রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

মডেল মসজিদ নির্মাণ করে দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করলেন শেখ হাসিনা

নতুনধারা
  ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০

চতুর্থ পর্যায়ে সারা দেশে সোমবার (১৭ এপ্রিল) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আরও ৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত মোট ২০০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধন করেন তিনি। উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া এবং সিলেটের বিশ্বনাথের মডেল মসজিদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ইমাম, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ মুসলিস্নদের সঙ্গে মুবিনিময় করেন। উদ্বোধনী এ অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান ও ধর্ম সচিব কাজী এনামুল হাসান। গণভবন প্রান্ত থেকে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া।

এর আগে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় মোট ৫৬৪টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ উপলক্ষে প্রকাশিত মডেল মসজিদের লোগো সংবলিত স্মারক ডাকটিকিট, উদ্বোধনী খাম ও সিলমোহর অবমুক্তকরণ করেন। ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ও মডেল মসজিদ দেশের প্রতিটি জেলায় ও উপজেলায় স্থাপন করতে ৯ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প ২০১৭ সালে গ্রহণ করে সরকার। প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে ৫৬৪টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন শীর্ষক (দ্বিতীয় সংশোধিত) প্রকল্পটির মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। এরই মধ্যে ২০২১ সালের ৭ ডিসেম্বর প্রথম পর্যায়, ২০২৩ সালের ১৬ জানুয়ারি দ্বিতীয় পর্যায় এবং ২০২৩ সালের ১৬ মার্চ তৃতীয় পর্যায়ে ৫০টি করে মোট ১৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধন করা হয়েছে।

জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে বর্তমান সরকার চলে বলেই ইসলাম ধর্ম ও শিক্ষাকে গুরুত্ব দেয়। সরকার দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ করে দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের মর্যাদা দিয়েছে, ইসলামিক আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে। প্রতিটি উপজেলা ও জেলা সদরে একটি করে মডেল মসজিদ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে। ধর্মের দোহাই দিয়ে কেউ যেন মানুষকে বিপথে নিতে না পারে, প্রকৃত ইসলামের মূল্যবোধ সম্পর্কে মানুষের মধ্যে যেন সচেতনতার সৃষ্টি হয় সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি রেখেই সরকার মডেল মসজিদ নির্মাণের প্রকল্প হাতে নিয়েছে। স্মর্তব্য, বঙ্গবন্ধুই স্বাধীনতার পর বাংলাদেশকে ওআইসির সদস্য করেন। সোহরাওয়ার্দী ময়দানে রেসখেলা বন্ধসহ মদ-জুয়া নিষিদ্ধ করেন। ইসলামিক ফাউন্ডেশন, মাদ্রাসা বোর্ড, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের জায়গা সুনির্দিষ্ট করেন বঙ্গবন্ধু। বিশ্ব ইজতেমার জায়গাও দিয়েছেন তিনি। ইসলামকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের বদলে এর কল্যাণমুখী ভূমিকাকে ছড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করেছেন বঙ্গবন্ধু। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ এবং ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে প্রকৃত ইসলামকে এগিয়ে নেওয়াই ছিল বঙ্গবন্ধুর লক্ষ্য।

তিন ক্যাটাগরিতে মসজিদগুলো নির্মিত। 'এ' ক্যাটাগরিতে ৬৯টি চারতলা বিশিষ্ট মডেল মসজিদ ৬৪টি জেলা শহরে এবং সিটি করপোরেশন এলাকায় নির্মিত। এগুলোর প্রতি ফ্লোরের আয়তন ২৩৬০ দশমিক ০৯ বর্গমিটার। উপজেলায় ১৬৮০ দশমিক ১৪ বর্গমিটার আয়তনের 'বি' ক্যাটারির মসজিদ ৪৭৫টি। আর উপকূলীয় এলাকা ২০৫২ দশমিক ১২ বর্গমিটার আয়তনের 'সি' ক্যাটাগরির মসজিদ ১৬টি। জেলা সদর ও সিটি করপোরেশন এলাকার মসজিদগুলোতে একসঙ্গে ১ হাজার ২০০ মুসলিস্ন নামাজ আদায় করতে পারবেন। অন্যদিকে উপজেলা ও উপকূলীয় এলাকার মডেল মসজিদগুলোতে একসঙ্গে ৯০০ মুসলিস্নর নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা রাখা হয়। এসব মসজিদে সারা দেশে প্রতিদিন ৪ লাখ ৯৪ হাজার ২০০ জন পুরুষ ও ৩১ হাজার ৪০০ জন নারী একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন।

মডেল মসজিদ প্রকল্পের উদ্দেশ্য হচ্ছে, ইসলামিক ফাউন্ডেশন অ্যাক্ট, ১৯৭৫-এর বাস্তবায়ন এবং দেশব্যাপী শক্তিশালী ইসলামি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গড়ে তোলা। সারাদেশে ইসলামি ভ্রাতৃত্ব ও প্রকৃত মূল্যবোধের প্রচার ও দীক্ষাদান চালু করা। সন্ত্রাস ও নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ করা। সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা। পুরুষ-নারী মুসলিস্নদের জন্য নামাজ, ধর্মীয় শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও দীনি দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ভৌত সুবিধাদি সৃষ্টি করা। ইসলামিক জ্ঞান ও সংস্কৃতি সম্প্রসারণের মাধ্যমে ইসলামি মূল্যবোধের পরিচর্যা ও প্রসার করা এবং সততা ও ন্যায়বিচারের প্রতি মানুষের আনুগত্য সমর্থন সৃষ্টি করা।

ইসলামি মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় বর্তমান সরকার অনন্য নজির স্থাপন করেছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া ইসলামী ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম আজ সারা দেশে বিস্তৃত হচ্ছে এবং ওলামাদের কল্যাণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ইসলামী মূল্যবোধ প্রচার-প্রসারে বর্তমান সরকার যে অবদান রেখেছে, তা সমকালীন মুসলিম দুনিয়ার ইতিহাসে অনন্য দৃষ্টান্ত হয়েই থাকবে চিরকাল। ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা, বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড পুনর্গঠন, বেতার ও টিভিতে কোরআন তিলাওয়াত ও তরজমা পেশের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, কাকরাইল মসজিদের জন্য অতিরিক্ত জায়গা বরাদ্দ, টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমার জন্য স্থান নির্ধারণ, বাংলাদেশে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপন এবং মদ, জুয়া ও লটারি নিষিদ্ধ করা ছিল বঙ্গবন্ধুর উলেস্নখযোগ্য অবদান।

ইসলামের প্রচার-প্রসারের লক্ষ্যে বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালের ২২ মার্চ এক অধ্যাদেশবলে ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন। ২৮ মার্চ ১৯৭৫ সালে 'ইসলামিক ফাউন্ডেশন' অ্যাক্ট প্রণীত হয়। বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মুসলমান। সুপ্রাচীনকাল থেকে এ দেশে ইসলামী আদর্শ ও মূল্যবোধের লালন ও চর্চা হয়ে আসছে। বর্তমানে ৬৪টি জেলায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের শাখা রয়েছে। ১৯৯৮ সালে ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করা হয়। বঙ্গবন্ধু এ ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করার পর থেকে এ পর্যন্ত এর আওতায় বিভিন্ন প্রকল্প আর্তমানবতার সেবায় নিয়োজিত রয়েছে; বিশেষ করে মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম ধর্মপ্রাণদের সেবায় নিবেদিত হয়ে কাজ করছে। লাখ লাখ শিশু নিরক্ষরতার হাত থেকে মুক্তি পাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু ইসলামি শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং এর সফল প্রচার-প্রসারের জন্য মাদ্রাসা বোর্ড পুনর্গঠন করেছিলেন।

বর্তমানে এমপিওভুক্ত আলিয়া মাদ্রাসার সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার। বর্তমান আধুনিক শিক্ষার সঙ্গে মাদ্রাসা শিক্ষাকে সমন্বয়ের মাধ্যমে আধুনিকায়ন করা সম্ভব হয়েছে। মাদ্রাসাগুলো সরকারি দান-অনুদান, মাদ্রাসা বোর্ড ও ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রণীত কারিকুলাম অনুযায়ী পাঠদান করছে।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে ১৯৭৪ সালে লাহোরে অনুষ্ঠিত ইসলামী সম্মেলন সংস্থার (ওআইসি) অধিবেশনে যোগদান করেন। আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশকে এই সংস্থার অন্তর্ভুক্ত করার মধ্যদিয়েই বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর মধ্যে বাংলাদেশের স্থান করে নেন। এতে আরবসহ মুসলিম বিশ্বে বাংলাদেশের ভাব উজ্জ্বল হয় এবং মুসলিম বিশ্বের নেতাদের সঙ্গে সুদৃঢ় ভ্রাতৃত্বের বন্ধন গড়ে ওঠে।

ইসলাম প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্যে বর্তমান সরকার নানাবিধ পদক্ষেপ নিয়েছে। বর্তমান সরকার ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে। এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাদ্রাসা শিক্ষাধারার ফাযিল/স্নাতক ও কামিল/স্নাতকোত্তর পর্যায়ের ডিগ্রি প্রদান করা হয়। মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন, ফাযিল/স্নাতক, কামিল/স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষাক্রম/পাঠ্যপুস্তক অনুমোদন, শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন, মাদ্রাসা শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, শিক্ষাঙ্গনগুলোর পরিবীক্ষণ ও পরীক্ষা পরিচালনাসহ সার্বিক তত্ত্বাবধান করে ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়। দেশের ৩১টি কামিল মাদ্রাসায় অনার্স কোর্স চালু করা হয়েছে। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সৌন্দর্যবর্ধন ও সম্প্রসারণ, সুউচ্চ মিনার নির্মাণ, মহিলাদের নামাজ কক্ষ সম্প্রসারণ করা হয়েছে। কওমি মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের সনদের সরকারি স্বীকৃতি শেখ হাসিনার সরকার প্রদান করেছে।

মো. খসরু চৌধুরী

ঢাকা

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে