। কিয়েভ থেকে মার্কিন সামরিক সহায়তা সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত আবার ইসরাইলের পক্ষে গেছে। কিন্তু বিশ্বের অনেক মুসলিম এবং অন্যদের দৃষ্টিতে আমেরিকা ও যুক্তরাজ্যকে গাজার ধ্বংসাত্মক পরিণতির অংশীদার বলেও অভিযোগ তুলেছে। কারণ তারা ইসরাইলকে জাতিসংঘে সুরক্ষা দিয়েছে।

যুদ্ধ এরই মধ্যে দক্ষিণ লোহিত সাগরে ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে ইরান সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা বেশ কিছু জাহাজে বিস্ফোরক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। ফলে পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে, কারণ বিশ্বের প্রধান শিপিং সংস্থাগুলো তাদের যাত্রাপথ আফ্রিকার দক্ষিণ প্রান্ত দিয়ে ঘুরিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে।

ইরান

ইরানকে নিয়ে আশঙ্কা করা হচ্ছে, তারা গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে। এই অভিযোগ যদিও তারা অস্বীকার করেছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমাদের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও ইরানকে একঘরে করা সম্ভবই হয়নি বরং ইরাক, সিরিয়া, লেবানন, ইয়েমেন ও গাজা জুড়ে 'প্রক্সি মিলিটারি' মোতায়েনের মাধ্যমে নিজেদের সামরিক ঘাঁটি প্রসারিত করেছে, যাকে তারা অর্থ জোগায়, প্রশিক্ষণ দেয় এবং অস্ত্র সরবরাহও করে।

ইরান ২০২৩ সালে মস্কোর সঙ্গে একটি ঘনিষ্ঠ জোট তৈরি করেছে, যা স্পষ্টতই ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে ড্রোন হামলা চালানোর জন্য বিশাল ভান্ডারের জোগান দেবে। গাজায় যুদ্ধের কারণে ইরান কিছুটা উপকৃত হয়েছে। তারা এখন মধ্যপ্রাচ্যে নিজের জায়গা তৈরি করতে পেরেছে।

আফ্রিকার সাহেল

পশ্চিম আফ্রিকার সাহেল অঞ্চলে একের পর এক দেশ সামরিক অভু্যত্থানের কাছে নতি স্বীকার করছে। ফলে ইউরোপীয় বাহিনীকে ওই অঞ্চল থেকে বের হয়ে যেতে হয়েছে। ওই অঞ্চলগুলোতে জিহাদি বিদ্রোহ মোকাবিলা করতে সাহায্য করছিল ইউরোপীয় বাহিনী। মালি, বুরকিনা ফাসো ও মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রের সাবেক ফরাসি উপনিবেশগুলো এরই মধ্যে ইউরোপীয়দের বিরুদ্ধে চলে গেছে। এর কারণ গত জুলাই মাসে আরেকটি সামরিক অভু্যত্থানের সময় নাইজারে পশ্চিমাপন্থি প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতাচু্যত করা হয়। এরই মধ্যে ফরাসি সেনারা দেশ ছেড়ে চলে গেছে। যদিও দু'টি ঘাঁটিতে এখনো ৬০০ মার্কিন সেনা রয়ে গেছে। ফরাসি ও আন্তর্জাতিক বাহিনীর পরিবর্তে ওয়াগনার গোষ্ঠীর ভাড়াটে রাশিয়ান সেন্যরা এসেছে। গত আগস্টে একটি বিমান দুর্ঘটনায় ওয়াগনার প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোজিনের রহস্যজনক মৃতু্য সত্ত্বেও তার লাভজনক ব্যবসায়িক চুক্তিগুলো ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে এই গোষ্ঠী। এদিকে দক্ষিণ আফ্রিকা, যাকে এক সময় পশ্চিমাদের মিত্র হিসেবে মনে করা হতো, তারা রাশিয়া ও চীনের যুদ্ধজাহাজের সঙ্গে যৌথ নৌ-মহড়া চালিয়ে যাচ্ছে।

উত্তর কোরিয়া

নিষিদ্ধ পারমাণবিক অস্ত্র ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির কারণে ডেমোক্রেটিক পিপলস রিপাবলিক অব কোরিয়ার কঠোর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকার কথা। তবে গত বছর তারা রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। এরই মধ্যে কিম জং-উন রাশিয়ার একটি স্পেসপোর্ট পরিদর্শন করেছেন, এরপরই উত্তর কোরিয়া ইউক্রেনে যুদ্ধরত রুশ বাহিনীর কাছে ১০ লাখ আর্টিলারি শেল পাঠিয়েছে। অন্যদিকে, উত্তর কোরিয়া বেশ কয়েকটি আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে। এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো আমেরিকার বেশিরভাগ অংশে আঘাত হানতে সক্ষম বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

চীন

সান ফ্রান্সিসকোয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মধ্যে একটি সফল শীর্ষ বৈঠকের পর বেইজিং ও ওয়াশিংটনের মধ্যে সমস্যা কিছুটা কমেছে। কিন্তু চীন দক্ষিণ চীন সাগরের বেশিরভাগ অংশের ওপর তাদের দাবি থেকে সরে আসার কোনো লক্ষণ দেখায়নি। বরং তারা একটা নতুন 'স্ট্যান্ডার্ড' মানচিত্র জারি করেছে, যা এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় বেশ কয়েকটি দেশের উপকূলরেখা পর্যন্ত বিস্তৃত। পাশাপাশি তাইওয়ানের ওপর তাদের দাবিও চীন ছাড়েনি। প্রয়োজনে বল প্রয়োগ করে ফিরিয়ে নেওয়ার অঙ্গীকারও করেছে তারা। এই হতাশাজনক পরিস্থিতিতে পশ্চিমা দেশগুলোর পক্ষে আশার আলো দেখা সম্ভবত কঠিন।

কিন্তু পশ্চিমা দেশগুলোর পক্ষে যে বিষয়টি রয়েছে, তা হলো- ইউক্রেনে রাশিয়ার 'আগ্রাসন' বন্ধ করতে গিয়ে ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো তাদের প্রতিরক্ষামূলক লক্ষ্য আরও একবার আবিষ্কার করেছে। পশ্চিমা ঐকমত্য অনেককে বিস্মিত করেছে; যদিও এতে কিছুটা ফাটল দেখা দিতে শুরু করেছে।

তবে এ বিষয়ে উন্নতির সর্বাধিক সম্ভাবনা রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যে। এর আংশিক কারণ হলো, গাজা-ইসরাইল সীমান্তের দুই পাশে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ঘটনা। ভবিষ্যতের ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের বিষয়ে তোলা প্রশ্নের সমাধান ৭ অক্টোবরের আগে প্রায় পরিত্যাগ করা হয়েছিল।

ইসরাইল ভেবেছিল, নিরাপত্তা ব্যবস্থার মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের সমস্যার সমাধান হতে পারে এবং এর জন্য পৃথক রাষ্ট্রের প্রয়োজন নেই। এই ধারণা কিন্তু এরই মধ্যে মারাত্মক ত্রম্নটিপূর্ণ বলে প্রমাণিত হয়েছে। একাধিক আন্তর্জাতিক নেতা বলেছেন, ফিলিস্তিনিরা যদি শান্তি ও নিরাপত্তার মধ্যে বসবাস করতে না পারে, তাহলে ইসরাইলের পক্ষেও সেটা সম্ভব হবে না। এই সমস্যার ন্যায়সঙ্গত সমাধান খুঁজে পাওয়া বেশ কঠিন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যদি এটা সফল হয়, তবে উভয় পক্ষকেই 'কষ্টদায়ক সমঝোতা' এবং আত্মত্যাগের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। কিন্তু এখন অন্তত এটা বিশ্বের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পেরেছে, সেটা প্রায় নিশ্চিত। তথ্যসূত্র : বিবিসি নিউজ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে