শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক উষ্ণায়নে হুমকিতে বাংলাদেশ

বৈশ্বিক উষ্ণায়নের সমাধান করতে হলে মানুষকে সচেতন হতে হবে, গাড়ি, কারখানার ধোঁয়া ইত্যাদির ব্যবহার কমাতে হবে, সিএফসি নির্গত হয় এমন যন্ত্রপাতির ব্যবহার কমাতে হবে এবং জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
আরাফাত রহমান
  ০৮ মে ২০২১, ০০:০০
ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক উষ্ণায়নে হুমকিতে বাংলাদেশ

বিশ্ব উষ্ণায়ন হলো জলবায়ু পরিবর্তনের একটি বিশেষ ঘটনা। বর্তমান বিশ্বে পরিবেশগত প্রধান সমস্যাগুলোর এটি অন্যতম। এটি জলবায়ুগত এমন এক পরিবর্তন আসন্ন করছে- যা প্রক্রিয়াগতভাবে গ্রিনহাউস প্রভাবের সঙ্গে তুলনীয়। সমস্যাটিকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নিয়ে আসা অত্যন্ত জরুরি এজন্য যে, পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের রাসায়নিক গঠন একশত বছর পূর্বের অবস্থা থেকে ইতোমধ্যে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে এবং প্রকৃতপক্ষে বর্তমানের প্রযুক্তিগত অর্জনের মাধ্যমে নিকট ভবিষ্যতে এই পরিবর্তিত অবস্থাকে পূর্বের অবস্থানে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।

একশত বছর পূর্বের গড় তাপমাত্রার তুলনায় বর্তমান বিশ্বে গড় তাপমাত্রা প্রায় ০.৬০ সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে। কম্পিউটার প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে জলবায়ুগত পরিবর্তন সম্পর্কে ধারণা করা হয় যে, ২১ শতকের সমাপ্তিকালের মধ্যে বিশ্ব তাপমাত্রায় আরও অতিরিক্ত ২.৫০ থেকে ৫.৫০ সেলসিয়াস তাপমাত্রা যুক্ত হতে পারে। ফলে, পৃথিবীপৃষ্ঠের পানির স্ফীতি, অতু্যচ্চ পর্বতের বরফশীর্ষ এবং মেরু অঞ্চলের হিমবাহের দ্রম্নত গলনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের পানির উচ্চতার ক্ষেত্রে একটি বৃহৎ পরিবর্তন ঘটতে পারে।

সাম্প্রতিক বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে বায়ুমন্ডলে বিশেষভাবে নির্দিষ্ট গ্রিনহাউস গ্যাসসমূহের উপস্থিতির মাত্রার উত্তরোত্তর বৃদ্ধিকে। বায়ুমন্ডলীয় এই গ্যাসসমূহ হ্রস্বতরঙ্গের সৌর রশ্মি পৃথিবীতে পৌঁছতে বাধার সৃষ্টি করে না, অথচ দীর্ঘতরঙ্গের অবলোহিত বিকিরণ পৃথিবী থেকে বহির্বিশ্বমন্ডলে যেতে বাধার সৃষ্টি করে, যার ফলে পৃথিবীপৃষ্ঠ উষ্ণ হয়ে ওঠে। বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য দায়ী গ্যাসগুলো হলো কার্বনডাই-অক্সাইড, নাইট্রাস অক্সাইড, মিথেন, ক্লোরোফ্লোরোকার্বন এবং বায়ুমন্ডলের জলীয়বাষ্প। শিল্পায়ন, কৃষি সম্প্রসারণ, বিশেষত আর্দ্র ধান চাষ, স্বয়ংক্রিয় যানবাহনের সংখ্যাগত বৃদ্ধি, বনাঞ্চল উজাড় হওয়া- এ সবগুলোই প্রথম চারটি গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধিতে তাৎপর্যময় ভূমিকা রাখে।

বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে বাংলাদেশে জলবায়ুগত পরিবর্তন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতার পরিবর্তন এবং জনসংখ্যার ঘনত্ব ও বণ্টনের ধরনে পরিবর্তন সংঘটিত হতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। জলবায়ু পরিবর্তন প্রক্রিয়ায় সাধারণ আবর্তন মডেলসমূহ ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা ভবিষ্যদ্বাণী করেন যে, বায়ুমন্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ দ্বিগুণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রার পরিবর্তনের পরিসীমাটি হবে ১.৫০ থেকে ৪.৫০ সেলসিয়াস। অবশ্য তখন থেকে জলবায়ু পরিবর্তনের আন্তঃসরকারি পর্ষদের মাধ্যমে একটি নিম্নগামী পর্যালোচনায় ধারণা করা হয় যে, এই পরিবর্তনের মাত্রার পরিসীমা ৩.৩০ সেলসিয়াস। এই নিম্নগামী পর্যালোচনা বায়ুমন্ডলের স্ট্রাটোসফেয়ারের ওজোন স্তর হ্রাস এবং বায়ুমন্ডলে সালফেট এরোসলের উপস্থিতির ফলে বায়ুস্তর শীতল হওয়ার সম্ভাবনার বিষয়টি বিবেচনায় এনেছে।

বিগত ১০০ বৎসরে তাপমাত্রা ০.৫০ সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে, কিন্তু পরবর্তী ৫০ বছরে, অর্থাৎ ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে তাপমাত্রা ১.৫-২০ সেলসিয়াস পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে এমন ধারণা করা হয়। বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার অনুযায়ী পানিচক্রের তীব্রতার বৃদ্ধি ঘটে এবং বাষ্পীভবনের হার ১২% পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। পর্যায়ক্রমে তা বিশ্বব্যাপী অধঃক্ষেপণ যেমন, বৃষ্টিপাত, তুষারপাত, শিশিরপাত ইত্যাদির মাত্রা বৃদ্ধি করবে। এক্ষেত্রে অধঃক্ষেপণের পরিমাণগত দিক থেকে আঞ্চলিক বিভিন্নতা থাকতে পারে, তবে বাংলাদেশে বৃষ্টিপাত বৃদ্ধি পাবে। আইপিসিসি উদ্ভাবিত জলবাযু মডেল নির্দেশ করছে যে, বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে শতকরা ১০ থেকে ১৫ ভাগ অধিক বৃষ্টিপাতের সম্মুখীন হবে। বাংলাদেশ প্রায়শই ধ্বংসাত্মক বন্যাকবলিত হয়। গত দুই দশকের মধ্যে ব্যাপক বন্যার ঘটনা ঘটে ১৯৮৭, ১৯৮৮ এবং ১৯৯৮ সালে। এসব বন্যায় দেশের অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ঘটে এবং শস্যক্ষেত্রের ফসল বিনষ্ট হয়। এ সময়ে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বৃদ্ধি পরিস্থিতিকে আরও মারাত্মক করে তোলে।

বিজ্ঞানীরা আরও আশঙ্কা করছেন যে, বিশ্ব উষ্ণায়ন গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঝড়সমূহের সংখ্যা এবং প্রচন্ডতা বৃদ্ধি করবে। ২৭০ সেলসিয়াসের অধিক সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির সহায়ক। বিশ্ব উষ্ণায়ন বর্তমান সময়ের চেয়ে সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা আরও বৃদ্ধি করবে, ফলে ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা ও তীব্রতাও অনেক বৃদ্ধি পাবে। ১৯৯১ সালে এরূপ এক ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশে আঘাত হানলে ১,৫০,০০০ মানুষের মৃতু্য হয় এবং এই আকস্মিক দুর্যোগ পশুসম্পদ ও অন্যান্য সম্পদের প্রচুর ক্ষতি সাধন করে। একটি উষ্ণতর জলবায়ু বন্যা এবং ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সংখ্যা বৃদ্ধির মাধ্যমে এ ধরনের ধ্বংসযজ্ঞের প্রকোপ আরও বৃদ্ধি করবে এবং তাতে দেশের উন্নয়ন প্রচেষ্টা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে।

স্থানীয় পর্যায়ে প্রতিটি এলাকায় জোয়ারভাটা, বায়ুমন্ডলীয় চাপ এবং বাতাসের বেগের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের অবিরাম পরিবর্তন ঘটে, তবে দীর্ঘমেয়াদি সমুদ্রপৃষ্ঠ পরিবর্তন একমাত্র বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঘটে থাকে। বিশ্ব উষ্ণায়ন সমুদ্রের পানির একটি তাপগত স্ফীতি ঘটাবে। তাপমাত্রার বৃদ্ধি মেরু ও পর্বতের বরফ শীর্ষ এবং বরফের চাঁই গলনেও ভূমিকা রাখবে। বদ্বীপীয় ভূমি হিসেবে বাংলাদেশের একটি বিশাল এলাকা সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে জলমগ্ন হবে। দেশটির কত অংশ সমুদ্রগর্ভে হারিয়ে যেতে পারে তা নির্ভর করবে এর সঙ্গে সম্পর্কিত সমুদ্রপৃষ্ঠ পরিবর্তনের ওপর। একটি টাস্কফোর্স প্রতিবেদন বলছে যে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা এক মিটার বৃদ্ধি পেলে প্রায় ২২,৮৮৯ বর্গ কি.মি. ভূমি সমুদ্রে হারিয়ে যাবে, যা বাংলাদেশের মোট এলাকার প্রায় ১৫.৮%।

একটি নিম্নাঞ্চলীয় এবং উচ্চ জনসংখ্যা ঘনত্বের দেশ হিসেবে বাংলাদেশ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। জোয়ারভাটার তীব্রতা বৃদ্ধির কারণে উপকূলীয় এলাকাসমূহে ভূমিক্ষয় এবং পস্নাবনের মতো ঘটনা ঘটবে। সমুদ্রের পানিবৃদ্ধি জোয়ারের সময় লোনাপানিকে আরও অভ্যন্তর ভূমিতে অনুপ্রবেশে সহায়তা করবে। কৃষি জমি এবং মিঠাপানির প্রাণী ও উদ্ভিদ ধ্বংস হবে। সমুদ্র-তটরেখা মূলভূমির অভ্যন্তরে প্রবেশের ফলে উপকূলীয় সীমানা আকৃতির পরিবর্তন ঘটবে। এতে বাংলাদেশের ভূভাগ সংকুচিত হবে।

ধারণা করা হয় যে, ২১০০ সালের মধ্যে পৃথিবীপৃষ্ঠের তাপমাত্রা ১.৮০ থেকে ৬.৩০ সেলসিয়াসের মতো বৃদ্ধি পেতে পারে। এর ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ০.৫ মিটার বৃদ্ধি পাবে এবং মিসিসিপি থেকে বাংলাদেশে উচ্চ মাত্রায় জনসংখ্যা অধু্যষিত উপকূলীয় এবং বদ্বীপ এলাকাসমূহে ব্যাপক পস্নাবনের হুমকি দেখা দেবে। জলবায়ুগত দুর্যোগসমূহ যেমন, হারিকেন, ঘূর্ণিঝড় ও খরা ঘনঘন দেখা দেবে এবং এদের তীব্রতা বৃদ্ধি পাবে। গ্রীষ্মমন্ডলীয় রোগসমূহ যেমন, ম্যালেরিয়া এবং কলেরা বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে বিষুবরেখা অঞ্চলের উত্তর ও দক্ষিণে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে বাংলাদেশে অধিক বৃষ্টিপাত, ব্যাপক বন্যা, ভয়ংকর ঘূর্ণিঝড় প্রভৃতি জলবায়ুগত পরিবর্তন সাধিত হতে পারে। পরিবেশ সংরক্ষণ ও টেকসই উন্নয়ন কৌশল পৃথিবী ও তার পরিবেশকে এবং বাংলাদেশের মতো দেশসমূহ বিশ্ব উষ্ণায়ন ঘটিত বিপর্যয় থেকে রক্ষা করতে পারে। নাসা-র গডার্ড ইনস্টিটিউট ফর স্পেস স্টাডিজ-এর করা অনুমিত হিসাব অনুযায়ী ১৮০০ শতকের শেষের দিক থেকে নির্ভরযোগ্য তাপমাত্রা মাপক যন্ত্রের ব্যাপক বিস্তার লাভের পর ২০০৫ সাল ছিল সবচেয়ে উষ্ণ বছর- যা ইতোপূর্বে লিপিবদ্ধ উষ্ণতম ১৯৯৮ সাল থেকে এক ডিগ্রির কয়েক শতাংশ বেশি উষ্ণ। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা এবং যুক্তরাজ্য জলবাযু গবেষণা ইউনিট, একটি অনুমিত হিসাব থেকে ২০০৫ সালকে ১৯৯৮ সালের পরে দ্বিতীয় উষ্ণতম বছর হিসেবে বিবৃত করে।

কার্বন ডাই-অক্সাইড এবং কার্বন মনোক্সাইড, সালফার ডাই-অক্সাইড এবং সালফারের অন্যান্য অক্সাইডসমূহ, নাইট্রিক অক্সাইড, ক্লোরোফ্লুওরো কার্বন ইত্যাদি গ্রিনহাউস গ্যাসগুলো পৃথিবীর স্থান থেকে তাপ বিকিরণ করে। এই তাপ, ইনফ্রারেড বিকিরণ রূপে, গ্রহের বায়ুমন্ডলে এই গ্যাসগুলো দ্বারা শোষিত এবং নির্গত হয় ফলে নিম্নবায়ুমন্ডল এবং পৃষ্ঠকে উষ্ণ করে। পৃথিবীতে স্বাভাবিকভাবেই গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণযুক্ত বায়ুমন্ডলে পৃষ্ঠের কাছে বায়ু তাপমাত্রা প্রায় ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম থাকে- যা তাদের অনুপস্থিতিতে কমাবে। পৃথিবীর বায়ুমন্ডল ছাড়া, পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা পানির তাপমাত্রার চেয়েও কম হবে। প্রধান গ্রিনহাউস গ্যাসগুলো গ্রিনহাউস প্রভাবের প্রায় ৩৬-৭০% কারণ সৃষ্টি করে।

বৈশ্বিক উষ্ণায়নের সমাধান করতে হলে মানুষকে সচেতন হতে হবে, গাড়ি, কারখানার ধোঁয়া ইত্যাদির ব্যবহার কমাতে হবে, সিএফসি নির্গত হয় এমন যন্ত্রপাতির ব্যবহার কমাতে হবে এবং জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

বায়ুমন্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইডের বৃদ্ধি মহাসাগরগুলোতে দ্রবীভবনের হার বাড়ায়। দ্রবীভূত কার্বন ডাই-অক্সাইড জলের সঙ্গে বিক্রিয়া করে কার্বনিক অ্যাসিড উৎপন্ন করে এবং ফলে মহাসাগরের অম্স্নায়ন ঘটে। কার্বন ডাই-অক্সাইড বিকিরণগত চাপ প্রয়োগ করে ভূ-পৃষ্ঠের কাছাকাছি এলাকায় যে উষ্ণায়ন সৃষ্টি করে, সেই একই প্রক্রিয়া অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবে স্ট্র্যাটোমন্ডলকে শীতল করে। আর এই শীতলায়ন ওজোন স্তরের ক্ষয় ও ওজোন ফাটলের সংখ্যা বৃদ্ধি করে।

বিপরীতভাবে, ওজোন স্তরের ক্ষয় জলবায়ু ব্যবস্থার ওপর বিকিরণগত চাপ সৃষ্টি করে। এখানে দুইটি বিপরীত ক্রিয়া কাজ করে: ওজোন স্তর ক্ষয়ে যাওয়ায় আরও বেশি সৌর বিকিরণ পৃথিবীতে আসতে পারে, ফলে স্ট্র্যাটোমন্ডলের পরিবর্তে ট্রপোমন্ডল উত্তপ্ত হয়। আবার এর ফলে শীতলীকৃত স্ট্র্যাটোমন্ডল দীর্ঘ তরঙ্গের বিকিরণ নিচে ট্রপোমন্ডলে পাঠায়- যা ট্রপোমন্ডলকে শীতল করে। সব মিলিয়ে দেখা গেছে, শীতলায়ন ক্রিয়ার প্রভাবই বেশি। বিজ্ঞানীরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে বিগত দুই দশকে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের উলেস্নখযোগ্য ক্ষয় ভূতলস্থ ট্রপোস্ফিয়ারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

গ্রিনহাউস এফেক্টের একটি অন্যতম ধারণা ছিল যে, স্ট্র্যাটোমন্ডল ঠান্ডা হয়ে যাবে। যদিও এই ঠান্ডা হয়ে যাওয়ার ব্যাপারটি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। গ্রিনহাউস গ্যাসের কারণে সৃষ্ট পরিবর্তন এবং ওজন শূন্যকরণের কারণে সৃষ্ট পরিবর্তনকে আলাদা করা সহজ ব্যাপার নয়, যদিও উভয়েই এই শ্বৈত্যকরণে সহায়তা করে।

অগণিত স্ট্র্যাটোমন্ডলীয় মডেল তৈরি করার মাধ্যমে এটা হয়তো সম্ভব হবে। ওজন হ্রাস পেলে তা অতিবেগুনির মাত্রা বাড়ানোর দিকে নিয়ে যায়। অতিবেগুনি তেজষ্ক্রিয়তাই সম্ভবত সামুদ্রিক শ্যাওলার ধ্বংসের জন্য দায়ী- যা সমুদ্রের গভীরে ডুবন্ত কার্বন ডাই-অক্সাইডের মতো কাজ করে। তাই বাড়তি অতিবেগুনি বৈশ্বিক কার্বন ডাই-অক্সাইডের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।

আরাফাত রহমান : কলাম লেখক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে