শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ

ইসরাইল-হিজবুলস্নাহ সংঘাত অনিবার্য!

যাযাদি ডেস্ক
  ২৭ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
হিজবুলস্নাহকে লক্ষ্য করে ইসরাইলের গোলা হামলা -ফাইল ছবি

উত্তর ইসরাইলের কিরিয়াট শামোনা শহর থেকে বরফে ঢাকা মাউন্ট হারমনের দৃশ্য বড়ই সুন্দর। কিন্তু গত তিন মাসে খুব বেশি মানুষ এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারছেন না। কারণ, গত তিন মাস ধরে এই জনপদ রীতিমতো ভুতুড়ে শহরের চেহারা নিয়েছে। খালি রাস্তা। এক-দুটো বাদে সব দোকান বন্ধ। নিঃস্তব্ধ শহর মাঝেমধ্যে কেঁপে উঠছে বিস্ফোরণের প্রবল শব্দে। এই শহরটি হলো ইসরাইল ও লেবানন সীমান্তের কাছে। হিজবুলস্নাহর সামরিক ঘাঁটি এখান থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে।

পৌরসভার এমার্জেন্সি টিমের সদস্য ওরিয়েল ফ্রিশ বলছিলেন, 'অ্যালার্টের শব্দ শোনার পাঁচ সেকেন্ডের মধ্যে আমাদের নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে হচ্ছে। তারপরই আমরা বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পাচ্ছি। অনেক সময় বিস্ফোরণের শব্দের পর অ্যালার্টের শব্দ কানে আসছে। আমি যদি গাড়ি চালাই, তাহলে যে কোনো সময় আঘাত লাগতে পারে।'

স্বাভাবিক সময়ে এই শহরে ২৩ হাজার মানুষ বাস করেন। কিন্তু হামাস যখন গাজার কাছে ইসরাইলের শহর আক্রমণ করল, তারপর সরকার সীমান্তের সাড়ে তিন কিলোমিটারের মধ্যে থাকা শহর ও গ্রাম খালি করার নির্দেশ দেয়। তারপর ইসরাইলের সীমান্ত এলাকা থেকে ৫০ হাজার মানুষ চলে গেছেন। সেনাবাহিনীর হিসাব অনুযায়ী, ৩৫ হাজার জনকে মধ্য ইসরাইলে পুনর্বাসন দেওয়া হয়েছে। গাজায় সংঘাত শুরুর তিন মাস পর এখনো এটা স্পষ্ট হয়নি, তারা কবে আবার নিজেদের বাড়িতে ফিরতে পারবেন? গত সপ্তাহে ইসরাইল যুদ্ধবিমান, কামান, রকেট নিয়ে আক্রমণের তীব্রতা বাড়িয়েছে।

হিজবুলস্নাহের সঙ্গে সংঘাত বাড়বে?

ইসরাইলের মিডিয়ায় প্রায় প্রতিদিন বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। মিডিয়া রিপোর্টে বলা হচ্ছে, হিজবুলস্নাহর সঙ্গে লড়াই ঝুঁকিপূর্ণ হলেও অবশ্যম্ভাবী। সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান স্থিতাবস্থা ভেঙে ইসরাইল আগে আক্রমণ করতে পারে। কারণ গত ৭ অক্টোবর হামাসের আক্রমণের পর থেকে ইসরাইলের সেনা কখনই আর অপ্রস্তুত অবস্থায় পড়তে চাইবে না।

ইসরাইলি সেনাপ্রধান বলেছেন, 'আমি জানি না, কবে উত্তরের দিকে লড়াই শুরু হবে। আমি শুধু এটুকু বলতে পারি, গত কয়েক মাসের তুলনায় আগামী কয়েক মাসে এই সম্ভাবনা অনেকটাই বেড়ে যাবে।'

কিরিয়াট শামোনা শহরে এখন দুই হাজারের মতো মানুষ থাকেন। তার মধ্যে একজন হলেন ফ্রিশ। তার পরিবার শহর ছেড়ে গেছে। তিনি একটি স্কুলের প্রিন্সিপাল। এখন তিনি শহরের এমার্জেন্সি টিমের সদস্য। ফ্রিসের ব্যাখ্যা, এখানে যেসব মানুষ ছিলেন, তারা এখন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছেন। অধিকাংশই হোটেলে থাকছেন। কিছু মানুষ বেসরকারি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছেন। বাচ্চারা স্কুলে যাচ্ছে। গ্রামের দিকে ব্যবসা-বাণিজ্য প্রায় বন্ধ, চাষের খেত এমনিই পড়ে আছে।

২০০৬ সালের যুদ্ধ ছয় সপ্তাহ স্থায়ী হয়েছিল। ফ্রিশের বক্তব্য, এবারের যুদ্ধ হামাসের আক্রমণের পর শুরু হয়েছে। কিন্তু এবার হিজবুলস্নাহর সঙ্গে লড়াইও শুরু হয়ে যেতে পারে।

হামাসের চেয়ে হিজবুলস্নাহ ভয়ংকর

কয়েক বছর আগে হিজবুলস্নাহ একটি পরিকল্পনার কথা জানায়, যেখানে তাদের যোদ্ধারা ইসরাইলের উত্তরের অংশ অধিকার করে নেবে। ২০১৮ সালে ইসরাইলের সেনা জানতে পারে, হিজবুলস্নাহ পাহাড়ের মধ্যে দিয়ে লম্বা টানেল খুঁড়েছে, যা একেবারে ইসরাইলের জনবসতির কাছে চলে এসেছে।

ফ্রিশ জানিয়েছেন, ইসরাইলের বেশির ভাগ মানুষ মনে করতেন, 'হিজবুলস্নাহ কোনোদিন আক্রমণ করবে না। কারণ, ইসরাইল তাদের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। কিন্তু ৭ অক্টোবরের ঘটনার পর সব ধারণা বদলে গেছে। হিজবুলস্নাহর তুলনায় হামাস অনেক কম শক্তির ও কম প্রস্তুতি নেওয়া সংগঠন। তারা ইসরাইলকে আক্রমণ করার পর আমরা বিপদের মাত্রাটা বুঝতে পারছি।'

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ইসরাইলের সেনাবাহিনীর নর্দার্ন কমান্ডের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, উত্তর ইসরাইলের মানুষ মনে করছেন, তাদের বাড়ি ফেরাটা অবিলম্বে হবে না। হিজবুলস্নাহ যতদিন সীমান্তের কাছে থাকবে, ততদিন বেসামরিক মানুষদের শহরগুলোতে ফেরা সম্ভব হবে না। এখন পর্যন্ত এই সীমান্তে ইসরাইলের ৯ জন সেনা ও ছয়জন বেসামরিক মানুষ মারা গেছেন। ইসরাইলের সেনাবাহিনীর মতে, হিজবুলস্নাহর কাছে এক লাখ ৫০ হাজার অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র আছে।

ইয়োগেভের কাহিনী

মেইতাল ইয়োগেভ এখন সীমান্ত-শহর থেকে দূরে একটি হোটেলের দুটি ঘর নিয়ে থাকেন। ৭ অক্টোবর পর্যন্ত তিনি তার পার্টনার ও দুটি শিশুর সঙ্গে লেবানন সীমান্তের কাছের একটি শহরে থাকতেন। তিনি বলেছেন, 'নিজের ঘরবাড়িই হলো আমাদের কাছে সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা। সীমান্তের কাছে থাকা সত্ত্বেও এটা মনে হয়েছে। হঠাৎ বুঝতে পারি সেটা আর নিরাপদ নয়।' তার প্রথমে মনে হয়েছিল, কয়েকদিনের মধ্যে আবার নিজের বাড়িতে ফিরতে পারবেন। কিন্তু তা হয়নি। ইয়োগেভ বলেন, 'ভবিষ্যতে কী হবে, তা বলতে পারছি না। কী করে হামাস যোদ্ধাদের সঙ্গে চুক্তি হবে, তাও বুঝতে পারছি না। এটা ইসরাইলের অস্তিত্বের লড়াই।'

যুদ্ধের শুরুতেই তার পার্টনার সেনাবাহিনীর রিজার্ভ ফোর্সে যোগ দিয়েছে। দিন পনেরো আগে তিনি বাড়ি এসেছিলেন। কিন্তু তাকে এবার উত্তর ইসরাইলে যেতে বলা হয়েছে। ইয়োগেভ জানিয়েছেন, 'আমার আবার ভয় করছে। আমার রাগ হচ্ছে। রাজনীতিবিদদের ওপর রাগ হচ্ছে। কী করে এটা থামবে? আমাদের কী হবে?' তথ্যসূত্র : ডিডাবিস্নউ নিউজ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে