আজকের যায়যায়দিন

ভারতের উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যায় ষোড়শ শতকের ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদের স্থানে দেশটির সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য নির্মিত বিশাল 'রাম মন্দিরের' উদ্বোধনের প্রস্তুতি চলছে। নির্মাণকাজ শেষ হওয়ায় আগামীকাল (সোমবার) মন্দিরটির উদ্বোধন করা হবে। মন্দিরটি নির্মাণ হয়েছে ১৮০ মিলিয়ন (১৮ কোটি) মার্কিন ডলারে ব্যয়ে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উপস্থিত থেকে নবনির্মিত মন্দিরটির উদ্বোধন করবেন। আর হিন্দুদের মন্দির উদ্বোধনের প্রস্তুতির মাঝেই শনিবার দেশটির সংখ্যালঘু মুসলমানরা চলতি বছরের আরও পরের দিকে একই শহরে নতুন একটি মসজিদ নির্মাণের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। তথ্যসূত্র : রয়টার্স

দেশটির সংখ্যালঘু মুসলিম সংগঠন 'ইন্দো-ইসলামিক কালচারাল ফাউন্ডেশন'র (আইআইসিএফ) উন্নয়ন বিষয়ক কমিটির প্রধান হাজি আরফাত শেখ বলেছেন, পবিত্র রমজান মাসের পর আগামী মে মাসে মসজিদটির নির্মাণকাজ শুরু হবে। এটি নির্মাণে তিন থেকে চার বছর সময় লাগবে।

১৯৯২ সালে ভারতের উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যা শহরে হামলা চালিয়ে ষোড়শ শতকে নির্মিত ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদটি গুঁড়িয়ে দেয় দেশটির উগ্রপন্থি হিন্দুত্ববাদীরা। তাদের দাবি, হিন্দু দেবতা রামের জন্মস্থানে নির্মিত প্রাচীন একটি মন্দিরের ওপর মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল।

মন্দিরের স্থানে মসজিদ নির্মাণের এই অভিযোগ নিয়ে দেশটিতে কয়েক দশক ধরে হিন্দু-মুসলমান বিবাদ চলে আসছিল। পরে উগ্রপন্থি হিন্দুরা মসজিদটি ধ্বংস করে দেওয়ায় ভারতজুড়ে ভয়াবহ দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। এই দাঙ্গায় দেশটিতে দুই হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটে; যাদের বেশিরভাগই মুসলমান।

ইসরাইলি আগ্রাসন / গাজায় নিহতের ৫৬ শতাংশ নারী ও শিশু :জাতিসংঘ

২০১৯ সালে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের এক আদেশে বলা হয়, বাবরি মসজিদ বেআইনিভাবে ধ্বংস করা হয়েছিল। তবে মসজিদের নিচে হিন্দুদের একটি স্থাপনার কাঠামো পাওয়া গেছে। আদালত মন্দির নির্মাণের জন্য বাবরি মসজিদের জায়গা হিন্দু গোষ্ঠীগুলোর কাছে হস্তান্তরের নির্দেশ দেয়। একই সঙ্গে মুসলমান সম্প্রদায়ের নেতাদের একটি মসজিদ নির্মাণের জন্য শহরের অন্য এলাকায় জমি দেওয়ার আদেশও দেয় আদালত।

কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে মন্দিরের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলেও মসজিদের নির্মাণকাজের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ জোগাড় করতেই হিমশিম খাচ্ছেন মুসলমানরা। উত্তরপ্রদেশের স্থানীয় মুসলিম গোষ্ঠীগুলো মসজিদের তহবিল সংগ্রহ এবং প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরের জনশূন্য এক জায়গায় নির্মাণকাজ শুরু করার জন্য রীতিমতো লড়াই করছে। আইআইসিএফের প্রেসিডেন্ট জুফার আহমাদ ফারুকি বলেন, 'আমরা কারও সঙ্গে যোগাযোগ করিনি... তহবিল সংগ্রহের জন্য কোনো কর্মসূচিও নেওয়া হয়নি।'

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হিন্দু গোষ্ঠীগুলো অযোধ্যায় মন্দির নির্মাণের জন্য তিন দশকের বেশি আগে থেকে অনুদান সংগ্রহ শুরু করেছিল। মন্দিরটির জন্য দেশটির প্রায় চার কোটি মানুষের কাছ থেকে ৩৬০ মিলিয়ন (৩৬ কোটি) ডলার সংগ্রহ করেছে তারা।

আইআইসিএফের সেক্রেটারি আতহার হুসেইন বলেন, মিনারের মতো কাঠামোতে ঐতিহ্যবাহী নানা উপাদান যুক্ত করার জন্য আবার নকশা করতে হয়েছে মসজিদের। যে কারণে এই মসজিদ প্রকল্পটি বিলম্বিত হয়েছে। মসজিদ কমপেস্নক্সে ৫০০ শয্যার একটি হাসপাতাল তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছে। 'ইন্দো-ইসলামিক কালচারাল ফাউন্ডেশন'র উন্নয়ন বিষয়ক কমিটির প্রধান হাজি আরফাত শেখ বিজেপিরও নেতা। তিনি বলেছেন, আগামী সপ্তাহে একটি ক্রাউড-ফান্ডিং ওয়েবসাইট চালু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।