সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
শুনানির দ্বিতীয় দিন

প্রার্থিতা ফিরে পেলেন ৫১ জন

সমর্থকদের আলস্নাহ আলস্নাহ ডাক 'স্বতন্ত্র প্রার্থী শক্ত দেখলে ক্যানসেল করে ইসি'
যাযাদি ডেস্ক
  ১২ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০

নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আপিল শুনানির দ্বিতীয় দিনে বাছাইয়ে বাদ পড়া ৫১ জন প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন। সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের অডিটোরিয়ামে এ শুনানি হয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে শুনানি।

এদিকে, দ্বিতীয় দিনে ৯৯ জনের আপিল শুনানি হয়। শুনানিতে ৫১ প্রার্থীকে বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। আর প্রার্থিতা ফেরত পাননি ৪১ জন। সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি বা পেন্ডিং রয়েছে সাত জনের। এ নিয়ে দুদিনে প্রার্থিতা ফিরে পেলেন ১০৮ জন। এর আগে শুনানির প্রথম দিন রোববার ৫৭ জন প্রার্থিতা ফিরে পান।

সমর্থকদের আলস্নাহ আলস্নাহ ডাক

এদিকে, এদিন সকাল ১১টা ১০ মিনিটের দিকে শুনানি চলাকালে কুমিলস্না-২ (মেঘনা-হোমনা) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও

আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল মজিদের সমর্থকরা বাইরে বড় পর্দার দিকে তাকিয়ে আলস্নাহ আলস্নাহ বলে ডাকছিলেন। এ সময় আবদুল মজিদের নামের পাশে মঞ্জুর শব্দ লেখা ওঠে। এটি দেখে তারা উলস্নাসে মেতে উঠেন, করেন কান্নাও। এর কিছু সময় পর নির্বাচন কমিশন ভবন থেকে বেরিয়ে আসেন আবদুল মজিদ। সমর্থকদের একই সঙ্গে কান্না ও উলস্নাস দেখে তিনিও চোখ ভেজান।

পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, 'আমি সবার কাছে দোয়া চাই। আপনারা সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন। কমিশনকে অসংখ্য ধন্যবাদ, আমার প্রার্থিতা ফিরিয়ে দিয়েছে। আমি আশা করি, বিপুল ভোটে কুমিলস্না-২ আসনের জনগণ আমাকে বিজয়ী করবেন।'

এ সময় তার পাশে কাঁদতে দেখা যায় দুই নারীকে। তাদের একজন হাওয়া বেগম বলেন, আমরা খুশিতে কান্না করছি। আমাদের এ কান্না আনন্দের, আবেগের। আমাদের স্যার (আবদুল মজিদ) প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন। স্যার কুমিলস্না-২ আসন থেকে বিপুল ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবেন। প্রার্থিতা ফিরে পেয়ে আমরা এতটাই খুশি তা বলে বোঝানো যাবে না। মূলত জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা হলফনামা অসম্পূর্ণ থাকায় তার আবেদন বাতিল করেছিলেন।

শক্ত স্বতন্ত্র প্রার্থী দেখলে ক্যানসেল করে ইসি

এদিকে, এদিন নির্বাচন কমিশন ভবন প্রাঙ্গণে আপিলে প্রার্থিতা ফেরত না পাওয়া ফেরদৌস স্বাধীন ফিরোজ। সাংবাদিকদের কাছে বলেন, কোনো আসনে শক্ত কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী দেখলে নির্বাচন কমিশন (ইসি) তাদের আপিল নামঞ্জুর করে। তিনি বগুড়া-৩ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। এক শতাংশ ভোটারের তথ্যে গরমিল দেখিয়ে তার মনোনয়ন বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন।

ফেরদৌস স্বাধীন ফিরোজ বলেন, 'উনারা কোনো কথাই শোনে না। শক্ত কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী দেখলেই সেটি ক্যানসেল করে। অথচ ঋণখেলাপির মতো একজন প্রার্থীকে তারা বৈধতা দেয়। এ বিষয়ে আমি হাইকোর্টে আপিল করব। তারা হাইকোর্টে আপিল করার মতো বিষয়টি বেকায়দায় ফেলে রেখেছে। তারা তো এখান থেকে কোনো কাগজপত্র দিচ্ছে না। এই কাগজ দিতে ৩/৪ দিন লাগবে। তাহলে আমি হাইকোর্টে যাব কবে, আর কাজ করব কবে। নির্বাচন কীভাবে করব?'

তিনি আরও বলেন, 'আমি ৩ শতাংশ স্বাক্ষর নিয়ে ডিসি মহোদয়ের কাছে গিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি এক শতাংশ স্বাক্ষরই বেছে নিয়েছেন, সেটা ৩২০০ সামথিং হবে। সেখান থেকে ওভার দ্য ফোনে দশ জনকে যাচাই করেছেন। আর কিছু লোকের বাসায় রাত বারোটা-একটার দিকে গেছে প্রত্যন্ত অঞ্চলে। গিয়ে বলেছে, থানা থেকে এসেছি। সেখানে ভয়ে কেউ বলেছে জানি না, আবার কেউ বলেছে জানি। আমি সেগুলো এফিডেভিট করে এখানে জমা দিয়েছি। চারজন আজকে আমার সঙ্গে এসেছিল। ইসি কোনো কিছু না শুনে তৃণমূল বিএনপির বাগেরহাট-২ আসনের একজন মহিলা প্রার্থী, একজন শতভাগ ঋণখেলাপি, তাকে বৈধতা দিল। কিন্তু আমাকে দিল না।

প্রসঙ্গত, ইসির ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ছিল ৩০ নভেম্বর। ১ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয় মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই কার্যক্রম। শেষ হয় ৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায়। বাছাইয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য ১ হাজার ৯৮৫ জন প্রার্থীকে বৈধ ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে ৭৩১ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র। এর মধ্যে ৫৬১ জন প্রার্থী তাদের প্রার্থিতা ফিরে পেতে আপিল করেছেন।

প্রার্থিতা ফিরে পেলেন অধ্যাপক নাজমুল হুদা পটল

এদিকে আমাদের দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি জানান, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুষ্টিয়া-১ দৌলতপুর আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী অধ্যাপক নাজমুল হুদা পটল বিশ্বাস নির্বাচন কমিশনে আপিলের মাধ্যমে প্রার্থিতা ফিরে পেলেন।

এর আগে গত ৪ ডিসেম্বর কুষ্টিয়া জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা এক শতাংশ ভোটার-সংক্রান্ত জটিলতার কারণ দেখিয়ে তার মনোনয়নপত্র বাতিল করেছিল।

এরপর নির্বাচন কমিশনে আপিল দায়ের করার পর সোমবার দুপুর ১২টার দিকে শুনানি শেষে নির্বাচন কমিশন তার মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেন।

সাবেক সংসদ সদস্য ও দৌলতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মরহুম আফাজ উদ্দিন আহমেদের ছেলে অধ্যাপক নাজমুল হুদা পটল বিশ্বাসের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণার পর তার কর্মী, সমর্থক ও অনুসারীদের চরম উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গেছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে