বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১
প্রার্থী একজনই

ভোট দিয়ে করতে হয় উলস্নাস!

ভোটার যখন ভোটকেন্দ্রে ঢুকবেন তখন তার হাতে একটি ব্যালট পেপার ধরিয়ে দেওয়া হয়। আর ব্যালট পেপারে একটাই নাম থাকবে। সেখানে কোনো কিছু লিখতে হবে না। কোনো বাক্সে টিক চিহ্নও থাকবে না। ভোটার শুধু ব্যালট পেপারটি নিয়ে একটি বাক্সে ভরে দেবেন। ব্যাস্‌ হয়ে গেল ভোট দেওয়া!
যাযাদি ডেস্ক
  ০৭ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
নিজেকেই ভোট দিচ্ছেন কিম -ফাইল ছবি

বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত দেশের একটি উত্তর কোরিয়া। এশিয়ার এই দেশটি সম্পর্কে মানুষের কৌতূহল অনেক। যদিও দেশটির বেশিরভাগ খবরই জানা যায় না। সেখানে একচেটিয়া রাজত্ব চলে নেতা কিম জং-উনের। দেশটিতে কীভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তা নিয়ে 'বিবিসি'সহ আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো কয়েক বছর আগে খবর প্রকাশ করেছিল। সর্বশেষ দেশটিতে ২০১৯ সালে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে ভোট পড়ে ১০০ শতাংশ। প্রেসিডেন্ট কিম জং-উন ক্ষমতা গ্রহণের পর দ্বিতীয়বারের মতো ওই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

দেশটির আজব রীতি হলো- নির্বাচনে প্রার্থী থাকেন একজনই। ভোটারদের ভোট দেওয়া বাধ্যতামূলক। আর একটি ব্যালটে ভোট দিয়েও করতে হয় উলস্নাস! ভোট না দিলে সেখানে হতে পারে জেল-জরিমানা।

উত্তর কোরিয়ার পার্লামেন্টের আনুষ্ঠানিক নাম 'সুপ্রিম পিপলস্‌ অ্যাসেমবিস্ন' (এসপিএ) এবং এতে ভোটদান বাধ্যতামূলক। সরকারি তালিকার বাইরে এতে অন্য কোনো প্রার্থী বেছে নেওয়ার সুযোগ থাকে না। বিরোধী দল বলেও কিছু নেই। এই ধরনের নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতির হার শতভাগ। সরকার যে জোট তৈরি করবে, সেই জোটকেই সর্বসম্মতভাবে ভোট দিতে হবে।

উত্তর কোরিয়া সারা বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন। কিম পরিবার বংশপরম্পরায় এই দেশটি শাসন করছে। শাসক পরিবার ও ক্ষমতাসীন নেতার প্রতি সম্পূর্ণ আনুগত্য দেখানো প্রত্যেক নাগরিকের জন্য বাধ্যতামূলক।

যেভাবে হয় ভোট

উত্তর কোরিয়ায় ১৭ বছর বয়সের ওপর সব নাগরিককে ভোট দিতে হয়। উত্তর কোরীয় বিষয়ক একজন বিশেষজ্ঞ ফিয়োদর টার্টিস্কি দেশটির নির্বাচন নিয়ে বলেন, 'আনুগত্যের প্রমাণ হিসেবে আপনাকে খুব ভোরে নির্বাচন কেন্দ্রে হাজির হতে হবে।' ভোটার যখন ভোটকেন্দ্রে ঢুকবেন, তখন তার হাতে একটি ব্যালট পেপার ধরিয়ে দেওয়া হয়। আর ব্যালট পেপারে একটাই নাম থাকবে। সেখানে কোনো কিছু লিখতে হবে না। কোনো বাক্সে টিক চিহ্নও থাকবে না। ভোটার শুধু ব্যালট পেপারটি নিয়ে একটি বাক্সে ভরে দেবেন। ব্যাস্‌ হয়ে গেল ভোট দেওয়া! ভোটের বাক্সটিও সাধারণত খোলা অবস্থায় রাখা হয়।

টার্টিস্কি বলেন, 'আপনি চাইলে ব্যালট পেপারের নামটিও কেটে দিতে পারেন। কিন্তু সেটা করলে নিশ্চিতভাবেই সরকারের গোপন পুলিশ আপনার সম্পর্কে খোঁজ-খবর শুরু করবে। এ ধরনের কাজ যারা করেছে, তাদের মধ্যে কয়েকজনকে পাগল আখ্যা দেওয়া হয়েছে।'

ভোট দেওয়া শেষ হয়ে গেলে ভোটাররা নির্বাচন কেন্দ্রের বাইরে যাবেন এবং সেখানে উপস্থিত অন্য ভোটাদের সঙ্গে মিলে আনন্দ প্রকাশ করবেন। এটি এই কারণে যে, দেশের সুযোগ্য নেতাদের প্রতি সমর্থন জানাতে পেরে আপনি খুবই খুশি! উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে ভোটের দিনটিকে উৎসব হিসেবে দেখানো হয়। যেহেতু ভোটদান বাধ্যতামূলক, তাই নির্বাচনের তথ্য বিশ্লেষণ করে কর্তৃপক্ষ জানতে পারে, কে ভোট দিতে যাননি, কিংবা কে দেশ ছেড়ে চীনে পালিয়ে গেছেন।

উত্তর কোরিয়ায় রয়েছে বিরোধী দলও!

আপনি হয়তো ভাবতে পারেন উত্তর কোরিয়ায় বিরোধী দলের কোনো অস্তিত্বই নেই। কিন্তু জেনে অবাক হবেন যে, সে দেশের পার্লামেন্টে তিনটি দল রয়েছে। কিম জং-উনের নেতৃত্বাধীন ওয়ার্কার্স পার্টির রয়েছে সবচেয়ে বেশি আসন। অন্যদিকে, সোশ্যাল ডেমোক্রেট পার্টি আর চন্ডোইস্ট চঙ্গু পার্টির সামান্য কিছু আসন রয়েছে।

তবে এই তিনটি দলের মধ্যে বিশেষ কোনো তফাৎ নেই। তারা সবাই মিলে তৈরি করেছে এক জোট, যেটি মূলত দেশ পরিচালনা করে। এই জোটের নাম 'ডেমোক্রেটিক ফন্ট ফর দ্য রিইউনিফিকেশন অফ কোরিয়া'।

উত্তর কোরিয়ার পার্লামেন্টের ক্ষমতা কতটুকু?

'সুপ্রিম পিপলস্‌ অ্যাসেমবিস্ন' (এসপিএ) মূলত ক্ষমতাহীন, রাজনীতির ভাষায় যাকে রাবার-স্ট্যাম্প পার্লামেন্ট বলা হয়। প্রতি পাঁচ বছর পর পর পার্লামেন্ট নির্বাচন হয়। এটিই রাষ্ট্রের একমাত্র আইন প্রণয়নকারী শাখা। উত্তর কোরিয়ার আইন তৈরি হয় ক্ষমতাসীন দলের হাতে আর পার্লামেন্ট শুধুমাত্র সেগুলোকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন দেয়। দেশটিতে ২০২৪ সালের ১১ মার্চ পরবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। তথ্যসূত্র : বিবিসি নিউজ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে