ইউক্রেনে তিন বছর ধরে চলা যুদ্ধের অবসান ঘটাতে আজ সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। তবে এই বৈঠকে ইউক্রেনের কোন প্রতিনিধিকে আমন্ত্রণ জানান হয়নি। রুশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে যোগ দিতে সোমবার সৌদি আরব পৌঁছেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ফোনালাপের ধারাবাহিকতায় এই বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন ও ক্রেমলিনের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনে মধ্যস্থতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে রিয়াদ। এছাড়া পৃথকভাবে গাজা উপত্যকার ভবিষ্যৎ নিয়ে ওয়াশিংটনের সঙ্গে আলোচনায় যুক্ত আছে রিয়াদ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মার্কিন আইনপ্রণেতা এবং অন্য এক ব্যক্তির বরাতে রয়টার্স জানিয়েছে, রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের সঙ্গে শনিবার ফোনে আলাপ করেছেন রুবিও। সৌদি আরবে রুশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে তার সঙ্গে যোগ দেবেন মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ এবং হোয়াইট হাউজের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক প্রতিনিধি স্টিভ উইটকফ। রাশিয়ার পক্ষ থেকে বৈঠকে যোগ দিতে যাওয়া কর্মকর্তাদের পরিচয় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্রের বরাতে রুশ সংবাদমাধ্যম কোম্মেরসান্ট জানিয়েছে, রিয়াদে মঙ্গলবার ওই বৈঠক আয়োজিত হতে যাচ্ছে। গত কয়েক বছরের মধ্যে রুশ ও মার্কিন শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রথম এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে দুই দেশের প্রেসিডেন্টের মধ্যে আলোচনার মঞ্চ তৈরি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। রবিবার রুবিও বলেছেন, সামনের দিনগুলোতেই নিশ্চিত হওয়া যাবে যে, ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠার বিষয়ে পুতিন কতটুকু অঙ্গীকারবদ্ধ। ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থান করছেন। রবিবার সংযুক্ত আরব আমিরাতে পৌঁছে তিনি জানিয়েছেন, সৌদি ও তুরস্কের সঙ্গে তার বৈঠকের পরিকল্পনা আছে, তবে নির্দিষ্ট দিনক্ষণ এখনও ঠিক হয়নি। তবে রুশ বা মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি আমন্ত্রণ পেয়েছেন কিনা, সেটা নিশ্চিত করতে পারেনি। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, ইউক্রেন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার কোনও সিদ্ধান্ত কখনোই মেনে নেবেন না। এমনকি ইউক্রেন নিয়ে দুই পরাশক্তির মধ্যে যে কোনও চুক্তিও প্রত্যাখ্যান করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। এছাড়া ইউক্রেনকে বাদ দিয়ে রুশ প্রোসডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে চুক্তি করা নিয়েও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে কার্যত চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন জেলেনস্কি। রোববার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।
বার্তাসংস্থাটি বলছে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রোববার যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার মধ্যে এমন যে কোনও চুক্তিকে প্রত্যাখ্যান করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যেটাতে ইউক্রেন অন্তর্ভুক্ত নয়। তার মতে, ইউক্রেনের সরাসরি অংশগ্রহণ ছাড়া কোনও বিশ্ব নেতাই ইউক্রেনের ভাগ্য নির্ধারণ করতে পারে না। জেলেনস্কি এনবিসি নিউজকে বলেন, "সুতরাং ইউক্রেন সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে কোনও সিদ্ধান্ত আমি কখনোই মেনে নেব না। আমাদের জনগণ এবং আমাদের প্রাপ্তবয়স্ক ও শিশু এবং সবাই (এমন কিছু মানবে না)। এটা হতে পারে না, আমাদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনে এই যুদ্ধ চলছে এবং এই যুদ্ধে আমাদের জনগণের প্রাণহানি হচ্ছে।" তিনি আরও বলেন, "ইউক্রেনকে দেওয়া সমস্ত সমর্থন, ইউক্রেনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ঐক্য, দ্বিদলীয় ঐক্য এবং দ্বিদলীয় সমর্থনের জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। আমরা এই সবের জন্যই কৃতজ্ঞ। কিন্তু বিশ্বে এমন কোনও নেতা নেই যিনি আমাদের ছাড়া, আমাদের সম্পর্কে পুতিনের সাথে সত্যিই একটি চুক্তি করতে পারে।"
ইউক্রেনের "সবচেয়ে বড় কৌশলগত অংশীদার" যুক্তরাষ্ট্রকে ইঙ্গিত করে জেলেনস্কি বলেন, "আমরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাথে আমাদের অভিন্ন পরিকল্পনা শেয়ার করতে প্রস্তুত"। কিয়েভেরও ইউরোপের সমর্থন প্রয়োজন বলে জোর দিয়ে জেলেনস্কি বলেন, আলোচনার টেবিলে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, ইউক্রেন এবং রাশিয়ার থাকা উচিত। ন্যাটো থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য প্রত্যাহারের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে জেলেনস্কি বলেন, "যুক্তরাষ্ট্র ন্যাটো থেকে বেরিয়ে গেলে রাশিয়ার ইউরোপ দখল করার ঝুঁকি ১০০ শতাংশ। সমস্ত ইউরোপ নয়। তারা সেই দেশগুলো দিয়ে শুরু করবে, যারা আমাদের বড় বন্ধু, আর ছোট দেশগুলো যেগুলো সোভিয়েত ইউনিয়নে ছিল সেগুলোও। তারা শুরু করবে এবং আমরা দেখব কী জবাব দেওয়া হয়।"
তিনি বলেন, "কিন্তু ইউরোপ কোনও জবাব দেবে না, কারণ তাদের কাছে তা নেই। তারা আত্মরক্ষা শুরু করবে। প্রতিটি দেশ নিজেকে রক্ষা করবে। এবং এই মুহূর্তে, রাশিয়া এই সমস্ত সাফল্য পাবে। আমি জানি না তারা কি চাইবে, ইউরোপের ৩০ শতাংশ বা ৫০ শতাংশ। আমি জানি না কেউ জানে না, তবে তাদের এই সম্ভাবনা থাকবে।"