সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১

বোয়ালখালীর ঐতিহ্য শ্রীপুর বুড়া মসজিদ

ম রাজু দে, বোয়ালখালী (চট্টগ্রাম)
  ২৭ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০
চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার ঐতিহাসিক শ্রীপুর বুড়া মসজিদ -যাযাদি

চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায় রয়েছে হাজার বছরের শিক্ষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি ও দেশমাতৃকার আন্দোলনের ঐতিহ্য। এ উপজেলার শ্রীপুর খরনদ্বীপ ইউনিয়নে অবস্থিত বিখ্যাত মসজিদের নাম শ্রীপুর বুড়া মসজিদ। প্রায় তিনশ' বছর আগে ছনের ছাউনি দিয়ে তৈরি মসজিদ আজ বোয়ালখালীর ঐতিহ্য। জাতি-ধর্ম- বর্ণ নির্বিশেষে সারাদেশের মানুষের কাছে তীর্থভূমি হিসেবে সমাদৃত এ বুড়া মসজিদ। বরকত, ফজিলত ও তাৎপর্য পূর্ণের আশায় এখানে দেশ-বিদেশ থেকে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের সমাগম ঘটে।

এ মসজিদ কখন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তার সঠিক ইতিহাস কারও জানা নেই। তবে ৩০০ বছর আগে মোগল আমলের শেষ দিকে এটি নির্মিত হয় বলে অনেকেরই ধারণা। চট্টগ্রামের তৎকালীন প্রশাসক থানাদার ওয়াসিন চৌধুরী এ মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন বলে জনশ্রম্নতি রয়েছে। তার দাদা শেখ নাছির উদ্দিন তৎকালীন অবিভক্ত ভারতের গৌড় এলাকা থেকে এ এলাকায় দ্বীন প্রচারের উদ্দেশে আসেন। তার কাছে দীক্ষিত লোকদের নামাজ আদায়ের সুবিধার্থে এ মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।

মসজিদের নামকরণ সম্পর্কে জানা যায়, ওয়াসিন চৌধুরীর বাবা ইবাদত-বন্দেগিতে এতই মশগুল থাকতেন যে, পারিপার্শ্বিক অবস্থার কোনো খবর রাখতেন না। তিনি এতই পরহেজগার ছিলেন যে, তাকে সবাই বুড়া হুজুর নামে ডাকতেন। ইবাদত করতে করতে একদিন তিনি এই মসজিদ থেকে হারিয়ে যান। পরবর্তীকালে তার কোনো সন্ধান কেউ পাননি বলে কথিত আছে। তাই তার নামানুসারে এটি 'বুড়া মসজিদ' নামে প্রসিদ্ধি লাভ করে। অন্য একটি সূত্র মতে, থানাদার সাহেবের দুই স্ত্রী ছিল। একজনের সন্তান থাকলেও আরেকজন ছিলেন নিঃসন্তান। সন্তান না থাকায় বুড়ো বয়সে তাকে কোনো অর্থবিত্ত না দিয়ে তার নামে মসজিদ প্রতিষ্ঠা করে নামকরণ করেন বুড়া মসজিদ। অল্প ক'জন মুসলিস্ন নামাজ পড়ার মতো জায়গা নিয়ে শন পাতার বেড়া এবং উপরে দু'নালি শন দিয়ে মসজিদের প্রথম ঘর নির্মিত হয়। প্রতি বছর ছাউনি ও বেড়া পাল্টাতে পাল্টাতে ২০ থেকে ২৫ বছর পর্যন্ত চলে এ মসজিদের কার্যক্রম।।

পরবর্তি সময়ে চারপাশে বাঁশের বেড়া এবং উপরে শনের ছাউনি দিয়ে ১০ থেকে ১৫ হাত লম্বা করে মসজিদ নির্মাণ করা হয়। খুব সম্ভবত ১৮৮৬ সালে প্রবল ভূমিকম্পে বেড়া ও শনের ছাউনিঘর ভেঙে যায়। ভাঙা অবস্থায় জোড়াতালি দিয়ে ২০ থেকে ২৫ বছর চলছিল এ মসজিদের কার্যক্রম। পরে স্থানীয় লোকজন মাটির দেয়াল তুলে পুনঃনির্মাণ করেন। এভাবে ৪ থেকে ৫ বার নির্মাণ করা হয়। এখন থেকে প্রায় ১০০ বছর আগে মসজিদের কিছু অংশ পাকা করা হয়।

১৯৪০ সালে মসজিদের পুরাতন ভিত্তি ভেঙে নতুন করে ছাদ পাকা করা হয়। ১৯৭৪ সালে মসজিদ সংস্কার ও সম্প্রসারণ করা হয়। ১৯৮৬ সালের দিকে দ্বিতীয় তলায় উন্নীত করা হয় মসজিদটি। ১৯৭৫ সালের দিকে মসজিদের পাকা ভবনের গেট নির্মাণ হয়।

জানা যায়, মসজিদসংলগ্ন কবরস্থানে বহু আলেম ওলামা বুজর্গদের সমাহিত করা হয়েছে। প্রতি শুক্রবার দূর-দূরান্ত থেকে অসংখ্য মুসলিস্ন জুমার নামাজ আদায় করতে ছুটে আসেন এ মসজিদে।

উত্তরসূরিদের পক্ষে নুরুন্নবী চৌধুরী বলেন, বর্তমানে মসজিদের অফিসিয়াল মোতাওয়ালিস্ন বোয়ালখালী ইউএনও আছিয়া খাতুন, এসিল্যান্ড মোজ্জাম্মেল হক চৌধুরী, স্থানীয় চেয়ারম্যান মো. মোকারমসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে ঐতিহাসিক এ মসজিদের উন্নয়নে মেগা প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে