ট্রায়াল শেষে ডেঙ্গু টিকা প্রয়োগ পর্যায়ে আসতে আরও অনেক সময় বাকি মন্তব্য করে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, আইসিডিডিআর,বি (আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ) একটি ডেঙ্গু টিকা নিয়ে কাজ শুরু করেছে, যা চারটি ধরনেই কার্যকর বলে দাবি করা হয়েছে। তবে সেটি এখনো ট্রায়াল পর্যায়ে রয়েছে। দ্বিতীয় ট্রায়াল শেষ হলেও তৃতীয় ট্রায়াল সম্পন্ন করে চূড়ান্ত পর্যায়ে আসতে আরও অনেক সময় বাকি।
সোমবার দুপুরে রাজধানীর নিপসম অডিটরিয়ামে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই)
\হআয়োজিত জরায়ুমুখ ক্যানসারের টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
জাহিদ মালেক বলেন, ডেঙ্গু ভ্যাকসিন তৈরির কার্যক্রম চলছে। আমাদের দেশে যে টিকা আনার চেষ্টা হচ্ছে তা এখনো ট্রায়াল অবস্থায় চলছে। ডেঙ্গু ভ্যাকসিন ট্রায়ালে যদি আইসিডিডিআর,বি কোনো সহযোগিতা চায়, তাহলে সে অনুযায়ী তাদের আমরা সহযোগিতা করব।
তিনি আরও বলেন, আইসিডিডিআরি,বি একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান। এর আগেও কলেরা টিকা আবিষ্কারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। তাদের এই ডেঙ্গু ভ্যাকসিন নিয়েও যে সহযোগিতা চাইবে তা আমরা করব।
মন্ত্রী বলেন, দেশে ডেঙ্গুতে ১ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছে। আমরা চাই না একজন মানুষও এই রোগে মারা যাক। আমরা ৭ লাখের মতো স্যালাইন আমদানি করছি। এর মাঝে ৩ লাখ স্যালাইন চলে এসেছে। দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোতে ৫০ লাখ ব্যাগ স্যালাইন উৎপাদন করার সক্ষমতা রয়েছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের বর্তমান যে চাহিদা তাতে ৩০ থেকে ৪০ লাখ ব্যাগ প্রয়োজন হয়। তবুও আমরা নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে স্যালাইন আমদানি করছি। এ ছাড়া কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আমদানি করতে চাইলেও করতে পারবে।
দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে এখন বিশ্বমানের সেবা মিলছে দাবি করে জাহিদ মালেক বলেন, দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোকে আধুনিকায়ন করা হয়েছে, যার ফলে প্রতিটি হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবার মান বেড়েছে। এমনকি সেগুলোতে আন্তর্জাতিক মানের সেবা পাওয়া যাচ্ছে, ফলে দেশের বাইরে থেকেও অনেকেই সেবা নিতে আসছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সরকারি হাসপাতালগুলোতে এখন ৭০ হাজারের বেশি শয্যা, যা আমি দায়িত্ব নেওয়ার আগে ৪০ হাজারও ছিল না। শুধু শয্যাই বাড়াইনি, অক্সিজেন সাপস্নাইসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা বেড়েছে। যে কারণে সরকারি চিকিৎসা সেবা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে আস্থা এসেছে এবং তারা সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসছে। আমরা চিকিৎসক সংখ্যা বাড়ানোর লক্ষ্যে মেডিকেল কলেজগুলোতে সিট সংখ্যা বাড়িয়েছে। বর্তমানে মেডিকেল কলেজে সিট আছে ৫ হাজারের বেশি, যা আগে ছিল ৩ হাজারের মতো।
এর আগে এদিন জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধে রাজধানীতে পরীক্ষামূলকভাবে 'সারভারিক্স' নামক হিউম্যান পাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) টিকাদান ক্যাম্পেইনের উদ্বোধন করা হয়েছে। ১০ থেকে ১৪ বছরের ছয়জন কিশোরীকে দিয়ে এই টিকা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। জানা গেছে, টিকা গ্রহীতাদের ১০ দিন পর্যবেক্ষণ শেষে পরে ১৫ অক্টোবর থেকে ঢাকা বিভাগের সব জেলা, উপজেলা, পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশনে এই ক্যাম্পেইন শুরু হবে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে সারভারিক্স ভ্যাকসিন নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইপিআইয়ের প্রোগ্রাম ম্যানেজার এসএম আবদুলস্নাহ আল মুরাদ। তিনি বলেন, জরায়ুমুখের ক্যানসারে গত তিন বছরে ১৫ হাজার মা-বোন মারা গেছে। এত দিন আমরা এই জায়গাটি অ্যাড্রেসই করতে পারিনি। তবে আজকের দিনটি আমাদের জন্য আনন্দের, কারণ দীর্ঘদিন পরে হলেও আমরা জরায়ুমুখের ক্যানসার প্রতিরোধে একটি ভ্যাকসিন নিয়ে আসতে পেরেছি।
আবদুলস্নাহ আল মুরাদ বলেন, সারভারিক্স ভ্যাকসিনটি ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সি ৯০ শতাংশ কিশোরীকে নিশ্চিত করতে হবে। তবে আমাদের পরিকল্পনা হলো ৯৫ শতাংশ কিশোরীকে এই ভ্যাকসিনের আওতায় আনা। আমরা তিনটি ধাপে সারা দেশে এ কার্যক্রম পরিচালনা করব। কারণ, এই ভ্যাকসিনের স্বল্পতা আছে। পর্যায়ক্রমে পাওয়া সাপেক্ষে আমরা টিকাদান কর্মসূচি ঘোষণা করব।
তিনি আরও বলেন, প্রতিটি ভায়ালে ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ থাকে, যা দুজন কিশোরীকে দেওয়া হবে। এটি এক ডোজের টিকা, যা মাংসপেশিতে দেওয়া হয়। ইতোমধ্যে ১৩১ দেশে হিউম্যান পাপিলোমা ভাইরাস টিকা দেওয়া হয়েছে আর সারভিক্স টিকাটি ২৪টি দেশে দেওয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক। বিশেষ অতিথি ছিলেন মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম।