বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
এক পরিবারের সবাই নিহত

গাজার রাফায় রাতভর ইসরাইলি হামলা

হামাসের হাতে আটক দুই বন্দির প্রাণ গেল ইসরাইলি হামলায় গাজা থেকে এক-চতুর্থাংশ সেনা প্রত্যাহার করল ইসরাইল
যাযাদি ডেস্ক
  ১৭ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
ইসরাইলি বাহিনীর রাতভর বিমান হামলায় অবরুদ্ধ গাজার দক্ষিণের শহর রাফাহর একটি ভবন ধ্বংস হয়ে যায় -রয়টার্স অনলাইন

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় বিমান হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরাইলি বাহিনী। এরই ধাবাবাহিকতায় সোমবার রাতে রাফায় শহরের উত্তরাঞ্চলে রাতভর বিমান হামলা চালিয়েছে। এই হামলায় একটি বাড়ি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। এতে একটি পরিবারের সব সদস্যসহ কমপক্ষে ১২ জন নিহত হয়েছেন। বাবা-মা এবং তাদের হামলায় প্রাণ হারিয়েছে কয়েকজন শিশুও। এ ছাড়া আরও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা, রয়টার্স, এএফপি

এদিকে, দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনিসে ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় একই পরিবারের পাঁচ সদস্যসহ কমপক্ষে সাতজন নিহত হয়েছেন। তারা একটি বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। ওই বাড়িটি লক্ষ্য করে হামলা চালায় ইসরাইলি সেনারা।

গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় কমপক্ষে ১৩২ জন নিহত হয়েছেন। ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা 'ওয়াফা নিউজ এজেন্সি' এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। জাতিসংঘের বেশ কয়েকটি সংস্থা গাজায় দ্রম্নত ও নিরাপদভাবে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার অনুমতি পাওয়ার আবেদন জানিয়েছে। গাজার মানুষ এখন দুর্ভিক্ষ এবং নানা রোগ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকিতে দিন কাটাচ্ছে। ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় গাজার পরিস্থিতি দিন দিন আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে। সেখানে খাবার ও পানির তীব্র সংকট তৈরি হয়েছে। কিন্তু মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে কোনো ধরনের ত্রাণ সরবরাহের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। জাতিসংঘের মানবাধিকার সমন্বয় বিষয়ক কার্যালয় জানিয়েছে, ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ উত্তর গাজায় ওষুধ ও জ্বালানি সরবরাহ করতে দিচ্ছে না।

হামাসের হাতে আটক দুই বন্দির

প্রাণ গেল ইসরাইলি হামলায়

গাজা ভূখন্ডে ইসরাইলের হামলায় দুই ইসরাইলি নাগরিক নিহত হয়েছেন। তারা ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের হাতে বন্দি ছিলেন। ইসরাইলি হামলায় এই দুই বন্দির নিহত হওয়ার খবর জানিয়ে তাদের মরদেহের ভিডিও প্রকাশ করেছে হামাস।

সোমবার কাসাম ব্রিগেডসের প্রকাশিত ওই ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, তিনজন ইসরাইলি বন্দি ক্যামেরার সামনে কথা বলছেন, সম্ভবত চাপের মুখে। অযাচাইকৃত এই ভিডিওর প্রথম অংশে এক নারী বন্দি ও অন্য দুইজন পুরুষ বন্দি ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে গাজায় হামলা বন্ধ করার আহ্বান জানান। ভিডিওতে থাকা ওই নারী বন্দিকে ২৬ বছর বয়সি নোয়া আরগামানি বলে শনাক্ত করেছে ইসরাইলি মিডিয়া।

ভিডিওর দ্বিতীয় অংশে আরগামানি বলেছেন, 'আমাদের নিজস্ব (ইসরাইলি) বিমান হামলার কারণে' বন্দি অন্য দুই ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। দুই বন্দির মৃতদেহ দেখানোর মাধ্যমে ভিডিওটি শেষ হয়। অবশ্য, ভিডিওটি কখন ধারণ করা হয়েছে, তা স্পষ্ট নয়। ভিডিওটির সঙ্গে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে কাসাম ব্রিগেডস বলেছে, এই দুই ব্যক্তি 'জায়নবাদী সেনাবাহিনীর বোমা হামলায়' নিহত হয়েছেন।

ইসরাইলি সামরিক মুখপাত্র ড্যানিয়েল হ্যাগারি হামাসের সর্বশেষ ভিডিওতে থাকা পুরুষ বন্দিকে ইতাই সভিরস্কি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। কিন্তু পরিবারের অনুরোধ অনুযায়ী দ্বিতীয় ব্যক্তির নাম বা অন্যান্য বিবরণ দেননি তিনি। তিনি দাবি করেন, 'ইতাইকে আমাদের বাহিনী গুলি করেনি। এটা হামাসের মিথ্যা কথা। যে ভবনে তাদের আটকে রাখা হয়েছিল, সেটি লক্ষ্যবস্তু ছিল না এবং আমাদের বাহিনী সেখানে আক্রমণ করেনি।' তিনি আরও বলেন, 'আমরা কোনো স্থানে হামলা করি না, যদি আমরা জানি যে, সেখানে বন্দি থাকতে পারে।' হামাস এর আগে গত রোববার আরেকটি ভিডিও প্রকাশ করে। সেখানে তিন বন্দিকে জীবিত দেখানো হয়েছে।

গাজা থেকে এক-চতুর্থাংশ সেনা

প্রত্যাহার করল ইসরাইল

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় যুদ্ধরত ইসরাইলের চার ডিভিশনের মধ্যে এক ডিভিশনের সেনাদের প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। ইসরাইলি সংবাদমাধ্যম 'টাইমস অব ইসরাইল' সোমবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ৩৬ নম্বর ডিভিশনের সেনাদের ইসরাইলে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এর ফলে গাজায় যুদ্ধ করার জন্য তিনটি ডিভিশন রয়ে গেল।

৩৬ নম্বর ডিভিশনে কত সেনা রয়েছে, সে বিষয়টি উলেস্নখ করেনি ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী- আইডিএফ। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিও ও ছবিতে দেখা গেছে, বিপুলসংখ্যক সেনা গাজা থেকে বেরিয়ে গেছে বা বের হয়ে যাচ্ছে। সাধারণত একটি ডিভিশনে ১০-১৫ হাজার সেনা থাকে। ডিভিশনের নেতৃত্বে থাকে একজন মেজর জেনারেল।

এই ডিভিশনের সেনাদের বিশ্রামের জন্য কিছুদিন সময় দেওয়া হবে। এরপর তারা আবার প্রশিক্ষণে যোগ দেবে। প্রশিক্ষণ শেষে প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) প্রয়োজন অনুযায়ী, সিদ্ধান্ত নেবে, তাদের পুনরায় কোথায় মোতায়েন করা হবে।

গত দুই মাস ধরে দখলদার ইসরাইলের ৩৬ নম্বর ডিভিশন গাজার উত্তরাঞ্চলে বর্বরতা চালিয়েছে। তাদের দাবি, এই ডিভিশনের সেনারা উত্তরাঞ্চলে হামাসকে পুরোপুরি নির্মূল করেছে। যদিও ইসরাইলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার এক সদস্য জানিয়েছেন, হামাসকে নির্মূল করা থেকে অনেক দূরে রয়েছে তারা।

গাজার উত্তরাঞ্চলে ৩৯ নম্বর ডিভিশন ছাড়াও ১৬২ নম্বর ডিভিশনও যুদ্ধ করেছে। এখন এই ডিভিশনের সেনারা উত্তরাঞ্চলে কথিত 'ক্লিনআপ অপারেশন' চালাবে। এ ছাড়া হামাসের অবকাঠামো খুঁজে বের করা এবং সেগুলো ধ্বংস করা ও হামাসের যোদ্ধাদের খুঁজে বের করে হত্যা অথবা আটক করবে তারা। ইসরাইলি সেনাবাহিনীর ৯৯ নম্বর ডিভিশন গাজার মধ্যাঞ্চলে মোতায়েন রয়েছে। অপরদিকে, দক্ষিণাঞ্চলের খান ইউনিসে রয়েছে ৯৮ নম্বর ডিভিশন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে