রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

চলচ্চিত্রে এগিয়ে নারী নির্মাতারা

মাতিয়ার রাফায়েল
  ০৮ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০
নারগিস আক্তার, চয়নিকা চৌধুরী, রুবাইয়াৎ হোসেন

শুধু চলচ্চিত্রই নয়, জীবনের সব সেক্টরেই প্রথম থেকেই এগিয়ে ছিল পুরুষরা। এটা তখনকার কথা যখন কোনো সেক্টরেই নারীদের সুযোগ ছিল না। সেই সময়টা এখন আর নেই। এখন নারীরাও এগিয়ে আসছে। কাজ করছে পুরুষের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে।

ঢাকাই চলচ্চিত্রেও এই চিত্রটি ধীরে ধীরে সহজ হয়ে আসছে। যদিও এখানে নারীদের পদচারণা নতুন নয়। তবে সংখ্যায় খুব কমই নারী পরিচালক পেয়েছে ঢাকাই চলচ্চিত্র। তবে গত দুই দশকে ক্যামেরায় লুক থ্রো করায় এগিয়ে আসছেন অনেক নারী। এ পর্যন্ত যারা পরিচালনার পাতায় নাম লিখিয়েছেন যারা বেশিরভাগই যার যার কাজে প্রশংসিত হয়েছেন। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পুরস্কৃত হয়েছেন। তবে চলচ্চিত্রের মন্দা বাজারে কতজনের ছবি লগ্নিকারক প্রযোজকের পুঁজি ফিরিয়ে দিতে পেরেছেন, কতজনের ছবি সপ্তাহের পর সপ্তাহ প্রেক্ষাগৃহে চলেছে সেই হিসেবে না গেলেই ভালো হয়।

এমনিতে অভিনয় করা যতটা সহজ চলচ্চিত্র বানানো কিন্তু ততটা সহজ নয়। অত্যন্ত পরিশ্রমসাধ্য এবং দুরূহ একটি কাজ। তারপরও এমন কাজটিতে যেসব নারী যুক্ত হচ্ছেন বেশির ভাগই ভালো সাফল্যের পরিচয় দিচ্ছেন। তুলনামূলক সংখ্যার হিসেবে দেখা যাচ্ছে নারীরাই পুরুষ চিত্র পরিচালকদের চেয়ে এগিয়ে।

এজন্য অবশ্য সবচেয়ে বেশি সাধুবাদ দিতে হয় সৃজনশীল চলচ্চিত্র নির্মাণে সরকারি অনুদান প্রকল্পটিকে। কারণ একটি সিনেমা বানাতে প্রচুর টাকার প্রয়োজন হয়। মূলত টাকার অপ্রতুলতার কারণেই সিনেমা নির্মাণের মতো কাজে একসময় নারীদের খুব বেশি দেখা যেত না। যেসব নারী সিনেমা বানাতেন তাদের সবাই-ই ছিলেন আগে চলচ্চিত্রে অভিনয় করা অভিনয় শিল্পী। অভিনয় করে প্রচুর টাকা রোজগার করা শিল্পী।

এর মধ্যে যেমন আছে বাংলাদেশের প্রথম নারী চিত্রপরিচালক মনজন আরা বেগম রেবেকা (তিনি প্রথমে চলচ্চিত্রে শিশুশিল্পী ছিলেন পরে পূর্ণ বয়সে অভিনেত্রী হন), তারপর জাহানারা ভূঁইয়া, সুজাতা আজিম, সুমিতা দেবী, কোহিনূর আক্তার সুচন্দা, রোজী আফসারী, কবরী, সামিয়া জামান, মৌসুমী, রোজিনা এবং সর্বশেষ যুক্ত হলেন অরুণা বিশ্বাস।

তবে গাইতে গাইতে গায়েন হয়ে যাওয়ার মতো চিত্রপরিচালক নয় বরং চলচ্চিত্রের ওপর পড়াশোনা করে আসা যেসব নারী নির্মাতা সাফল্যের পরিচয় দিচ্ছেন খুব বেশি বছর হয়নি তারা দেশীয় চলচ্চিত্রাঙ্গনে এসেছেন। এই নারী চলচ্চিত্র নির্মাতারাই এখন একের পর এক সাফল্য দেখাচ্ছেন। সুযোগ ও সুবিধা পেলে চলচ্চিত্র নির্মাণে নারীরাও যে পুরুষ চলচ্চিত্র নির্মাতাদের চেয়ে কম যান না সেটার প্রমাণ দিচ্ছেন তারা। সেরকমই সর্বশেষ নজির দেখালেন 'মেড ইন বাংলাদেশ' তথা 'শিমু' চলচ্চিত্রের পরিচালক রুবাইয়াত হোসেন। এবার ২০২২ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ঘোষণায় তার ছবিটি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কারসহ চারটি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়ে আলোচনায় এখন।

নির্মাতা হিসেবে নাম লেখানো নারীদের মধ্যে এ পর্যন্ত যারা জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছেন তাদের মধ্যে নারগিস আক্তার, কোহিনূর আক্তার সুচন্দা, চয়নিকা চৌধুরী, রুবাইয়াত হোসেন প্রমুখ উলেস্নখযোগ্য।

অভিনয় শিল্পী হিসেবে চলচ্চিত্র পরিচালনায় যারা এসেছেন তারা খুব বেশি সাফল্য না পেলেও শুরু থেকেই যারা চলচ্চিত্রকে ধ্যানজ্ঞান করে এটাকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন তাদের সাফল্যই বেশি। কেউ যেমন একাধিক ক্যাটাগরিতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ছিনিয়ে নিয়েছেন আবার অনেকে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ছিনিয়ে নিতে না পারলেও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভালো প্রশংসা পাচ্ছেন। লাভ করেছেন বিশেষ সার্টিফিকেট। গত দুই দশকে যেসব নারী নির্মাতা পাদপ্রদীপের আলোয় এসেছেন তাদের মধ্যে আছেন- নারগিস আক্তার, রুবাইয়াত হোসেন, মাতিয়া বানু শুকু, হৃদি হক, চয়নিকা চৌধুরী, মারিয়া তুষার, শামীম আখতার, শাহনেওয়াজ কাকলী, রওশন আরা নিপা, মেহের আফরোজ শাওন, মাহবুবা ইসলাম সুমী, প্রীতি দত্ত, ক্যাথরিন মাসুদ, জেসমিন আক্তার নদী, তানিয়া আহমেদ প্রমুখ।

এই তালিকার অনেকে অভিনয় শিল্পী থেকে চলচ্চিত্র নির্মাণে এসেছেন। মৌসুমী, মেহের আফরোজ শাওন, তানিয়া আহেমদ অন্যতম।

তবে নারগিস আক্তার, রুবাইয়াত হোসেন, মাতিয়া বানু শুকু- তাদের প্রত্যেকেই পরীক্ষিত চলচ্চিত্র নির্দেশক হিসেবে সুনাম কুড়াতে সক্ষম হয়েছেন। তারা প্রচলিত ধারার সিনেমার বাইরে নিরীক্ষাধর্মী সিনেমা বানান। নারীদের মধ্যে অফ ট্র্যাক বা নিরীক্ষাধর্মী সিনেমা অবশ্য সত্তর দশকে সর্বপ্রথম রেবেকাই বানিয়েছিলেন। সেই চলচ্চিত্রটির নাম 'বিন্দু থেকে বৃত্ত'।

উলিস্নখিত নারী নির্মাতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন নারগিস আক্তার- ৮টি। তার পরিচালিত 'মেঘলা আকাশ', 'মেঘের কোলে রোদ', 'চার সতীনের ঘর', 'অবুঝ বৌ', 'পৌষ মাসের পীরিত', 'পুত্র এখন পয়সা ওয়ালা', 'যৈবতি কন্যার মন'সহ তার নির্মিত নাটকও সাধারণ দর্শক থেকে শুরু করে সব মহলে প্রশংসিত হয়েছে। এ পরিচালক বহু নাটকও পরিচালনা করেছেন। দুইবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও অনেক পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। বাংলাদেশ থেকে তিনি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রথম নারী। কোহিনূর আক্তার সুচন্দা তার প্রথম পরিচালিত 'হাজার বছর ধরে' সিনেমার জন্য পেয়েছেন শ্রেষ্ঠ পরিচালক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। এখন আছেন তিনি 'বরফ গলা নদী' সিনেমা বানানোর অপেক্ষায়।

অন্যদিকে একসময়ের শীর্ষস্থানীয় অভিনেত্রী মৌসুমী চলচ্চিত্র নির্মাণের কাজে হাত দিয়ে দর্শককে উপহার দিলেন 'কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি'। এরপর নির্মাণ করেন 'মেহের নেগার'।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে