শুক্রবার, ০৯ মে ২০২৫, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অশ্রম্নসিক্ত বিদায় তামিমের

যাযাদি রিপোর্ট
  ০৭ জুলাই ২০২৩, ০০:০০
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অশ্রম্নসিক্ত বিদায় তামিমের
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অশ্রম্নসিক্ত বিদায় তামিমের

আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের মাঝপথেই এলো অপ্রত্যাশিত এক দুঃসংবাদ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিলেন ওয়ানডে দলের অধিনায়ক ও দেশসেরা ওপেনার তামিম ইকবাল খান। নিজ শহর চট্টগ্রামে এক আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে আবেগাপস্নুত তামিম বলেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বিদায় নেওয়ার এটাই উপযুক্ত সময়। তার অবসরের ঘোষণায় সমাপ্ত হলো বাংলাদেশের সফলতম ব্যাটারের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার।

নানামুখী আলোচনার পর ২০২২ সালের ১৬ জুলাই আন্তর্জাতিক টি২০ থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছিলেন তামিম ইকবাল। ঠিক এক বছরের মাথায় ওয়ানডেসহ সব ধরনের ক্রিকেটকে বিদায় বললেন বাংলাদেশ দলের ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল। অবসরের ঘোষণা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তামিম। এই সময় তামিমকে অনেক বেশি অশ্রম্নসিক্ত দেখাচ্ছিল।

বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের স্থানীয় এক হোটেলে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই ঘোষণা দিয়েছেন দেশসেরা ওপেনার। যায়যায়দিনের

চট্টগ্রাম অফিস থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে জানা যায়, অধিনায়ক তামিম ইকবালের ফিটনেস ইসু্যতে গত কিছুদিন ধরেই বেশ আলোচনা ছিল। এত আলোচনা ভালোভাবে নেননি তিনি। তাই বৃহস্পতিবার হুট করে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছিলেন। সেখানেই নিজের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। পুরো ক্যারিয়ারে সৎ থেকে খেলার চেষ্টা করেছেন বলেও তিনি উলেস্নখ করেন।

অবসরের ঘোষণা দিতে গিয়ে তামিম বলেছেন, 'আফগানিস্তানের বিপক্ষে বুধবারের ম্যাচটি ছিল আমার ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ। এই মুহূর্ত থেকে আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানাচ্ছি। সিদ্ধান্তটি হুট করে নেওয়া নয়। অনেক দিন ধরেই আমি এটা নিয়ে ভাবছি। পরিবারের সঙ্গে কথাও বলেছি, এটা নিয়ে।'

সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিতে গিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন তামিম। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। কান্নায় গলা ধরে এসেছিল। আবেগ নিয়ন্ত্রণ করে পঞ্চপান্ডবের অন্যতম এই ক্রিকেটার বলেছেন, 'আমি সবসময় বলেছি, ক্রিকেট খেলেই বাবার স্বপ্ন পূরণ করেছি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে গিয়ে অনেক পরিস্থিতির মুখে পড়েছি, সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমার ছোট চাচার হাত ধরেই ক্রিকেটে এসেছি। যারা আমাকে এই পর্যায়ে আনতে ভূমিকা রেখেছেন, তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।'

এর আগে বুধবার হঠাৎ করেই জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডাকেন চট্টগ্রামের এই ক্রিকেটার। এদিন গভীর রাতে চট্টগ্রামে আফগান সিরিজ কাভার করতে যাওয়া গণমাধ্যমকর্মীদের তামিম সংবাদ পাঠান, বৃহস্পতিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে গণমাধ্যমে কিছু বিষয়ে জানাতে চান। তবে কী জানাতে চান; এমন প্রশ্নে তখন কিছুই বলেননি। তবে আভাস মিলেছিল, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরেরই ঘোষণা দিতে পারেন তিনি।

তামিমের আকস্মিক ডাকা সংবাদ সম্মেলন থেকে বিস্ফোরক কোনো ঘোষণা আসতে পারে- এমন আভাস আগেই পাওয়া গিয়েছিল। সদ্য অবসর নেওয়া টাইগার ওপেনারের কথাতেও মিলেছে এমন কিছুর ইঙ্গিত। যদিও বিস্তারিত কিছুই বলেননি। বললে হয়ত উত্তাপ আরও বাড়ত বাংলাদেশের ক্রিকেটে।

'এমন কিছু বিষয় আছে, যা নিয়ে আসলে আমি অনেক কিছু বলতে চাই। এই মুহূর্তে কথা বলার অবস্থায় নেই। আশা করি, এমন পরিস্থিতিতে আপনারা সম্মান দেখাবেন। কথা বলার জন্য এটা সহজ পরিস্থিতি নয়।'

আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে সংবাদ সম্মেলনে বারবার কান্নায় ভেঙে পড়েন তামিম। বারবার মুছে নিচ্ছিলেন অশ্রম্নজল। ক্যারিয়ারজুড়ে বহুবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছেন। বিদায়বেলায় তাদের প্রতি করলেন বিনীত অনুরোধ, 'আমার টপিকটা এখানেই শেষ করে দেন- এটাই অনুরোধ করব। সবকিছুর শেষ হয়েছে। এটাকে নিয়ে আর বেশি গুঁতাগুঁতি করবেন না। বারবার বলেছি, ব্যক্তির চেয়ে দল বড়। দলের দিকে নজর দিন।'

মাথার ওপর বিশাল চাপ নিয়ে বুধবার আফগানদের মুখোমুখি হয়ে ব্যর্থ হন তিনি। বুধবার প্রথম ওয়ানডেতে ১৩ রানের বেশি করতে পারেননি। দলও হেরেছে আফগানিস্তানের কাছে। পরে ফিল্ডিংয়ে খুব ভালো অবস্থানে পাওয়া যায়নি তামিমকে। স্পষ্ট বোঝা যায়, ফিটনেস ঘাটতি।

সব কিছু মিলিয়ে বাস্তবতা তামিমের বিপক্ষেই। ফিটনেসহীন তামিমের আত্মবিশ্বাসও ছিল তলানিতে। বিশ্বকাপের মাত্র তিন মাস আগে অধিনায়কের এমন অবস্থা চাইবে না কোনো দল। তামিম হয়ত বিষয়টি উপলব্ধি করেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

গত বছর ১৬ জুলাই আন্তর্জাতিক টি২০ থেকে অবসর নিয়েছেন ৩৪ বছর বয়সি তামিম। এবার ওয়ানডে ও টেস্ট থেকেও অবসরের ঘোষণা দিলেন। ওয়ানডে ক্রিকেট দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় তামিমের। ২০০৭ সালে কেনিয়ার বিপক্ষে দেশের হয়ে প্রথম ম্যাচ খেলেছিলেন। সর্বশেষ আফগানিস্তানের বিপক্ষে ঘরের মাঠে প্রথম ওয়ানডেতে এই সংস্করণেই শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন তিনি। ২৪১ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৩৬.৬২ গড়ে তিনি আট হাজার ৩১৩ রান করেছেন। সেঞ্চুরি ১৪টি, হাফ সেঞ্চুরি ৫৬টি।

এ ছাড়া ৭০ টেস্টে ৩৮.৮৯ গড়ে তার সংগ্রহ পাঁচ হাজার ১৩৪ রান। ৩১ হাফ সেঞ্চুরির সঙ্গে করেছেন ১০টি সেঞ্চুরি। সবার আগে ছেড়ে দেওয়া টি২০তে ৭৮ ম্যাচে করেছেন এক হাজার ৭৫৮ রান। এক সেঞ্চুরির সঙ্গে আছে সাতটি হাফ সেঞ্চুরিও।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে