শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১
স্বাগত মাহে রমজান

সামর্থ্যবানের জাকাত আদায় ফরজ

যাযাদি রিপোর্ট
  ০২ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
সামর্থ্যবানের জাকাত আদায় ফরজ

রমজানুল মুবারকের আজ ২২ তারিখ। নাজাতের দশকের দ্বিতীয় দিন। তাই রমজান মাসের শেষ কর্তব্যগুলো সম্পন্ন করার প্রতি রোজাদারদের মনোযোগ বাড়ছে। জাকাত আদায় রমজানের সাথে সংশ্লিষ্ট নয়। তবে কমপক্ষে সত্তর গুণ বেশি ছওয়াব লাভের আশায় বিপুল সংখ্যক মুসলিম বিত্তবান এ মাসটিকে বেছে নিয়ে জাকাত আদায় করেন।

জাকাত আদায় সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। সূরা বাকারায় বলা হয়েছে, 'পূর্ব এবং পশ্চিম দিকে তোমাদের মুখ ফিরানোতে কোনো পুণ্য নাই, কিন্তু পুণ্য আছে কেউ আলস্নাহ, পরকাল, ফিরিশতাগণ, এবং সমস্ত কিতাব, এবং নবীগণের ঈমান আনয়ন করলে এবং আলস্নাহ প্রেমে আত্মীয়-স্বজন, পিতৃহীন, অভাবগ্রস্ত, পর্যটক, সাহায্য প্রার্থীগণকে এবং দাসমুক্তির জন্য অর্থ দান করলে, সালাত কায়েম করলে ও জাকাত প্রদান করলে এবং প্রতিশ্রম্নতি দিয়ে তা পূরণ করলে, অর্থ-সংকটে, দুঃখ-ক্লেশে ও সংগ্রাম-সংকটে ধৈর্য ধারণ করলে। এরাই তারা যারা সত্যপরায়ণ এবং এরাই মুত্তাকি।'

একই সূরার অপর এক আয়াতে বলা হয়েছে, 'লোকে কি ব্যয় করবে সে সম্বন্ধে তোমাকে প্রশ্ন করে। বল, যে ধন-সম্পদ তোমরা ব্যয় করবে তা পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতিম, মিসকিন এবং মুসাফিরদের জন্য। উত্তম কাজের যা কিছু তোমরা কর না কেন আলস্নাহ তো সে সম্বন্ধে অবহিত। (সূরা বাকারা : ২১৫)

জাকাত প্রদানকারীকে রহমানের রাহিম কী প্রতিদান দিবেন সে সম্পর্কে বলা হয়েছে, 'কে সে, যে আলস্নাহকে করযে হাসানা প্রদান করবে? তিনি তার জন্য তা বহু গুণে বৃদ্ধি করবেন। আর আলস্নাহ সংকুচিত ও সম্প্রসারিত করেন এবং তাঁর পানেই তোমরা প্রত্যানিত হবে। (সূরা বাকারা : আয়াত ২৪৫)

'যারা নিজেদেরকে হধনৈশ্বর্য আলস্নাহর পথে ব্যয় করে তাদের উপমা একটি শস্যবীজ, যা সাতটি শীষ উৎপাদন করে, প্রত্যেক শীষে একশত শস্যদানা। আলস্নাহ যাকে ইচ্ছা বহু গুণে বৃদ্ধি করে দেন। আলস্নাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ। (সূরা বাকারা : আয়াত ২৬১)

সূরা হাদিসের ১৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, 'দানশীল পুরুষগণ ও দানশীল নারীগণ এবং যারা আলস্নাহকে উত্তম ঋণ দান করে তাদেরকে দেওয়া হবে বহু গুণ বেশি এবং তাদের জন্য রয়েছে সম্মানজনক পুরস্কার।'

যাকাত আদায়ের গুরুত্ব বোঝানোর জন্য পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, 'তোমরা যা ভালোবাস তা হতে ব্যয় না করা পর্যন্ত তোমরা কখনও পুণ্য লাভ করবে না। তোমরা যা কিছু ব্যয় কর আলস্নাহ অবশ্যই সে সম্বন্ধে অবহিত। (সূরা আলে-ইমরান : আয়াত ৯২)

সূরা মুহাম্মদের আয়াত ৩৬-৩৮ বলা হয়েছে, 'পার্থিব জীবন তো কেবল ক্রীড়া-কৌতুক, যদি তোমরা ঈমান আন, তাকওয়া অবলম্বন কর, আলস্নাহ তোমাদেরকে তোমাদের পুরস্কার দিবেন এবং তিনি তোমাদের ধন-সম্পদ চান না। তোমাদের নিকট হতে তিনি তা চাইলে ও তজ্জন্য তোমাদের উপর চাপ দিলে তোমরা তো কার্পণ্য করবে এবং তখন তিনি তোমাদের বিদ্বেষভাব প্রকাশ করে দিবেন। দেখ, তোমরাই তো তারা যাদেরকে আলস্নাহর পথে ব্যয় করতে বলা হয়েছে অথচ তোমাদের অনেকে কৃপণতা করতেছে। যারা কার্পণ্য করে তারা তো কার্পণ্য করে নিজেদেরই প্রতি। আলস্নাহ অভাবমুক্ত এবং তোমরা অভাবগ্রস্ত। যদি তোমরা বিমুখ হও, তিনি অন্য জাতিকে তোমাদের স্থলবর্তী করবেন, তারা তোমাদের মতো হবে না।'

ইসলামের শিক্ষা নিজের আনন্দ ও সুখের সাথে অন্যদের শরিক করে নেওয়া। তাই কষ্টার্জিত সম্পদও যখন প্রয়োজনের অতিরিক্ত হয়, তখন তা থেকে একটি অংশ অভাবী ও বঞ্চিতদের মধ্যে বিতরণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এ জন্য নিয়ম ও শর্তাবলি নির্দিষ্ট রয়েছে। কুরআন মজিদ ও হাদিসে জাকাত নামে আখ্যায়িত এই আর্থিক ব্যবস্থার সুফল ও প্রতিক্রিয়া অনেক ব্যাপক। কোন কোন খাতে এই অর্থ ব্যয় করা যাবে, তার সুস্পষ্ট বিবরণ রয়েছে কুরআন মজিদে সূরা তওবার ৬০ নম্বর আয়াতে। নিঃস্ব, অভাবী, যাকাত উসুলে নিয়োজিত ব্যক্তি, যাদের মনস্তুষ্টি প্রয়োজন, দাসমুক্তি, ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি, মুজাহিদ ও মুসাফির এই আট খাতে জাকাতের অর্থ ব্যয় করা যাবে। সব যুগে ও সব স্থানে আটটি খাত একই সাথে না পাওয়া যেতে পারে। যখন যেখানে যে কয়টি খাত পাওয়া যায়, সে কয়টিতে ব্যয় করা যাবে। আবার অগ্রাধিকার দেওয়া যায় কোনো খাতকে বিশেষ প্রয়োজনের দিকে লক্ষ রেখে। নিঃস্ব ব্যক্তিরা যেমন, তেমনি যারা নিঃস্ব না হলেও অভাবগ্রস্ত তারাও জাকাতের হকদার। বিশেষ করে আত্মীয় ও সম্ভ্রান্ত যে মানুষ সাংসারিক ও পারিবারিক নূ্যনতম ব্যয় মেটানোর মতো আয় করতে পারে না, আবার নিজেদের অসচ্ছলতার কথা বলতে দ্বিধাবোধ করে, এমন লোকদের প্রতি বিশেষ নজর রাখতে বলা হয়েছে কুরআন ও হাদিসে। এদের খুঁজে জাকাত ও অন্যান্য দান দিলে ছওয়াব বেশি হবে। আত্মীয়দের মধ্যে অভাবী থাকলে তাদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। আর এতে দ্বিগুণ ছওয়াব রয়েছে। আর্থিক সহায়তা পেলে যে অভাবী মানুষটির দীনদারি রক্ষা ও শরিয়ত পালন সহজ হয়, তাকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। এ জন্যই দরিদ্র দীন শিক্ষার্থীদের প্রতি দৃষ্টি দেওয়ার তাগিদ রয়েছে।

ইসলামে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, জাকাতের অর্থ একান্তই দরিদ্রদের প্রাপ্য। তাই এমন কোনো ব্যবস্থায় এ অর্থ ব্যয় করা যায় না, যার উপকার শুধু দরিদ্রদের মধ্যে সীমিত থাকে না। এ কারণেই জনসাধারণের কল্যাণমূলক কোনো স্থাপনা নির্মাণে এ অর্থ ব্যয় করার সুযোগ নেই। কেননা তা যেমন গরিবরা, তেমনি ধনীরাও ব্যবহার করতে পারে যারা জাকাতের হকদার নয়। তবে কোনো দরিদ্র মানুষের বসতঘর নির্মাণ কিংবা তার আয়-উপার্জনে সহায়ক কোনো বস্তু কেনার জন্য জাকাতের অর্থ দেওয়া যায়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে