মোবাইল ফোন
মোবাইল ফোন, সেলুলার ফোন, সেল ফোন, হ্যান্ড ফোন বা মুঠোফোনের ইংরেজি শব্দ গড়নরষব ঢ়যড়হব যা তুর্কি শব্দ :বষবভড়হঁ থেকে এসেছে। এর অর্থ তারবিহীন টেলিফোন বিশেষ। মোবাইল অর্থ ভ্রাম্যমাণ বা 'স্থানান্তরযোগ্য'। এ ফোন সহজে যে কোনো স্থানে বহন করা এবং ব্যবহার করা যায় বলে মোবাইল ফোন নামকরণ করা হয়েছে। মোবাইল অপারেটররা তাদের সেবা অঞ্চলকে ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ, পঞ্চভুজ বা ষড়ভুজ ইত্যাদি আকারের অনেক ক্ষেত্র বা সেলে বিভক্ত করে ফেলে। সাধারণত ষড়ভুজ আকৃতির সেলই বেশি দেখা যায়। এই প্রত্যেকটি অঞ্চলের মোবাইল সেবা সরবরাহ করা হয় কয়েকটি
নেটওয়ার্ক স্টেশন দিয়ে। নেটওয়ার্ক স্টেশনগুলো আবার সাধারণত সেলগুলোর প্রতিটি কোণে অবস্থান করে। এভাবে অনেক সেলে বিভক্ত করে সেবা প্রদান করার কারণেই এটি 'সেল ফোন' নামেও পরিচিত। মোবাইল ফোন বেতার তরঙ্গের মাধ্যমে যোগাযোগ করে বলে অনেক বড় ভৌগোলিক এলাকায় এটি নিরবচ্ছিন্নভাবে সংযোগ দিতে পারে। শুধু কথা বলাই নয়, আধুনিক মোবাইল ফোন দিয়ে আরও অনেক সেবা গ্রহণ করা যায়। এর উদাহরণ হচ্ছে খুদে বার্তা- এসএমএস বা টেক্সট মেসেজ সেবা, এমএমএস বা মাল্টিমিডিয়া মেসেজ সেবা, ই-মেইল সেবা, ইন্টারনেট সেবা, অবলোহিত আলো বা ইনফ্রা-রেড, বস্নুটুথ সেবা, ক্যামেরা, গেমিং, ব্যবসায়িক বা অর্থনৈতিক ব্যবহারিক সফটওয়্যার ইত্যাদি। যে সব মোবাইল ফোন এ সব সেবা এবং কম্পিউটারের সাধারণ কিছু সুবিধা প্রদান করে, তাদের স্মার্ট ফোন নামে ডাকা হয়। মোটোরোলা কোম্পানিতে কর্মরত ড. মার্টিন কুপার এবং জন ফ্রান্সিস মিচেলকে প্রথম মোবাইল ফোনের উদ্ভাবকের মর্যাদা দেওয়া হয়ে থাকে। তারা ১৯৭৩ সালের এপ্রিলে প্রথম সফলভাবে একটি প্রায় ১ কেজি ওজনের হাতে ধরা ফোনের মাধ্যমে কল করতে সক্ষম হন। মোবাইল ফোনের প্রথম বাণিজ্যিক সংস্করণ বাজারে আসে ১৯৮৩ সালে, ফোনটির নাম ছিল মোটোরোলা ডায়না টিএসি ৮০০০এক্স (উুহধঞঅঈ ৮০০০ী)। ১৯৯০ সাল থেকে ২০১১ সালের মধ্যে পৃথিবীব্যাপী মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১২.৪ মিলিয়ন থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৬ বিলিয়নের বেশি হয়ে গেছে। পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮৭% মোবাইল ফোন যোগাযোগের আওতায় এসেছে। সেলুলার ফোন প্রারম্ভিকভাবে পূর্বসূরিরা জাহাজ এবং ট্রেন থেকে এনালগ রেডিও কমিউনিকেশনের সাহায্যে ব্যবহার করত।
বৈশিষ্ট্য : মোবাইল ফোন নির্মাতারা তাদের ফোনকে বিশেষায়িত করার জন্য অনেক আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য যোগ করছে। তবুও সব মোবাইল ফোনেরই কয়েকটি প্রাথমিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা এদের অপরিহার্য অঙ্গ। এগুলো হচ্ছে-
১. তড়িৎ কোষ বা ব্যাটারি- ফোনের শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে।
২. কোনো ইনপুট পদ্ধতি যার সাহায্যে ফোন ব্যবহারকারীর সঙ্গে ফোনের মিথস্ক্রিয়া বা দ্বিপক্ষীয় যোগাযোগ সম্ভব হয়। সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত ইনপুট পদ্ধতি হচ্ছে কী প্যাড তবে ইদানীং স্পর্শ কাতর পর্দা বা টাচ স্ক্রিন তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
৩. সাধারণ মোবাইল ফোন সেবা যার দ্বারা ব্যবহারকারী কথা বলতে বা খুদে বার্তা পাঠাতে পারেন।
৪. জিএসএম ফোনগুলোয় সিম কার্ড থাকে। কিছু কিছু সিডিএমএ ফোনে রিম কার্ড থাকে।
৫. প্রতিটি স্বতন্ত্র ফোনের জন্য একটি করে স্বতন্ত্র আইএমইআই (ওগঊও) নাম্বার যার সাহায্যে ওই ফোনটিকে শনাক্ত করা যায়। নিম্নস্তরের মোবাইল ফোনকে প্রায়ই ফিচার ফোন বলে ডাকা হয় এবং এগুলো শুধু প্রাথমিক টেলিফোন যোগাযোগ সুবিধা দেয়। আর কিছু মোবাইল ফোন আরও অগ্রসর সুবিধা এবং কম্পিউটারের মতো সেবা প্রদান করে, তাদের স্মার্ট ফোন বলে।
ব্যবহার : মোবাইলের বহুমুখী ব্যবহার রয়েছে। ক্ষুদ্র একটি ফোন নিমিষেই আমাদের অনেক কাজ করে দেয়। যেমন : ই-মেইল, এসএমএস বা খুদে বার্তা প্রেরণ ও গ্রহণ, ক্যালকুলেটর, মুদ্রা-সঙ্কেতবিষয়ক কার্যাবলি, ইন্টারনেট, গেমস খেলা, ছবি ও ভিডিও তোলা, ঘড়ির সময় দেখা, কথা রেকর্ড করা, ট্রেনের টিকিট বুকিং করা, বিদু্যৎ/গ্যাস বিল দেওয়া, টাকার আদান-প্রদান করা, গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংরক্ষণ করা ইত্যাদি।
বাংলাদেশে মোবাইল ফোন : বাংলাদেশে মোবাইল ফোন প্রথম চালু হয় ১৯৯৩ সালের এপ্রিল মাসে। হাচিসন বাংলাদেশ টেলিকম লিমিটেড (এইচবিটিএল) ঢাকা শহরে অগচঝ মোবাইল প্রযুক্তি ব্যবহার করে মোবাইল
ফোন সেবা শুরু করে। বর্তমানে বাংলাদেশে মোট ৬টি মোবাইল ফোন কোম্পানি রয়েছে। এদের মধ্যে ৫টি জিএসএম এবং একটি সিডিএমএ প্রযুক্তির মোবাইল সেবা দিচ্ছে। এর মধ্যে সব জিএসএম মোবাইল কোম্পানি ২০১৩ সাল থেকে তৃতীয় প্রজন্মের ৩জি সেবা দেওয়া শুরু করেছে। মোবাইল অপারেটরদের মধ্যে একমাত্র টেলিটক দেশীয় কোম্পানি।