মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১
নিহত ২৫ হাজার পার

গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন শততম দিনে

'গাজায় শতাব্দীর পর শতাব্দী যুদ্ধ হয়েছে। কিন্তু সেসব চলমান আগ্রাসনের মতো নয়' কেউই তাদের থামাতে পারবে না দম্ভ নেতানিয়াহুর
যাযাদি ডেস্ক
  ১৫ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন রোববার ১০০ দিন পূর্ণ হয়েছে। নির্বিচার এই হামলায় গাজাকে ধ্বংস করে দিয়েছে দখলদার বাহিনী। এই আগ্রাসনের প্রতিবাদে আমেরিকা, যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে লাখ লাখ মানুষ বিক্ষোভ করেছেন। ছবিটি শনিবার আমেরিকার রাজধানী ওয়াশিংটন থেকে তোলা -ওয়াশিংটন পোস্ট

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ইসরাইলি আগ্রাসনের শততম দিন পার করেছে রোববার। আর এই আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত ২৫ হাজার ৩৫৫ জন মানুষ নিহত হয়েছেন। ১০০তম দিনে এসেও গাজা সংঘর্ষ বন্ধ হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এই অভিযানে বিপুলসংখ্যক বেসামরিক মানুষের প্রাণহানির ঘটনায় বিশ্বজুড়ে সমালোচনার মুখে পড়লেও ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দম্ভভরে বলেছেন, কেউই তাদের থামাতে পারবে না। তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা, রয়টার্স, বিবিসি, এপি, এএফপি

গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনের ভয়াবহতা দেখে ফরাসি ইতিহাসবিদ জঁ্য-পিয়ের ফিলিউয়ের বলেছেন, গাজায় শতাব্দীর পর শতাব্দী যুদ্ধ হয়েছে। কিন্তু সেসব চলমান ইসরাইলি আগ্রাসনের মতো নয়। এবারের হামলায় গাজার ভিটে-মাটি ও হাজার বছরের ইতিহাস ধূলিসাৎ করে দিয়েছে ইসরাইল। গাজার ইতিহাসে এটিই সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক ও রক্তক্ষয়ী ইসরাইলি আগ্রাসন।

ইসরাইলি আগ্রাসনে নিহত

গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনে ফিলিস্তিনি ও ইসরাইলি মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ২৫ হাজার ৩৫৫ জন মানুষ নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে শুধু ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন ২৪ হাজার ৫৫ জন। ফিলিস্তিনিদের মধ্যে শুধু গাজায়ই নিহত হয়েছেন ২৩ হাজার ৭০৮ জন। বাকি ৩৪৭ জন নিহত হয়েছেন অধিকৃত পশ্চিম তীরে। অপরদিকে, হামাসের হামলায় এক হাজার ২০০ ইসরাইলি নিহত হয়েছেন। হামলায় আহতদের যাতে হাসপাতালে নিয়ে যেতে না পারে, সেজন্য গাজায় ১২১টি অ্যাম্বুলেন্স ধ্বংস করেছে ইসরাইলি বাহিনী। হাসপাতাল ও স্কুলে ইসরাইলি হামলায় প্রায় ছয় লাখ ২৫ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী পড়াশোনার বাইরে রয়েছে।

গাজায় ইসরাইলি ধ্বংসযজ্ঞ

অবরুদ্ধ গাজায় হত্যাযজ্ঞের পাশাপাশি সমানতালে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে ইসরাইলি দখলদাররা। বিমান হামলা চালিয়ে ৪৫ থেকে ৫৬ শতাংশ আবাসিক ভবন ধ্বংস করেছে ইসরাইলি বাহিনীরা। আবাসিক ভবন ধ্বংস করেই ক্ষান্ত হয়নি তারা। হাসপাতালগুলোও ধ্বংস করেছে তারা। গাজার ৩৬টি হাসপাতালে মধ্যে ১৫টিই ধ্বংস করেছে তারা। গাজা আগ্রাসনে ২৯ হাজার বোমা, গোলাবারুদ ও শেল ব্যবহার করেছে ইসরাইলি বাহিনী। অপরদিকে, ইসরাইলে ১৪ হাজার রকেট নিক্ষেপ করেছে হামাস।

হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের পরিস্থিতিতে পাঁচ লাখ ৭৬ হাজার ৬০০ ফিলিস্তিনি অনাহারে রয়েছেন। ঘরবাড়ি হারা এই অনাহারী মানুষগুলো স্কুলে ভবনে আশ্রয় নিলে সেখানেও হামলা চালিয়েছে ইসরাইলিরা। গাজার প্রায় ৬৯ শতাংশ স্কুল ভবন ধ্বংস করেছে ইসরাইলি বাহিনী।

গাজার ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন মসজিদ, গির্জা ও জাদুঘর ধ্বংস করেছে ইসরাইল। এসব কিছু ধ্বংস করে চোখের সামনে থেকে মানবতার স্মৃতি মুছে ফেলছে। গাজার ১৪২টি মসজিদ ধ্বংস করেছে। এদের মধ্যে রয়েছে বৃহত্তম ও প্রাচীনতম ওমরি মসজিদ। গাজায় অবস্থিত তিনটি চার্চ-ও ধ্বংস করেছে ইসরাইলিরা। দুই হাজার বছরের পুরোনো সেইন্ট পরফিরাস চার্চ ধ্বংস করেছে তারা। পঞ্চম শতাব্দীতে তৈরি এই চার্চে আশ্রয় নিয়েছিলেন শত শত খ্রিষ্টান ফিলিস্তিনি নাগরিক। শুধু তাই নয়, ইসরাইলি আগ্রাসনে ধ্বংস হয়ে গেছে বিশ্বের তৃতীয় প্রাচীন রোমান কবরস্থান ও জাদুঘর কাসার আল-বাশা।

হামাস-ইসরাইলি সংঘর্ষে আহত

হামাস-ইসরাইল সংঘর্ষে ৭৬ হাজার ৪২০ জনের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে ৬৪ হাজার পাঁচজন ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন। আহত ফিলিস্তিনিদের মধ্যে গাজায় আহত হয়েছেন ৬০ হাজার পাঁচজন। বাকি চার হাজার ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন পশ্চিম তীরে। অপরদিকে, এই সংঘর্ষে ১২ হাজার ৪১৫ জন ইসরাইলি আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে দুই হাজার ৪৯৬ জন ইসরাইলি সেনা রয়েছেন। যাদের মধ্যে এক হাজার ৮৫ জন সেনা স্থল অভিযানে আহত হয়েছেন।

ইসরাইলি আগ্রাসনে বাস্তুচু্যতের সংখ্যা

গাজায় বসবাসরত ২৩ লাখের মধ্যে ১৮ লাখের বেশি ফিলিস্তিনি বাস্তুচু্যত হয়েছেন। উত্তর গাজা ও দক্ষিণ গাজার সীমান্ত এলাকা থেকেই প্রায় দুই লাখ ৪৯ হাজার ২৬৩ জন ফিলিস্তিনিকে বাস্তুচু্যত করা হয়েছে। পশ্চিম তীরেও এক হাজার ২০৮ জনকে বাস্তুচু্যত করেছে দখলদাররা।

হামাস-ইসরাইলি সংঘর্ষে ধরপাকড়ও

গত ৭ অক্টোবর গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনের সময় প্রায় ২৫০ জন ইসরাইলিকে জিম্মি করেছিল হামাস। সংঘর্ষের মাঝখানে সাত দিনের যুদ্ধবিরতির সময় ১২১ জন ইসরাইলি জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে হামাস গোষ্ঠী। বলা হয়েছে, এখনো ১৩৬ জন জিম্মি হামাসের হাতে রয়েছেন। বাকি ৩৩ জন জিম্মি মারা গেছেন। অপরদিকে, যুদ্ধবিরতির সময় ২৪০ জন ফিলিস্তিনি কারাবন্দিকে মুক্তি দিয়েছে ইসরাইল।

এদিকে, শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে নেতানিয়াহু বলেন, 'কেউ আমাদের থামাতে পারবে না- দ্য হেগ (আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত) নয়, অ্যাক্সিস অব ইভিল (অশুভ শক্তি) নয় এবং অন্য কেউই নয়। বিজয় না হওয়া পর্যন্ত চালিয়ে যুদ্ধ যাওয়া সম্ভব এবং এটা প্রয়োজনীয়, আর আমরা সেটাই করব।'

জাতিসংঘের শীর্ষ আদালত বলে পরিচিত দ্য হেগের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে দায়ের করা একটি মামলার কথা উলেস্নখ করে নেতানিয়াহু এসব কথা বলেন। ওই মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, ইসরাইলের আক্রমণ জাতিসংঘের গণহত্যা কনভেনশন লঙ্ঘন করেছে।

নেতানিয়াহু দাবি করেছেন, গাজায় তার বাহিনীর সামরিক হামলা এরই মধ্যে অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনি ভূখন্ডে থাকা 'হামাস ব্যাটালিয়নের বেশিরভাগকেই নির্মূল করেছে'। তবে তিনি বলেন, উত্তর গাজা থেকে যারা বাস্তুচু্যত হয়েছেন, তারা শিগগিরই তাদের বাড়িতে ফিরতে পারবেন না। তার ভাষায়, 'আন্তর্জাতিক আইনে একটি সাধারণ কথা বলা আছে। আর তা হচ্ছে- আপনি কোনো এলাকা থেকে যদি জনসংখ্যাকে সরিয়ে দেন, তাহলে যতক্ষণ পর্যন্ত বিপদ থাকবে, ততক্ষণ আপনি তাদের ফিরে আসতে দেবেন না।' নেতানিয়াহুর দাবি, সেখানে এখনো বিপদ বিদ্যমান। সেখানে (উত্তর গাজায়) যুদ্ধ চলছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে