সোমবার, ১২ মে ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২

জাতীয় ঐক্যের প্রতীক খালেদা জিয়া : সেনাপ্রধানের সাক্ষাৎ কি নতুন সমীকরণ তৈরি করছে?

বর্তমানে উপদেষ্টা সরকার রাজনৈতিক ও আইনি বৈধতার অভাবে জর্জরিত। দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ক্রমশ অনিশ্চয়তার দিকে ধাবিত হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে সেনাপ্রধানের এই সাক্ষাৎ দেশের রাজনৈতিক ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম রেজাউল করিম
  ০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
জাতীয় ঐক্যের প্রতীক খালেদা জিয়া : সেনাপ্রধানের সাক্ষাৎ কি নতুন সমীকরণ তৈরি করছে?

সাম্প্রতিক সময়ে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। রাজনৈতিক মহলে এই সাক্ষাৎ নিছকই সৌজন্য বিনিময় হিসেবে বিবেচিত হলেও, দেশের চলমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় এর গভীর অর্থ ও তাৎপর্য রয়েছে।

বর্তমানে উপদেষ্টা সরকার রাজনৈতিক ও আইনি বৈধতার অভাবে জর্জরিত। দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ক্রমশ অনিশ্চয়তার দিকে ধাবিত হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে সেনাপ্রধানের এই সাক্ষাৎ দেশের রাজনৈতিক ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

গণ-অভু্যত্থান ও রাজনৈতিক মেরুকরণ: তিন আগস্টের অভু্যত্থানের পর থেকে দেশের রাজনীতিতে একটি নতুন মেরুকরণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ছাত্র-যুব সম্প্রদায়ের নেতৃত্বে সংঘটিত গণ-অভু্যত্থান নতুন ধারার সূচনা করেছে। তারা জুলাই বিপস্নবের ইশতেহার পাঠের মাধ্যমে তাদের অভিপ্রায় ব্যক্ত করতে চেয়েছিল। কিন্তু প্রশাসনিক বাধার কারণে তা সম্ভব হয়নি। আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এই ঘোষণার বিরোধিতা করেছিলেন- যা উপদেষ্টা সরকারের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের ইঙ্গিত বহন করে।

সেনাবাহিনীর ভূমিকা ও জনগণের প্রত্যাশা :গণ-অভু্যত্থানের পর সেনাবাহিনী জনগণের পক্ষে অবস্থান নিয়ে যে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেছে, তা প্রশংসিত হয়েছে। দেশের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সেনাবাহিনীর এই অবস্থান ভবিষ্যতেও গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। জনগণ আশা করে, সেনাবাহিনী জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় গণতন্ত্রের পক্ষে থাকবে এবং জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাবে।

খালেদা জিয়ার প্রতীকী অবস্থান:বেগম খালেদা জিয়া আপসহীন লড়াই ও সংগ্রামের মাধ্যমে জাতীয় ঐক্যের প্রতীকে পরিণত হয়েছেন। তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে থাকুন বা না থাকুন, তার রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও প্রতীকী অবস্থান দেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতিকে গভীরভাবে প্রভাবিত করবে। ফ্যাসিস্ট শক্তির অধীনে নির্বাচন না করার তার অবস্থান তাকে ঐতিহাসিক মর্যাদায় উন্নীত করেছে- যা সহজে ম্স্নান হওয়ার নয়।

রাজনৈতিক সমীকরণ : তিন ত্রিভুজ শক্তি:

বাংলাদেশের আগামী রাজনীতি তিনটি প্রধান শক্তির সমন্বয় বা বিরোধের ওপর নির্ভর করবে:

১. ছাত্র-জনতা: গণঅভু্যত্থানের নেতৃত্বদানকারী ছাত্র-যুব সম্প্রদায়। তাদের রাজনৈতিক পরিপক্কতা এবং দায়িত্বশীলতা দেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

২. বিএনপি ও জাতীয় ঐক্য: খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি এবং তার জোট জাতীয় ঐক্যের প্রতীক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান ধরে রেখেছে।

৩. সেনাবাহিনী: জাতীয় নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় সেনাবাহিনীর ভূমিকা সব সময়ই গুরুত্বপূর্ণ ছিল এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।

ইসলামী দলগুলোর অবস্থান: ইসলামী দলগুলো এখনো রাজনীতির মূল স্রোতে প্রবেশ করতে পারেনি। তবে, ছাত্র-যুব সম্প্রদায়ের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা নতুন রাজনৈতিক ধারার সঙ্গে ইসলামী দলগুলো নিজেদের অবস্থান নির্ধারণে আগ্রহী।

জাতীয় ঐক্য ও স্থিতিশীলতার প্রয়োজনীয়তা: সেনাপ্রধানের সঙ্গে খালেদা জিয়ার সাক্ষাৎ জাতীয় ঐক্য ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার পরিবেশ তৈরির লক্ষণ বহন করে। এটি নিছক সৌজন্য সাক্ষাৎ হলেও, এর ইতিবাচক প্রভাব দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে সুদূরপ্রসারী হতে পারে। জনগণের প্রত্যাশা, সেনাবাহিনী, বিএনপি এবং ছাত্র-যুব সম্প্রদায় দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে।

ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম রেজাউল করিম: কলামিস্ট, সমাজসেবক ও রাজনীতিবিদ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে