মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১
জাতিসংঘের বিবৃতি

বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে গাজা

জনগণ অস্তিত্বের জন্য প্রতিদিন হুমকি প্রত্যক্ষ করছে, আর বিশ্ব তা তাকিয়ে দেখছে রাতভর হামলায় ২২ জন নিহত গাজার লড়াই ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে তৎপর আমেরিকা-ইউরোপ
যাযাদি ডেস্ক
  ০৭ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
রাতভর ইসরাইলি হামলায় অবরুদ্ধ গাজায় ইসরাইলি বিমান হামলায় নিহতদের মরদেহ ধরে আহাজারি করছেন স্বজনরা। ছবিটি শনিবার দক্ষিণ গাজার দেইর আল-বালাহ’র আকসা হাসপাতাল থেকে তোলা ---------- আল-জাজিরা

জাতিসংঘের মানবিক সংস্থার প্রধান মার্টিন গ্রিফিথস শুক্রবার বলেছেন, ইসরাইলি বাহিনীর অবিরাম বোমা হামলায় গাজা 'বসবাসের অযোগ্য' হয়ে পড়েছে। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, '৭ অক্টোবরের পর থেকে তিন মাসে ভয়াবহ হামলায় গাজা মৃতু্য ও হতাশার স্থানে পরিণত হয়েছে। জনগণ তাদের অস্তিত্বের জন্য প্রতিদিন হুমকি প্রত্যক্ষ করছে এবং বিশ্ব তা তাকিয়ে দেখছে। মানবিক সহায়তাকারী গ্রম্নপগুলোর কাছে দুই মিলিয়নের বেশি লোককে সহযোগিতা দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ায় তারা মিশন ছেড়ে যাচ্ছে।' তথ্যসূত্র : এএফপি, বিবিসি, রয়টার্স, আল-জাজিরা গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলের সীমান্তে প্রবেশ করে আকস্মিক হামলা চালায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এরপরই গাজায় পাল্টা আক্রমণ শুরু করে ইসরাইল। গত তিন মাস ধরে গাজার বিভিন্ন স্থানে ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় সাড়ে ২২ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে অধিকাংশই নারী এবং শিশু। গ্রিফিথস বলেন, গাজার সব জায়গাই এখন বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। সেখানকার সাধারণ মানুষ টিকে থাকার জন্য প্রতিদিন নানা রকমের হুমকির মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। অপরদিকে, বিশ্ব শুধু এই দৃশ্য বসে বসে দেখছে। মানবাধিকার সংস্থার এই প্রধান কর্মকর্তা বলেন, ২০ লাখের বেশি মানুষকে সহায়তার এক জটিল দায়িত্ব তাদের হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এদিকে, দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনিস শহর, রাফাহ ও মধ্য গাজার কিছু অংশে রাতভর বিমান হামলায় কমপক্ষে ২২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা 'ওয়াফা নিউজ এজেন্সি' জানিয়েছে, শনিবার সকালে গাজার মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত দেইর আল-বালাহ'র আল-হাকার এলাকা এবং দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনিস শহরের আল-মানারার দুটি বাড়িতে বিমান হামলা চালানো হয়। স্থানীয় বেশ কয়েকটি সূত্রের বরাত দিয়ে ওয়াফার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খান ইউনিসের আল-মানারার একটি বাড়িতে হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি সেনারা। এতে কমপক্ষে ১০ জন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে অধিকাংশই নারী এবং শিশু। হামলায় আহতদের খান ইউনিসের ইউরোপীয়ান হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। অপরদিকে, দেইর আল-বালাহ শহরের একটি বাড়িতে ইসরাইলি হামলায় আরও তিনজন নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন আরও বেশ কয়েকজন। শুক্রবার সকাল থেকে এখন পর্যন্ত গাজার মধ্যাঞ্চলে কয়েক দফা হামলায় ৩৫ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৬০ জন। একই দিন গাজার নুসেইরাত, মাঘাজি ও বুরেজ শরণার্থী শিবিরসহ বেশ কিছু জায়গায় হামলা চালায় দখলদার ইসরাইলি বাহিনী। গাজার লড়াই ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে তৎপর আমেরিকা-ইউরোপ ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে ইসরাইলের যুদ্ধ গাজা ভূখন্ডের বাইরে ফিলিস্তিনের ইসরাইল অধিকৃত পশ্চিম তীর, লেবানন ও লোহিত সাগরের জাহাজ চলাচল জলপথে ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে নতুন কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করেছে আমেরিকা ও ইউরোপ। এ উদ্দেশে কূটনৈতিক চাপ তৈরি করতে শুক্রবার থেকে মধ্যপ্রাচ্য সফর শুরু করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি বিস্নংকেন ও ইউরোপের জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক জোসেপ বোরেল। সপ্তাহব্যাপী এ সফরের শুরুতে শুক্রবার তুরস্ক গিয়েছিলেন বিস্নংকেন। তুরস্ক গাজা যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়া রোধ করার বিষয়ে মধ্যস্থতা করার প্রস্তাব দিয়েছে। সফরে বিস্নংকেন ইসরাইল, জর্ডান, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব ও মিশর যাবেন। গাজায় সংঘাত শুরুর পর এটি মধ্যপ্রাচ্যে বিস্নংকেনের চতুর্থ সফর। ইসরাইল-হামাস সংঘাত আঞ্চলিক সংঘাতে ছড়িয়ে পড়তে পারে এমন আশঙ্কা কমানোর বিষয়ে এই সফরে আলোচনা করা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গাজায় ইসরাইলের সামরিক অভিযান এবং লোহিত সাগর, লেবানন, ইরান ও ইরাকে সম্প্রতি হামলার কারণে আন্তর্জাতিক সমালোচনা বেড়েই চলেছে। পশ্চিম তীরে ইসরাইলি বসতির সংখ্যা বেড়েছে এদিকে, গাজা উপত্যকায় সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে দখলকৃত পশ্চিম তীরে ইসরাইলি নতুন বসতির সংখ্যা অনেক বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ইসরাইলি গ্রম্নপ 'পিস নাউ' এক প্রতিবেদনে বলেছে, ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে পশ্চিম তীরে ৯টি ফাঁড়ি দেখা গেছে। গাজায় লড়াই শুরু হওয়ার পর থেকে পশ্চিম তীরে সহিংসতাও অনেক বেড়ে গেছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে