তৈরি পোশাক খাত বাংলাদেশের অন্যতম রপ্তানি খাত। ফলে, এই খাতে যে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তা সন্দেহাতীতভাবেই আশঙ্কাজনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে- যা আমলে নেওয়ার বিকল্প নেই। প্রসঙ্গত, শ্রমিক অসন্তোষসহ নানা কারণে বাংলাদেশে গত বছর অন্তত ১০০ গার্মেন্টসের পাশাপাশি অন্যান্য আরও কারখানা হয় পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে, না হয় কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে। আর চাকরি হারিয়েছেন প্রায় ৪০ হাজার শ্রমিক। দেশের ধীর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কারখানা বন্ধের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে মনে করছে নিক্কেই এশিয়া- এমনটি খবরের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে। এক্ষেত্রে উলেস্নখ্য, জাপানভিত্তিক ইংরেজি ভাষার এই সাপ্তাহিক নিউজ ম্যাগাজিনটি এশিয়া মহাদেশের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করার পাশাপাশি বৃহত্তর আন্তর্জাতিক উন্নয়নকেও কভার করে।
আমরা বলতে চাই, কারখানা পুরোপুরি বন্ধ কিংবা কার্যক্রম বন্ধসহ চাকরি হারিয়েছেন প্রায় ৪০ হাজার শ্রমিক। অন্যদিকে, দেশের ধীর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কারখানা বন্ধের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে- এমনটি ঘটলে তা কোনোভাবেই এড়ানোর সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন জরুরি। আমলে নেওয়া দরকার, পত্রিকাটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, গাজীপুরে চারটি গার্মেন্টসের কর্মীরা ২ জানুয়ারি সকালে জানতে পারেন তাদের চাকরি আর থাকছে না। কারণ কারখানাগুলোকে স্থায়ীভাবে বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। এভাবেই কয়েক হাজার গার্মেন্টসকর্মীর জীবন অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যায়। ২৯ ডিসেম্বর থেকেই সেখানের কর্মীরা কাজ থেকে বিরত থাকেন। কারণ নভেম্বর মাসের বেতনই হাতে পাননি এসব শ্রমিক। গ্রম্নপটি, বর্তমান অস্থিতিশীল বাজারের কারণেই গার্মেন্টসগুলো বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ কাঁচামালের অপর্যাপ্ততা ও কার্যাদেশ কম থাকার কথা বলা হয়। এছাড়া, ২০২৪ সালে আরও কয়েক হাজার গার্মেন্টসকর্মী চাকরি হারিয়েছেন। কারণ এই সময়ে অন্তত ১০০ গার্মেন্টসের পাশাপাশি অন্যান্য আরও কারখানা হয় পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে, না হয় কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে। ফলে, এই বিষয়গুলো আমলে নেওয়া এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে উলেস্নখ করা দরকার, বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, গত বছরের প্রথম সাত মাসে ৪৪টি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে, যেখানে প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক কর্মরত ছিলেন। ছাত্র-জনতার গণ-অভু্যত্থানের মুখে ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকেই একের পর এক কারখানা বন্ধ হতে থাকে। গ্যাস সরবরাহজনিত সমস্যা, ব্যাংক থেকে সহায়তার অভাব ও শ্রমিক অসন্তোষের কারণে তারপর আরও ৩২টি কারখানার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়, যেখানে ৩১ হাজার ৪০০ শ্রমিক কর্মরত ছিলেন। নিটওয়্যার, টেক্সটাইল ও অন্যান্য খাতের বন্ধ কারখানার সংখ্যা যদি হিসাব করা হয় তাহলে চাকরি হারানো শ্রমিকের সংখ্যা আরও অনেক বেশি হবে।
আমরা বলতে চাই, দেশের অর্থনীতি ও সামগ্রিক অগ্রগতিতে পোশাক কারখানার গুরুত্ব অপরিসীম। ফলে, এই খাতের যে কোনো সংকট নিরসন করতে হবে ধীর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কারখানা বন্ধের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এটাকে কোনোভাবেই এড়ানোর সুযোগ নেই। ঢাকাভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের একজন গবেষণা পরিচালক জানিয়েছেন কারখানা বন্ধ ও দেশের বর্তমান সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে একটি যোগসূত্র দেখতে পাচ্ছেন। এছাড়া, জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে উৎপাদন খাতের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১ দশমিক ৪ শতাংশ। যা আগের বছরে একই সময়ের ১০ শতাংশ থেকে অনেক কম। সার্ভিস খাতে প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ১ শতাংশ থেকে কমে ১ দশমিক ৫ শতাংশ হয়েছে বলেও জানা যায়।
সর্বোপরি বলতে চাই, কারখানা বন্ধ হলে তা সার্বিকভাবে নেতিবাচক। এছাড়া, শ্রমিক অসন্তোষসহ নানা কারণে বাংলাদেশে কারখানা বন্ধ না হয় কার্যক্রম বন্ধ বা চাকরি হারানো এই বিষয়গুলো এড়ানোর সুযোগ নেই। দেশের ধীর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কারখানা বন্ধের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে এই দিকটি খতিয়ে দেখতে হবে। এই খাতের যে কোনো সংকট মোকাবিলায় সব ধরনের পদক্ষেপ নিশ্চিত হবে এমনটি কাম্য।