শুরু হয়েছে নতুন বছর ২০২৪। নতুন বছরে অর্থনীতি নিয়ে এখনই কি ভালো কিছু আশা করা যায়? সব মিলিয়ে ২০২৪ সালে বিশ্ব অর্থনীতি ভালো করবে বলেই পূর্বাভাস দেওয়া হচ্ছে। এমনিতেও ২০২৩ সালে যতটা ধারণা করা হয়েছিল, বিশ্ব অর্থনীতির অবস্থা ততটা খারাপ হয়নি। তাই ২০২৪ ঘিরে সবার মনেই যে আশাবাদ, সে তুলনায় বাংলাদেশ নিয়ে আশাবাদ কম। বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আসলেই কী আছে সামনে? কোভিড-১৯ বিশ্ব অর্থনীতিকে থামিয়ে দিয়েছিল। এরপর ২০২২ সালে রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করলে বিশ্ব অর্থনীতি বড় ধরনের হোঁচট খায়। সেখান থেকে বিশ্ব অর্থনীতি এখনো বের হতে পারেনি। বাংলাদেশের অর্থনীতির সংকটের কারণ কেবল কোভিড বা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নয়। সর্বনিম্ন কর-রাজস্ব অনুপাত, কৃত্রিমভাবে টাকাকে অতিমূল্যায়িত রাখা এবং ভঙ্গুর আর্থিক খাত অর্থনীতির সংকট আরও প্রকট করেছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, আর্থিক লেনদেনের হিসেবে ভারসাম্যহীনতা। ২০২৪ সাল শুরু হচ্ছে উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া এসব সংকট নিয়েই। সংকট তৈরি হয়েছে অনেকগুলো পুঞ্জিভূত কারণে। তা থেকে বের হওয়া সহজ নয়। রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ব্যবসায়ীগোষ্ঠীর হাতে জিম্মি হয়ে আছে ব্যাংক খাত। এই জিম্মিদশা থেকে বের হওয়ার মতো রাজনৈতিক অঙ্গীকার আছে কিনা, সেটাও অনেকের প্রশ্ন। ২০২২ সাল ছিল সংকটের মূল কারণ এড়ানো বা অস্বীকারের বছর। সব দায় চাপানো হয় কোভিড আর যুদ্ধের ওপর। অর্থনীতির সংকট তীব্র হওয়ায় সরকার অর্থনীতির নানা খাতে পরিবর্তনের চেষ্টা করলেও তেমন জোরালো কোনো উদ্যোগ ছিল না ব্যাংক খাতে। বিশেষ করে নজরদারির দিক থেকে। ফলে খেলাপি ঋণ বেড়েছে। ব্যাংক থেকে নানা উপায়ে অর্থ বের করে নেওয়ার প্রবণতাও বেড়েছে। পাচার হয়েছে অর্থ। সব মিলিয়ে ব্যাংকের ওপর কর্তৃত্ব হারিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বরং অনেক ক্ষেত্রে অনিয়মে নিশ্চুপ থেকেছে। রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ব্যবসায়ীগোষ্ঠীর হাতে জিম্মি হয়ে আছে ব্যাংক খাত। এই জিম্মিদশা থেকে বের হওয়ার মতো রাজনৈতিক অঙ্গীকার আছে কিনা, সেটাও অনেকের প্রশ্ন। ব্যবসায়ীরা ক্ষমতাসীন দলকে সমর্থন দিয়ে নানা ধরনের সুবিধাও নিয়েছেন ১৫ বছর ধরে। ফলে আবার ক্ষমতায় বসে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে, এমন আশাবাদ করাও যায় না। আর এই আশঙ্কা সত্যি হলে অর্থনীতির ঝুঁকিও থেকে যাবে। অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে বড় বিপদের নাম আর্থিক খাতের ওপর আস্থাহীনতা। এটা ঠিক করতে হবে নতুন বছরেই। আওয়ামী লীগ অবশ্য নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিশ্রম্নতি দিয়ে বলেছে, 'খেলাপি ঋণ আদায়ে কঠোর আইন প্রয়োগ এবং ব্যাংক যাতে বিধিনির্ধারিত সঞ্চিতি রাখে, তা নিশ্চিত করা হবে।' পাশাপাশি ইশতেহারে আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা ও অপরাধ দমন বিষয়ে বলা হয়েছে, 'পুঁজি পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। রাষ্ট্র ও সমাজের সব স্তরে ঘুষ-দুর্নীতি উচ্ছেদ, অনুপার্জিত আয় রোধ, ঋণ-কর-বিলখেলাপি ও দুর্নীতিবাজদের বিচারব্যবস্থার মাধ্যমে শাস্তি প্রদান এবং তাদের অবৈধ অর্থ ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হবে।' এসব কথা আগেও একাধিকবার বলা হয়েছিল। সুতরাং, গত ১৫ বছরে যা করা যায়নি, আগামী ৫ বছরে তা কতটা করতে পারবে সরকার, সেটাও বড় প্রশ্ন। বিদায় নেওয়া বছরটিতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের দু'টি কিস্তি পেয়েছে বাংলাদেশ। নতুন বছরে আরও দুই কিস্তি ঋণ পাওয়ার কথা। এই ঋণ পেতে ২০২৩ সালে শর্ত পূরণের অংশ হিসেবে বেশ কিছু প্রস্তুতিমূলক কাজ করতে হয়েছে। তবে আরও অনেক বেশি শর্ত পূরণ করতে হবে ২০২৪ সালে। এর মধ্যে রয়েছে কর ছাড় কমানো, জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয়, ভর্তুকি যৌক্তিক করা, খেলাপি ঋণ হ্রাস, রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকের দুর্দশাগ্রস্ত সম্পদের তালিকা নিয়মিত প্রকাশ, ব্যাংক খাতের তদারকিতে পরিকল্পনা প্রণয়ন, নীতি সুদহারের কাঠামো ঠিক করা, রাষ্ট্রমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক ঝুঁকি কমানো ইত্যাদি। অর্থাৎ বেশ কিছু কঠিন সংস্কার করতে হবে সরকারকে। এসব সংস্কার করা বেশ কঠিনই হবে। আর আইএমএফও প্রথম দুই কিস্তির সময় যে ছাড় দিয়েছে, নতুন বছরে এতটা নমনীয় হবে না। ফলে নতুন বছরে সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে আইএমএফকে সন্তুষ্ট রাখা। বাংলাদেশে ডলার-সংকট এখনো আছে। আমদানির রাশ টেনে রিজার্ভের পতন ঠেকানোর চেষ্টাও খুব ফলপ্রসূ হয়নি। আবার কেবল ৯ শতাংশ সুদহার যে বিনিয়োগ বাড়ায় না, সে প্রমাণও বাংলাদেশ পেয়েছে। আর ছিল অব্যাহত জ্বালানি সংকট। ফলে তিন বছর ধরেই বিনিয়োগ পরিস্থিতি মন্দাবস্থায়। অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে সবার আগে বিনিয়োগের এই মন্দা থেকে বের হতে হবে। সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা নিয়ে যে ঝুঁকি তৈরি হয়েছে, তা-ও দূর করতে হবে। আর এজন্য প্রয়োজন অর্থনীতির নেতৃত্ব কার হাতে থাকবে, তা ঠিক করা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত দুই বছরে স্বাধীনভাবে কাজ করেছে। একজন রাজনৈতিক অর্থমন্ত্রী অর্থনীতির নীতি নির্ধারণে কী ভূমিকা রাখবেন, সেটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে নতুন বছরে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক গভর্নর দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই অর্থনীতির সংকট কবে কাটবে, এ বিষয়ে অনেকবার কথা বলেছেন। কিন্তু কোনো পূর্বাভাসই মেলেনি। মোটাদাগে অর্থনীতিতে এখন তিনটি সমস্যা আছে। প্রথম সমস্যা হলো, উচ্চ মূল্যস্ফীতি। দ্বিতীয় সমস্যা বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যহীনতা। তৃতীয়টি হলো আর্থিক খাতের ভঙ্গুরতা। ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে। সম্পদের পচন ধরেছে। অনেক প্রতিষ্ঠানের মূলধনের ঘাটতি হয়েছে। এই তিন সমস্যার সমাধান করতে হবে। নতুন বছরে বিশ্ব অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছে। এর কিছু লক্ষণও আছে। ২০২৪ সালে বিশ্ব অর্থনীতির মন্দার আশঙ্কা খুবই কম। সুদের হার বাড়বে না বলেও মনে করা হচ্ছে। এতে জ্বালানি তেলসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্যমূল্য স্থিতিশীল থাকবে। এমন আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট আমাদের অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আনার পথ সুগম করবে। তবে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে হবে না। আমাদেরও কিছু উদ্যোগ নিতে হবে। তাহলে কী করতে হবে? অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আনার চেষ্টা ২০২৩ সালেও করা হয়েছে। কিন্তু সেই কৌশল সুফল দেয়নি। যে পথে চলেছি, তা ঠিক ছিল না- এই ভুল কৌশলগুলোর স্বীকৃতি থাকতে হবে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুদের হার বৃদ্ধিসহ কিছু উদ্যোগ দেখা গেছে। তবে যতটা করা হয়েছে, তা যথেষ্ট কিনা, অন্য দেশগুলো আরও কী করছে, তা দেখা উচিত। নতুন বছরে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আরও জোরালো পদক্ষেপ প্রয়োজন হতে পারে। বাজার ব্যবস্থাপনাও বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। একেক সময় একেক পণ্যের দাম বেড়ে যায়। বড় ব্যবসায়ীরা সুযোগসন্ধানী আচরণ দেখাচ্ছেন। বাজার অস্থিরতায় পেছন থেকে যারা ভূমিকা রাখছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে বৈধ চ্যানেল ডলার প্রবাহ বাড়াতে হবে। আর্থিক খাতের সব প্রতিষ্ঠান এক রকম নয়। আর্থিক খাতে ব্যাপকভাবে আস্থাহীনতা ছড়িয়ে পড়লে অর্থনীতি চালু রাখাই কঠিন হয়। আর্থিক খাতের সমস্যার স্বীকৃতি দেখা যাচ্ছে, কর্মসূচির ঘাটতিও নেই। তবে বাস্তবায়নে অলসতা আছে। কাজের গতি না এলে এই বিষফোঁড়া একদিন ক্যানসারে পরিণত হতে পারে। সব মিলিয়ে বলা যায়, নির্বাচন ও গণতন্ত্র নিয়ে বিশ্বব্যাপী যে বৈধতার সংকট দেখা দিয়েছে, তা থেকে দৃষ্টি ফেরাতে অর্থনীতির উন্নয়নের দিকেই হয়তো নতুন সরকারের নজর বেশি থাকবে। তবে এ জন্য অনেক কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়ে সংস্কার করতে হবে। নতুন বছরে এটাই হবে মূল চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ সরকার নেবে কমপক্ষে এই আশাবাদ তো রাখাই যায়। নতুন বছরে দেশের সার্বিক অর্থনীতি নতুন ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে। বিশেষ করে ভূ-রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে এবার বাংলাদেশকে ভূ-অর্থনৈতিক চাপে পড়তে হবে। ইতোমধ্যেই এ চাপ সীমিত আকারে আসা শুরু করেছে। আগামী দিনে এ চাপ নানা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আরও বাড়তে পারে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হওয়ার কারণেই এ ধরনের চাপ বাড়বে। এ চাপ মোকাবিলা করাই হবে অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এতে সবচেয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে রপ্তানিতে। ফলে রিজার্ভে চাপ আরও বাড়বে। ডলার বাজারে অস্থিরতা থাকবে। এছাড়া বিদেশি বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান, ব্যবসাবাণিজ্যেও নেতিবাচক প্রভাব আসতে পারে। একই সঙ্গে দেশে মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ ও আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্ত বাস্তবায়ন করতে বাজারে টাকার প্রবাহ কমানোর নীতি আরও কঠোর করতে হবে। সুদের হার আরও বাড়াতে হবে। ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হারকে বাজারের ওপর ছেড়ে দিতে হবে। এতে ডলারের দাম বাড়বে। ফলে শিল্পের খরচ বাড়ায় পণ্যের দামও বেড়ে যাবে। এসব মিলে বিশেষ করে স্বল্প ও মধ্য আয়ের মানুষের কষ্ট আরও বেড়ে যাবে। তবে আশার কথা, মূল্যস্ফীতির নিম্নমুখী প্রবণতা মার্চ পর্যন্ত কমতে পারে। বছরজুড়ে রেমিট্যান্স বাড়তে পারে। তবে এপ্রিল থেকে আবার বাড়তে পারে মূল্যস্ফীতি। আন্তর্জাতিক বাজারে চাল, চিনি, জ্বালানি উপকরণের দাম বাড়ছে। এগুলোর প্রভাবে দেশের বাজারেও পণ্যের দাম বাড়তে পারে। রপ্তানির প্রধান খাত তৈরি পোশাকশিল্পে বাড়তে পারে অস্থিরতা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইসু্যতে বর্তমান সরকারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অস্ট্রেলিয়া, কানাডার সঙ্গে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। তারা চেয়েছিল একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। বাংলাদেশের নির্বাচনকে তারা অংশগ্রহণমূলক মনে করছে না। এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নিষেধাজ্ঞা, শ্রম অধিকার ক্ষুণ্ন্ন করার ইসু্যতে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়েছে। নির্বাচনের পর এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে বলে ব্যাপকভাবে আলোচনা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের এ ধরনের মনোভাবের কারণে তাদের মিত্র ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড প্রশ্নের মুখে পড়ার আশঙ্কা আছে। এ বিষয়ে দেশের অর্থনীতিবিদ ও সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে সতর্ক করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র আগে রেমিট্যান্স আহরণের শীর্ষে ছিল। এখন নেমে এসেছে চতুর্থ স্থানে। রেমিট্যান্স কমেছে ৪১ শতাংশ। একক দেশ হিসেবে সবচেয়ে রপ্তানি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটি থেকে আয় কমেছে ৭ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি কমেছে ৪৬ শতাংশ। বাংলাদেশে তাদের বিনিয়োগ কমেছে ৪ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের পথ ধরে তাদের মিত্র দেশগুলোয়ও এর প্রভাব পড়তে পারে। তবে রপ্তানি কমেছে তাদের দেশের অভ্যন্তরীণ নীতির কারণে। বিনিয়োগ কমেছে বৈশ্বিক মন্দায়। বাংলাদেশের আমদানি কমেছে ডলার সংকটের কারণে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ এ প্রথমবার ভূ-রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের চাপে পড়েছে। এর নেতিবাচক প্রভাব এখনো অর্থনীতিতে পড়েনি। তবে অর্থনীতিতে চাপ রয়েছে। এক্ষেত্রে সতর্কতার সঙ্গে পদক্ষেপ নিতে হবে। বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের বড় একটি অংশই যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে সম্পাদিত হচ্ছে। এ দু'টি অঞ্চল থেকে বাংলাদেশে সবচেয়ে বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে। রপ্তানির প্রায় ৮২ শতাংশই এসব দেশে যাচ্ছে। অন্যদিকে, আমদানির ৭২ শতাংশই আসছে ভারত ও চীন থেকে। রেমিট্যান্সের বড় অংশই আসছে ওইসব অঞ্চল থেকে। বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সিংহভাগই আসছে আমেরিকা ও ইউরোপ থেকে। আর এগুলো খরচ হচ্ছে বেশি চীন ও ভারতে। আয় হলে খরচ করা যাবে। আয় না হলে খরচ সম্ভব হবে না। এক্ষেত্রে সরকারকে সতর্কভাবে এগোতে হবে। অর্থনীতিতে এখন দুই ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার প্রস্তুতি নিতে হবে। একটি হলো, চলমান চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করা। এর মধ্যে রিজার্ভ বাড়ানো, ডলারের দাম স্থিতিশীল রাখা, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ- এগুলোয় নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন হবে। কারণ, রেমিট্যান্স ও রপ্তানি বাড়ানো সহজ হবে না। এটি না বাড়লে আমদানি ব্যয় মেটাতে রিজার্ভে হাত দিতে হবে। তখন রিজার্ভের ক্ষয় বাড়বে। ডলারের দামও বাড়বে। তখন মূল্যস্ফীতির হার উসকে যাবে। এ পরিস্থিতি সামাল দিতে জরুরি ভিত্তিতে দেশ থেকে টাকা পাচার বন্ধ করতে হবে। দেশের বিদ্যমান সংকটের মধ্যে আর কোনোভাবেই ডলারের দাম বাড়তে দেওয়া উচিত হবে না। ডলারের কারণেই অর্থনীতির সব খাত আক্রান্ত হচ্ছে। নির্বাচনপরবর্তী সময়ে যদি ভূ-রাজনৈতিক কারণে কোনো বিধিনিষেধ চলে আসে, তাহলে বড় সমস্যা হবে। ওই ধরনের কোনো নিষেধাজ্ঞা যাতে না আসে, সেদিকে নজর রাখতে হবে।
নির্বাচনের পর অর্থনীতিতে বড় সংস্কার আনতে হবে। রেমিট্যান্স বাড়াতে হবে। রপ্তানির নতুন বাজার অনুসন্ধান করতে হবে। মূল্যস্ফীতি কমাতে হবে। তা না হলে স্বল্প ও মধ্য আয়ের মানুষের ভোগান্তি কমবে না।
রেজাউল করিম খোকন :অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার ও কলাম লেখক