রোববার, ০৪ মে ২০২৫, ২১ বৈশাখ ১৪৩২

বাজার থেকে ফের উধাও বোতলজাত সয়াবিন

একে অপরকে দুষছে ব্যবসায়ী-কোম্পানি
যাযাদি ডেস্ক
  ০৬ মার্চ ২০২৫, ০০:০০
বাজার থেকে ফের উধাও বোতলজাত সয়াবিন
বাজার থেকে ফের উধাও বোতলজাত সয়াবিন

চট্টগ্রাম নগরের বাদুরতলা এলাকার বাসিন্দা আবদুলস্নাহ আল মামুন। পত্রপত্রিকায় খবর পেয়েছেন, চট্টগ্রামে খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেঁধে দিয়েছে প্রশাসন। সে আশায় নগরের বহদ্দারহাট বাজারে এসেছেন তিনি। তবে বাজারে এসে দেখলেন ভিন্ন চিত্র। প্রশাসন যে দাম নির্ধারণ করেছে, তার থেকে ৩০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে খোলা সয়াবিন।

বুধবার সকালে বহদ্দারহাট কাঁচাবাজারে কথা হয় পেশায় চাকরিজীবী মামুনের সঙ্গে। তিনি বলেন, 'মঙ্গলবার ফেসবুকে ও বুধবার সকালে পত্রিকাতেও দেখলাম, খোলা সয়াবিন ১৬০ টাকার বেশি দামে বিক্রি করা যাবে না। অথচ বাজারে প্রতি লিটার সয়াবিন ১৯২ টাকা চাইছে। তারা তো প্রশাসনকেও মানছে না।'

মামুনের মতো অধিকাংশ ক্রেতাই সয়াবিনের দাম নিয়ে ক্ষোভ ঝাড়লেন। দেশে গত নভেম্বর মাস থেকে সয়াবিনের বাজারে সংকট। বাজারে খোলা সয়াবিনের দাম বাড়তি আবার বোতলজাত সয়াবিন প্রায় নেইুই বলা চলে। গত ৯ ডিসেম্বর সরকার খোলা সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৫৭ ও বোতলজাত সয়াবিনের দাম প্রতি লিটার ১৭৫ টাকা নির্ধারণ করে দেয়।

তবে এ দামে বাজারে বিক্রি হচ্ছে না সয়াবিন তেল। এর মধ্যে মঙ্গলবার আমদানিকারক, মিলমালিক, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে খোলা সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করে দেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র শাহাদাত হোসেন ও জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম। এতে আগামী ১০ এপ্রিল পর্যন্ত খোলা সয়াবিন পাইকারি পর্যায়ে ১৫৫ এবং খুচরা পর্যায়ে সর্বোচ্চ ১৬০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। তবে এ দর কার্যকর হয়নি বাজারে।

নগরের বহদ্দারহাট ও চকবাজার এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা দোকানগুলোতে খোলা সয়াবিনের দাম প্রতি লিটার ১৯০ থেকে ১৯৩ টাকা চাওয়া হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারি বাজার থেকে তাঁরা আগে বেশি দরে কিনেছেন। সেই তেল শেষ হলে এরপর নতুন তেল কিনবেন। পাইকারি বাজার থেকে কম দামে কিনতে পারলে কম দামে বিক্রিতে তাঁদের আপত্তি নেই।

বুধবার দুপুরে নগরের কাজীর দেউড়ি বাজার পরিদর্শন করেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র শাহাদাত হোসেন। এ সময় তিনি বলেন, 'যদি কেউ নির্ধারিত দামের বেশি বিক্রি করেন বা মজুতদারি করেন, তাহলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিছু ব্যবসায়ী দাবি করেছেন, তাঁরা বেশি দামে তেল কিনেছেন, তাই বেশি দামে বিক্রি করতে চান। কিন্তু আমরা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছি, নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করা যাবে না।'

সিটি মেয়র আরও বলেন, খোলা ভোজ্যতেলের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। কেউ এই দামের চেয়ে বেশি নিলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাজার স্থিতিশীল রাখতে সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে প্রতিটি বাজারে মনিটরিং টিম কাজ করছে

'পণ্য না নিলে তেল দিচ্ছে না'

এদিকে, কুড়িগ্রামে মিলছে না বোতলজাত সয়াবিন তেল। দুয়েকটি দোকানে আধা লিটারের বোতল পাওয়া গেলেও দাম অনেক চড়া। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, অন্যান্য পণ্য না নিলে বিক্রয় প্রতিষ্ঠানগুলো তেল দিচ্ছে না। এতে সংকট তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে, কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিরা বলছেন, খোলা তেলে লাভ বেশি হওয়ায় দোকানিরা বোতলের তেল খুলে বিক্রি করছেন।

বিক্রেতাদের অভিযোগ, কোম্পানিগুলোর বিক্রয় প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট পরিবেশকদের কাছে তারা বারবার তাগিদ দিয়েও বোতলজাত সয়াবিনের সরবরাহ পাচ্ছেন না। ক্রেতারা এলে তাদের খোলা তেল সরবরাহ করতে হচ্ছে। প্রথমে আপত্তি করলেও কয়েক দোকান ঘুরে অবশেষে খোলা তেল কিনে বাড়ি ফিরছেন ক্রেতারা।

কুড়িগাম শহরের আদর্শ পৌর বাজারের ব্যবসায়ী নাঈম ইসলাম বলেন, 'অনেক দিন থেকেই কোম্পানিগুলো বোতলজাত সয়াবিন তেল সরবরাহ করছে না। গ্রাহকরা বারবার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাবি করলেও দিতে পারছি না। বাধ্য হয়ে গ্রাহকরা খোলা তেল নিয়ে ফিরছেন। এছাড়া, কোম্পানিগুলো বোতলজাত তেল দিতে নানা শর্ত জুড়ে দিচ্ছে। এক কার্টন তেল নিতে এক বস্তা প্যাকেট চাল, আটা কিংবা সরিষার তেল নেওয়ার শর্ত জুড়ে দিচ্ছেন কোম্পানির প্রতিনিধিরা। এসব শর্ত দিয়ে ব্যবসা করা সম্ভব না।'

ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বলেন, তীর, রূপচাঁদা, ফ্রেশ এবং পুষ্টি কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিরা (এসআর) বোতলজাত তেলের সঙ্গে চাল, আটা ও সরিষার তেল নেওয়ার শর্তে বোতলজাত সয়াবিন সরবরাহ করতে চাচ্ছেন। রাজি হলে দুই কার্টুনের বেশি তেল দিতে চান না তারা। ফলে, গ্রাহকরা বোতলজাত সয়াবিন পাচ্ছেন না।

পৌর বাজারের মুদি দোকানি আয়নাল হক বলেন, 'কোম্পানির অন্য পণ্য নেওয়ার শর্ত ছাড়া বোতলজাত সয়াবিন মিলছে না। তাদের শর্তের জালে দোকানদাররা জিম্মি। ডিলারদের ফোন দিলে বলছেন তেল নেই।'

পৌর বাজারে তেল কিনতে আসা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, 'রমজান মাস এলেই জনগণের ভোগান্তি বাড়ে। জিনিসের দাম বেশি, সঙ্গে সংকটও তৈরি হয়। ইফতারসহ রান্নার কাজে সয়াবিন তেলের ব্যবহার বেশি হয়। সব পরিবারে একই রকম। কিন্তু বোতলের তেল কোথাও নেই। খোলা তেল নিয়ে বাড়ি ফিরছি।'

রূপচাঁদা কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি সাব্বির বলেন, 'আমরা তেল পাওয়া মাত্র বাজারে ছাড়ছি। সরবরাহ তুলনামূলক কম হলেও আমরা আটকে রাখছি না। জিয়া বাজার, পৌর বাজার, খলিলগঞ্জ বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে বোতলজাত তেল দিয়েছি। আমার কাছে প্রত্যেকটার বিক্রির স্স্নিপ আছে। এছাড়া, শহরের বিভিন্ন বাজারে চাহিদাপত্র নিয়েছি। এগুলো সরবারহ করা হবে।'

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) উত্তম কুমার রায় বলেন, 'বোতলজাত সয়াবিনের সংকটের বিষয়টি আমাদের জানা আছে। আশা করি, দ্রম্নত এর সমাধান হবে। বাজার স্থিতিশীল রাখতে বিভিন্ন পেশার মানুষকে নিয়ে বাজার মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া, আমরা টিসিবি'র পণ্য পেয়েছি, সেগুলো বিভিন্ন উপজেলায় বিক্রিও শুরু হয়েছে।'

কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক নুসরাত সুলতানা জানান, বাজারে কোনো ধরনের কারচুপি, অতিরিক্ত মূল্য আদায়, কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করার অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবসায়ীদের আর্থিক জরিমানার পাশাপাশি কারাদন্ড প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে