শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
ঢাকা

স্বাস্থ্যবিধির লাগাম টানা যাচ্ছে না

জাহিদ হাসান
  ২৩ অক্টোবর ২০২০, ০০:০০

করোনা মহামারি প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি হলো স্বাস্থ্যবিধি তথা সামাজিক দূরত্ব মেনে জীবন-যাপন। ভাইরাসটি সংক্রমণের শুরু থেকেই জনস্বাস্থ্যবিদরা এটির প্রতি গুরুত্বারোপ করে আসছেন। সর্বশেষ গত সোমবার স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী সবাইকে মাস্ক পরাসহ সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন। তবে দেশের সবচেয়ে জনবহুল ও ঘনবসতিপূর্ণ ঢাকা মহানগরীতে স্বাস্থ্যবিধি পালন আবশ্যকীয় স্থান হিসেবে পরিচিত সরকারি হাসপাতাল, গণপরিবহণ, বাজার-ঘাট, রেস্তোরাঁ ও ধর্মীয় উপাসনালয়ের

\হমতো জনসমাগমস্থলে তা উপেক্ষিত- এমন চিত্রও দেখা গেছে।

এমন পরিস্থিতিতে আশঙ্কা প্রকাশ করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে করোনার সংক্রমণ শুরুর দিকে সরকারের লকডাউন নিয়ে ইঁদুর-বিড়াল খেলা, রোজা ও কোরবানির ঈদে বাস, ট্রেনের মতো গণপরিবহণ ছাড়াও শপিংমলে ক্রেতাদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। একইভাবে বিপুল সংখ্যক মানুষ স্বাস্থ্য বিধি উপেক্ষা করে শহর ছেড়ে দেশের বাড়িতে যাওয়া এবং ফেরত আসার কারণে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা বেড়ে গিয়েছিল। বর্তমানে দূরপালস্নার বাসগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি কিছুটা মানা হলেও রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য শহরগুলোতে চলাচল করা গণপরিবহণের ক্ষেত্রে তা অনেকটাই উপেক্ষিত হচ্ছে। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে শিগগিরই আসন্ন শীতে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কা আসতে পারে।

সরেজমিন রাজধানীর একাধিক সরকারি হাসপাতাল, মার্কেট, গণপরিবহণ ও বিভিন্ন দপ্তর ঘুরে সেখানে স্বাস্থ্যবিধি পালন উপেক্ষিত হতে দেখা গেছে। আবার এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারি বাড়ানোর ক্ষেত্রেও উদাসীনতা লক্ষ্য করা গেছে।

এ ধারাবাহিকতায় শেরে বাংলানগরের শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে গিয়ে সেখানে প্রবেশের জন্য কোনো জীবাণুনাশক টানেল দেখা যায়নি। এছাড়া চিকিৎসা কেন্দ্রটির বহির্বিভাগ ফটকের দুই পাশে রোগী ও স্বজনদের হাত ধোঁয়ার বেসিন থাকলেও অর্ধেকই নষ্ট দেখা গেছে। আবার দেশের সবচেয়ে বড় চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটের বহির্বিভাগে কোভিড-১৯ সন্দেহভাজন রোগীদের প্রবেশদ্বার ও বসার জন্য পৃথক জায়গা থাকলেও রোগী বা স্বজন কাউকেই তা মানতে দেখা যায়নি। ঢাকা মেডিকেল, বারডেম ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের বহির্বিভাগে রোগীর দীর্ঘলাইন ও লিফটগুলোতে মারাত্মকভাবে স্বাস্থ্য বিধি উপেক্ষিত হতে দেখা গেছে। মহাখালীর জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতাল ও ক্যানসার হাসপাতালে অনেক রোগী- স্বজনদের মাস্ক ও হ্যান্ডস্যানিটাইজার ব্যবহার ছাড়াই চিকিৎসা নিতে দেখা গেছে।

একইভাবে রাজধানীর বিভিন্ন রেস্তোরাঁ, মসজিদ-মন্দিরে জনসাধারণের মধ্যে সঠিক নিয়মে সুরক্ষা সরঞ্জাম ব্যবহারে উদাসীনতা, নির্ধারিত দূরত্ব মেনে চলা, সঠিক পদ্ধতিতে হাত ধোয়া বা স্যানিটাইজার ব্যবহার করছে না। বাস, ট্রেন, ফেরি-লঞ্চের মতো গণপরিবহণগুলোতে প্রত্যেক যাত্রীর হ্যান্ডগস্নাভস, মাস্ক ও বিশেষ চশমা বা পারসোনাল প্রটেক্টিভ ইকুইপ্টমেন্ট (পিপিই) ব্যবহার, গাড়িতে ওঠা-নামার সময় হ্যান্ডস্যানিটাইজ এবং প্রতিদিন গাড়ি ধোয়া বাধ্যতামূলক হলেও পরিবহণ মালিক-শ্রমিক, যাত্রী কেউ এ বিধান মানছেন না। এছাড়া মাছ, সবজি বাজার থেকে শুরু করে বিপণিবিতানগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি পালন উপেক্ষিত হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন মানুষের এই উদাসীনতায় আসন্ন শীতে করোনার সম্ভাব্য দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় সরকারের প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিতে পারে। ফলে মহামারি মোকাবিলায় স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভার সর্বশেষ বৈঠকেও জনসমাগমস্থলে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পাশাপাশি মাস্ক পরিধানের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, 'আমাদের সবার মাস্ক ব্যবহার করা উচিত। মাস্ক পরিধান না করে আসন্ন দুর্গাপূজাসহ প্রকাশ্য স্থান, সমাবেশ, মসজিদ এবং অন্যান্য উৎসবগুলোতে যাওয়া উচিত নয়। সবাই মাস্ক ব্যবহার করলে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের হার স্বয়ংক্রিয়ভাবে কমে যাবে।'

জানতে চাইলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক আঞ্চলিক উপদেষ্টা ডা. মোজাহারুল হক বলেন, কোভিড-১৯ মহামারিতে জনসম্মুখে সুরক্ষিত থাকার জন্য মাস্ক পরিধান করা জরুরি হলেও জনসাধারণের মধ্যে এ সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) ব্যবহারের উদাসীনতা দিন দিন বাড়ছে। অথচ সঠিক নিয়মে সাবান বা হ্যান্ডস্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধোয়ার মাধ্যমে অন্তত ১০টি সংক্রামক রোগ থেকে মুক্ত থাকা যায়। এ কারণে করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে বাসে, ট্রেনে বা অন্যান্য যানবাহনে যাতায়াতের সময় সবার অবশ্যই মাস্ক পরা দরকার, করোনা আক্রান্ত রোগীকে অন্যের সংস্পর্শে যেতে হলেও মুখে মাস্ক পরা উচিত।

ঢাকা শিশু হাসপাতালের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. আব্দুল আজিজ যায়যায়দিনকে বলেন সাধারণত মানুষের হাঁচি-কাশির মাধ্যমে করোনার জীবাণু বেশি পরিমাণে ছড়ায়। কিন্তু বর্তমানে ৭০ থেকে ৮০ ভাগ মানুষ মাস্ক বা সুরক্ষা সমাগ্রী ব্যবহার করছেন না। সামাজিক দূরত্বের বালাই মানছেন না। অথচ সঠিক নিয়মে মাস্ক পরিধান করলে করোনা থেকে ৮০ শতাংশ মুক্ত থাকা যায়। এছাড়া মুখে মাস্ক ও চোখে বিশেষ চশমা ব্যবহার করে ৯০ শতাংশ রক্ষা পাওয়া যায় এবং এসব সরঞ্জাম ব্যবহার করে অন্তত তিন ফুট দূরত্ব বজায় রেখে চললে একশ ভাগ পর্যন্ত সুরক্ষিত থাকা যায়। এজন্য আসন্ন শীতে দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় এখন সবাইকে বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরতে হবে। হাসপাতাল- অফিস-আদালত, গণপরিবহণ, কলকারখানায়, বাজার-শপিংমল- সবখানে নো-মাস্ক নো সার্ভিস বাধ্যতামূলক করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<116230 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1