রোববার, ১১ মে ২০২৫, ২৭ বৈশাখ ১৪৩২

শিশুশ্রম :সভ্য জাতির অভিশাপ!

দেশে শিশুশ্রমিকের সংখ্যা ক্রমশ বাড়তে থাকলে পুরো দেশ ও জাতি অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে! শিশুরাই আগামী দিনের কর্ণধার, দেশের প্রাণশক্তি! আর এই বিপুল পরিমাণ জনশক্তিকে জনসম্পদে রূপান্তর করতে অক্ষম হলে দেশের সার্বিক উন্নতি বাধাগ্রস্ত হয়ে মুখ থুবড়ে পড়বে!
আসিফ আল মাহমুদ
  ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
শিশুশ্রম :সভ্য জাতির অভিশাপ!

ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুরই অন্তরে। অর্থাৎ, আজকের শিশুই আগামী দিনের স্বপ্নদ্রষ্টা! শিশুরাই ভবিষ্যৎ দেশ ও জাতি গড়ার ভার কাঁধে তুলে নিবে! তবে দুর্ভাগ্যের বিষয়, শ্রম্নমের জাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে শিশুদের দুরন্ত শৈশব এবং উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ আজ অন্ধকারের অতলে হারিয়ে যাচ্ছে! দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে 'শিশুশ্রম' ভয়াবহ এক অভিশাপের নাম! যেই বয়সে একটি শিশু বই হাতে বিদ্যালয়ে যাওয়ার কথা সেই বয়সে তাকে ইটভাটা কিংবা কলকারখানায় শ্রমিকের কাজ করতে হচ্ছে। সব ক্ষেত্রেই 'শিশুশ্রম' নিষিদ্ধ হলেও, ঘরের বাইরে গেলেই দেখা যায় 'শিশুশ্রমে'র করুণ চিত্র! দারিদ্র্যের নিষ্ঠুর কষাঘাতে জর্জরিত পরিবারের অভাগা সন্তান দুবেলা দুমুঠো অন্ন জোগাড়ের তাগিদে একান্ত নিরুপায় হয়েই 'শিশুশ্রমে' জড়িয়ে পড়ে! বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অর্থনৈতিক দুরবস্থাই 'শিশুশ্রমে'র মূল কারণ হিসেবে দায়ী!

আমাদের চারপাশে হামেশাই ঘটছে শিশুশ্রমিকদের প্রতি অমানবিক নির্যাতনের ঘটনা! আজকাল শিশু গৃহকর্মী কিংবা শিশুশ্রমিককে কাজে ভুল করার অজুহাতে লোমহর্ষক নির্যাতনের কথা শোনা যায়! বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় নিয়োজিত শিশুরা প্রতিনিয়ত কীভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে তা আমরা প্রায়ই গণমাধ্যমে কমবেশি দেখতে পাই! এদের অনেকেই আবার অসামাজিক কার্যকলাপ তথা বহুবিধ অপরাধ, অপকর্মে লিপ্ত হয়ে পড়ছে! কেউ কেউ আবার মাদকাসক্তও হয়ে পড়ছে! এমনকি অনেকেই মানবপাচার চক্রের পালস্নায় পড়ে বিদেশেও পাচার হয়ে যাচ্ছে!

'শিশুশ্রম'কে বলা হয় 'দারিদ্র্যের ফসল'! দরিদ্রতাই 'শিশুশ্রমে'র মূল কারণ! 'শিশুশ্রম' বন্ধ করতে হলে প্রথমে দরিদ্রতা দূর করতে হবে। তার সঙ্গে চাই, দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন! অন্যের শিশুকে নিজের সন্তানতুল্য ভাবতে হবে। প্রতিটি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ১৪ বছরের কম শিশুদের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। 'শিশুশ্রম' বন্ধে গ্রাম ও শহরভিত্তিক পুনর্বাসন প্রকল্প চালু করতে হবে। অভাবের তাড়নায় যেসব শিশুরা শ্রমে নিয়োজিত হচ্ছে তাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করে ভাতার ব্যবস্থা করতে হবে। 'শিশুশ্রম' নিরসনে দেশে প্রচলিত যেসব আইন রয়েছে তা বাস্তবায়ন করতে বর্তমান সরকারের উচিত অনতিবিলম্বে স্বল্প, মধ্য আর দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হাতে নেওয়া। সবার সমন্বিত উদ্যোগে জাতির অভিশাপ 'শিশুশ্রম' অবশ্যই নিরসন করা সম্ভব!

এমনও দেখা যায়, বেশি বেতন দিতে হবে তাই বড়দের কাজে না রেখে শিশুদের দিয়ে কাজ করানো হয়! সেক্ষেত্রে মালিকের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে! 'জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলে'র আওতায় 'শিশুশ্রম'কে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্ব দেওয়া আবশ্যক। শ্রমজীবি প্রতিটি শিশুর শিক্ষা সুনিশ্চিত করতে হবে। 'শিশুশ্রম' এবং 'শিশু অধিকার' নিয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধির সত্যিকার অর্থেই কোনো বিকল্প নেই! শিশুরাই দেশ ও জাতির কান্ডারি! আজকের শিশুই উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ বিনির্মাণের কারিগর! শিশুরাই একদিন রাষ্ট্র পরিচালনার সুমহান দায়িত্ব হাতে নেবে! তাই শিশুদের যোগ্য আর সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা অত্যাবশ্যক! পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে শিশুদের শারীরিক, মানসিক ও মেধা বিকাশের জন্য বহুমুখী পরিচর্যাব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে শিশুরা অশিক্ষা আর দারিদ্র্যের কারণে তাদের মৌলিক অধিকার থেকে প্রতিনিয়তই বঞ্চিত হচ্ছে! অভাবের কারণে জীবনের প্রারম্ভেই তারা শ্রম্নমিকের খাতায় নাম লেখাতে বাধ্য হচ্ছে!

'শিশুশ্রম' সরকারের 'টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি)' পূরণের পথে কঠিন একটি বাধা! দেশে শিশুশ্রমিকের সংখ্যা ক্রমশ বাড়তে থাকলে পুরো দেশ ও জাতি অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে! শিশুরাই আগামী দিনের কর্ণধার, দেশের প্রাণশক্তি! আর এই বিপুল পরিমাণ জনশক্তিকে জনসম্পদে রূপান্তর করতে অক্ষম হলে দেশের সার্বিক উন্নতি বাধাগ্রস্ত হয়ে মুখ থুবড়ে পড়বে! কেননা, শিশুদের ওপরই আগামীর দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ নির্ভরশীল! শিশুদের শ্রম থেকে মুক্তি দিয়ে ফিরিয়ে দিতে হবে দুরন্ত শৈশব! তাদের সুশিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে হবে। 'শিশুশ্রম' নিরসনে দরকার সামাজিক এবং রাজনৈতিক কার্যকরী পদক্ষেপ। 'শিশুশ্রম' বন্ধে এবং শিশুদের অধিকার নিশ্চিতকরণে আমাদের সবাইকে সোচ্চার হতেই হবে।

আসিফ আল মাহমুদ : ফ্রিল্যান্স রাইটার

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে