বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মন্তব্য

গাজায় মৃতু্যর অপেক্ষায় রোগীরা

হামাস এখনো পরাজিত হয়নি বলছে ইসরাইল যুদ্ধের পর গাজার পরিস্থিতি নিয়ে সিদ্ধান্তহীন ইসরাইলি মন্ত্রিসভা
যাযাদি ডেস্ক
  ১৯ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
গাজায় মৃতু্যর অপেক্ষায় রোগীরা

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মকর্তা শন ক্যাসে গাজা উপত্যাকার অবশিষ্ট হাসপাতালের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরে বলেছেন, এসব হাসপাতালে রোগীরা স্টাফ ও সরবরাহের চরম অভাবের কারণে 'মৃতু্যর অপেক্ষায় আছে'। জরুরি চিকিৎসা দলের সমন্বয়কারী ক্যাসে বলেছেন, যুদ্ধ-বিধ্বস্ত ফিলিস্তিনি ভূখন্ডে তিনি প্রায় পাঁচ সপ্তাহ অবস্থান করে হাসপাতালের রোগীদের দেখেছেন চিকিৎসার জন্য 'প্রতিদিন গুরুতর পোড়া, ভেঙে যাওয়া উন্মুক্ত অঙ্গসহ তারা কয়েক ঘণ্টা বা দিনের পর দিন অপেক্ষা করছে'। তথ্যসূত্র : এএফপি, বিবিসি, আনাদলু

নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে বুধবার সাংবাদিকদের ক্যাসে বলেন, 'তারা প্রায়ই আমার কাছে খাবার বা পানির জন্য জিজ্ঞাসা করত। আমরা যে হতাশার মাত্রা দেখি, এতে তা বোঝা যায়।' তিনি বলেন, গাজার ১৬টি কার্যকরী হাসপাতালের মধ্যে মাত্র ছয়টি তিনি পরিদর্শন করতে সক্ষম হয়েছেন। যুদ্ধ শুরুর আগে গাজায় ৩৬টি হাসপাতাল কার্যকর ছিল। শন ক্যাসে বলেন, 'স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অবনতির পাশাপাশি আমি ব্যক্তিগতভাবে যা দেখেছি তা হলো- মানবিক সহায়তার ক্রমবর্ধমান চাহিদা বিশেষ করে গাজা উপত্যাকার উত্তরের অঞ্চলে মানবিক সহায়তার সুযোগ প্রায় সম্পূর্ণ হ্রাস করা হয়েছে।'

তিনি গাজার উত্তরের হাসপাতালে রোগীদের অবস্থার বর্ণনা দিয়েছেন, যারা 'মূলত এমন একটি হাসপাতালে মৃতু্যর অপেক্ষায় রয়েছেন। সেখানে জ্বালানি, বিদু্যৎ, পানি কিছুই নেই'। 'সাত দিনের পরিদর্শনকালে প্রতিদিন আমরা উত্তরে গাজা সিটিতে জ্বালানি এবং সরবরাহ পৌঁছানোর চেষ্টা করেছি' এ কথা উলেস্নখ করে ক্যাসে বলেন, 'প্রতিদিনই আমাদের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।' তিনি বলেন, নূ্যনতম কর্মীদের নিয়ে কাজ করার সময় হাসপাতালগুলো বিপুল রোগীদের সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুসারে, ইসরাইলি বোমাবর্ষণ এবং স্থল হামলায় কমপক্ষে ২৪ হাজার ৪৪৮ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এদের প্রায় ৭০ শতাংশ নারী, ছোট শিশু এবং কিশোর-কিশোরী রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রোস আধানম গেব্রেইয়েসাসের আহ্বানের প্রতিধ্বনি করে ক্যাসে বলেন, গাজার সবচেয়ে জরুরি প্রয়োজন 'সত্যিকারের যুদ্ধবিরতি'।

হামাস এখনো পরাজিত হয়নি, বলছে ইসরাইল

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসকে নির্মূলের লক্ষ্য নিয়ে অবরুদ্ধ গাজা ভূখন্ডে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। টানা প্রায় সাড়ে তিন মাস ধরে চলা এই অভিযানে বিপুল সংখ্যক বেসামরিক মানুষের প্রাণহানির ঘটনায় বিশ্বজুড়ে সমালোচনার মুখে পড়েছে দেশটি। অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবিও হয়ে উঠেছে বেশ জোরালো। তবে ইসরাইল বলছে, হামাস এখনো পরাজিত হয়নি। ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জাচি হানেগবি এ কথা স্বীকার করেছেন।

ইসরাইলি সংবাদপত্র 'ইয়েদিওথ আহরনোথ'র প্রতিবেদন অনুযায়ী, নেসেটের (পার্লামেন্টের নিম্ন্নকক্ষ) পররাষ্ট্র বিষয়ক ও প্রতিরক্ষা কমিটিকে হানেগবি বলেন, 'হামাসের পরের দিন কী হবে সে সম্পর্কে কথা বলা- সময় হিসেবে এখনো খুব তাড়াতাড়ি, কারণ গোষ্ঠীটি এখনো পরাজিত হয়নি।'

যুদ্ধের পর গাজার পরিস্থিতি নিয়ে

সিদ্ধান্তহীন ইসরাইলি মন্ত্রিসভা

ইসরাইলি বাহিনীর চলমান অভিযান শেষ হওয়ার পর গাজা ইসু্যতে ইসরাইলের পরিকল্পনা কী হবে, সে সম্পর্কে এখনো কোনো স্থির সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিসভার সদস্যদের মতপার্থক্য ও দ্বন্দ্বই এই সিদ্ধান্তহীনতার প্রধান কারণ।

প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ত যদিও সম্প্রতি বলেছেন, গাজা উপত্যকা পুরোপুরি দখল করার কোনো পরিকল্পনা ইসরাইলের নেই এবং বর্তমানে যে অভিযান চলছে, তার মূল লক্ষ্য উপত্যকার নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসকে নির্মূল করা, গাজাকে নিরস্ত্রীকরণ করা এবং এই উপত্যকা যেন ভবিষ্যতে ইসরাইলের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে উঠতে না পারে, তা নিশ্চিত করা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে