বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১
গাজা শাসনে ভূমিকা

আরব দেশগুলোকে চাপ আমেরিকার

দ্বিধাগ্রস্ত মুসলমান দেশগুলোকে গাজার পুনর্গঠন, শাসন ও নিরাপত্তায় ভূমিকা রাখার ওপর জোর গাজার উত্তরাঞ্চলে হামাস নেতৃত্ব 'গুঁড়িয়ে' দেওয়ার দাবি
যাযাদি ডেস্ক
  ০৮ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
তুরস্কে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের সঙ্গে বিস্নংকেন (বামে)

গাজা পরিচালনায় ভবিষ্যৎ ভূমিকা পালনের জন্য আরব দেশগুলোকে চাপ দিচ্ছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি বিস্নংকেন। এ ব্যাপারে সরাসরি কথা বলার জন্য শনিবার রাতে আরব দেশগুলো সফর শুরু করেছেন তিনি। বিস্নংকেন শনিবার গভীররাতে জর্ডানে পৌঁছান। সেখানে তিনি বাদশাহ আবদুলস্নাহর সঙ্গে বৈঠক করেন। এরপর তিনি রোববার কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর করেন। তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা, রয়টার্স, এএফপি, বিবিসি

মার্কিন পরররাষ্ট্রমন্ত্রী বিস্নংকেনের সঙ্গে ভ্রমণকারী মন্ত্রণালয়ের এক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, এই সফরগুলোতে তিনি দ্বিধাগ্রস্ত মুসলমান প্রধান দেশগুলোকে গাজার পুনর্গঠন, শাসন ও নিরাপত্তায় ভূমিকা রাখার জন্য চাপ দিচ্ছেন। মার্কিন প্রতিনিধি দল আগামী দিনে ইসরাইলের কাছে গাজার ভবিষ্যতের সংবেদনশীল ইসু্যতে আরব রাষ্ট্রগুলোর মনোভাব তুলে ধরছে।

গাজা যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়া নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি বিস্নংকেন শনিবার বলেছেন, তিনি গাজা যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়া এবং একটি 'অন্তহীন নৃশংসতার চক্র তৈরি হওয়া' আটকাতে আপ্রাণ চেষ্টা করছেন।

এদিকে, গাজা সংঘাত ধীরে ধীরে আশপাশের অঞ্চলগুলোতে, বিশেষ করে লেবাননে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গাজায় সংঘাতের শুরু থেকেই লেবানন সীমান্তে দেশটির সশস্ত্র সংগঠন হিজবুলস্নাহর সঙ্গে ইসরাইলের নিয়মিত গোলা বিনিময় হচ্ছে। সম্প্রতি বৈরুত উপকণ্ঠে হামাসের একটি কার্যালয়ে বিমান হামলায় দলটির শীর্ষ নেতা সালেহ আল-আরৌরি নিহত হন। যার প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিজ্ঞা করেছে হিজবুলস্নাহ। তাদের দাবি, ইসরাইল ওই হামলা চালিয়েছে। যদিও ইসরাইল হামলার দায় স্বীকার বা অস্বীকার কিছুই এখনো করেনি। উলেস্নখ্য, ইরান সমর্থিত হিজবুলস্নাহকে ইসরাইল ও তাদের মিত্র আমেরিকাসহ পশ্চিমা অনেক দেশ সন্ত্রাসীদের সংগঠন বলে ঘোষণা করেছে।

ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ত বৃহস্পতিবার জানিয়েছিলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আঞ্চলিক অংশীদারদের সঙ্গে অংশীদারিত্বে আমেরিকার নেতৃত্বে একটি বহুজাতিক টাস্কফোর্স গাজায় পুনর্বাসনের দায়িত্ব নিতে পারে। তবে ইসরাইল গাজায় তার অপারেশনাল স্বাধীনতা বজায় রাখবে।

এর আগে তিনি জানিয়েছিলেন, ইসরাইল ও হামাসের মধ্যকার 'যুদ্ধ' শেষ হলে ভবিষ্যতে কীভাবে গাজা শাসন করা হবে, তার একটি পরিকল্পনা করা হয়েছে। তিনি বলেন, যুদ্ধ শেষে ওই এলাকায় ফিলিস্তিনি শাসন থাকবে সীমিত। হামাস আর গাজার নিয়ন্ত্রণে থাকবে না এবং ইসরাইল সার্বিক নিরাপত্তার নিয়ন্ত্রণে থাকবে। তিনি আরও বলেন, গাজা সীমান্তে ইসরাইলি সশস্ত্র বাহিনীর উপস্থিতি বজায় থাকবে ও প্রয়োজনে যে কোনো সময় গাজার অভ্যন্তরে অভিযান চালানোর অধিকার তাদের থাকবে। কোনো ধরনের ঝুঁকি বা হুমকি ইসরাইলের বিরুদ্ধে তৈরি করা যাবে না।

গাজার উত্তরাঞ্চলে হামাস নেতৃত্ব

'গুঁড়িয়ে' দেওয়ার দাবি

গাজার উত্তরাঞ্চলে হামাস নেতৃত্বকে 'সম্পূর্ণ গুঁড়িয়ে দেওয়ার' দাবি করেছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। বলেছে, সেখানে বর্তমানে হামাস বিক্ষিপ্তভাবে পরিচালিত হচ্ছে এবং তাদের 'নেতৃত্ব দেওয়ার মতো কেউ আর নেই'। ইসরাইলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হ্যাগারি শনিবার তেল আবিবে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তারা উত্তর গাজায় প্রায় আট হাজার হামাস যোদ্ধাকে হত্যা করেছে। নিহতদের মধ্যে কমান্ডার ও সাধারণ যোদ্ধা উভয়ই রয়েছেন। ইসরাইলি ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ) এখন গাজার দক্ষিণ ও মধ্যাঞ্চলে হামাসকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার দিকে মনোযোগ দিয়েছে। তবে স্বাধীনভাবে হ্যাগারির এই দাবি যাচাই করা যায়নি।

হ্যাগারি দাবি করেছেন, ইসরাইলি স্থল ও বিমান বাহিনীর গত তিন মাসের অভিযানে উত্তর গাজায় হামাসের মূল 'কমান্ড সেন্টার' ধ্বংস করেছে। এতে হামাসের সামরিক বিভাগের চেইন অব কমান্ড সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। গোষ্ঠীটির যে কয়েকজন যোদ্ধা এখনো অবশিষ্ট রয়েছেন, তারা বিক্ষিপ্তভাবে অপারেশন চালাচ্ছেন। গাজায় অভিযানরত ইসরাইলি সেনারা উত্তর গাজায় অভিযান শেষ করে বর্তমানে উপত্যকার মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলে অগ্রসর হচ্ছে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন হ্যাগারি।

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, হামাসকে সম্পূর্ণ ধ্বংস ও গাজাকে পরিপূর্ণভাবে নিরস্ত্রীকরণ করার আগ পর্যন্ত এই যুদ্ধ চলবে। শনিবারও এক বার্তায় তিনি বলেছেন, 'আমাদের এই অভিযানের লক্ষ্য হলো হামাসকে নির্মূল করা, তাদের কবজায় থাকা জিম্মিদের উদ্ধার করা এবং গাজা যেন ভবিষ্যতে ইসরাইলের জন্য হুমকি না হয়ে উঠতে পারে, সেই ব্যবস্থা করা। যতদিন না পূর্ণ বিজয় অর্জিত হয়, ততদিন সবকিছু একপাশে রেখে আমরা এগিয়ে যাব।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে