বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

চরাঞ্চলের কৃষকদের ফসল হারানোর কষ্ট

কেন্দুয়ায় বন্যায় ভেসে গেছে মৎস্য চাষির স্বপ্ন
লালমনিরহাট প্রতিনিধি
  ০৪ জুলাই ২০২২, ০০:০০
লালমনিরহাটে আগাম বন্যার কারণে তলিয়ে যাওয়া আবাদি জমি থেকে বাদাম সংগ্রহ করছে কৃষক পরিবার -যাযাদি

লালমনিরহাটের তিস্তা ও ধরলা নদীর তীরবর্তী চরাঞ্চলের কৃষকদের মনে সর্বদাই নাড়া দিচ্ছে ফসল হারানোর কষ্ট। আগাম বন্যার কারণে তলিয়ে গেছে আবাদি জমি। পানির নিচে দীর্ঘ দিন তলিয়ে থাকায় নষ্ট হচ্ছে ফসল আর আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কৃষকরা। ফলে এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠবে কীভাবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন চরাঞ্চলের কৃষক।

সরেজমিনে জানা যায়, আমনের বীজতলা, বাদাম ও খরিপ মৌসুমের ভুট্টাসহ নানা জাতের সবজি চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করেন চরাঞ্চলের কৃষকরা। কিন্তু এ বছর আগাম কয়েক দফায় আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় চরাঞ্চলের চাষিদের উঠতি ফসলের ক্ষেত পানিতে তলিয়ে যায়। বিশেষ করে আমনের বীজতলা ও বাদাম ক্ষেতে অভাবনীয় ক্ষতি হয়েছে। কৃষকরা পানিতে ডুবে বাদাম সংগ্রহ করলেও তা অঙ্কুরোদগম ঘটছে। ফলে চাষাবাদে খরচ তোলা নিয়েও শঙ্কায় তারা। অনেকের ঘর-বাড়িতে বন্যার পানি ঢুকে যাওয়ায় বস্তায় রাখা বিচনের ধান ভিজে গেছে। তাই পরিবারের সব সদস্য মিলে ভেজা ফসল উঁচু স্থানে নিয়ে শুকানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু টানা বৃষ্টিতে সেটাও করা সম্ভব হচ্ছে না।

জেলাজুড়ে প্রায় ৩৬টি চরাঞ্চল রয়েছে। সেখানে শুষ্ক মৌসুমে কঠোর পরিশ্রম করে ধু-ধু বালুর ওপর সবুজ ফসলে চরাঞ্চল ভরে তোলেন চাষিরা। শুষ্ক মৌসুমের এই স্বল্প সময়ে চাষাবাদের আয়ে চলে তাদের সারা বছরের সংসার। কেউ ঋণ করে, আবার কেউ বাকিতে বীজ, সার, কীটনাশক কিনে বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ করেন। ফসল উঠে গেলে ঋণ ও দোকানের পাওনা পরিশোধ করে বাকি সময়টুকু বিকল্প পেশায় সংসারের চাকা সচল রাখেন। কিন্তু এ বছর ঘটেছে উল্টো। আগাম বন্যায় অনেক ফসল ঘরে তুলতে পারেননি চাষিরা।

তিস্তাপাড়ের কৃষক আফজাল হোসেন জানান, তার ৩ বিঘা জমির আউশ ধান, ৪ বিঘা জমির সবজি, বাদাম ও ভুট্টা সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে তিনি দেড় লাখ টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। কীভাবে এ ক্ষতি পুষিয়ে নেবেন, তা ভেবেই দুশ্চিন্তায় কাটছে দিন।

একই এলাকার কৃষক আজিজার রহমান জানান, দুই বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করেছেন। কিন্তু বন্যার পানিতে বাদাম ক্ষেত ডুবে গেছে। এখন পানি কিছুটা কমে যাওয়ায় বাদাম তুলছেন। তবে অধিকাংশ বাদাম পচে নষ্ট হয়ে গেছে। আর বাকি বাদামগুলোতে গাছ বেরিয়েছে। এখন লাভ তো দূরের কথা উৎপাদন খরচই উঠবে না।

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক হামিদুর রহমান বলেন, জেলার ৫টি উপজেলায় বন্যায় ৩৮৩ হেক্টর ফসলি জমি ডুবে ছিল। এর মধ্যে ২০১ হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৮২ হেক্টর জমির ফসল। জেলায় সবমিলিয়ে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৬ কোটি টাকা। বন্যায় কৃষিতে ক্ষতির পরিমাণ ও ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে আমাদের কেন্দুয়া (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি জানিয়েছেন, নেত্রকোণার কেন্দুয়ার বলাইশিমুল ইউনিয়নের কবিচন্দ্রপুর গ্রামের মৎস্যচাষি আসাদুল আমিনের পুকুরের মাছ উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর অতি টানা বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। মাছ ভেসে যাওয়ায় স্বপ্ন ভেঙে ক্ষতির মুখে পড়েছেন আসাদুল আমিন।

তিনি জানান, গত কয়েক বছর আগে ১ একর ৮০ শতক জমিতে মাছ চাষ করার জন্য ৩টি পুকুর খনন করেন। প্রতি বছরই বিভিন্ন ধরনের মাছ চাষ করে আসছেন। মাছ বিক্রি করে খরচ বাদে যা আয় হয় তা দিয়েই সংসার চলে। এবারও তিনটি পুকুরে শিং, পাবদা এবং আরও দেশীয় প্রজাতির মাছ চাষ করেছিলেন। কিন্তু উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর অতি বৃষ্টির পানিতে পুকুর তলিয়ে সব মাছ ভেসে গেছে।

তিনি আরও জানান, পুকুরের মাছগুলো বিক্রির উপযুক্ত হয়েছিল, কিন্তু এভাবে যে বন্যার পানি চলে আসবে কে জানত। বাকিতে খাদ্য এবং ওষুধ ক্রয় ও ধারদেনা করে মাছ চাষ করেছেন। তা বিক্রি করে সব খরচ পরিশোধ করে যা আয় থাকত তা দিয়েই সংসার চালাতেন। কিন্তু এখন সংসার চালানো দূরের কথা ধার-দেনার টাকা কোথা থেকে দেবেন সেই চিন্তায় দিন কাটছে। তাই সরকারের সাহায্য কামনা করেন তিনি।

এ বিষয়ে কেন্দুয়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আজহারুল আলম জানান, উপজেলার ২২৩৫টি পুকুরের আংশিক ও সম্পূর্ণ ক্ষতি হয়েছে। উপজেলার নিচু এলাকার ইউনিয়নগুলোর পুকুর ও মৎস্য খামার মালিকরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আমরা তালিকা তৈরি করেছি, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তা পাঠানো হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে