নিয়ম রক্ষার এক ম্যাচ। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির হিসাব-নিকাশ কোনো কাজে আসবে না। তবে, বাংলাদেশ ও স্বাগতিক পাকিস্তানের দর্শকের চাহিদার কথা ভাবলে আইসিসির বেশ ভালো লাভের হিসাব আছে। ব্যর্থতা আর বাজে পারফরম্যান্সে কে কাকে ছাড়িয়ে যেতে পারে সেই প্রতিযোগিতায় দু'দলেরই প্রায় সমান সমান অবস্থা। ভারত ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রায় সমান ব্যবধানে হারে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান। ফলে, দু'দলই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি থেকে বিদায় নিয়েছে।
গ্রম্নপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে আজ বৃহস্পতিবার রাওয়ালপিন্ডিতে মুখোমুখি হবে এই দু'দল। সব হারিয়ে সান্ত্বনার জয় পেতে তবুও দু'দলই শেষ চেষ্টায় মরিয়া। সম্প্রতি পারফরম্যান্সের হিসাবে কাউকেই এককভাবে এগিয়ে রাখা যাচ্ছে না। তবে, ম্যাচের লড়াই আন্দাজ করছেন সাবেকরা। আজ বৃহস্পতিবার রাওয়ালপিন্ডি ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হবে দুই দল। বাংলাদেশ সময় বিকাল ৩টায় শুরু হবে এই ম্যাচটি। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানরে মধ্যকার ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করবে গাজী টিভি ও টিভি স্পোর্টস।
দল হিসেবেই ওয়ানডে ক্রিকেট বাংলাদেশের জন্য বরাবরই স্বস্তির আশ্রয়। টেস্ট বা টি ২০তে যেমনই হোক, এক দিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সমীহ করার মতো শক্তি হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশ। ধারাবাহিকতা, উন্নতির ছাপ, বিশ্বমানে ওঠার সম্ভাবনা কিংবা ক্রিকেটারদের আত্মবিশ্বাস, সবকিছু এই সংস্করণেই ছিল সবচেয়ে বেশি। অথচ সবশেষ কয়েক বছরে সেই সম্ভাবনা চুপসে গেছে বাংলাদেশের। ২০২৩ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর এবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও বাজে ক্রিকেট খেলে বিদায়। এই সময়ে দ্বিপক্ষীয় সিরিজগুলোতেও বলার মতো সাফল্য নেই। এ সময়ে খেলা ৪৩ ওয়ানডেতে বাংলাদেশের জয় মাত্র ১৪ টিতে। বর্তমান অবস্থায় তাই এই দলটাকে আরও ওয়ানডেতে শক্তিশালী বলা যাচ্ছে না।
বাংলাদেশের ব্যাটিং বিভাগ বারবার দলকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলছে। উইকেট যেমনই হোক ব্যাটাররা নিজেদের আত্মাহুতি দিতে যেন তৈরি থাকেন। বাজে উইকেটে যেমন, ব্যাটিং স্বর্গেও একই ব্যাটিং বাংলাদেশের। ভারতের বিপক্ষে দুবাইয়ে বাংলাদেশ করতে পারে মাত্র ২২৮ রান, রাওয়ালপিন্ডিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে করতে পারে ২৩৬ রান। প্রথমটি ছয় উইকেটে, দ্বিতীয় ম্যাচে পাঁচ উইকেটে বাংলাদেশের হার। বোলাররা বেশ সম্ভাবনা তৈরি করলেও ব্যাটারদের ব্যাটে রান না থাকায় লড়াই করতে পারেনি তারা। সবচেয়ে বেশি সমালোচনা হচ্ছে অভিজ্ঞ দুই ব্যাটার মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউলস্নাহকে নিয়ে। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তাদের শট নির্বাচন নিয়ে তৈরি হয়েছে হাস্যরসে। টপ অর্ডারেও নেই কোনো ধারাবাহিকতা। মাহমুদউলস্নাহকে একাদশে ঢোকাতে গিয়ে আগের ম্যাচে টপ অর্ডারে পরিবর্তন আনতে হয়েছে। ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে ছন্নছাড়া ভাব বাংলাদেশের কাছে ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। এই ধারাবাহিকতা থাকলে আজও পাকিস্তানের কাছে হার ছাড়া অন্য কিছু হবে না। তবে, আজ আবারও একাদশে ফেরানো হতে পারে সৌম্য সরকারকে।
এদিকে, ব্যর্থতার টক্করে বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে নেই পাকিস্তান। প্রথম ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের কাছে ৬০ রানে হারের পর ভারতের কাছে তারা পাত্তাই পায়নি। ছয় উইকেটে হারে তারা। তাদের ব্যাটিং লাইনও বাজে। তবে বোলিংয়ে পার্থক্যে বাংলাদেশ একটু এগিয়েই থাকবে। তবুও দেশের মাটিতে শেষ ম্যাচটি জিতে দর্শকদের কিছুটা আনন্দ দিতে চায় পাকিস্তান।
চলমান চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি থেকে বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের বিদায় নিশ্চিত হয়ে গেছে আগেই। এবার বাদ পড়া এই দুই দল মুখোমুখি হতে যাচ্ছে আজ। নিয়ম রক্ষার ম্যাচ হলেও নিজেদের সর্বোচ্চটা দিতে চায় পাকিস্তান এমনটি জানিয়েছেন দলটির প্রধান কোচ আকিব জাভেদ। বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচ হলেও হালকাভাবে নিচ্ছেন না তারা।
ম্যাচের আগের দিন বুধবার দলের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন জাভেদ। সেখানে বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচ নিয়ে পাকিস্তান কোচ বলেন, 'এটা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। শীর্ষ ৮টি দল খেলছে। আগের যে কোনো ম্যাচের মতোই এই ম্যাচ সমান গুরুত্বপূর্ণ। কাল খুব গুরুত্বপূর্ণ দিন। আমরা কঠোর পরিশ্রম করে কালকের জন্য প্রস্তুত হব।'
হারের বৃত্তে থাকায় পাকিস্তানকে অবশ্য অনেক সমালোচনা সহ্য করতে হচ্ছে। মাঠের ক্রিকেটে সমালোচনার পাশপাশি মাঠের বাইরে থেকে সাবেক ক্রিকেটাররা দিচ্ছেন নানা ধরনের ভর্ৎসনা সেই সঙ্গে দুয়ো। এসবে অবশ্য খুব একটা কান দিতে নারাজ পাকিস্তান কোচ জাভেদ। এমনকি তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, মাঠের কাজটা মোটেও সহজ নয়।
আকিব জাবেদ বলছিলেন, 'বাইরে যাই চলুক না কেন, আমরা নির্দিষ্ট ম্যাচের দিকেই সব সময় মনোযোগ রাখি। প্রতিটি ম্যাচে ব্রেনের ওপর অনেক চাপ থাকে। ব্যাট করতে গেলে কাজটা কিন্তু সোজা না। শূন্য থেকে শুরু করতে হয়। তারপরও আজ জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে চাইবে শিষ্যরা।'
###