ওটিটি পস্ন্যাটফর্ম অ্যামাজানে মুক্তিপ্রাপ্ত বলিউডের 'পিপ্পা' সিনেমায় 'কারার ওই লৌহ কপাট' গানটি বিকৃতভাবে উপস্থাপন করায় দুই বাংলার শিল্পীদের মধ্যে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। সঙ্গীতপ্রেমী ও নজরুল ভক্তদের পাশাপাশি শিল্পীরা 'কারার ঐ লৌহকপাট' গানের রিমেক ভার্সনের ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করে এ আর রহমানের করা এই গানের সুর প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। এ নিয়ে দুই বাংলার মানুষই সোস্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক সমালোচনা করে এহেন কর্মকান্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন তারা।
এ প্রসঙ্গে কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ নজরুল সঙ্গীত সংস্থার সাধারণ সম্পাদক খায়রুল আনাম শাকিল বলেন, এ আর রহমানের দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। এটি আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত একটি গান। যে গানটি ব্রিটিশ স্বদেশী আন্দোলনের সময় রচিত হয়েছিল। সেই সময় এটি বিপুলভাবে জনমনে নাড়া দিয়েছিল। শুধু তাই নয়, আমাদের মুক্তি সংগ্রামের সময়ও এই উদ্দীপনামূলক গানটি মুক্তিযোদ্ধাদের মনে সাহস জুগিয়েছিলও ও উদ্বুদ্ধ করেছিল। এমন একটি গান নিয়ে সাম্প্রতিককালে লক্ষ্য করেছি ভারতবর্ষের একজন বিখ্যাত সুরকার খুবই দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি এই গানকে নতুনভাবে সুরারোপ করেছেন। এই কাজটি করে তিনি কাজী নজরুল ইসলামকে অসম্মান করেছেন। তিনি প্রতিটি বাঙালির মনে আঘাত করেছেন। এই কাজটার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আমরা আশা করব দেশের ও পশ্চিমবঙ্গের সব শিল্পী এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবেন। এই গানটি যেন কোথাও কোনোভাবে প্রচার না হয়, সে ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
বাংলাদেশের বিশিষ্ট নজরুল সঙ্গীতশিল্পী ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠসৈনিক শাহীন সামাদ বলেন, আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। সমস্ত নজরুল সঙ্গীতশিল্পীকে একত্র হয়ে এর প্রতিবাদ জানানো জরুরি। কবি পরিবারের সবাই এগিয়ে আসুন। যারা নজরুলপ্রেমী তারাও সোচ্চার হোন।
কবি কাজী নজরুল ইসলামের নাতনি অনিন্দিতা কাজী বলেন, এ আর রহমানকে অসম্মান না করেই বলছি আমি এই সুর কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না। আরেক নাতি অনির্বাণ কাজী বলেন, গানের ক্রেডিট থেকে তার পরিবারের নাম মুছে ফেলা হোক। আমরা বুঝতে পারিনি যে রহমানের মতো একজন শিল্পী এতটা অসংবেদনশীল হতে পারেন এবং এভাবে গানটিকে হত্যা করতে পারেন। প্রতিবাদ হিসেবে, আমি চলচ্চিত্রের ক্রেডিট লাইনে 'বিশেষ ধন্যবাদ'-এ আমাদের পরিবারের নাম চাই না। ২০২১ সালে মা অনুমতি দিয়েছিলেন। সুর এবং কথা না বদলে গানটা রিমেক করতে অনুমতি দিয়েছিলেন তিনি। সেই সময় ওদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, গানটা ওরা নিজেদের মতো করে ব্যবহার করতে চায়। তখন মা ওদের বলেছিলেন, গানটা তৈরি হয়ে গেলে একবার শোনাতে। কিন্তু ওরা কিছুই শোনায়নি। এরপর মা-ও মারা যান। রহমানকে সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা জানিয়েই জানতে চাই, তাকে কে অধিকার দিল গানটি বিকৃত করার? স্বত্ব দেওয়ার সময় তো সুর বদলের কথা বলা হয়নি। কী রকম একটা করে দিয়েছে গানটাকে! একটা গ্রামীণ সঙ্গীতের মতো, ভাটিয়ালির মতো করে দিয়েছে। অনেক সস্তা করে দিয়েছে।
ভারতের সঙ্গীত পরিচালক দেবজ্যোতি মিশ্র বলেন, আমার যেন মনে হচ্ছে একটা দুঃস্বপ্ন দেখছি! মনে হলো স্বপ্ন ভেঙে উঠে দেখব আসলে এ রকম কিছু ঘটেনি। এই গানটি তো কবিতা আকারেও রয়েছে। তা হলে কি আমার বন্ধু রহমানকে শুধু কবিতাটি দেওয়া হয়েছিল? তারপরও কিন্তু এটা অত্যন্ত নিম্নমানের কাজ। আদালতে কি রহমান সেটা স্বীকার করবেন যে, এটা তার করা সঙ্গীত?