শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

দুর্যোগ প্রতিরোধে সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা জরুরি

ইতোমধ্যে আমাদের দেশে সাইক্লোন ও বন্যার মতো দুর্যোগ মোকাবিলার উলেস্নখযোগ্য পরিমাণ অভিজ্ঞতা ও ব্যবস্থাপনা সামর্থ্যের অগ্রগতি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কমিউনিটি সম্পৃক্ততা বেশ কার্যকর ও সময়োপযোগী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। তাছাড়া ভৌত অবকাঠামো নির্মাণে সচেতনতা সৃষ্টি, নির্মাণ কর্মকান্ডে সুনির্দিষ্ট নির্মাণ কোড মেনে চলার বাধ্যবাধকতা ভূমিকম্পের ধ্বংসযজ্ঞ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
ড. ফোরকান উদ্দিন আহাম্মদ
  ২০ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

বাংলাদেশ একটি দুর্যোগপ্রবণ দেশ। জাতিসংঘের তথ্যমতে, সবচেয়ে বেশি ভূকম্পের ঝুঁকিতে থাকা দুটি শহরের একটি ঢাকা। বিশেষজ্ঞদের অভিমত, বাংলাদেশ ভূগঠনের কারণে যে কোনো সময় প্রলয়ংকরী ভূকম্প আঘাত আনতে পারে। মনে রাখতে হবে, তুরস্কে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, বাংলাদেশে একই রকম ভূকম্প হলে এর ক্ষয়ক্ষতি হবে বহু গুণ বেশি। কেননা, ক্ষতি কতটুকু হবে সেটা নির্ভর করে জনসংখ্যার ঘনত্ব, বিল্ডিং, রাস্তাঘাট, অবকাঠামোর মান এবং নগরায়ণ কতটা পরিকল্পিত, উদ্ধার ও ত্রাণকাজে প্রস্তুতি ও অভিজ্ঞতা ইত্যাদির ওপর। এর সবকিছুতেই আমরা অন্যদের তুলনায় অনেক পিছিয়ে রয়েছি। শুধু ঢাকা শহরেই প্রায় ৪০ হাজারের অধিক ভবন রয়েছে যেগুলো যথাযথ বিল্ডিং কোড মেনে নির্মিত হয়নি। যার ফলে ঢাকায় বড় ধরনের ভূকম্প হলে পুরো শহর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হবে। গ্যাসের লাইন বিস্ফোরণ ঘটবে এবং বিদু্যতের লাইন থেকেও অগ্নিকান্ড ঘটতে পারে। বাংলাদেশের কি এই বিপর্যয় মোকাবিলা করার সামর্থ্য আছে? প্রতি বছর কোনো না কোনো দুর্যোগে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকে। বিশ্বব্যাপী দুর্যোগের ব্যাপকতা প্রমাণ করে দুর্যোগের পূর্ব সতর্কীকরণ ও ঝুঁকি হ্রাসই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার প্রধান কৌশল হওয়া উচিত। এই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকারের নীতি-পরিকল্পনায় জনগণের জন্য দুর্যোগপূর্ব পূর্বাভাস ও দুর্যোগ ঝুঁকিহ্রাস কৌশল অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে দুর্যোগ ঝুঁকিহ্রাসে আগাম সতর্কবার্তা উপকূলীয় সম্ভাব্য উপদ্রম্নত এলাকার জনগণের মাঝে পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান 'ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি)' প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে উপকূলে আমাদের ৭৬,১৪০ জন প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবক রয়েছে। বন্যাপ্রবণ এলাকায় অনুরূপ স্বেচ্ছাসেবক তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

দেশে ঘনঘন ভূকম্প অনুভূত হচ্ছে। মাঝেমধ্যেই মাঝারি ও মৃদু ভূকম্পে কেঁপে উঠছে পুরো দেশ। বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছেন বাংলাদেশে শক্তিশালী ভূমিকম্প ও সুনামির আশঙ্কার কথা। সুতরাং, প্রশ্ন হলো ভূকম্পের ধকল সামলাতে বাংলাদেশ কতটা প্রস্তুত? পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টা, সীতাকুন্ডের কনটেইনার ডিপোতে আগুন কিংবা রানাপস্নাজা ধসের চিত্র আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে আসলেই আমাদের সক্ষমতা কতখানি। বড় ভূকম্প হলে এরকম রানা পস্নাজার মতো বিপর্যয় ঘটবে ঢাকা শহরের প্রতিটি পাড়া-মহলস্নায় ও সড়কে। ভূকম্প একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। আর এটি এমন একটি দুর্যোগ, যার পূর্বাভাস দেওয়ার উপায় বিজ্ঞানীরা এখনো বের করতে পারেননি। তবে বড় ধরনের ভূকম্পের কিছু পূর্বাভাস রয়েছে- যা বাংলাদেশে বেশ লক্ষণীয়। এর লক্ষণ হিসেবে দেশের বিভিন্ন জায়গায় মৃদু ও মাঝারি মাত্রার ভূকম্প হচ্ছে বেশ কিছু দিন পর পরই। মূলত ভূকম্পের ঝুঁকি মোকাবিলায় আমাদের মূললক্ষ্য হওয়া উচিত দুটি- প্রথমত, ভূকম্পের ফলে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতির মাত্রাকে যতটা নিম্নমুখী রাখা যায় এবং দ্বিতীয়ত, ভূকম্পপরবর্তী বিপর্যয় কতটা সামাল দেওয়া যায়। সাধারণত ভূকম্পে বিল্ডিং দুমড়ে-মুচড়ে গায়ে পড়ে না বরং হেলে পড়ে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই। অনেকেই মনে করেন বহুতল ভবন থেকে নিচে নেমে গেলেই হয়তো সাবধানে থাকা যাবে, কিন্তু সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামা অথবা জানালা দিয়ে লাফ দেওয়া আরো বেশি অনিরাপদ। যেহেতু ভূকম্প খুব অল্প সময় স্থায়ী হয়, তাই তাড়াহুড়ো করে রাস্তায় গিয়ে তেমন উপকার হয় না। কেননা, বিল্ডিং হেলে গিয়ে তো সে রাস্তার ওপরেই পতিত হয়।

মনে রাখতে হবে, ভূকম্পের সময় যত বেশি মুভ করবেন তত বেশি আহত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। সুতরাং, যেখানে অবস্থান করছেন সেখানেই ভিম বা কলামের পাশে শক্ত কোনো কিছুর কাছে থাকতে হবে। যেমন : খাট কিংবা শক্ত ডাইনিং টেবিলের পাশে অবস্থান নিলে ভালো হয়। ভূকম্পের বিপর্যয় এড়াতে সরকারকে আরো দৃশ্যমান ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে। সরকারের তরফ থেকে যন্ত্রপাতি ক্রয় এবং স্বেচ্ছাসেবক প্রশিক্ষণের কথা বলা হলেও ভূকম্পপরবর্তী বিপর্যয় সামাল দেওয়ার প্রস্তুতিতে যে আমাদের ঘাটতি রয়েছে, সেটা দিবালোকের মতো স্পষ্ট। দেশের প্রতিটি শহরে যেন যথাযথ আইন ও বিধি অনুযায়ী স্থাপনা নির্মিত হয়, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে ভূকম্প হলে করণীয় কী এমন প্রচারাভিযান চালাতে হবে যেন মানুষের মধ্যে জনসচেতনতা তৈরি হয়। ফায়ার সার্ভিস, ভূকম্প ব্যবস্থাপনা বাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীকে সব সময় প্রস্তুত রাখতে হবে। মানুষকে বোঝাতে হবে, ভূকম্প হলে উত্তেজিত না হয়ে সাবধানে সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে।

গুলশানের এক বহুতল ভবনে আগুন লাগল; প্রাণহানিও হলো। প্রাণহানি হলো শুধু আতঙ্কের কারণে- উঁচু ভবন থেকে লাফ দিয়ে পড়ে। এই ভবনেই আগুন লাগার পর কয়েকজন বাসিন্দা লিফটে উঠেছিলেন তাড়াতাড়ি নিচে নামার জন্য। লিফটে আটকে পড়েন তারা। ভাগ্যক্রমে প্রাণে বাঁচেন। তার মানে তারা জানতেন না যে বাড়িতে আগুন লাগলে বা ভূমিকম্পসহ যে কোনো বিপদের সময় কখনও লিফটে উঠতে হয় না। তার মানে এই বাড়িতে কখনো অগ্নি নির্বাপণের মহড়া হয়নি। গুলশানের একটি বহুতল ভবনের একটি অফিসে আমি চাকরি করি দুই বছরের বেশি সময় ধরে। এরমধ্যে একবারও অগ্নি নির্বাপন বা অগ্নিকান্ড হলে কী করতে হবে এ ধরনের কোনো মহড়া হয়নি। আমার জানামতে বাংলাদেশের কোনো বহুতল ভবনেই সেটা হয় না। ভূমিকম্প হোক বা আগুন লাগা। যে কোনো বিপদ কীভাবে মোকাবিলা করতে হয় সে শিক্ষাটা সবার থাকা জরুরি। বিদেশে থাকার সময় দেখেছি, প্রায়ই বিভিন্ন এলাকার উঁচু ভবন, হোস্টেল, হোটেল ইত্যাদি ভবনে এ ধরনের মহড়া ও প্রশিক্ষণ হয়। কিন্তু আমাদের সেসব বালাই নেই। আমরা হাত পা গুটিয়ে মৃতু্য কবলিত হওয়ার জন্য বসে থাকি। বাঁচার চেষ্টা কীভাবে করব সেই জ্ঞানটুকুও আমাদের কখনো দেয়া হয় না। এবার আসি পুরান ঢাকার প্রসঙ্গে। পুরান ঢাকার যে কী বেহাল অবস্থা সেটা সেখানকার বাসিন্দা মাত্রই জানেন। দুটি বাড়ির মধ্যে এক ইঞ্চি জায়গাও ছাড়া হয়নি। গায়ে গা লাগিয়ে ঘেঁষাঘেঁষি করে সব ভবনগুলো দাঁড়িয়ে আছে। ভূমিকম্প হলে একটির ওপর আরেকটি যেভাবে পড়বে তাতে কোনো উদ্ধার কাজও চালানো যাবে বলে মনে হয় না। পুরান ঢাকায় আগুন লাগাটাও ভয়াবহ।

নিমতলী আর চুড়িহাট্টার ভয়বহ অগ্নিকান্ডের স্মৃতি নিশ্চয়ই মন থেকে মুছে যায়নি। সেইসব ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনার পরও কি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে? কিছুই না। এখনো জুতার কারখানা আর কেমিক্যাল কারখানাগুলো অলিতে গলিতে রয়েই গেছে। মারাত্মক দাহ্য পদার্থ নিয়ে কাজ-কারবার চলছে আবাসিক এলাকার ভেতরেই। পুরান ঢাকার অবস্থা এমন যে আগুন লাগলে ফায়ার ব্রিগেডের গাড়ি ঢোকার জায়গাটুকুও নেই। আশপাশে কোথাও বড় জলাশয়ও নেই। আগে প্রতিটি পাড়া মহলস্নায় একটি বা দুটি পুকুর থাকত। সেসব কবে ভরাট হয়ে গেছে। পুরান ঢাকায় বৈদু্যতিক সংযোগের অবস্থাও ভয়াবহ। পুরান ঢাকার যে কোনো রাস্তায় চোখে পড়ে বৈদু্যতিক তারের ভয়াবহ জট মাথার উপর ঝুলছে। অবৈধ সংযোগে পুরো এলাকা ভরপুর। শর্ট-সার্কিট থেকে ভয়াবহ বিপদ ঘটতে পারে যে কোনো সময়। অধিকাংশ বাড়িতেই সিলিন্ডার গ্যাসের ব্যবহার চলছে যেগুলো কোনো সঠিক বা নিরাপদ নিয়মে নয় বরং খেয়াল খুশিমতো ব্যবহার করা হচ্ছে। পুরান ঢাকাকে বিপদমুক্ত বা নিরাপদ করার কোনো রকম উদ্যোগই চোখে পড়েনি কখনো। ঢাকাবাসীর এক বিশাল অংশ বাস করছে যেন হাতের মুঠোয় প্রাণ নিয়ে। ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং অগ্নিকান্ডের বিপদ থেকে ঢাকাকে বাঁচানোর কী উদ্যোগ নেয়া হয়েছে এ প্রশ্ন আমার মতো প্রতিটি ঢাকাবাসীর। বিপদ ঘটলে কীভাবে উদ্ধার অভিযান চালানো হবে সে বিষয়ে কোনো বাস্তব পরিকল্পনা কারও কাছে আছে কিনা তাও জানা যায়নি। দুই নগরপিতার কী বলার আছে এ বিষয়ে জানি না। বিপদ ঘটার পরে নয় বরং আগে সতর্ক থাকাটাই বুদ্ধিমানের লক্ষণ। হাজার হাজার প্রাণহানির পর তখন চোখের জলে কোনো সুরাহা হবে না। এ দিকে কর্তৃপক্ষ নজর দেবেন কী?

বাংলাদেশে আজ পৃথিবীতে যোগাযোগ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত। অনেক দেশ সিপিপির মডেল অনুসরণ করছে। সিপিবি সংক্রান্ত বিশ্ব আসরে প্রায়ই সফল কার্যক্রম হিসেবে সিপিবি দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হয়। সিপিবির দীর্ঘস্থায়িত্বের জন্য ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু যে যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সেটি জানতে এবং বুঝতে হলে সিপিপির জন্মের ইতিহাসও একটু জানা দরকার। ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বরের গোর্কি পৃথিবীর লিখিত ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ সাইক্লোন, যাতে সরকারি হিসাবে ১০ লাখেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারায়। এরপরই জাতিসংঘ একটি বিশেষ সাধারণ অধিবেশন আহ্বান করে। ১৯৭০ সালের সাইক্লোন এবং ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে বিধ্বস্ত বাংলাদেশের ত্রাণ ও পুনর্বাসনের জন্য অনেক দেশের রেড কোর্সের প্রতিনিধি সে সময় এ দেশে আসেন এবং অনেক প্রকল্প কার্যক্রম শুরু করেন। এর মধ্যে সুইডেন থেকে সাইক্লোন রিলিফ ডেলিগেট হিসেবে এসেছিলেন মিস্টার ক্লাগ হেগস্টম। তখন এ দেশে আবহাওয়া অধিদপ্তর, রাডার স্টেশন সরকারি প্রশাসনের মাধ্যমে সাইক্লোনের আগাম সংকেত প্রচারকরণ ইত্যাদি ব্যবস্থা থাকার পরও কেন লাখ লাখ মানুষের প্রাণহানি হলো, সে প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্য জাতির পিতা বহুদিন উপকূলবর্তী প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন।

অনেক সময় অবহেলা ও অবজ্ঞার ভাব নিয়ে মানুষ কিছু কিছু ভুল করে থাকেন। আর এহেন কতিপয় তুচ্ছ ভাবনা থেকে এমন কিছু অঘটন ঘটে থাকে যার পরিণতি ভয়াবহ ও মারাত্মক। যেমন- জ্বলন্ত সিগারেটের অগ্নিকে যেখানে সেখানে ফেলে রাখা, জলন্ত চুলাকে না নেভানো বা ঢাকনা ছাড়া রাখা অথবা গ্রাম অশীতিপর বৃদ্ধ ও বৃদ্ধার সজ্জাপার্শ্বে ব্যবহৃত আগুনের মালসাটির উপর অযত্নবান হওয়া। এ জাতীয় কর্মকান্ডগুলোকে আমরা অনেক তুচ্ছ ও সাধারণ মনে করে থাকি। আসলে আমরা আমাদের অজ্ঞতা ও দায়িত্বহীনতার জন্যই এই জাতীয় ভুলগুলো করে থাকি। সামাজিক বোধসম্পন্ন কোন দেশপ্রেমিক নাগরিকের পক্ষে এহেন কার্যকলাপ সম্ভব নয়। আমাদের তাই আত্মসচেতন হয়ে দেশপ্রেমবোধে উদ্বুদ্ধ হতে হবে এবং পাশাপাশি নাগরিক চেতনায় ও সমৃদ্ধ হতে হবে। আগুনের সার্বিক ব্যবহার বিষয়ে যত্নবান হলে প্রতি মৌসুমি দেশের অনেক সম্পদাদি বিনষ্টের হাত থেকে রক্ষা পাবে। এ ব্যাপারে আমাদের সব সমাজকর্মী, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সমাজ সংগঠন, স্কুল প্রতিষ্ঠান এবং এনজিও, সর্বোপরি সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ যদি সদিচ্ছ নিয়ে আগুনের প্রতিরোধ সম্পর্কে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করে তাহলে বিপুল পরিমাণ জাতীয় সম্পদের বিনষ্টকরণ রোধ করা সম্ভব হবে বলে আমি মনে করি।

ইতোমধ্যে আমাদের দেশে সাইক্লোন ও বন্যার মতো দুর্যোগ মোকাবিলার উলেস্নখযোগ্য পরিমাণ অভিজ্ঞতা ও ব্যবস্থাপনা সামর্থ্যের অগ্রগতি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কমিউনিটি সম্পৃক্ততা বেশ কার্যকর ও সময়োপযোগী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। তাছাড়া ভৌত অবকাঠামো নির্মাণে সচেতনতা সৃষ্টি, নির্মাণ কর্মকান্ডে সুনির্দিষ্ট নির্মাণ কোড মেনে চলার বাধ্যবাধকতা ভূমিকম্পের ধ্বংসযজ্ঞ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

বিশেষজ্ঞরা দাবি করেন যে, ইতোমধ্যে প্রণীত 'জাতীয় বিল্ডিং কোড' মেনে ভৌতিক নির্মাণকাজ করা গেলে ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি প্রায় অর্ধেকে নামিয়ে আনা সম্ভব। এজন্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি, প্রকৌশলী, স্থপতি, মিস্ত্রিসহ বিশাল প্রশিক্ষিত ও সচেতন কর্মীবাহিনীকে সমম্বিতভাবে কাজ করা প্রয়োজন।

ড. ফোরকান উদ্দিন আহাম্মদ : সাবেক উপ-মহাপরিচালক, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী, কলামিস্ট ও গবেষক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে