বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

ঢাকার যানজট ও মেট্রোরেল

যানজটের কবল থেকে ঢাকাকে রক্ষা করতে মেট্রোরেল, উড়াল সেতু হয়েছে। এবার প্রাইভেট কার, রিকশা, সিএনজিসহ বিভিন্ন পরিবহণের ওপর নিয়ন্ত্রণ আনতে হবে।
মীর আব্দুল আলীম
  ১২ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০
ঢাকার যানজট ও মেট্রোরেল

উড়াল সেতু হয়েছে, মেট্রোরেলও হলো এবার ঢাকার রাস্তাও যানজট কমান। যানজট কমবে কীভাবে? ঢাকার রাস্তায় এত ট্র্যাফিক জ্যাম কেন? আর এর সমাধানই বা কী? সমাধান আছে! আমাদের ভালো হয়ে যেতে হবে। আমাদের সভ্য হতে হবে। যেদিন জনগণ রাস্তার আইন মানবে, ট্রাফিক পুলিশ ঘুষ না খেয়ে রাস্তায় যানজট কমানোর কাজ করবে, চালকরা ট্রাফিক নিয়ম মেনে রাস্তায় পরিবহণ চালাবে, ফুটপাতে দোকানদারি বন্ধ হবে সেদিনই রাজধানী ঢাকার যানজট কমে আসবে। ঢাকা থেকে ছোট যানবাহন কমাতে হবে, সর্বোপরি সরকার সবাইকে আইন মানতে বাধ্য করতে হবে। ঢাকা এখন যানজটের শীর্ষে। নানামুখী সমস্যায় ঢাকা মহানগরের জীবনযাত্রা ক্রমেই আরও বেশি মাত্রায় দুর্ভোগময় হয়ে উঠছে। সবচেয়ে প্রকট ও জটিল সমস্যাটি হলো এই যানজট। আমাদের গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হচ্ছে যে ঢাকার যানজট নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। ঘঅগইওঙ নামের একটি গেস্নাবাল ডেটাবেজের সমীক্ষায় সর্বশেষ ঢাকা বিশ্বের সর্বাধিক যানজটের শহর হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। ঢাকায় বিশ্বের সবচেয়ে ধীরগতিতে গাড়ি চলে। ঢাকা মহানগরের যানজট অত্যন্ত দ্রম্নতগতিতে বেড়ে চলেছে। রাজধানীর বিভিন্ন ফ্ল্লাইওভারগুলো চালুও হলে ঢাকার যানজট অনেকটাই কমে যাবে এমনটাই স্বপ্ন ছিল। কিন্তু গোড়ায় গলদ আছে। যাত্রাবাড়ী মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের কথাই ধরুন। না হয় কাল গিয়ে একটু দেখে আসুন। কী দেখছি নিত্য। ফ্লাইওভারের নিচে বারো মাসই যানজট থাকে। সে যানজট ফ্লাইওভারে গিয়ে ঠেকে। ফ্লাইওভারেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকে যানবাহন। সংশ্লিষ্টরা কারণ খুঁজতে গিয়েছেন কি কখনো? কারণ আছে। টোল দিয়ে যেন পরিবহণ ফ্লাইওভারে ওঠে এর জন্য মানবসৃষ্ট যানজট তৈরি করা হয়েছে। কীভাবে? ফ্লাইওভারের নিচের রাস্তা বারো মাসই ভাঙাচোরা থাকে। রাখা হয় কিনা তা খতিয়ে দেখার দায়িত্ব রয়েছে রাষ্ট্রের। দেশের সব রাস্তাঘাট উন্নত হয় আর রাজধানীর ভেতরের এই সামান্য রাস্তাটুকুর এই বেহাল অবস্থা কেন? যানজটের ভয়ে পরবর্তিতে পরিবহণগুলো যেন ফ্লাইওভারে টোল দিয়ে যাতায়াত করে এ জন্য হয়তো কিংবা হয়তো না। কারণ খুঁজুক সরকার সংশ্লিষ্টরা। প্রশ্ন হলো- সংশ্লিষ্টরা যদি টুপাইস পেয়ে মুখে কুলুপ এঁটে রাখে তাহলে কি হবে দশা? যেটা এখন হচ্ছে সেটাই। গেল ফ্লাইওভার আর সরু ভাঙাচোরা রাস্তার কাহিনী। আরও আছে ঘটনা! কথিত আছে কখনো কখনো নাকি যারা ভূত তাড়ায়, তার ভেতরেই নাকি ভূত আছে। কি সেই ভূত? অনেক সময় নাকি যারা রাস্তা যানজটমুক্ত করবেন তারাই নাকি যানজটের কারণ হন। এটা করতে যাবেন কেন ওনারা? কারণ টুপাইস। খালি পকেট ভর্তি করতেই নাকি এ আয়োজন চলে কোথাও কোথাও। ঢাকার ডেমরা রাস্তাগুলোতে যানজট থাকলে নাকি পরিবহণের কাগজ পরীক্ষার নামে চলে ঘুষবাণিজ্য। কাগজপত্র ঠিক না থাকলে তো কথা নেই টাকা দাও। পরিবহণের কাগজ সব ঠিকঠাক থাকলে সমস্যার আর শেষ নেই, গাড়িতে ঘষা লাগা কেন, বাম্বও উঁচু কেন, নেমপেস্নটের রং জ্বলে গেছে দেখা যায় না কেন নানাসব বাহানা। আর যখন দাবি মিটে যায় তখন সব শেষে হয়তো সালামও পায় মালিক কিংবা চালক। রাজধানীর প্রবেশমুখ শীতলক্ষ্যা সেতুর ডেমরার স্টাফ কোয়ার্টারে নিত্য চলে ট্রাফিক পুলিশের খেলা। তাই সেখানে যানজটও নিত্য। রাস্তা ফকফকা থাকলে এই বাণিজ্য জমে না বাই নাকি ট্রাফিক পুলিশই নানা ফিকিরে যানজট তৈরি করে সেখানে। অভিযোগ স্থানীয় সাংবাদিক এবং ব্যবসায়ী মহলের। এমনটা করা হচ্ছে রাজধানীর প্রবেশমুখ টঙ্গি, গাবতলী, সাভারে। এসব প্রবেশদ্বারে যানজট তৈরি হলে রাজধানীর ভেতরের সড়কগুলো যানজট হবে এটাই স্বাভাবিক। রাজধানীর অভ্যন্তরে কথিত পার্কিং বাণিজ্য, ট্রাফিকেরর্ যাকার বাণিজ্য চলতে থাকলে যতই ফ্লাইওভার আর মেট্রোরেল চলুক ঢাকায়; যানজট কমবে না। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অফপিকে রাত ৮টার পর ফুটপাতে কিংবা বিশেষ কোনো সড়কে ভ্রাম্যমাণ দোকানপাঠ বসে। তাতে সেই শহরে জানজট তৈরি হয় না। আর তা থাকে পরিকল্পিত। আমাদের শহরে কি ফুটপাত আছে? ওগুলো তো চাঁদাবাজদের পকেটের খোরাক তৈরির জন্য দখল হয়ে থাকে সব সময়। কতই না অসভ্য আমরা একটা ফুটপাতের দুই ধারেই দোকান বসানো হয়। ফলে মানুষ ফুটপাত দিয়ে হাঁটতে পারে না। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটে মানুষ। গুলিস্তানে, মতিঝিল, দিলকুশা, শান্তিনগরসহ বিভিন্নসড়ক এখন হকারদের দখলে। অবশ্য হকাররা দ্বিতীয় দখলদার। রাজনৈতিক ব্যক্তিরা কথিত লিজ নিয়ে হকারদের ফুটপাত ভাড়া দেয়। এটা বাংলাদেশেই সম্ভব। অবশ্য কলকাতার ফুটপাতেও এমন দেখা যায়। ওরা সড়কগুলো ছয়-নয় করে রাখে বলে যানজট তেমন হয় না। এত মেধা এত অর্থ ব্যয় করে ফ্লাইওভার হলো, হলো মেট্রোরেল। এসব তো জনগণের কল্যাণেই সরকার করেছে। এ দেশের কতক অসৎ মানুষ তাদের বদবুদ্ধি খাটিয়ে নিজেদের কামাই বাড়ায় বটে। বারোটা বাজে সড়কের। এদের হাত থেকে সড়ক, ফুটপাত দখলমুক্ত করে তবেই যানজটমুক্ত করতে হবে ঢাকাকে। পৃথিবীর অনেক ধনী ও উন্নত দেশের বড় বড় শহরে যানজটের সমস্যা আছে, কিন্তু ঢাকা মহানগরের যানজট সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে। এই দুর্ভাগ্যজনক পরিণতি স্বল্প সময়ে ঘটেনি। আমাদের চোখের সামনে এই সমস্যা পুঞ্জীভূত হতে হতে আজ এই পরিণতি। কিন্তু এটাও শেষ পরিণতি নয়। কারণ যানজট ক্রমেই আরও বেড়ে চলেছে এবং সামনের দিনগুলোতে স্পষ্টতই আরও বাড়বে। কবে, কোন দূর ভবিষ্যতে গিয়ে যানজট বৃদ্ধি থেমে যাবে, তা এ মুহূর্তে বলা প্রায় অসম্ভব। কারণ, সমস্যাটি সমাধানের জন্য কার্যকর পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ নেই। বরং আমাদের সংশয়, এটা সমাধানের চিন্তা সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আদৌ আছে কিনা। মানুষ রাজধানীর সড়কে ঠিকমতো হেঁটেও চলতে পারছে না। যানজটের কারণে রাজধানী ঢাকায় যানবাহনের গতি কমে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে আর কিছুদিন পর হেঁটেই গাড়ির আগে যেতে পারবে মানুষ। এই শহরে এখন ঘণ্টায় গড়ে প্রায় সাত কিলোমিটার গতিতে চলছে যানবাহন। যানবাহনের সংখ্যা যেভাবে বাড়ছে তাতে ২০২৫ সালে এই শহরে যানবাহনের গতি হবে ঘণ্টায় চার কিলোমিটার, যা মানুষের হাঁটার গতির চেয়ে কম। মানুষের হাঁটার গড় গতি ঘণ্টায় পাঁচ কিলোমিটার। বিশ্বব্যাংকের তথ্য, বর্তমানে যানজটের কারণে বছরে যে আর্থিক ক্ষতি হয়, অঙ্কের হিসাবে তা প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। প্রতিদিন এর পরিমাণ ৮৪ কোটি টাকার মতো। যানজটের কারণে রাজধানীতে পরিবহণ প্রবেশ করতে না পারায় প্রতিদিন বিভিন্ন খাত থেকে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা নষ্ট হচ্ছে। সব মিলিয়ে যানজটের কারণে দিনে আর্থিক ক্ষতি প্রায় ১০০ কোটি টাকা। এ ছাড়া সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা এই ১২ ঘণ্টায় রাজধানীতে চলাচলকারী যানবাহনকে যানজটের কারণে প্রায় সাড়ে ৭ ঘণ্টা আটকে থাকতে হয়। এর মধ্যে প্রতিদিন রাস্তায় নামছে প্রায় ২০০ বিভিন্ন ধরনের পরিবহণ। ২০৩০ সালে ঢাকায় জনসংখ্যা হবে ৩০ কোটি। এ প্রেক্ষাপটে যানজট নিরসনে উদ্যোগ নেওয়ার সময় এখনই। রাজধানী ঢাকাকে সবার জন্য বসবাসের উপযোগী করতে হলে যথাযথ সুদূরপ্রসারী ও সমন্বিত মহাপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন জরুরি। যানবাহন এবং যানজট যে শহরের সচলতা কমিয়ে দিচ্ছে তাই নয়, আর্থিক ক্ষেত্রেও অভিঘাত হানছে। এখন যে পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে আছে ঢাকা শহর সে পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকলে এ শহর অসচল হয়ে পড়বে। ঢাকাকে বলা হয় যানজটের শহর। বারো মাসই এ শহরে যানজট লেগে থাকে। বিশ্বের মেগাসিটিগুলোর মধ্যে ঢাকার মতো আর কোথাও বিরক্তিকর যানজটের আবির্ভাব হয় কিনা আমাদের জানা নেই। যানজটের কারণে ঢাকা আজ এক গুরুতর অসুস্থ নগরী। যাতায়াত দুঃসাধ্য হয়ে উঠেছে নিরবচ্ছিন্ন যানজটে। যানজট সমস্যার সমাধানের জন্য নগরীর বিভিন্ন জায়গায় ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু তাতে যানজট সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে কার্যকর অগ্রগতি এখনো লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। যানজট রাজধানী ঢাকার দেড় কোটি মানুষের মেগাসিটিকে স্থবির করে দিচ্ছে। প্রতিদিন যানজটে লাখো মানুষের হাজার হাজার কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। জ্বালানি অপচয় হচ্ছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে। রাজধানী ক্রমান্বয়ে অচল নগরীতে পরিণত হচ্ছে। জনসংখ্যার তুলনায় রাস্তার স্বল্পতা এবং স্বল্পগতির অযান্ত্রিক যানবাহনের আধিক্যকে এ স্থবির অবস্থার জন্য দায়ী করা হয়। রাজপথে রিকশার আধিক্য, ট্রাফিক আইন না মানা, পরিকল্পনার অভাব, ফুটপাত দখল, প্রাইভেট কারের সংখ্যা স্পুটনিক গতিতে বৃদ্ধি পাওয়াও যানজটের অন্যতম কারণ। তবে সাম্প্রতিক সময়ে যানজটের কারণ হিসেবে ভাঙাচোরা রাস্তা এবং কারণে-অকারণে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়িকেও দায়ী করা হচ্ছে। যেখানে-সেখানে পার্কিং, ফুটপাত দখল করে দোকান বসানো ইত্যাকার সমস্যা তো বহু পুরনো। কিছুতেই রাজধানীর যানজট সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। যানজট পরিস্থিতি দিন দিনই জটিল হচ্ছে। তাতেও কি থেমে আছে বিআরটিএ? অবাক করা কথা! এমন পরিস্থিতিতেও বিআরটিএতে প্রতিদিন ২০০ থেকে ৩০০ গাড়ির রেজিস্ট্রেশন হচ্ছে। এতে বোঝা যায়, প্রতিদিন ঢাকার রাস্তায় কতগুলো গাড়ি নামছে। কিন্তু প্রতিদিন কি ঢাকার রাস্তা বড় হচ্ছে? তবে গাড়ি যারা নামাচ্ছেন তারা প্রয়োজনেই নামাচ্ছেন। এগুলো ব্যবহার করছেন। এত গাড়ি আছে, প্রতিদিন এত নতুন নতুন গাড়ি নামছে, এর পরও পাবলিক বাসে মানুষ সিট পাচ্ছে না। ঠেলাঠেলি করে এমনকি গেটে ঝুলে অনেকে ঝুঁকিপূর্ণভাবে নগরীতে চলাফেরা করছেন। আর এ ধরনের অগণিত গাড়ির বহরে ভরে যাচ্ছে নগরীর রাস্তাগুলো। গাড়ির ভেতরে যেমন ভিড় মানুষের, বাইরেও তেমনি ভিড় গাড়ির। ফুটপাতগুলোয়ও কিলবিল করছে মানুষ। আসলে আমাদের দেশটার কোনো গতি নেই; আছে দুর্গতি। যানজটের যে অবস্থা তাতে দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত ঢাকার মানুষকে মোটমাট কত বছর রাস্তায় আটকে থাকতে হয়? এক হিসাবে তা সাড়ে সাত বছর। বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু এখন ৬৮ বছর। এ হিসেবে দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত যাতায়াতের সময়ের আনুমানিক যোগফল হবে কমছে কম সাড়ে সাত বছর। এটা গায়েবি গজব নয়, মনুষ্যসৃষ্ট আজাব। এ আজাব থেকে আমরা মুক্তি চাই। আমাদের যতটুকু সড়কপথ আছে তাতে বর্তমান প্রেক্ষাপটে নানাবিধ পদক্ষেপ নিলে যানজট ৮০ ভাগ কমিয়ে আনা সম্ভব। আমরা বিশ্বের বড় বড় শহর এমনকি হজের সময় মক্কা, মদিনা; অলিম্পিক গেমসহ নানা বড় আসরের সময় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে সে সময় কত সহজেই না যানজট নিয়ন্ত্রণ করছে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো। অলিম্পিকের মতো আসরে দিন গুনে জোড়-বেজোড় নম্বরের প্রাইভেট গাড়িগুলো চলাচল করতে দিচ্ছে। একদিন জোড় সংখ্যার গাড়িগুলো রাস্তায় চলার অনুমতি পাচ্ছে তো পরদিন পাচ্ছে বেজোড় সংখ্যার গাড়িগুলো। বিশেষ মুহূর্তগুলোতে বাইরের শহরের গাড়িগুলো শহরে ঢোকার অনুমতি পাচ্ছে না। সে ক্ষেত্রে আগে থেকেই সরকারের পক্ষথেকে পত্রিকায় ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে ফলে দুর্ভোগ হচ্ছে না, হচ্ছে না যানজটও। জোর-বেজোড় নম্বরের গাড়িগুলো রাজধানীতে দিন গুনে চলাচল করতে দেওয়া যেতে পারে। ঢাকা মহানগরীর যানজট, পার্কিং সমস্যা, পরিবেশ দূষণ ও জনদুর্ভোগের পরিপ্রেক্ষিতে আশু করণীয় হলো পার্কিং চাহিদা নিয়ন্ত্রণের জন্য নীতিমালা প্রণয়ন, বিনামূল্যে পার্কিং বন্ধ করা এবং অবৈধ পার্কিংয়ের জন্য জরিমানার ব্যবস্থা করা, সর্বত্র জায়গা ও সময়ের মূল্যানুসারে পার্কিং ফি নেওয়া, পার্কিং থেকে প্রাপ্ত অর্থ পাবলিক পরিবহণের মানোন্নয়নে ব্যয় করা। নগরের ব্যস্ততম এলাকায় প্রাইভেট কার চলাচলের ক্ষেত্রে কনজেশন চার্জ গ্রহণ করা, প্রাইভেট কারের লাইসেন্স সীমিত করা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অফিস-আদালতে প্রাইভেট গাড়ির পরিবর্তে পাবলিক পরিবহণের ব্যবস্থা করা, প্রাইভেট গাড়িনির্ভর অবকাঠামো (ফ্লাইওভার, পার্কিংয়ের স্থান তৈরি) নির্মাণ না করা। পাবলিক পরিবহণ, জ্বালানিমুক্ত যান ও পথচারীদের সুবিধা বৃদ্ধি করা। জায়গা ও সম্পদের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা ও প্রাইভেট কারের পার্কিং সমস্যা সমাধানে পার্কিংয়ের জন্য সময় ও স্থান অনুসারে অর্থ গ্রহণই যুক্তিযুক্ত। রাজধানীর যানজট সহনীয় মাত্রায় আনতে স্বল্পগতির যানবাহন ও প্রাইভেট কারের সংখ্যাধিক্যের দিকে নজর দেওয়া দরকার। ট্রাফিক আইন যাতে সব ক্ষেত্রে কড়াকড়িভাবে মানা হয় সে ব্যাপারেও যত্নবান হতে হবে। ফুটপাত থেকে দোকানপাট উঠিয়ে দেওয়া, যেখানে-সেখানে গাড়ি পার্কিং বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়া এবং দিনের ব্যস্ত সময়ে প্রাইভেট কার চলাচল কমিয়ে আনার কথাও ভাবতে হবে। রাজধানীতে জনসংখ্যার তুলনায় সড়কের সংখ্যা এমনিতেই কম। তার পরও রয়েছে স্বল্পগতির রিকশা ও প্রাইভেট কারের আধিক্য। ফুটপাত দখল করে দোকানপাট চালানো কিংবা রাস্তায় যেখানে-সেখানে গাড়ি পার্কিং-এ মেগাসিটিতে নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। যানজট সৃষ্টির অন্যতম কারণ হলো প্রাইভেট কারের অপরিকল্পিত পার্কিং। ঢাকার প্রায় সব সড়কেই নিয়ন্ত্রণহীনভাবে চলছে গাড়ি পার্কিং। ফলে সড়কে যানবাহন চলাচলের জায়গা কমে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। আবার পার্কিংয়ে কোনো নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা না থাকায় মানুষ প্রাইভেট কার ব্যবহারে আরও উৎসাহিত হচ্ছে। গাড়ি বাড়ছে, বাড়ছে পার্কিং সমস্যাও। পার্কিং সমস্যা নিরসনে এর আগে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হলেও সমাধান মেলেনি। যানজট নিয়ন্ত্রণ, সম্পদ ও জায়গার যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে পার্কিং সমস্যার দীর্ঘস্থায়ী সমাধান বের করা জরুরি। যানজটের কবল থেকে ঢাকাকে রক্ষা করতে মেট্রোরেল, উড়াল সেতু হয়েছে। এবার প্রাইভেট কার, রিকশা, সিএনজি সহ বিভিন্ন পরিবহণের ওপর নিয়ন্ত্রণ আনতে হবে। মতিঝিলকে বাণিজ্যিক জোন ঘোষণা করে বাস ছাড়া সব পরিবহণ বন্ধ করে দিতে হবে। রাজধানী ঢাকার মোট আয়তনের ৬-৭ ভাগ রাস্তা। আন্তর্জাতিক নিয়মানুযায়ী রাস্তা ২৫-৩০ ভাগ থাকার কথা থাকলেও ঢাকায় তা নেই। যেটুকু রাস্তা আছে এর অনেকাংশই দখলে। বিশ্বব্যাংকের মতে রাজধানীর বর্তমান পরিস্থিতিতে যানজট নিরসন অসম্ভব। তাহলে ঢাকাবাসীর কী হবে? যানজটেই আটকে থাকবে ঢাকাবাসী? না, এ দুঃসহ যানজট থেকে ঢাকাবাসীকে মুক্ত করতেই হবে। এ জন্য দরকার সঠিক পরিকল্পনা আর আইনের প্রয়োগ। সরকার এ ব্যাপারে সচেষ্ট হবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা। মীর আব্দুল আলীম : সাংবাদিক, কলামিস্ট ও সমাজ গবেষক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে