শনিবার, ০৩ মে ২০২৫, ২০ বৈশাখ ১৪৩২

রোজার মাসআলা মাসাইল সবারই জেনে রাখা জরুরি

আবছার তৈয়বী (আবুধাবি থেকে)
  ০৯ মার্চ ২০২৫, ০০:০০
রোজার মাসআলা মাসাইল সবারই জেনে রাখা জরুরি
রোজার মাসআলা মাসাইল সবারই জেনে রাখা জরুরি

মহান আলস্নাহ জালস্নাহ শানুহু ও তার প্রিয় হাবিব আমাদের প্রিয়নবী হযরত রাসুলে করিম সালস্নালস্নাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়াসালস্নাম-এর নির্দেশ পালনার্থে মাহে রমজানে মুমিন-মুসলমানরা মাসব্যাপী বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনায় সিয়াম সাধনায় আত্মনিয়োগ করেন। এতে মানুষের ব্যক্তিজীবন, সামাজিক জীবন এমনকি রাষ্ট্রীয় জীবনেও নানা কল্যাণকর প্রভাব পড়ে থাকে। যে কোনো কাজ সুষ্ঠু, সুন্দর ও র্নিভুলভাবে করার জন্য সংশ্লিষ্ট কাজের সঠিক বিধিবিধান বা নিয়ম-পদ্ধতি জানা থাকা প্রয়োজন। নইলে সেই কাজ নিখুঁতভাবে এবং যৌথভাবে আদায় করা যায় না। ইসলামের অত্যাবশ্যকীয় পালনীয় বিধান 'সাওম' বা রোজার ক্ষেত্রেও অতীব প্রয়োজনীয় বেশ কিছু বিধিবিধান বা মাসআলা-মাসাইল রয়েছে। কিন্তু আমরা অনেকেই রোজা সম্পর্কিত অতি প্রয়োজনীয় সেই মাসআলা-মাসাইল বা বিধিবিধানগুলো জানি না। ফলে, অনেক ক্ষেত্রে আমরা জানতেই পারি না যে, এত কষ্ট করে রাখা আমাদের রোজাটি অসম্পূর্ণ হয়েছে কিংবা পুরো রোজাটাই নষ্ট হয়ে গেছে। তাই রোজাদারদের জ্ঞাতার্থে কিছু জরুরি মাসআলা-মাসাল বা বিধিবিধান তুলে ধরার প্রয়াস পাচ্ছি। ক. যেসব কারণে রোজার কাজা ওয়াজিব হয় : যে সব কারণে রোজা নষ্ট হয় এবং কাজা ওয়াজিব হয় অর্থাৎ একটি রোজার পরিবর্তে রমজান মাস ব্যতিত অন্য মাসে একটি রোজা পালন করতেই হবে, সেসব কারণগুলো হলো- ১. কোনো অখাদ্য বস্তু খেয়ে ফেললে ২. কুলি করার সময় পানি গলার নিন্মাংশে প্রবেশ করলে ৩. জোরপূর্বক কেউ পানাহর করালে ৪. কেউ যৌন মিলনে বাধ্য করলে ৫. মলদ্বার বা প্রস্রাবদ্বারে পিছকারী করালে বা কিছু ঢুকালে ৬. নিদ্রিতাবস্থায় কেউ কোনো জিনিস খাওয়ালে ৭. আকাশের পানি মুখে পড়ার দরুণ তা গিলে ফেললে ৮. নাক বা কানের ভেতর ওষুধ বা ড্রপ ব্যবহার করলে ৯. মাথা বা পেটের ক্ষত স্থানে তরল ওষুধ লাগানোর ফলে তা মস্তিষ্ক বা পেটে প্রবেশ করলে ১০. অনিচ্ছাপূর্বক মুখভরে বমি আসলে এবং সামান্য পরিমাণও যদি গিলে ফেলা হয়। ১১. রাত বাকি আছে মনে করে সুবহে সাদিকের পরে ভোরে পানাহার করলে ১২. সন্ধ্যা হয়েছে মনে করে সূর্যাস্তের পূর্বে বা সূর্যাস্তের সময় ইফতার করলে ১৩. রোজা রেখে ভুলক্রমে কোনো কিছু আহার বা পান করার পর রোজা নষ্ট হয়েছে বলে মনে করে পুনরায় পানাহার করলে ১৪. বেহুঁশ বা তন্দ্রাবস্থায় যৌন মিলন করলে ১৫. রোজার নিয়ত না করে রোজা রেখে ইচ্ছাপূর্বক পানাহার করলে ১৬. দাঁতের ফাঁকে আটকানো চনাবুটের পরিমাণ কোনো বস্তু বের করে গিলে ফেললে ১৭. অল্প বমি মুখে এলে এবং তা ইচ্ছাপূর্বক গিলে ফেললে ১৮. কামভাব তাড়িত হয়ে বীর্যপাত হলে।

খ. যেসব কারণে রোজার কাজা ও কাফফারা একসঙ্গে ওয়াজিব হয় : যদি কেউ রোজা রাখার পর কোনো মজবুরি বা কোনো শরীয় ওজর আপত্তি ছাড়া ইচ্ছাকৃতভাবে রোজা ভেঙে ফেলে, অথবা রোজার কথা স্মরণ থাকা সত্ত্বেও ইচ্ছাকৃতভাবে পানাহার, যৌন সম্ভোগ ইত্যাদি করে, তাহলে এ জন্য কাজা ও কাফ্‌ফারা উভয়টি আদায় করতে হবে। মানে সেই রোজাটির কাজা আদায় করতে হবে বা পুনরায় রাখতে হবে এবং একইসঙ্গে সেই রোজার কাফফারা বা ক্ষতিপূরণও দিতে হবে। আর এ ক্ষেত্রে একটিমাত্র রোজার কাফ্‌ফারা হলো- ১. একজন দাস-দাসি মুক্ত করা বা ২. লাগাতার ৬০ দিন রোজা রাখা অথবা ৩. ষাট জন মিসকিনকে পূর্ণ পরিতৃপ্তির সঙ্গে দু'বেলা আহার করানো। যেহেতু পৃথিবীতে এখন আর দাসপ্রথা নেই, তাই পরবর্তী দু'পন্থার যে কোনো একটি অবলম্বন করতে হবে।

গ. যেসব কারণে রোজা নষ্ট হয় না : মনে রাখা প্রয়োজন, কতেক কারণে রোজা নষ্ট হয় না। তা হলো- ১. ভুলে পানাহার কিংবা সহবাস করলে ২. রোজার কথা স্মরণ থাকা সত্ত্বেও অনিচ্ছায় মশা-মাছি, ধূলো-বালি, ধুঁয়া-আটা ইত্যাদি বাতাসে উড়ে গলায় প্রবেশ করলে ৩. কানের ভেতরে পানি প্রবেশ করলে ৪. থুথু গিলে ফেললে ৫. গোসল করার সময় পানির আদ্রতা শরীরের ভেতর অনুভূত হলে ৬. কুলি করে মুখের সম্পূর্ণ পানি ফেলে দেওয়ার পর আদ্রতা অনুভূত হলে ৭. দাঁতে বা মুখে অজ্ঞাত অবস্থায় কোনো ছোট বা মামুলি বস্তু থেকে গেলে এবং তা লালা বা থুথুর সঙ্গে বেরিয়ে আসলে ৮. দাঁত থেকে রক্ত বেরিয়ে গলা পর্যন্ত চলে গেলে। কিন্তু গলার নিচে গেলে রোজা নষ্ট হয়ে যাবে। (বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন- দুররে মোখতার, রাদ্দুল মোহতার, ফাতওয়া-ই-আলমগীরী, ফাতওয়া-ই-রেজভিয়্যাহ, কানযুদ দাকায়েক, হেদায়া, বাহারে শরিয়ত ও কানুনে শরিয়ত) ইত্যাদি।

আলস্নাহ্‌ আমাদের রোজার সঠিক মাসআলা-মাসাইল তথা সব নিয়ম-কানুন ও বিধিবিধান জেনে এবং মেনে যথাযথভাবে মাহে রমজানের রোজা রাখার তাওফিক দিন। আমিন!

আবছার তৈয়বী : লেখক, গবেষক ও ইসলামী চিন্তাবিদ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে