বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার বাংলাদেশ

গত ১৪ বছরে দেশ আর্থসামাজিক উন্নয়নের এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। আওয়ামী লীগ সরকার ধারাবাহিকভাবে সরকার পরিচালনায় আছে বলেই এসব অর্জন সম্ভব হয়েছে। দেশকে উন্নত-স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয়ে কাজ করছে সরকার। এ জন্য পরিকল্পনা-২০৪১ প্রণয়ন করে বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। বর্তমান সরকারের সামগ্রিক প্রচেষ্টায় আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে শামিল হতে পেরেছে।
হীরেন পন্ডিত
  ০৯ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

আওয়ামী লীগকে তৃণমূল বিস্তৃত জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলে পরিণত করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। তার নৃশংস হত্যাকান্ডের পর নির্বাসিত কন্যা শেখ হাসিনা চরম দুঃসময়ে ঐক্যের প্রতীক হিসেবে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী হিসেবে হাল ধরেছেন। গণতন্ত্রের সংগ্রামে দীর্ঘ পথ হেঁটেছেন। বার বার মৃতু্যর মুখ থেকে ফিরে এসেছেন। আওয়ামী লীগকে জনপ্রিয় দল হিসেবে ২১ বছর পর ক্ষমতায় এনেছেন এবং গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার জন্য নিরলস কাজ করছেন। আওয়ামী লীগ এ দেশের স্বাধিকার আন্দোলন থেকে শুরু করে বাংলাদেশের যে কোনো গণতান্ত্রিক আন্দোলনে মানুষের অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক মুক্তির পাশাপাশি সকল রকম শোষণ, বঞ্চনা, অন্যায়, অবিচার, জুলুমের বিরুদ্ধে সবসময় রাজনৈতিকভাবে সোচ্চার, প্রতিবাদী ভূমিকা রেখে এসেছে এবং এখনো রাখছে। এই দল যখন ক্ষমতায় থাকে তখন মানুষের ভাগ্যের উন্নতি ঘটে। এ দলের জন্মকাল থেকে শুরু করে এই ৭৩ বছরের ইতিহাস সেই সত্যের স্বাক্ষর বহন করে। এই উদ্যোগ শেখ হাসিনাকে সুযোগ করে দিয়েছিল দলকে ঐক্যবদ্ধ করার। সেই ঐক্যবদ্ধ শক্তি নিয়ে দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে বিজয় লাভ করে ২১ বছর দলকে ক্ষমতায় নিয়ে আসেন। ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করে শেখ হাসিনা যে অসম্ভব কাজটি সম্ভব করে তুলেছিলেন সেটি হচ্ছে, তার পরিবারের ঘাতকদের বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানো এবং পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসা। আর বাঙালি জাতির আদর্শকে এগিয়ে নিয়ে যাবার সুযোগ হাতে এলো। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মানুষের সার্বিক কল্যাণ, উন্নয়ন ও মুক্তির পথ ও পাথেয় হয়ে কাজ শুরু করলেন। প্রমাণ করলেন বাংলাদেশের গণতন্ত্র বিকাশে তার কোনো বিকল্প নেই। শেখ হাসিনার সততা, নিষ্ঠা, ঐকান্তিকতা, যুক্তিবাদী মানসিকতা, দৃঢ় মনোবল, প্রজ্ঞা ও অসাধারণ নেতৃত্ব বাংলাদেশকে বিশ্ব পরিমন্ডলে অন্যরকম উচ্চতায় প্রতিষ্ঠিত করেছে এবং তিনি বিশ্বনন্দিত নেত্রী হিসেবে পরিচিত পেয়েছেন। বাংলাদেশ ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বের ২৯তম এবং ২০৫০ সাল নাগাদ ২৩তম অর্থনীতিতে উন্নত দেশে পরিণত হবে। আর ২০২৬ সালেই বাংলাদেশ 'মধ্যম আয়ের দেশ' এবং ২০৪১ সালেই 'উন্নত দেশ' হিসেবে বিশ্বে আত্মপ্রকাশ করবে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে তার বড় প্রমাণ হলো গত কয়েক বছর ধরে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে। বর্তমান মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৮২৪ ডলার। অর্থনৈতিক অগ্রগতির সূচকে বিশ্বের শীর্ষ কয়েকটি দেশের একটি আজ আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। মেট্রোরেল ও পদ্মা সেতু উদ্বোধন দু'টিই উন্নয়নের মাইলফলক। সফলভাবে কারোনা মহামারি মোকাবিলা, শিক্ষা, যোগাযোগ অবকাঠামো, গ্যাস, বিদ্যুৎ, নারী শিক্ষা, চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা শতভাগ বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যসেবা, বিনামূল্যে বই বিতরণ, খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, সামাজিক কর্মসূচির আওতায় পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠী, অসহায়, বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, তালাকপ্রাপ্ত নারীদের সহায়তা, অটিজম, অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা প্রদান, আশ্রয়ণ প্রকল্প, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প, নারীর ক্ষমতায়নসহ ও বিভিন্ন সেক্টরের সামগ্রিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন সরকার। একটি দেশের উন্নয়নে বিদু্যতের ভূমিকা অনস্বীকার্য। অনবরত বিদু্যৎ ঘাটতি দেশের ধাবমান উন্নতির চাকাকে মন্থর করে দিয়েছিল। অর্থাৎ দেশটিতে দীর্ঘকালের স্থায়ী বিদু্যৎ সমস্যা, যার কোনো সমাধান পূর্ববর্তী সরকারগুলো দিতে পারেনি- আওয়ামী লীগ সরকার অত্যধিক ব্যয়ে হলেও বিদু্যৎ উৎপাদন করে তা জনগণের দুয়ারে পৌঁছে দিয়েছে। এ উৎপাদন শুধু গৃহস্থালি কাজেই নয়, বিদু্যৎনির্ভর অন্যান্য মাধ্যমকেও সচল রেখেছে, যা দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল করেছে। অপরদিকে বেড়েছে সরকারের রাজস্ব আয়ও। প্রায় সর্বত্রই দুর্নীতি অভিযোগ থাকলেও সরকারকে সবচেয়ে স্বস্তি দিয়েছে কৃষি খাত ও তার ব্যবস্থাপনা। আমাদের মতো জনবহুল দেশে সীমিত কৃষিযোগ্য ভূমির সতর্ক ও যৌক্তিক ব্যবহার বাঞ্ছনীয়। আমাদের দেশে সেটা হয়েছে। ফলে আমাদের কৃষিপণ্যের আমদানি নির্ভরতা অনেকাংশেই কমে গেছে। আর এ কৃষি বিপস্নবের কারণেই ১৬ কোটি মানুষের দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা গেছে, যা দেশের জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক একটি দিক। আজকের এই কৃষি বিপস্নবের শতভাগই আওয়ামী লীগের উদ্ভাবন। আমাদের রাজস্ব, বিশেষ করে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান উৎস তৈরি পোশাক এবং জনশক্তি রপ্তানি। ব্যক্তি মালিকানায় শুরু হলেও সরকারের আগ্রহেই এ দুই খাত যথেষ্ট গতি অর্জন করেছে। ফলে দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি গতি পেয়েছে। সেই সঙ্গে দেশের বেকার সমস্যারও অনেকটা সমাধান হয়েছে। রপ্তানিযোগ্য এমন সব পণ্য রয়েছে, যা শতভাগ ব্যক্তি উদ্যোগে রপ্তানি করা যায় না। এক্ষেত্রে সরকারের তৎপরতা চোখে পড়ার মতো। বিদেশী ক্রেতাদের কাছে পোশাক তৈরির কর্মপরিবেশকে প্রহণযোগ্য রাখতে সরকার ও মালিকপক্ষের এখনো অনেক কিছু করার রয়েছে। বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু থেকে বরাদ্দ বাতিল করলে আওয়ামী লীগ সরকার সেটাকে চ্যালেঞ্জরূপে গ্রহণ করে। নিজস্ব অর্থায়নে সরকার সেতুটি নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করে। সেতুটির অস্তিত্বই এখন আমাদের সবার কাছে মুখ্য। এই সেতু পাল্টে দিচ্ছে আমাদের অর্থনীতি। গত কয়েক বছর ধরে আওয়ামী লীগ সরকার অবকাঠামো নির্মাণে ব্রতী হয়েছে। ফ্লাইওভার, আন্ডারপাস ও মেট্রোরেল ইত্যাদি নির্মাণ করা হয়েছে। ডিসেম্বর থেকে চলছে কাঙ্ক্ষিত ও স্বপ্নের মেট্রোরেল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোভিড-১৯ মহামারি থেকে জীবন বাঁচাতে মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসিত হয়েছেন। মার্কিন প্রভাবশালী ফোর্বস ম্যাগাজিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিভিন্ন উদ্যোগের প্রশংসা করেছে। এর অনুসরণ করে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামও প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকার প্রশংসা করেছে। একটানা বেশি সময় দেশ শাসনের সুযোগ পেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নতি ঘটাতে সক্ষম হয়েছেন। তার স্বীকৃতি জাতিসংঘের এই এসডিজি অগ্রগতি পুরস্কার ২০২১। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমন অনেক স্বীকৃতি তিনি পেয়েছেন। এর আগে কমনওয়েলথভুক্ত দেশের সরকার প্রধানদের মধ্যে অন্যতম সফল এবং অনুকরণীয় তিনজন নারী সরকার প্রধানের একজন নির্বাচিত হয়েছেন আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন তা প্রধানমন্ত্রী কঠোর পরিশ্রম ও মেধা-মনন দিয়ে বাস্তবায়িত করে যাচ্ছেন এক নাগাড়ে। বিশ্বনেত্রীর হাত ধরেই এই দেশ সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার মতো ঝকঝকে উন্নত দেশে রূপান্তরিত হবে অল্প সময়েই। একমাত্র শেখ হাসিনাই পারবেন উন্নত, সমৃদ্ধ ও শান্তিময় বাঙালি জাতি ও বাংলাদেশ গড়ে তুলতে। সন্তানের থেকে বেশি মমতায় ভালোবেসেছেন দেশকে। পিতার অসমাপ্ত কাজ যে সমাপ্ত করতে হবে। নির্মাণ করতে হবে একটি অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক আর ভবিষ্যতের আধুনিক বাংলাদেশ। এটি বর্তমান প্রজন্মেরও প্রত্যাশা। গত ১৪ বছরে দেশ আর্থসামাজিক উন্নয়নের এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। আওয়ামী লীগ সরকার ধারাবাহিকভাবে সরকার পরিচালনায় আছে বলেই এসব অর্জন সম্ভব হয়েছে। দেশকে উন্নত-স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয়ে কাজ করছে সরকার। এ জন্য পরিকল্পনা-২০৪১ প্রণয়ন করে বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। বর্তমান সরকারের সামগ্রিক প্রচেষ্টায় আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে শামিল হতে পেরেছে। \হদেশ আজ খাদ্যশস্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। গত বছর ৪ কোটি ৪ লাখ মেট্রিক টন চালসহ ৪ কোটি ৭২ লাখ মেট্রিক টন দানাদার শস্য উৎপাদিত হয়েছে। মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, সবজি, ফলসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্য উৎপাদন ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। দারিদ্র্যের হার ৪০ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে নেমে এসেছে। মাথাপিছু আয় ৫৪৩ ডলার থেকে ২ হাজার ৮২৪ ডলারে উন্নীত হয়েছে। সাক্ষরতার হার ৪৫ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৭৫ দশমিক ২ ভাগ। মাতৃমৃতু্য এবং শিশুমৃতু্যর হার হ্রাস পেয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার ধারাবাহিকভাবে সরকার পরিচালনায় আছে বলেই এসব অর্জন সম্ভব হয়েছে। সরকারের সময়ে যোগাযোগ অবকাঠামো খাতে এসেছে বৈপস্নবিক পরিবর্তন। অনেক বাধাবিপত্তি পেরিয়ে গত জুন মাসে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করা হয়েছে। এই সেতু দক্ষিণাঞ্চলের ১৯ জেলাকে রাজধানী ঢাকা এবং দেশের অন্য অংশের সঙ্গে সড়কপথে সরাসরি যুক্ত করেছে। অক্টোবর মাসে উদ্বোধন করা হয়েছে দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ পায়রা সেতু। গত নভেম্বরে দেশের ২৫টি জেলায় ১০০টি সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। দেশের অনেকগুলো মহাসড়ক চার বা তদূর্ধ্ব লেনে উন্নীত করা হয়েছে। অন্যগুলোর কাজ চলছে। ঢাকায় মেট্রোরেল চালু হয়েছে এবং চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল খুব শিগগিরই খুলে দেওয়া হবে। পারমাণবিক বিদু্যৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে এবং স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণ করা হয়েছে এখন স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-২ এর জন্য কাজ চলছে। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত থেকে আমাদের প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন রক্ষা পায় এবং উন্নত ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারে, সে জন্য ডেল্টা পস্ন্যান-২১০০ প্রণয়ন করা হয়েছে। গোটা বিশ্ব আজ এক অস্থিতিশীল অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে। ২০১৯ সালের শেষ দিকে করোনাভাইরাস মহামারির কবলে পড়ে বিশ্ব। ২০২০ এবং ২০২১ এই দুই বছরে বিশ্ব অর্থনীতিতে এক গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হয়। অনেক দেশের অর্থনীতিতে ধস নামে। আমাদের অর্থনীতিও ক্ষতির মুখে পড়ে। করোনাভাইরাস মহামারির সেই ক্ষতি কাটিয়ে যখন আমাদের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিল, ঠিক তখনই শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। আর এই যুদ্ধ শুধু অস্ত্রের যুদ্ধ নয়; সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভয়ংকর অর্থনৈতিক যুদ্ধ। অর্থনৈতিক যুদ্ধের প্রভাব কোনো একক দেশের গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না, ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বব্যাপী। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ-পরবর্তী অর্থনৈতিক অবরোধ-পাল্টা অবরোধ বিশ্ব অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। সময়োচিত পদক্ষেপ গ্রহণ করে করোনাভাইরাসের কারণে মানুষের প্রাণহানি যেমন কমানো গেছে, তেমনি অর্থনীতিকে সচল রাখতে সকল প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে। লক্ষ্য ছিল মানুষের জীবন বাঁচানোর পাশাপাশি তাদের জীবিকা সচল রাখা। করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার জন্য জরুরি ভিত্তিতে বিভিন্ন হাসপাতালে ১৫ হাজার শয্যা বৃদ্ধি করা হয়। স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষার জন্য পিপিই, রোগীর জন্য অক্সিজেন, ভেন্টিলেটর, জরুরি ওষুধসহ সব উপকরণ সরবরাহ করা হয়। টিকা পাওয়ার উপযোগী সবাইকে বিনামূল্যে প্রায় ৩৪ কোটি টিকা দেওয়া হয়েছে। ২৮টি প্যাকেজের আওতায় ১ লাখ ৮৭ হাজার ৬৭৯ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়। গার্মেন্টসহ অন্যান্য শিল্পকারখানার শ্রমিকদের বেতন-ভাতা নিশ্চিত করা হয়েছে। ৫০ লাখ প্রান্তিক মানুষকে দুই দফায় আড়াই হাজার টাকা করে নগদ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। এদের মধ্যে ছিলেন যানবাহনের শ্রমিক, দোকান কর্মচারী, নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষক, ইমাম, মুয়াজ্জিন, সংস্কৃতিকর্মীসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। বস্তিবাসী, দরিদ্র ও স্বল্প আয়ের মানুষ যারা অন্যের কাছে হাত পাততে পারেন না, হটলাইনে ৩৩৩ নম্বরে ফোন করার সঙ্গে সঙ্গে তাদের ঘরে চাল-ডালসহ খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। করোনাভাইরাস মহামারির সময় প্রায় ৭ কোটি ৩০ লাখ ৫০ হাজার মানুষ নানাভাবে উপকৃত হয়েছেন এবং প্রতিষ্ঠান উপকৃত হয়েছে প্রায় ১ লাখ ৮১ হাজার ২৬৬টি। ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ এবং পশ্চিমাদের অর্থনৈতিক অবরোধ এবং পাল্টা অবরোধের কারণে আমাদের মতো উন্নয়নশীল ও আমদানিনির্ভর দেশগুলো সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে। মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করাই এই সরকারের মূল লক্ষ্য। মানুষের ভোগান্তি হোক, কষ্ট হোক- তা তা কারো কাম্য নয়। বৈশ্বিক কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি পেয়েছিল। তা এখন অনেকটা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। মূল্যস্ফীতিও হ্রাস পাচ্ছে। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলসহ কোনো জিনিসের দাম কমার সঙ্গে সঙ্গে সরকার তা সমন্বয় করব। খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে দেশবাসীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী উলেস্নখ করেছেন, আমাদের কৃষি উৎপাদন বাড়াতে হবে। আমাদের মাটি উর্বর। মাটিতে বীজ ফেললেই যেখানে গাছ জন্মে, ফল হয়, সেখানে বাইরে থেকে কৃষিপণ্য আমদানি করতে হবে কেন? আমাদের প্রতিটি ইঞ্চি জমি পতিত না রেখে কাজে লাগাতে হবে। সংকট আসবে। সংকটে ভয় পেলে চলবে না। সবার সহায়তায় আমরা করোনাভাইরাস মহামারি সফলভাবে মোকাবিলা করতে পেরেছে বাংলাদেশ। বর্তমান বৈশ্বিক মন্দাও বাংলাদেশ সফলভাবে মোকাবিলা করবে। হীরেন পন্ডিত : প্রাবন্ধিক ও গবেষক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে