আমরা যখন স্বাধীনতার কথা বলি তখন মেজর জিয়ার নাম স্মরণ করি। আমরা যখন বিপস্নবের কথা বলি তখন সাতই নভেম্বরের সিপাহী জনতার স্স্নেস্নাগান তুলি উচ্চকিত কণ্ঠে। আমরা যখন বহুদলীয় গণতন্ত্রের কথা বলি, উন্নয়ন ও অগ্রগতির কথা বলি, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের কথা বলি তখন প্রেসিডেন্ট জিয়ার কথা সামনে রাখি। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান জিয়াউর রহমান একজন সর্বোচ্চ খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সূচনায় রাজনৈতিক নেতৃত্ব যখন সিদ্ধান্তহীনতার দোলাচলে ঘুরপাক খাচ্ছে তখন কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে রাজনৈতিক দৃশ্যপটে আগমন ঘটে এই ক্ষণজন্মা পুরুষের। তার সেদিনের ঐতিহাসিক ভাষণে দিশাহীন জাতি খুঁজে পায় মুক্তির ঠিকানা, ঝাঁপিয়ে পড়ে মক্তিযুদ্ধে। থমকে যায় পাক হানাদার বাহিনির সব পরিকল্পনা। যেমনটি ঘটেছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনালগ্নে ১৯৪০ সালের ১৪ জুন হিটলারের নাৎসি বাহিনির হাতে ফ্রান্সের পতনের পর। ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী হেনরি পেঁত্যার পুতুল সরকার যখন নাৎসি বাহিনির সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তি করতে যাচ্ছেন ঠিক তার পূর্বমুহূর্তে ফ্রান্সের জেনারেল শার্ল দ্য গল বিবিসি রেডিওতে ফরাসি জাতির উদ্দেশে এক ভাষণে নিজেকে স্বাধীন ফ্রান্সের একমাত্র নেতা হিসেবে ঘোষণা করে ফ্রান্সে অবস্থানরত জার্মান নাৎসি বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধের সূচনা করেন। তিনি ফরাসি জাতিকে নাৎসি বাহিনির বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান। জেনারেল দ্য গলের এ পদক্ষেপ পরবর্তীতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের গতিপথকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে। ঐতিহাসিক এ ভাষণে জেনারেল দ্য গোল বলেন, ফরাসি প্রতিরোধের যে অগ্নিশিখা প্রজ্বলিত হয়েছে তা কখনোই নিভবে না। দুই. ক্ষণজন্মা নেতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আজ ৮৯তম জন্মদিন। তার ওপর আলোচনার আগে বলে রাখি তার পিতা মনসুর রহমান বৃটিশ শাসনামলে একজন বিজ্ঞানী ছিলেন। ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি ও ম্যাথম্যাটিকস নিয়ে ১৯২৬ সালে তিনি রাজশাহী কলেজ থেকে বিএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯২৮ সালে বৃটিশ কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে আলীপুর টেস্টিং ল্যাবে কেমিস্ট হিসেবে তার চাকরি জীবন শুরু। ১৯৩০ সালে অটোয়ারীর মির্জা পরিবারের জাহানারা খাতুন রানীর সঙ্গে তিনি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। এই রানী ছিলেন নজরুল সঙ্গীত শিল্পী। করাচি রেডিওতে নিয়মিত সঙ্গীত পরিবেশন করতেন তিনি। জিয়াউর রহমান কমলকে জানতে হলে তার অন্য চার ভাইয়ের শিক্ষাদীক্ষা সম্পর্কে জানতে হবে। বড় ভাই রেজাউর রহমান আইএসসি পাস করে নেভাল অফিসার পদে যোগদান করেছিলেন। কিন্তু চাকরি ছেড়ে দিয়ে ব্রিটেন থেকে ইলেক্ট্রিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে গ্রাজুয়েশন করে জাতিসংঘে চাকরি নেন। তৃতীয় ভাই মিজানুর রহমান অর্থনীতিতে অনার্স-মাস্টার্স করে আরব বাংলাদেশ ব্যাংকের লন্ডন শাখায় চাকরি নেন। চতুর্থ ভাই খলিলুর রহমান ফার্মেসিতে গ্রাজুয়েশন করে মোজাম্বিক সরকারের অধীনে চাকরি নেন। সবার ছোট আহমেদ কামাল গ্রাজুয়েশন করে পর্যটন কর্পোরেশনে জিএম হিসেবে অবসরে যান। জিয়াউর রহমানের জন্ম ১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারি। তার বয়স যখন মাত্র পাঁচ বছর তখন শুরু হয়ে যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। কলকাতায় পড়তে থাকে জাপানী বোমা। পিতা মনসুর রহমান তখন শিশু কোমলসহ পরিবারের সদস্যদের রেখে যান বগুড়ার গাবতলীর বাগবাড়ি পিতৃভিটায়। শিশু কমল সেখানে পেয়ে যান বিশ্বযুদ্ধ ফেরত চাচা ডাঃ মমতাজুর রহমানকে যার কাছ থেকে তিনি শুনতেন যুদ্ধের গল্প। যুদ্ধশেষে আবার তিনি পিতামাতার সঙ্গে চলে যান কলকাতার পার্ক সার্কাস রোডে। সে সময় ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন তুঙ্গে। সেখানে জনসভায় আসতেন মহাত্মা গান্ধী, মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, জওহার লাল নেহেরু, মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক। প্রবাদপ্রতিম এসব নেতার রাজনৈতিক বক্তৃতা শুনে শুনে বেড়ে উঠেন শিশু কমল। আর মনের কোণে লুকিয়ে রাখেন রাজনীতির সুপ্ত বাসনা। তিন. স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনীতিতে অনেকটা ধূমকেতুর মতো আবির্ভাব ঘটে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পর ৩রা নভেম্বর ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর একটি অংশ পাল্টা অভু্যত্থান ঘটিয়ে মেজর জেনারেল জিয়াকে গৃহবন্দি করে। টালমাটাল পরিস্থিতির অবসান ঘটে দেশপ্রেমিক সিপাহী জনতার বিপস্নবের মধ্য দিয়ে ৭ই নভেম্বর। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে নয় সিপাহি-জনতার দাবির কাছে আত্মসমর্পণ করেই সেদিন তিনি পৌঁছে গেলেন বঙ্গভবনে। এখানে ইতিহাসই তাকে খুঁজে বের করেছে বাংলাদেশের হাল ধরার জন্য। সেনাবাহিনীর মধ্যে প্রশ্নাতীত জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা তাকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার পাদপিঠে আসীন করে। এরপর ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে ১৯৭৮ সালের ৩ জুন একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এমএজি ওসমানিকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে জিয়াউর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হন। \হএর আগে ১লা মে ১৯৭৮ সাল থেকে প্রেসিডেন্ট জিয়া রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর থেকে বিধি-নিষেধ তুলে নেন। জিয়াউর রহমান প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর শেখ মুজিবুর রহমানের রেখে যাওয়া রাষ্ট্র- যেখানে মানুষের অধিকার, মর্যাদা ভূ-লুণ্ঠিত, গণতন্ত্র নির্বাসিত, বিশৃঙ্খলাপূর্ণ ও শান্তিশৃঙ্খলাহীন এবং একদলীয় শাসনব্যবস্থা 'বাকশাল' বিলুপ্ত করে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রবর্তন করেন। অর্থাৎ গণতন্ত্রের ভিত রচনা করেন এবং নতুন যুগোপযোগী রাজনীতির সূচনা করেন। যার ফলে আওয়ামী লীগও আবার নতুনভাবে রাজনীতি করার সুযোগ পায়। জিয়াউর রহমান ছিলেন সাংবাদিকবান্ধব প্রেসিডেন্ট। তিনি বাকশাল আমলে বন্ধ সব পত্রিকা প্রকাশ করার অনুমতি দিয়ে সংবাদপত্রের পূর্ণ স্বাধীনতা দেন। সাংবাদিকতা পেশার মান উন্নয়নে প্রতিষ্ঠা করেন প্রেস ইনস্টিটিউট। প্রেস ক্লাবের জন্য বর্তমান স্থানে স্থায়ীভাবে জমি বরাদ্দ দিয়ে নতুন ভবন তৈরির ব্যবস্থা করে দেন। সাংবাদিকদের আবাসন সমস্যার সমাধানে মিরপুরে জমি বরাদ্দ দেন যেখানে তারা বর্তমানে বসবাস করছেন। চার. শহিদ জিয়া সৈনিকের পোশাকে যেমন সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবেও তিনি রেখেছেন অনন্য কৃতিত্বের স্বাক্ষর। অতি অল্প সময়ে গোটা পৃথিবীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। এ সময় বাংলাদেশের রাজনীতি, অর্থনীতি এবং কূটনীতিতে মৌলিক বাঁকবদল ঘটেছে। পূর্ব থেকে পশ্চিম, উত্তর থেকে দক্ষিণ এমন কোনো দেশ নেই, এমন কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থা নেই যেখানে জিয়ার পদধূলি পড়েনি। তিনিই ছিলেন বাংলাদেশ। তিনিই ছিলেন সাড়ে ৭ কোটি মানুষের ভাগ্যবিধাতা। বঙ্গভবনে বসেই তার প্রথম নজরে আসে পদ্মার ধু ধু বালুচর। শুকিয়ে যাচ্ছে পদ্মা, শুকিয়ে যাচ্ছে উত্তরের জনপদ, শুকিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ, মরুকরণ হতে চলেছে প্রিয় মাতৃভূমি। স্মরণ করলেন মওলানা ভাসানীকে। জাগিয়ে তুললেন ঘুমন্ত সিংহকে। সমাধান চাইলেন ফারাক্কার পানি সমস্যার। অশীতিপর মওলানা হংকার তুললেন, আমার পদ্মার পানির ন্যায্য হিস্যা চাই। চল, চল ফারাক্কা চল। গগনবিদারী আওয়াজ পৌঁছে দিলেন দিলস্নীতে। শুরু হলো প্রেসিডেন্ট জিয়ার কূটনৈতিক তৎপরতা। প্রথমে গেলেন দিলিস্নতে। দেখা করলেন প্রধানমন্ত্রী মোরারজী দেশাইয়ের সঙ্গে। বললেন, ফারাক্কা বাঁধের কারণে বাংলাদেশ আজ মরুভূমিতে পরিণত হতে চলেছে। এখানেই শেষ নয়, এই সমস্যা নিয়ে পাড়ি জমালেন জাতিসংঘে। হৃদয়গ্রাহী ভাষণে তিনি বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে জানালেন বাংলাদেশের ফারাক্কা সমস্যার কথা। অকুণ্ঠ সমর্থন আদায় করতে সক্ষম হলেন তিনি। ভারতের সঙ্গে চুক্তি হলো বাংলাদেশ শুকনো মওসুমে ফারাক্কা বাঁধ থেকে পাবে ৩৫ হাজার কিউসেক পানি। পাঁচ. শুরু হলো জিয়ার কৃষি বিপস্নব। ঘোষণা দিলেন খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে। খাদ্য উৎপাদন দ্বি-গুণ করার লক্ষ্যে তিনি খাল খনন করে শুষ্ক মৌসুমে সেচব্যবস্থা সচল করা, একই জমিতে একাধিক ফসল ফলানো, পতিত জমিতে চাষাবাদে গুরুত্ব দিলেন। খরা মৌসুমে চাষাবাদে নিরবচ্ছিন্ন সেচ নিশ্চিতকরণে তার আমলে প্রায় ৯০০ মাইল দীর্ঘ খাল খনন করা হয়েছিল। হাতে নেওয়া হলো, মেঘনা-ধনাগোদার মতো ইরি প্রজেক্ট। কৃষকের মুখে হাসি ফোটালেন প্রেসিডেন্ট জিয়া। যশোরের উলশী গ্রাম থেকে স্ব-নির্ভর আন্দোলন কর্মসূচির সূচনা করে গ্রামীণ জনপদের প্রতিটি মানুষকে স্বনির্ভর হতে উদ্বুদ্ধ করেন। তিনি দেশের ৬৮ হাজার গ্রামের প্রতিটিকে এক একটি স্ব-নির্ভর ইউনিট হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন। সে লক্ষ্যে জিয়াউর রহমান স্বনির্ভর আন্দোলনের সঙ্গে কৃষি, সেচ, বৃক্ষরোপণ, গৃহ-নির্মাণ, বিদু্যতায়ন, স্বাস্থ্যরক্ষা, পরিবার পরিকল্পনা এবং আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থাকে সম্পৃক্ত করেছিলেন। ছয়. প্রেসিডেন্ট জিয়া দেশকে স্বনির্ভর করার লক্ষ্যে গণস্বাক্ষরতা কর্মসূচিকে মূলধারার শিক্ষার সঙ্গে সংযুক্ত করে দেশের স্বাক্ষরতার হারকে বৃদ্ধি করেছিলেন। মহান ভাষা আন্দোলনের চেতনাকে ধারণ করে তিনি ১৯৮০ সালের ২১ ফেব্রম্নয়ারি বহুল প্রশংসিত গণস্বাক্ষরতা কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন। খুব স্বল্প সময়ে দেশে প্রায় ৪০ লক্ষ নিরক্ষর মানুষকে অক্ষরজ্ঞান দান করানো সম্ভব হয়েছিল। তার লক্ষ্য ছিল ১৯৮৫ সালের মধ্যে দেশের স্বাক্ষরতার হার ৮০ শতাংশে উন্নীত করা। সাত. প্রেসিডেন্ট জিয়া জনসংখ্যায় লাগাম টানতে 'এক ছেলে এক মেয়ে' ধারণাকে নীতি ও আদর্শ হিসেবে প্রচার করেন। ১৯৭৬ সালে গ্রাম ও ওয়ার্ড পর্যায়ে ৩৮ হাজার পরিবার পরিকল্পনাকর্মী নিয়োগ দিয়ে তিনি এই নীতির বাস্তবায়ন করেন, যার সুফল পাচ্ছে বাংলাদেশ। ক্ষমতাকে গ্রাম পর্যন্ত বিকেন্দ্রীকরণ করার জন্য এবং স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে ১৯৮০ সালের ৩০ মে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রাম সরকার ব্যবস্থা প্রচলন করেন। এর ফলে ছোট ছোট সমস্যা গ্রামেই সমাধান হতে থাকে। মামলা-মোকদ্দমা উলেস্নখযোগ্যহারে কমে আসে। দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২২ শতাংশই যুবক। হতাশা, সন্ত্রাস, বেকারত্ব ও মাদকাসক্ত থেকে যুবসমাজকে দেশের উন্নয়নে কাজে লাগানোর জন্য ১৯৭৮ সালে তিনি দেশে প্রথমবারের মতো যুব মন্ত্রণালয় চালু করেন। জেলায় জেলায় যুব কমপেস্নক্স চালু করে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের স্ব-কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সাহায্য করেন। গ্রামীণ প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেশীয় উন্নয়ণের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি হাতিয়ার হওয়া সত্ত্বেও স্বাধীন দেশে তা ছিল অনেকটাই অবহেলিত ও উপেক্ষিত। গ্রামের মানুষের অধিকতর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য শহীদ জিয়া ১৯৭৬ সালে ভিডিপি বা গ্রাম প্রতিরক্ষা দল গঠন করেন। সেদিনের সেই বাহিনী আজ গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। আজকের শিশু আগামীর রাষ্ট্রনায়ক। তাই শহীদ জিয়া শিশুদের মেধা বিকাশের জন্য ১৯৭৭ সালের ১৫ জুলাই শিশু একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। শিশুদের মেধাবিকাশে টিভিতে নতুন কুঁড়ি প্রতিযোগিতা চালু করে বেশ প্রশংসিত হয়েছিলেন। আট. গার্মেন্টস সেক্টরের উন্নয়নে আজ আমরা তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলি। সেই গার্মেন্টস সেক্টরের বীজ বপন করে গেছেন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। সেনা ছাউনী থেকে ওঠে আসা একজন সৈনিক বেসামরিক পোশাকে কেমন বিপস্নবী ভূমিকা রাখতে পারেন তার স্বাক্ষর পাই আমরা প্রতিটি সেক্টরে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, রাজনীতি করার অধিকার- সবই এসেছে শহীদ জিয়ার হাত ধরে। দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক নারী। এই বিপুল সংখ্যক নারীকে কর্মহীন রেখে কোনোভাবেই যে সদ্য স্বাধীন একটি জনবহুল দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়, সেটা উপলব্ধি করে শহীদ জিয়া নারীদেরকে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত করে দেশের সার্বিক উন্নয়নের চাকাকে গতিশীল করার জন্য মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করে নারীদের ক্ষমতায়ন ও সমাজে তাদের যথাযথ সম্মান নিশ্চিত করেছিলেন। তিনিই প্রথম আইনশৃঙ্খলায় মহিলাদের সম্পৃক্ত করতে পুলিশ বাহিনীতে নারী পুলিশ নিয়োগ দেন। বিজ্ঞান শিক্ষার প্রচার ও প্রসার এবং বিজ্ঞানমনস্ক জাতি গঠনে তিনিই প্রথম দেশে পৃথক একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সাধারণ শিক্ষার সঙ্গে মাদরাসা তথা ধর্মীয় শিক্ষার সমন্বয় সাধন করে নৈতিকতাসম্পন্ন সুনাগরিক গড়ে তোলার জন্য স্বাধীন দেশে সর্বপ্রথম ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যা আবার স্বাধীন দেশে প্রতিষ্ঠিত প্রথম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়।নয়. শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান স্বাধীন ও নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি অবলম্বন করে সহজেই বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি ক্ষমতায় এসেই ইন্দো-সোভিয়েত বলয় থেকে বের হয়ে আমেরিকা ও চীনের দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। তাতে তিনি সফলও হয়েছিলেন। তিনি তার সাহসী, চৌকস ও দূরদর্শী পররাষ্ট্রনীতির কারণে মুসলিম বিশ্বের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তার স্বল্প সময়ের রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনকালে ইরাক-ইরান যুদ্ধে একক মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ভ‚মিকা পালন, আল কুদস কমিটির সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হওয়া, ফিলিস্তিন জনগণের প্রতি অবিচল সমর্থন, ওআইসিকে একটি কার্যকরি সংগঠনে পরিণত করার ক্ষেত্রে শহীদ জিয়ার ভ‚মিকা মুসলিম বিশ্ব আজও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে। শহীদ জিয়া দক্ষিণ এশিয়ার রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে আঞ্চলিক সামাজিক, অর্থনৈতিক ও ভ‚-রাজনৈতিক ঐক্য সৃষ্টির জন্য সার্ক প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করে।
দশ. ৫৬ হাজার বর্গমাইলের মধ্যে আট কোটি মানুষের বসবাস। সবার কর্মসংস্থান সম্ভব নয় এই ছোট্ট ভ‚খÐে। বসে থাকলেন না প্রেসিডেন্ট জিয়া, ছুটে গেলেন মধ্যপ্রাচ্যে। দেখা করলেন সৌদি বাদশা খালেদের সঙ্গে। তরুণ প্রেসিডেন্টের কর্ম উদ্যম দেখে মুগ্ধ বাদশা খালেদ বললেন, বাংলাদেশের উন্নয়নে যত টাকা লাগে দেবেন তিনি। জিয়ার হাতে তিনি তুলে দিলেন বø্যাংক চেক। বলে দিলেন টাকার অংক বসিয়ে নিতে। কিন্তু তরুণ প্রেসিডেন্ট জিয়া বললেন, ‘আমি টাকা চাই না, চাই আপনার দেশের শ্রমবাজার। আমার দেশের যুবকরা আসবে সৌদি আরব। কাজ করে অর্থ উপার্জন করে বাংলাদেশের অবস্থার উন্নয়ন ঘটাবে।’ বিচক্ষণ বাদশা তাতেই হলেন রাজি। তিনি আশ্বাস দিলেন, বাংলাদেশ থেকে নেওয়া হবে শ্রমিক। রাতারাতি বাংলাদেশের অদক্ষ শ্রমজীবী মানুষ নামমাত্র টাকা খরচ করে পাড়ি জমাতে থাকল সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশে। আর তাতেই ভাগ্য ফিরতে থাকল বাংলাদেশের। জিয়ার দেখানো পথে হেঁটে আজ প্রায় ২৫ লক্ষ বাংলাদেশি সেখানে কর্মরত। একেই বলে দূরদর্শী নেতৃত্ব।
আমিরুল ইসলাম কাগজী : কলামিস্ট, সাবেক সহসভাপতি, বিএফইউজে