শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

জাতির জনকের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন

বঙ্গবন্ধুর আদর্শ এবং সুদীর্ঘ সংগ্রামী জীবন থেকে প্রেরণা নিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আমাদের নতুনভাবে এগিয়ে যেতে হবে। বিশ্বের বুকে উন্নত ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্র হিসেবে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে চির অম্স্নান হয়ে থাকবে।
প্রফেসর ড. কামাল উদ্দিন আহাম্মদ
  ১০ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে তার প্রতি ও '৭৫-এর ১৫ আগস্টে শাহাদতবরণকারী সবার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা, কৃতজ্ঞতা এবং তাদের বিদেহী আত্মার প্রতি মাগফিরাত কামনা করে জাতির জনকের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে স্মৃতির পাতা থেকে কিছু রোমন্থন করার প্রয়াসে কলম ধরেছি।

বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি এক ঐতিহাসিক দিন। ৪৮ বছর আগে এ দিনে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানে বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখেন বীরের বেশে। এ বীরের প্রত্যাবর্তনের ফলেই আমার মতো কোটি কোটি মানুষের লালিত সত্যিকারের স্বাধীনতা সংগ্রামের বিজয় পূর্ণতা পায়। স্বয়ং বঙ্গবন্ধু তার এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে 'অন্ধকার থেকে আলোর পথে যাত্রা' হিসেবে আখ্যায়িত করেন। আসলে এ বিজয় ছিল বাংলার জনগণের। বাঙালি জাতিই সংগ্রাম করে, রক্ত দিয়ে, জীবন দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে জয়যুক্ত করেছে, ফাঁসিকাষ্ঠ থেকে তাকে ফিরিয়ে এনেছে। তার মুক্তির জন্য আমি দেখেছি- এ দেশের অগণিত মানুষ রোজা রেখেছে, নফল নামাজ পড়ে আলস্নাহর দরবারে প্রার্থনা করেছে, মসজিদে-মন্দিরেও বিশেষ দোয়া করা হতো। কিন্তু কেন? এর একটাই কারণ। বাঙালি জাতির আত্মার অমোঘ বাণীকে নিজের কণ্ঠে তুলে নিয়েই তিনি বাঙালির হৃদয় জয় করেছিলেন। পরিণত হয়েছিলেন বাঙালির বিবেকের প্রতীকে। তার ৭ মার্চ, ১৯৭১-এর স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাকে প্রকারান্তরে স্বাধীনতার ঘোষণার কারণে ৩০ লাখ মুক্তিযোদ্ধা শহিদ হন এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মদান ও মিত্র বাহিনীর সহায়তায় বাংলাদেশ স্বাধীন হয়।

ইতিহাস কী নির্মম! যে পথ ধরে তিনি বীরের বেশে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করলেন- ঠিক এ পথ ধরে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদাররা বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তার ধানমন্ডির বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। বাঙালি যখন স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করছে, বঙ্গবন্ধু তখন পাকিস্তানের কারাগারে প্রহসনের বিচারে ফাঁসির আসামি হিসেবে মৃতু্যর প্রহর গুনছেন। কারাগারে বঙ্গবন্ধুর সেলের পাশে তার জন্য কবর পর্যন্ত খোঁড়া হয়েছিল। কিন্তু বাঙালির স্বাধীনতা, মুক্তির প্রশ্নে ফাঁসির আসামি হয়েও বঙ্গবন্ধু ছিলেন অবিচল, আপসহীন। নয় মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন হলেও বাঙালি জাতির মনে ছিল না স্বস্তি বিজয়ের আনন্দ। পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি জাতির জনকের ভাগ্যে কী আছে- এ নিয়ে এ ভূখন্ডে প্রতিটি মানুষ ছিল বিচলিত, আতঙ্কিত। চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হওয়ার পর বিশ্বনেতারা বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ঐকান্তিক চেষ্টা এবং বিশ্ব জনমতের চাপে পাকিস্তানের শাসককুল বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। পাকিস্তানে আটক থাকাকালীন পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে কনফেডারেশন গঠন করার মাধ্যমে পাকিস্তানের অখন্ডতা রক্ষার প্রস্তাব তিনি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। বিনিময়ে প্রধানমন্ত্রী করার লোভ এবং না হলে মৃতু্যদন্ড কোনটারই তিনি তোয়াক্কা করেননি।

১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পকিস্তানি কারাগার থেকে মুক্তি পান। পাকিস্তান সামরিক বিমানে খুব গোপনে বঙ্গবন্ধুকে লন্ডনে পাঠিয়ে দেয়া হয়। ওই বিমানে আরও ছিলেন ড. কামাল হোসেন ও তার পরিবার। ৯ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৮টায় তারা পৌঁছেন লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে। বেলা ১০টার পর থেকে বঙ্গবন্ধু কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী অ্যাডওয়ার্ড হিথ, টেলিফোনে কথা বলেন তাজউদ্দীন আহমেদ, তার পরিবার ও ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীসহ বিশ্বের অনেক নেতার সঙ্গে। স্বদেশে ফেরার জন্য বঙ্গবন্ধু উঠে ব্রিটিশ রাজকীয় বিমান বহরের কমেট জেটে। বাংলাদেশে ফেরার পথে বিমানটি দুই ঘণ্টার যাত্রা বিরতি করে দিলিস্নতে। ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ভি ভি গিরি ও প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী বঙ্গবন্ধুকে অভ্যর্থনা জানান।

১০ জানুয়ারি, ১৯৭২ বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিনে আমরা গভীর আগ্রহ ও উদ্দীপনার সঙ্গে সব দেশবাসী সব কিছু অবলোকন করছিলাম। ঢাকা শহর সেদিন লোকে লোকারন্য। কণ্ঠে 'জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।' অবশেষে অপেক্ষার পালা শেষ। ওই দিন দুপুর ২টায় দিলিস্ন থেকে বঙ্গবন্ধুকে বহনকারী বিমান বাংলার মাটি স্পর্শ করলে সৃষ্টি হয় এক আবেগঘন মুহূর্ত। বঙ্গবন্ধু প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদকে জড়িয়ে ধরে অশ্রসিক্ত নয়নে আবেগময় চেহারায় জাতির প্রতি ও জনগণের প্রতি অভিব্যক্তি প্রকাশ করছিলেন। তিনি প্রত্যাবর্তনের পরে আবেগজনিত কণ্ঠে বলেছিলেন 'হে কবিগুরু আপনি এসে দেখে যান, আমার ৭ কোটি বাঙালি আজ মানুষ হয়েছে'। এত আবেগ ও আবেগময় দৃশ্য আর কোনো নেতার কাছ থেকেই আমি অবলোকন করিনি। আনন্দ আর বিষাদের অশ্রম্ন দিয়ে মুক্তি পাগল বাংলার জনগণ তাকে সেদিন বরণ করে নেয়। বিমানবন্দরে নেমেই তিনি ৯ মাসে বাংলার জনগণের দুঃখ-কষ্ট নির্যাতন নিপীড়নের যে ভয়াবহ কাহিনী শুনতে পান তারপর থেকেই তিনি ছিলেন অসহ্য আবেগে-আপুস্নত। অতঃপর শুরু হয় রমনা রেসকোর্স মাঠের সংবর্ধনা সভার উদ্দেশ্যে যাত্রা। চতুর্দিক থেকে জনতার বাঁধভাঙা ঢল নামে। বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় নেতারা একটি খোলা ট্রাকের ওপর দাঁড়িয়ে জনতার অভিবাদন ও শুভেচ্ছা গ্রহণ করছেন আর ধীরগতিতে তাকে বহনকারী ট্রাকটি সভাস্থলের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। সঙ্গে সঙ্গে জনতার ঢল ট্রাকের পেছনে পেছনে চলতে থাকে। তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে রেসকোর্স ময়দানে এসে পৌঁছাতে আড়াই ঘণ্টা সময় লাগে। সে দিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলার জনগণের উদ্দেশে যে বক্তব্য দিয়েছিলেন তা থেকে আবেগঘন বক্তৃতা আর কখনো দিয়েছেন বলে আমার মনে হয় না।

সেদিন বিকেল ৫টায় রেসকোর্স ময়দানে প্রায় ১০ লাখ লোকের উপস্থিতিতে ভাষণ দিতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু আবেগ আপস্নুত হয়ে বলেছিলেন, 'নেতা হিসেবে নয়, ভাই হিসেবে আমি আমার দেশবাসীকে বলছি, আমাদের সাধারণ মানুষ যদি আশ্রয় না পায়, খাবার না পায়, যুবকরা যদি চাকরি বা কাজ না পায়, তাহলে আমাদের এই স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়ে যাবে, পূর্ণ হবে না। আমাদের এখন তাই অনেক কাজ করতে হবে। আমাদের রাস্তা-ঘাট ভেঙে গেছে, সেগুলো মেরামত করতে হবে। অনেকেই আমার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছে। আমি তাদের জানি।

আপনারা আরও জানেন যে, আমার ফাঁসির হুকুম হয়েছিল। আমার সেলের পাশেই কবর খোঁড়া হয়েছিল। আমি মুসলমান। আমি জানি, মুসলমান মাত্র একবারই মরে। তাই আমি ঠিক করেছিলাম, আমি তাদের কাছে নতি স্বীকার করব না। ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার সময় আমি বলবো, 'আমি বাঙালি, বাংলা আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা। জয় বাংলা।'

বক্তৃতাদানকালে বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠ বারবার বাকরুদ্ধ হয়ে আসছিল। রুমাল দিয়ে তিনি চোখ মুছে নিচ্ছিলেন। জাতির পিতার রেসকোর্স ময়দানে প্রায় ১৭ মিনিট জাতির উদ্দেশে গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেন। যা ছিল জাতির জন্য দিকনির্দেশনা। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণও ছিল ১৮ মিনিট সময়ের, শব্দ ১১০৫ (এক হাজার একশত পাঁচ)। বাংলাদেশের আদর্শগত ভিত্তি কী হবে, রাষ্ট্র কাঠামো কী ধরনের হবে, পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে যারা দালালি ও সহযোগিতা করেছে তাদের কী হবে, বাংলাদেশকে বহির্বিশ্ব স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য অনুরোধ, মুক্তিবাহিনী, ছাত্রসমাজ, কৃষক, শ্রমিকদের কাজ কী হবে, এসব বিষয়সহ বিভিন্ন দিক নিয়ে যে নিদের্শনামূলক ভাষণ দিয়েছিলেন সেই ভাষণকে একজন প্রাজ্ঞ রাষ্ট্রনায়কের নীতিনির্ধারণী ভাষণ বলে উলেস্নখ করা যায়। তিনি ডাক দিলেন দেশ গড়ার সংগ্রামে। রেসকোর্স ময়দানে উপস্থিত জনতা দু'হাত তুলে সেই সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছিলেন। একজন নেতা একটি জাতির কাছে কত কাছের মানুষ, কত প্রাণের মানুষ হতে পারেন ১০ জানুয়ারিতে প্রতীক্ষমাণ মানুষের ঢল ও আবেগ তার অনন্য উদাহরণ হয়ে আছে। সারাবিশ্বের সংবাদকর্মীরা সেদিন উপস্থিত ছিলেন ঢাকায়। বিশ্ববাসীও বিস্মিত হয়ে লক্ষ্য করেছেন বঙ্গবন্ধুর জনপ্রিয়তা কত বিশাল, কত ব্যাপক হতে পারে!

বঙ্গবন্ধু যেদিন দেশে ফিরে এলেন সেদিন কী অবস্থায় ছিল এ দেশ? আজ এতদিন পরে তা কল্পনা করাও এক কঠিন ব্যাপার। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ। হাটবাজার, রাস্তাঘাট, রেল ব্রিজ, বন্দর, সব ছিল ধ্বংসপ্রাপ্ত। যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল সূম্পর্ণ বিচ্ছিন্ন। বৈদেশিক মুদ্রা বলতে কিছুই ছিল না। গ্রাম-বাংলার ধু ধু প্রান্তর ছিল শস্যহীন। খাদ্য গুদামে কোনো মজুত ছিল না। শহরের ঘরবাড়ি শিল্পকারখানা ছিল ধ্বংসপ্রাপ্ত। জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে হানাদার বাহিনী ছাড়খাড় করে দিয়েছিল। ৩০ লাখ বাঙালির শহিদ হওয়ার কারণে প্রতিটি গৃহে ছিল আর্তনাদ। সন্তান-স্বামী, বাবা-মা হারানোর বেদনায় প্রতিটি পরিবার ছিল শোকাহত। তদুপরি রয়েছে দেশব্যাপী মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে বিপুল অস্ত্রপাতি আর দেশের মাটিতে হাজার হাজার ভারতীয় সৈন্য যাদের স্বদেশে ফেরত পাঠানো বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও বিদেশি স্বীকৃতি লাভের জন্য একান্ত অপরিহার্য।

ধ্বংসযজ্ঞের ওপর দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু শুরু করেন পুনরুদ্ধারের কাজ। মাত্র সাড়ে ৩ বছরের মাথায় তিনি দায়িত্ব সম্পূর্ণভাবে সফল করেন। স্বাধীনতার পর পর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বীকৃতি লাভ সহজ ছিল না। বঙ্গবন্ধুর দক্ষ বিদেশনীতি স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তিকে আমাদের পক্ষে আনতে বিশেষ অবস্থার সৃষ্টি করেছিল। মুসলিম উম্মাহর অনেক দেশ যারা পাকিস্তান ভাঙার কারণে বেশ কিছুটা ক্ষুব্ধ ছিল। বঙ্গবন্ধু তাদের বাংলাদেশের বাস্তবতা বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন। অর্থনৈতিক মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বে তিনি ছিলেন এক এবং অদ্বিতীয়। তিনি দেশে ফিরে না এলে অর্থনৈতিক মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়ার কেউ ছিলেন না। বঙ্গবন্ধু স্বদেশে এসেছিলেন বলেই ভারতীয় সৈন্য অতি দ্রম্নত সময়ে প্রত্যাবর্তন করেছিল। পৃথিবীর কোনো দেশের স্বাধীনতার পর এত কম সময়ে মিত্র শক্তি সহজে দেশ ছাড়ে না। তা ছাড়া বঙ্গবন্ধু তখন ফিরে না এলে মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্রশস্ত্র এত তাড়াতাড়ি জমা পড়ত না এবং রাজাকার, দালালদের নিয়ে সম্ভবত এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো।

মুক্তিযোদ্ধারা ও জনগণ স্বাধীনতাবিরোধীদের প্রতি এতই ক্ষুব্ধ ছিল যে, দেশে রক্তের বন্যা বয়ে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর অভিভাবকত্বে একটি শান্তিময় বিচারিক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। যে কারণে মারাত্মক অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা হয় এবং তাতে জনগণের মনে কিছুটা হলেও স্থিরতা আসে। পরিস্থিতির স্বীকার ব্যক্তিদের প্রতি তিনি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন। হায়রে বাঙালি এ মহান হৃদয়বান বাঙালি, সিংহ হৃদয় জাতির পিতার প্রতি এ কি আচরণ করলে তোমরা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে? মহাত্মা গান্ধী ও নবাব সিরাজ উদ্দৌলার হত্যাকান্ডের পুনরাবৃত্তি করে তোমরা আবারো নাথুরাম গডসে ও মীর জাফর উপাধি ধারণ করলে? ধিক তোমাদের! ইতিহাস তোমাদের ক্ষমা করবে না। এখনো মানুষ হও, মানবিক হও মীর জাফরেরা।

সর্বোপরি, বঙ্গবন্ধু তখন ফিরে না এলে মাত্র ১০ মাসের মধ্যে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন এবং সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক পথে জাতির অগ্রযাত্রা সম্ভবপর হতো না। আর এসব কারণেই বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ছিল এক বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা।

বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় বিপস্নবের ডাক দিয়েছিলেন এ দেশের কৃষক, শ্রমিক, দরিদ্র ও মেহনতী মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য। সোনার বাংলা গড়ার জন্য। প্রতিটি ক্ষেত্রে যে পরিকল্পনা তিনি করেছিলেন তারই ধারাবাহিকতা অনুসরণ করে তার সুযোগ্য কন্যা রক্তের ধারা জননেত্রী শেখ হাসিনা এ দেশকে আজ উন্নত দেশে পরিণত করার দ্বারপ্রান্তে।

হে বাঙালি জাতি জাগ্রত হও, সচেতন হও, একটি সুশিক্ষিত, সুনীতি সম্পন্ন, বিজ্ঞান মনষ্ক, মানবিক ও সুশৃঙ্খল উন্নত স্বনির্ভর জাতিতে রূপান্তরিত হও। তবেই বঙ্গবন্ধুর, তার পরিবারের, ৩০ লাখ শহিদের ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের রক্ত ও শ্রমের ঋণ কিছুটা হলেও শোধ হবে।

বঙ্গবন্ধুর আদর্শ এবং সুদীর্ঘ সংগ্রামী জীবন থেকে প্রেরণা নিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আমাদের নতুনভাবে এগিয়ে যেতে হবে। বিশ্বের বুকে উন্নত ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্র হিসেবে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে চির অম্স্নান হয়ে থাকবে।

জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু

বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।

প্রফেসর ড. কামাল উদ্দিন আহাম্মদ: উপাচার্য শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।

শঁধযধসবফ@ুধযড়ড়.পড়স

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<83677 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1