বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

নতুন বছর নিয়ে নগর বাউল জেমসের প্রত্যাশা

বিনোদন রিপোর্ট
  ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
নতুন বছর নিয়ে নগর বাউল জেমসের প্রত্যাশা
নতুন বছর নিয়ে নগর বাউল জেমসের প্রত্যাশা

জনপ্রিয় ব্যান্ড তারকা নগরবাউল খ্যাত মাহফুজ আনাম জেমস। যার নামটি শুনলেই এ দেশের গানপিপাসুদের মনের পর্দায় ভেসে ওঠে ক্ষ্যাপাটে এক রকস্টারের অবয়ব- যার গান মুগ্ধ করেছে দেশের কোটি মানুষকে, কেড়ে নেয় হাজারও তরুণ-তরুণীর ঘুম! বাংলাদেশের রক মিউজিক ইতিহাসের জীবন্ত কিংবদন্তি নগরবাউলখ্যাত এই ব্যান্ড তারকা বর্তমানে স্টেজ শো নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন। গত বছরের শেষ প্রান্তে বিপিএলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গান গেয়ে দর্শক মাতিয়েছেন তিনি। একই বছর প্রথমবার সৌদি আরবে কনসার্ট করেছেন। এছাড়া, পুরো বছর জুড়েই বিশ্ব্যব্যাপী কনসার্ট করে মাতিয়েছেন সঙ্গীতপ্রেমীদের। নতুন বছরেও সেই ধারা অব্যাহত রাখার প্রত্যাশা জানালেন জেমস। ২০২৫ সাল শুরু করেছেন স্টেজ শো দিয়েই। সিলেটের এক আয়োজনে ৩১ ডিসেম্বর রাতে গান করেন। নতুন বছরও জনপ্রিয় এ তারকার থাকবে গানের ব্যস্ততা, এমনটাই জানিয়েছেন জেমসের মুখপাত্র রবিন ঠাকুর। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'স্টেজ শো দিয়েই এবার আমরা নতুন বছর শুরু করেছি। নগরবাউলের এ গানের যাত্রা বছরজুড়েই চলবে। নতুন বছরে শিল্প-সংস্কৃতির এক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ আমাদের প্রত্যাশা।' এদিকে নতুন বছর নিয়ে ভক্তদের শুভেচ্ছা জানান জেমস। সঙ্গে কর্মপরিকল্পনা নিয়েও কথা বলেন। জেমস বলেন, 'ভক্তরা আমার প্রাণ, সবার প্রতি কৃতজ্ঞ। আমার ভালোবাসা অব্যাহত থাকবে। সবাইকে শুভেচ্ছা।' কর্মপরিকল্পনা নিয়ে তিনি বলেন, 'গত বছর দেশ ও দেশের বাইরে অনেক কনসার্টে অংশ নিয়েছিলাম। বিশেষ করে সৌদি আরবের কনসার্ট ছিল আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বাস করি, নতুন বছরে আরও বেশি কনসার্ট ব্যস্ততা থাকবে দেশ ও দেশের বাইরে।'

নতুন বাংলাদেশ নিয়েও প্রত্যাশার কথা জানিয়ে এ তারকা বলেন, 'গণ-অভু্যত্থানের মধ্য দিয়ে নতুন এক বাংলাদেশের সূচনা হয়েছে। তাই প্রত্যাশা একটু বেশি। সংস্কৃতিবান্ধব সমৃদ্ধির এক বাংলাদেশ চাই। আমাদের গান ও সংস্কৃতি ছড়িয়ে পড়ুক সারা পৃথিবীতে। এ বছর হোক গানের বছর এটাই আমার চাওয়া।' এদিকে গত বছর তার নতুন কোনো গান প্রকাশ হয়নি। তবে, চলতি বছর নতুন গান প্রকাশ করার ইচ্ছার কথাও জানিয়েছেন তিনি। সেভাবেই প্রস্তুতি থাকবে তার।

1

১৯৬৪ সালের ২ অক্টোবর নওগাঁয় জন্মগ্রহণ করেন জেমস। তার বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামে। জেমসের বাবা একজন সরকারি কর্মকর্তা হওয়ায় সব সময়ই চাইতেন ছেলে লেখাপড়ায় মনোযোগী হোক। কিন্তু ছেলের ইচ্ছা গায়ক হবেন। অনেকটা পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়েই শুরু করলেন সঙ্গীত চর্চা। বাবার সঙ্গে গান নিয়ে অভিমান করে বাড়ি ছাড়েন ছোট কিশোর জেমস। সঙ্গীতের নেশায় ঘর ছেড়ে এক অনিশ্চিত জগতে পাড়ি দেন। চট্টগ্রামের আজিজ বোর্ডিংয়ে থাকা শুরু করেন। সেখানে থেকেই তার সঙ্গীতের ক্যারিয়ার শুরু। গানপাগল জেমস বন্ধুদের নিয়ে ১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠা করেন 'ফিলিংস' নামে একটি ব্যান্ড। শুরু থেকেই গিটার বাজানোয় দারুণ পটু ছিলেন জেমস। আর তার কণ্ঠের মোহ সে তো অদ্বিতীয়। শুধু গানই গাওয়াই নয়, গান লেখার পাশাপাশি সুরও করেন এই মহান শিল্পী। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে নিজের লেখা গানের পাশাপাশি কবি শামসুর রাহমান, প্রিন্স মাহমুদ, সিবলির লেখা গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। বাংলা চলচ্চিত্রের গানেও কণ্ঠ দিয়েছেন জেমস। দেশ : দ্য লিডার, সত্তা সিনেমার জন্য গান করে পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। প্রথম অ্যালবাম 'স্টেশন রোড' দর্শকের কাছে পৌঁছাতে না পারলেও ১৯৮৮ সালে 'অনন্যা' নামের অ্যালবাম দিয়ে সুপারহিট হয়ে যান ঝাঁকড়া চুলের সেই স্বপ্নচারী ছেলেটা। পরবর্তী সময়ে 'ফিলিংস' ব্যান্ডের নাম পরিবর্তন করে রাখেন নগরবাউল। নব্বইয়ের বিখ্যাত সব গান। সুপারহিট সেই গানগুলো আজও মুগ্ধতা ছড়ায় চারপাশে। জেমসের গানের জনপ্রিয়তা শুধু দেশে নয়, পৌঁছেছে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলেও। ক্যারিয়ারের সেরা সময় শুরু হয় বলিউডে আত্মপ্রকাশ করার পর।

জেমসের গাওয়া একক অ্যালবামগুলোর মধ্যে রয়েছে- অনন্যা (১৯৮৮), পালাবি কোথায় (১৯৯৫), দুঃখিনী দুঃখ করো না (১৯৯৭), ঠিক আছে বন্ধু (১৯৯৯), আমি তোমাদেরই লোক (২০০৩), জনতা এক্সপ্রেস (২০০৫), তুফান (২০০৬), কাল যমুনা (২০০৯)। ২০০৪ সালে কলকাতার সঙ্গীত পরিচালক প্রিতমের সঙ্গে গান নিয়ে কাজ করেন জেমস। ২০০৫ সালে বলিউডে গ্যাংস্টার চলচ্চিত্রে পেস্নব্যাক করেন। চলচ্চিত্রে তার গাওয়া ভিগি ভিগি গানটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় এবং এক মাসেরও বেশি সময় গানটি বলিউড টপচার্টের শীর্ষে ছিল। গায়ক জেমসের জনপ্রিয়তা দেখে যেতে পারেনি তার বাবা-মা। ব্যথিত হৃদয়ে শতবার তাই গানের মধ্য দিয়েই শিল্পী খুঁজেছেন তার প্রিয়জনদের। গায়কের গাওয়া 'মা' ও 'বাবা' শিরোনামের গান দুটি তারই প্রমাণ। অপূর্ণতার চাদরে মোড়ানো জেমস নিজেকে আড়ালে রাখতেই ভালোবাসেন। জেমসের গাওয়া সেরা ১০ গান এর মধ্যে বাংলাদেশ, জেল থেকে আমি বলছি, মা, দুখিনী দুঃখ করো না, লেইস ফিতা লেইস, বাবা কত দিন, বিজলী, দুষ্টু ছেলের দল, মিরাবাঈ, পাগলা হাওয়া, গুরু ঘর বানাইলা কি দিয়া উলেস্নখযোগ্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে