রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সঠিক পদক্ষেপ নিন

নতুনধারা
  ১১ মে ২০২৩, ০০:০০

দেশে সাধারণত নভেম্বর মাসে ঘূর্ণিঝড় হয়ে থাকে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় আবহাওয়া তার ব্যাকরণ ভুলে এখন মে মাসে হচ্ছে বড় বড় ঘূর্ণিঝড়। এছাড়া এ মাসে তীব্র গরমে পুড়ছে জনজীবন। অসহনীয় গরমে বাড়ছে বজ্রপাত। আর এতে বাড়ছে মৃতু্য। অন্যদিকে, মে মাসেই হানা দিচ্ছে কালবৈশাখী ঝড় ও শিলাবৃষ্টি। এতে কৃষকের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কাও করা হচ্ছে। ফলে এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, জলবায়ুর প্রভাব কতটা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা মনে করি, সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার সৃষ্ট পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা।

প্রসঙ্গত, এর আগেও এমন বিষয় আলোচনায় এসেছে বারবার- উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে সারাবিশ্বে ব্যাপকভাবে জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটেছে। আর এর প্রভাবে বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, জোয়ার-জলোচ্ছ্বাস, অতিবৃষ্টি-অনাবৃষ্টি, নদীভাঙনসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে। সংশ্লিষ্টদের এটাও অনুধাবন করা জরুরি, বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ জলবায়ু পরিবর্তনের নির্মম শিকার হবে এটিও এর আগে আলোচনায় এসেছে। আমরা মনে করি, সামগ্রিক এ পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে। জলবায়ুর প্রভাব কতটা ভয়ানক হয়ে উঠছে, সেটি যেমন বিশ্ব নেতৃত্ব ও সংশ্লিষ্টদের আমলে নিতে হবে, তেমনি দেশের সংশ্লিষ্টদেরও সৃষ্ট পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণ ও তার সুষ্ঠু বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। এছাড়া গণসচেতনতা বৃদ্ধি, ঝড়-ঝঞ্ঝা ও ভূমিক্ষয় রোধে উপকূলে ব্যাপক হারে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি গ্রহণ এবং সবুজবেষ্টনী গড়ে তোলাসহ বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ নানা সময়ে উঠে এসেছে, সেগুলো আমলে নিয়ে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।

লক্ষণীয়, এবারে এপ্রিল ও মে মাসের দিনগুলো রীতিমতো খরাই যাচ্ছে। গরমে রাজধানী ঢাকার মানুষ অতীষ্ঠ হয়ে উঠেছে। কংক্রিটের তৈরি সড়ক আর যানবাহনের গরম বাতাস তাপমাত্রা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। গরমে হাঁসফাঁস করছে মানুষ। এটাও এড়ানোর সুযোগ নেই যে, চলতি মৌসুমে ঢাকায় ৫৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, ২০২৩ সাল হচ্ছে এই দশকের মধ্যে সবচেয়ে উষ্ণতম বছর। অথচ বাংলা পঞ্জিকা মতে, এখন ভারী বৃষ্টিপাতে মাঝারি মানের বন্যা হওয়ার কথা! ফলে স্পষ্টতই জলবায়ুর পরিবর্তন কতটা উৎকণ্ঠাজনক হয়ে উঠছে সেটি অনুধাবন করার কোনো বিকল্প থাকতে পারে না।

আমরা বলতে চাই, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং বিভিন্ন সময়ে নানা ধরনের আশঙ্কার কথাও সামনে এসেছে। এর প্রভাবে সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ক্ষয়ক্ষতির কারণে আগামী দশকগুলোতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের মধ্যে সংঘাত বাড়বে বলেও আশঙ্কা করেছেন বিজ্ঞানীরা। জলবায়ু পরিবর্তন ও তার প্রভাবে উষ্ণতা বৃদ্ধি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ খাদ্য ও পানীয়জলের সংকটে পড়েছেন এবং দিন দিন এই সংকটের আওতা বাড়ছে বলেও জানা গিয়েছিল। তাছাড়া, বিভিন্ন দেশে জনসংখ্যার বৃদ্ধির কারণে অতিরিক্তমাত্রায় ব্যবহার করা হচ্ছে জীবাশ্ম জ্বালানি, ধ্বংস করা হচ্ছে বনাঞ্চল- যা জলবায়ু পরিবর্তনের গতি আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের এই ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী দশকগুলোতে প্রয়োজনীয় খাদ্য ও পানীয়জলের অভাবে থাকা মানুষের সংখ্যা আরও বাড়বে, সেই সঙ্গে পালস্না দিয়ে বাড়বে বাস্তুহারা মানুষের সংখ্যা- এমন বিষয়ও বারবার সামনে এসেছে। ফলে এই বিষয়গুলো এড়ানোর সুযোগ নেই।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় আবহাওয়া যে বিরূপ হয়ে উঠছে, তা আমলে নেওয়া জরুরি। এর আগে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, শুধু বন্যার ক্ষেত্রেই নয়, বাংলাদেশে কয়েক বছর ধরে অন্য প্রাকৃতিক দুর্যোগও বেশি হচ্ছে। এর মধ্যে আছে- অতিবৃষ্টি-অনাবৃষ্টি, তীব্র শৈত্যপ্রবাহ, তীব্র দাবদাহ, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, লবণাক্ততা, জোয়ার-জলোচ্ছ্বাস ইত্যাদি। আর জানা যায়, এ সবই জলবায়ু পরিবর্তন ও উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণ। ফলে দেশের সংশ্লিষ্টদের সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে মুক্ত থাকার জন্য সঠিক উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে