নেতাকর্মীদের জেগে ওঠার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, রংপুরে একজন কৃষক নেতা ছিলেন। তিনি বলতেন, 'কোথায় আছেন বাহে সবাই, জেগে উঠুন।' এবার জেগে ওঠার মধ্য দিয়ে এই সরকারকে পতন ঘটিয়ে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে।
সোমবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত কৃষক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই আহ্বান জানান তিনি। 'বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি, ফ্যাসিস্ট সরকারের পদত্যাগ, কৃষক জনতার ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের উদ্যোগে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে চলমান ১৫ দিনের কর্মসূচির ১৩তম এটি। আজ মঙ্গলবার ফরিদপুর বিভাগীয় রোডমার্চ অনুষ্ঠিত হবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, জীবন-মরণের সমস্যায় খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা দিতে এত আপত্তির একটাই কারণ- রাজনৈতিক প্রতিহিংসা। অথচ আজকের প্রধানমন্ত্রী ওয়ান ইলেভেনে কানের সমস্যায় প্যারোল নিয়ে ঠিকই আমেরিকায় গিয়েছিলেন। এখন খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার জন্য সরকার বিভিন্ন আইন-কানুন দেখাচ্ছে। আসলে তাকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ না দিয়ে হত্যা করতে চায়।
তিনি আরও বলেন, আজকে সমগ্র বাংলাদেশের ক্ষোভে ফেটে পড়ছে। কারণ, খালেদা জিয়াকে কোনো চিকিৎসার সুযোগ না দিয়ে, মিথ্যা প্রতারণা করে এবং জনগণকে ভুল বুঝিয়ে ও আইনের ভুল ব্যাখা দিচ্ছেন। আসলে তারা কাপুরুষ। তারা ভীতু। তারা জানে, খালেদা জিয়া যদি সুস্থ হয়ে যান, যদি আবার জনগণের মধ্যে ফিরে আসেন, তাহলে তার ডাকে কোটি মানুষ রাস্তায় বেরিয়ে আসবে। তখন তাদের 'তখত তাউস' ধ্বংস হয়ে যাবে।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে
বিএনপি মহাসচিব বলেন, তাদের সামনে আর বিকল্প পথ নেই। আগামীর দিনগুলোতে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। সব অন্যায় ও অবিচার দুমড়ে মুচড়ে শেষ করে দিতে হবে।
বিএনপির ঘোষিত এই কর্মসূচি উপলক্ষে দুপুর ১২টার পর ঢাকাসহ সারা দেশের বিভিন্ন জেলা থেকেই কৃষকদলের হাজার হাজার নেতাকর্মী খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করেন। বিকাল ৩টার দিকে সমাবেশের বিস্তৃতি বিজয়নগর মোড় থেকে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত ছাড়িয়ে যায়। এ সময় নেতাকর্মীরা দলীয় ও জাতীয় পতাকা, ব্যানার, ফেস্টুন এবং পস্ন্যাকার্ড হাতে নিয়ে বিভিন্ন স্স্নোগানে সমাবেশস্থল মুখরিত করে তুলেন। অনেক নেতাকর্মী কৃষকের সাজে সাজেন। তাদের মাথায় টুপি, হাতে কাস্তে, ধান এবং কৃষকের প্রতিচ্ছবি দেখা গেছে। বিকাল পৌনে ৪টায় শুরু হওয়া বৃষ্টি উপেক্ষা করে নেতাকর্মীরা সমাবেশে ঠাঁয় দাঁড়িয়েছিলেন।
সমাবেশে এই সরকারের হাত থেকে দেশের মানুষ ও খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে, তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে এবং জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়াসহ কৃষকদের ন্যায্য অধিকার ফিরিয়ে দিতে নেতাকর্মীদের শপথবাক্য পাঠ করান কৃষকদলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিন।
মির্জা ফখরুল বলেন, মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে নিয়ে এখন সরকারের খুব লেগেছে। এ জন্য কূটনৈতিক সব রীতিনীতিকে উপেক্ষা করে তার বিরুদ্ধে যা তা কথা-বার্তা বলছে। আর তাদের বশংবদ কিছু টেলিভিশন চ্যানেল বিভিন্ন রকম অপপ্রচার করছে। তারা এত দায়িত্ব জ্ঞানহীন যে, ওই দেশটাতেই সবচেয়ে বেশি গার্মেন্ট যায়, সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয়। সেই দেশটার সঙ্গে আজকে তারা (সরকার) সমস্যা তৈরি করেছে। সেপ্টেম্বর মাসে সবেচেয়ে কম রেমিট্যান্স এসেছে। কারণ, বাংলাদেশে অর্থনীতির ওপর প্রবাসীদের আর আস্থা নেই। সে কারণে তারা এখানে টাকা পাঠাচ্ছে না।
কৃষকদের জন্য বিএনপি আমলে নেওয়া বিভিন্ন সুবিধার কথা উলেস্নখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, কৃষকদের ২৫ বিঘা পর্যন্ত খাজনা মওকুফ, পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ মওকুফ করেছেন। আর এখন ঋণের কারণে কৃষকের কোমড়ে দড়ি বেঁধে আদালতে নেওয়া হয়। তারা লুটেরা সরকার। তারা দেশের টাকা লুট করে বিদেশে কোটি কোটি টাকা খরচ করে বাড়ি করছেন। অথচ, আজকে কৃষক ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না। সারের দাম তিনগুণ বেড়েছে। সব জায়গায় আওয়ামী সিন্ডিকেট। তারা বয়স্ক ভাতা ও বিধবা ভাতাও লুটে নিচ্ছে। সত্যিকারের ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে পারছে না। সাধারণ মানুষ চাকরি পায় না। বিশ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে চাকরি পেতে হয়। সমগ্র দেশটাকে তারা জাহান্নামে পরিণত করেছে। জাহান্নামের আগুনে পুড়িয়ে মারছে দেশের মানুষকে। ১৯৭৪ সালের মতো দুর্ভিক্ষের অবস্থা বিরাজ করছে।
রংপুরের কৃষক বিপস্নবের স্স্নোগান 'কোনঠে বাহে, জাগো সবাই' তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, কোথায় আছেন, সবাই জাগেন, জেগে উঠেন। এই ভয়াবহ ফ্যাসিস্ট সরকারকে হটাতে জেগে উঠেন। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে, দেশনেত্রীকে মুক্ত করতে হবে, তারেক রহমানকে ফিরিয়ে আনতে হবে। এই শপথ নিয়ে আসুন আগামী দিনগুলোতে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলি, প্রতিরোধ গড়ে তুলি, তাদের সব নিপীড়ন-নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হই।
কৃষকদলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলামে সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, বরকত উলস্নাহ বুলু, শামসুজ্জামান দুদু, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুসহ কৃষকদলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বক্তব্য রাখেন। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় সমাবেশে থাকলেও বক্তব্য দেননি।