সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

জীবনযাত্রার ব্যয়

বিবেচনায় নিতে হবে জনগণের সামর্থ্য
নতুনধারা
  ২০ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির শঙ্কা তৈরি হলে তা কতটা উদ্বেগের এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। সঙ্গত কারণেই এমন শঙ্কাকে সামনে রেখে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে উদ্যোগ অব্যাহত রাখা জরুরি। প্রসঙ্গত বলা দরকার, সম্প্রতি বিদু্যতের মূল্যবৃদ্ধির সপ্তাহ না পেরোতেই প্রায় ৩ গুণ বেড়েছে শিল্প, বিদু্যৎ উৎপাদন ও বাণিজ্যিক খাতে গ্যাসের দাম। আর এ নিয়ে বিদু্যতের মতো গণশুনানি ছাড়াই নির্বাহী আদেশে গ্যাসের দাম সমন্বয় করল সরকার। এ ক্ষেত্রে আমলে নেওয়া দরকার, পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে এটা উঠে এসেছে যে, বছরের শুরুতেই মূলস্ফীতিতে আরেক দফা ধাক্কা লাগতে পারে। শুধু তাই নয়, গ্যাসের রেকর্ড মূল্যবৃদ্ধির ফলে বিদু্যতের দামও আরেক দফা বাড়তে পারে। আর এতে জীবনযাত্রায় 'আকাশচুম্বী' ব্যয়ের আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।

আমরা মনে করি, সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে এবং এমন পরিস্থিতির প্রভাব জনসাধারণের জীবনে কতটা পড়বে- সেটাকে এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। এটাও লক্ষণীয় যে, বিদু্যৎ ও পরে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ঘোষণায় তীব্র ক্ষোভ জানিয়েছেন শিল্প সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, গণশুনানি ছাড়াই রেকর্ড পরিমাণ দাম বৃদ্ধিতে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের সামগ্রিক উৎপাদনশীলতা এবং বড় শিল্পের পাশাপাশি হুমকির মুখে পড়বে ছোট ও মাঝারি শিল্পগুলো। অন্যদিকে, অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বিদু্যৎ ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির ফলে সাধারণ মানুষের ব্যয় অস্বাভাবিক হারে বাড়বে। এটা ঠিক যে, সরকারের ভর্তুকি কমবে কিন্তু মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে- এমন বিষয়ও আলোচনায় এসেছে। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা এবং সেই মোতাবেক প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়।

আমরা বলতে চাই, যদি দেশের সামগ্রিক উৎপাদনশীলতা এবং বড় শিল্পের পাশাপাশি হুমকির মুখে পড়ার শঙ্কা তৈরি হয় ছোট ও মাঝারি শিল্পগুলোর এবং বিদু্যৎ ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির ফলে সাধারণ মানুষের ব্যয় অস্বাভাবিক হারে বাড়ে- তবে তা সন্দেহাতীতভাবেই উৎকণ্ঠার। যা আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নের চেষ্টা অব্যাহত রাখা। এটাও বিবেচ্য বিষয় যে, বিদু্যৎ খাত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বিদু্যতের উৎপাদন ব্যয় আরও বাড়বে। ফলে শিল্প ও আবাসিক পর্যায়ে ফের বিদু্যতের দামও বাড়তে পারে। জানা গেছে, চলতি মাসের শেষে আইএমএফের ঋণের অনুমোদন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর এই ঋণ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে রাজস্ব ও আর্থিক খাতে কিছু সংস্কারের দাবি জানিয়েছিল সংস্থাটি। প্রকাশিত খবরে এটা উঠে এসেছে যে, ধারণা করা হয়, সংস্কারের অংশ হিসেবেই জ্বালানি খাতে ভর্তুকি কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ফলে ধারাবাহিকভাবে জ্বালানি তেল, পাইকারি ও খুচরা বিদু্যৎ এবং সর্বশেষ বুধবার বাড়ানো হয়েছে গ্যাসের দাম।

প্রসঙ্গত উলেস্নখ্য, একজন অর্থনীতিবিদ বলেছেন- এ ঘোষণার ফলে দেশে উৎপাদিত সব ধরনের পণ্যের দাম আরেক দফা বাড়বে। এতে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় অস্বাভাবিক পর্যায়ে চলে যেতে পারে। ফলে আমরা মনে করি, মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় অস্বাভাবিক পর্যায়ে চলে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হলে সেটা সংশ্লিষ্টদের এড়ানোর সুযোগ নেই। এছাড়া এটাও আমলে নেওয়া দরকার, জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করা গেলে পরিস্থিতি কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে এটিও আলোচনায় এসেছে। যদিও জ্বালানি তেল ও বিদু্যতের পর গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি করা হলেও এগুলোর সরবরাহ এখনো নিশ্চিত করা যায়নি।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, সৃষ্ট পরিস্থিতিতে একদিকে সামগ্রিক উৎপাদনশীলতা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা উঠে এসেছে, অন্যদিকে ধারাবাহিকভাবে গ্যাস ও বিদু্যতের দাম বৃদ্ধির ফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে নিত্যপণ্যের বাজারে- এই আলোচনাও উঠে আসছে। আর নিত্যপণ্যের দাম বাড়লে তা জনসাধারণের জীবনযাপনকে কতটা উদ্বিগ্ন করে বলাই বাহুল্য। আমরা মনে করি, সামগ্রিকভাবে জনসাধারণের সামর্থ্যকে বিবেচনা করা এবং জীবনযাত্রার ব্যয়ের বিষয়টিকে আমলে নিতে হবে। এছাড়া প্রতিমাসেই জ্বালানি পণ্যের দাম সমন্বয় করা হবে বলে জানিয়েছে বিদু্যৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ। কিন্তু সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রিজার্ভ সংকট, ডলারের দাম বৃদ্ধিসহ সরকারের ভর্তুকি কমানোর প্রবণতা এ খাতকে আরও অস্থিতিশীল করে তুলবে। সঙ্গত কারণেই সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে কার্যকর উদ্যোগ নিশ্চিত হোক এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে