বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে সামাজিক পস্ন্যাটফর্মগুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর মাধ্যমে মানুষের দৈনন্দিন বিভিন্ন কার্যক্রম সহজ হয়েছে, পাশাপাশি সামাজিক মাধ্যমগুলোর অপব্যবহার করে প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন প্রতারণার ফাঁদ- যার ফলস্বরূপ সাধারণ মানুষ ভুক্তভোগী হচ্ছে বিভিন্ন প্রতারক চক্রের দ্বারা। বর্তমানে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউবসহ বিভিন্ন পস্ন্যাটফর্মের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য ও সেবা প্রচার করছে। তবে সামাজিক পস্ন্যাটফর্মগুলোতে সাধারণ মানুষের দুর্বলতাকে পুঁজি করে কিছু অসাধু চক্র মিথ্যা লোভনীয় বিজ্ঞাপন দেওয়ার মাধ্যমে ভোক্তাদের আকৃষ্ট করছে এবং সাধারণ মানুষ প্রতারণার শিকার হয়ে অনলাইনে পণ্য কেনা থেকে আগ্রহ হারাচ্ছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রতারণার কারণ হিসেবে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, সামাজিক পস্ন্যাটফর্মগুলোতে বিজ্ঞাপন নিয়ন্ত্রণের জন্য নির্দিষ্ট কার্যকরী কোনো আইন বা নিয়মনীতি নেই। ফলে, প্রতারকরা সহজেই ভুয়া বিজ্ঞাপন প্রচার করে প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছে। অনেক ব্যবসায়ী তাদের পণ্য দ্রম্নত বিক্রির আকর্ষণীয় গ্রাফিক ডিজাইন ও ভিডিও ব্যবহার করে প্রতারণামূলক বিজ্ঞাপন তৈরি করে- যা বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় এবং ভোক্তাদের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে।
বিজ্ঞাপন ব্যবহার করার ক্ষেত্রে অধিক মুনাফার প্রলোভন, পণ্য ডেলিভারি ফ্রি, বিশেষ ডিসকাউন্টের মতো প্রলোভনমূলক অফারগুলো সাধারণ মানুষের ভুল পথে পরিচালিত করে প্রতারণার ফাঁদে পা বাড়াতে আকৃষ্ট করছে। প্রতারণার সঙ্গে জড়িত চক্রগুলো নিজের পরিচয় ও প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করে ভুয়া বিজ্ঞাপন তৈরি করে পরিচয় গোপন রেখে ব্যবহারকারীদের সঙ্গে ভুল তথ্য বা বিভিন্ন শর্তে পণ্য বিক্রি করে।
এছাড়াও অজান্তেই ব্যবহারকারীরা বিভিন্ন সময় সাইবার আক্রমণের শিকার হয়ে থাকেন। উদাহরণ হিসেবে ভুয়া ওয়েবসাইটের মাধ্যমে পেমেন্ট গেটওয়ে তৈরির মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের ক্রেডিট কার্ড বা ব্যাংক একাউন্টের তথ্য চুরি করা হয়। গত বছরের দেশের একটি সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে ওঠে এসেছে অনলাইন প্রতারণার শিকার হওয়া অভিনেতা আফজাল হোসেন ঘটনাবলি। যেখানে বলা হয়, তিনি তিনবার অনলাইন প্রতারণার শিকার হয়েছেন। প্রথমবার একটা ছোট্ট বেডসাইড টেবিল কিনে একদিনও ব্যবহার করতে পারেননি। দ্বিতীয়বার মোবাইল ফোনের চার্জার ক্যাবল কিনে তা একবারও ব্যবহার করা যায়নি। পরবর্তী সময়ে যোগাযোগ করলে তারা বদলে দেবে বলেছিল, শেষ পর্যন্ত দেয়নি এবং পরে আর যোগাযোগও করা যায়নি।
অনলাইন প্রতারণা প্রতিরোধে প্রয়োজন সামাজিক মাধ্যমে বিজ্ঞাপন ব্যবস্থায় কঠোর নিয়মাবলি প্রবর্তন এবং কোনো ধরনের বিজ্ঞাপন অনুমোদিত এবং কোনটি প্রতারণামূলক তা স্পষ্টভাবে নিশ্চিতকরণ। সামাজিক মাধ্যমে বিজ্ঞাপনের সঙ্গে সম্পর্কিত তথ্য সম্পর্কে ব্যবহারকারীদের সচেতনতা বৃদ্ধি করা, কীভাবে ভুয়া বিজ্ঞাপন চিনতে পারবে এবং কোন ধরনের বিজ্ঞাপন থেকে সাবধান থাকতে হবে সেই বিষয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা। ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত রাখতে ডিজিটাল নিরাপত্তা ব্যবস্থা শক্তিশালী করা, ভুয়া বিজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে একটি কার্যকর সিস্টেম তৈরি করা- যাতে ভুক্তভোগীদের দ্রম্নত অভিযোগের সুযোগ থাকে এবং কর্তৃপক্ষ দ্রম্নত ব্যবস্থা নিতে পারে।
সামাজিক মাধ্যমে ভুয়া বিজ্ঞাপনের দ্বারা প্রতারণা বর্তমানে একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতারক চক্রকে দমন করতে প্রয়োজন সরকারি, বেসরকারি, সামাজিক ও ব্যক্তি পর্যায় থেকে সচেতনতা বৃদ্ধি, কঠিন আইন, শক্তিশালী প্রযুক্তি ব্যবস্থার উন্নয়ন। যদি অনলাইন প্রতারণার বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে সব পর্যায় থেকে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়, তবেই সামাজিক মাধ্যমে প্রতারণাকে না বলা সম্ভব হবে।
মো. মুজাহিদুল ইসলাম :কলাম লেখক