বলপূর্বক বাস্তুচু্যত রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দাতা হিসেবে বাংলাদেশের প্রতি সমর্থন নিশ্চিত করতে জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরও সক্রিয় করার চেষ্টা অব্যাহত রাখবে বলে প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছেন এ বিশ্ব সংস্থার মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে পাঠানো এক চিঠিতে গুতেরেস বলেছেন, রোহিঙ্গা সংকটের কারণে বাংলাদেশ এবং এ অঞ্চলের ওপর পড়া প্রভাব, রাখাইনে ক্রমবর্ধমান মানবিক সংকট নিয়ে তিনি বাংলাদেশের সরকারপ্রধানের উদ্বেগের সঙ্গে একমত।
বাসস জানায়, জাতিসংঘ মহাসচিবের ওই চিঠি মঙ্গলবার হাতে পান প্রধান উপদেষ্টা। সেখানে গুতেরেস বলেন, 'রোহিঙ্গাদের নিরাপদে ও স্বেচ্ছায় প্রত্যাবর্তনের জন্যে উপযোগী পরিবেশ তৈরি করাসহ মিয়ানমারের সংকটের একটি রাজনৈতিক সমাধানের লক্ষ্যে আঞ্চলিক অংশীদার, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট (আসিয়ান) এবং সংশ্লিষ্ট অন্য পক্ষগুলোর সঙ্গে আমি আমার বিশেষ দূতের মাধ্যমে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ চালিয়ে যাব।'
রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক ও জীবিকার সহায়তা আরও বাড়াতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে দায়িত্বরত জাতিসংঘের কর্মীদের নির্দেশনা দেওয়ার কথাও মহাসচিব বলেন।
জাতিসংঘ রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টিকে অগ্রাধিকারে রাখবে এবং জরুরি ত্রাণ ও মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে বলেও তিনি আশ্বস্ত করেন।
গুতেরেস আশা প্রকাশ করেন, রোহিঙ্গা ও মিয়ানমারের অন্য সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি নিয়ে উচ্চপর্যায়ের সম্মেলন বিশ্বব্যাপী নতুন করে মনোযোগ আকর্ষণ এবং সমস্যার সমাধান বের করতে সাহায্য করবে।
বাংলাদেশে অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে চলমান 'পরিবর্তন প্রক্রিয়াকে' সমর্থন দেওয়ার কথাও চিঠিতে পুনর্ব্যক্ত করেন জাতিসংঘ মহাসচিব।
তিনি গত ৪ ফেব্রম্নয়ারি পাঠানো চিঠির জন্য অধ্যাপক ইউনূসকে ধন্যবাদ জানান। জাতিসংঘ মহাসচিবকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়ে লেখা ওই চিঠি তাকে পৌঁছে দিয়েছিলেন প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সংকট ও অগ্রাধিকার বিষয়ক উচ্চ প্রতিনিধি খলিলুর রহমান।
১৩ মার্চ বাংলাদেশে আসছেন :এদিকে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের আমন্ত্রণে চার দিনের সফরে মার্চে ঢাকায় আসছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আন্তোনিও গুতেরেস ১৩ থেকে ১৬ মার্চ বাংলাদেশ সফর করবেন বলে তার কার্যালয় নিশ্চিত করেছে। তবে বিস্তারিত সূচি এখনো প্রকাশ করা হয়নি।
গত ৭ ফেব্রম্নয়ারি আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে দেখা করে প্রধান উপদেষ্টার আমন্ত্রণপত্র পৌঁছে দিয়েছিলেন তার রোহিঙ্গা ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয় সংক্রান্ত বিশেষ দূত ড. খলিলুর রহমান। তার আগে গত ২২ জানুয়ারি সুইজারল্যান্ডের ডাভোসে গুতেরেসের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় ইউনূসের।
জাতিসংঘের মহাসচিব গুতেরেস এর আগে ২০১৮ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশে এসেছিলেন। সে সময় রোহিঙ্গাদের দুর্দশা নিজের চোখে দেখতে বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিমকে সঙ্গে নিয়ে তিনি কক্সবাজারেও গিয়েছিলেন।
প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের অনুরোধে চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধে রোহিঙ্গা বিষয়ক একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন হওয়ার কথা রয়েছে। জাতিসংঘের আয়োজনে কাতারের রাজধানী দোহায় এই সম্মেলন আয়োজনের বিষয়ে কথা চলছে।