সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

বেড়েছে লোডশেডিং, পাওয়া যায় না পর্যাপ্ত ভোল্টেজ

স্বদেশ ডেস্ক
  ২০ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০

তীব্র দাবদাহের সঙ্গে অসহনীয় লোডশেডিং জনজীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে। দিন রাতে গড়ে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা বিদু্যত পাচ্ছেন গ্রামাঞ্চলের লোকজন বাকি সময় লোডশেডিং। পৌর শহরে তুলনামূলক একটু বেশিই পাচ্ছেন। রোদের তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অসহনীয় গরম তার সঙ্গে ভুতুড়ে লোডশেডিং এ যেন এক দুর্বিসহ জীবনের সম্মুখীন বলে জানান সচেতনমহল। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

দাগনভূঞা (ফেনী) প্রতিনিধি জানান, ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলায় মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিং এ জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। গরম ঠান্ডায় ছোট থেকে বড়রা ঠান্ডা ও ডায়রিয়াজনিত রোগে ভুগছেন। রোজার শেষ পর্যায়ে মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিং হওয়াতে রোজাদারগণ পড়ছেন যথারীতি সীমাহীন কষ্টে। নামাজের সময়, ইফতার ও সেহেরির সময় বিদু্যৎ আসার খবর পাওয়া যায় না। যা আসে আধাঘণ্টা বা একঘণ্টা থাকলেও পরে আসার খবর থাকে না। নষ্ট হচ্ছে বাসা বাড়ির ফ্রিজে থাকা খাবার। এদিকে চার্জার ফ্যান তো সোনার হরিন। তিন হাজার টাকার ফ্যান এখন ছয় কিংবা সাত হাজার টাকা, তাও সংকট। ইলেকট্রিক দোকানিরা জানান, চাহিদা বেশি তাই দামও বেশি।

\হফেনী জেলা ছাগলনাইয়া উপজেলা বিদু্যৎ সংকটের কারণে হামলার মতো ঘটনা ঘটলে দাগনভূঞায় রাষ্ট্রীয় সম্পদ ও সরকারি স্থাপনা নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ প্রশাসন নিরাপত্তা জোরদার করেছেন সোমবার রাত থেকে।

এসএসসি পরীক্ষার্থী মিফতাহুল জান্নাত বলেন, মাত্র কিছুদিন পরে এসএসসি পরীক্ষা, একদিকে যেমন তীব্র গরম আরেকদিকে মাত্রারিক্ত লোডশেডিং ফলে পড়াশোনার মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটছে। এমন নাজুক পরিস্থিতিতে পড়াশোনা চলিয়ে যাওয়া অসম্ভব।

দাগনভূঞা জোনাল অফিসের ডিজিএম জাহাঙ্গীর আলম জানান, 'জাতীয় গ্রীডে বিদু্যৎ সরবরাহ কম থাকায় আমরা যতটুকু বরাদ্দ পাই ততটুকু পর্যায়ক্রমে ডিস্ট্রিবিউশন করে থাকি। উপজেলার ডিমান্ড ২৩ মেগাওয়াট সেখানে আমি পাই ৭/৮ মেগাওয়াট। এতে অনেকেই কষ্ট পাচ্ছেন। শিগগিরই এ সমস্যা সমাধান হবে।

পীরগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি জানান, রংপুরের পীরগঞ্জে সারাদেশের ন্যায় প্রচন্ড তাপদাহে চরম দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে সর্বস্তরের মানুষ। সেই সঙ্গে যোগ হয়েছে পলস্নী বিদু্যতের দীর্ঘ মেয়াদি লোডশেডিং। পশুপাখি গরু ছাগলসহ সব ধরনের প্রাণীর প্রাণও ওষ্ঠাগত।

জানা যায়, প্রচন্ড তাপমাত্রায় চরম বিপাকে পড়েছেন কৃষক ও শ্রমজীবী মানুষসহ সর্বস্তরের সব বয়সের মানুষ। ফসলের জমিতে পানি না থাকায় ফসলহানির আশঙ্কায় দিন কাটছে হাজার হাজার কৃষকের। এদিকে প্রচন্ড তাপমাত্রায় নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে অনেকেই। বিশেষ করে রিকশাচালক, ভ্যানচালক, দিনমজুরসহ খেটে খাওয়া মানুষ পানি স্বল্পতাসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। চরম বিপাকে পড়েছে পশুপাখিরাও। এক খন্ড ছাঁয়ার জন্য তারা গাছের নিচে ঘুরছে। অন্যদিকে চরম গরমের সঙ্গে পালস্না দিয়ে চলছে পলস্নী বিদু্যতের লোডশেডিং। দিনে এবং রাতে দীর্ঘ মেয়াদি লোডশেডিং থাকায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। ব্যাহত হচ্ছে সেচ কাজসহ নানা উৎপাদন। ফলে চরম সংকটের আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছে সবাই।

লাখাই (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, হবিগঞ্জের লাখাইয়ে বৈশাখের কাঠফাটা রোদ আর প্রচন্ড তাপদাহের মধ্যে চলছে ভয়াবহ লোডশেডিং। এতে করে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে হাওড় বেষ্টিত এলাকার গ্রাহক। গত কয়েকদিন যাবত প্রতিদিন সকাল থেকে শুরু হয় বিদু্যতের ভেলকিবাজি। সারাদিন দুই থেকে তিন ঘণ্টা পরপর বিদু্যতের দেখা মিললেও ঘণ্টাখানেক পর আবার লাপাত্তা হয়ে যায়। ইফতারের পূর্ব মুহূর্ত থেকে শুরু করে তারাবির নামাজের মাঝামাঝি অথবা পর পর্যন্ত অনেক সময়েও দেখা মেলে না বিদু্যতের। অনুকূল আবহাওয়া থাকার পরও রাত ১২টায় দেখা মিললেও সেহরির সময় থাকতে হয় অন্ধকারে।

এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ পলিস্ন বিদু্যৎ সমিতি লাখাই জোনাল অফিসের ডিজিএম ইসমাত কামাল জানান, পিক আওয়ারে প্রায় ১০ মেগাওয়াটের চেয়ে বেশি প্রয়োজন হলেও মিলছে অর্থেক। এছাড়াও অফ পিকে ৭-৮ মেগাওয়াট প্রয়োজন হলেও মিলছে না প্রয়োজনের অর্ধেকও কম।

বাজিতপুর-কুলিয়ারচর-নিকলী (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর, কুলিয়ারচর, নিকলীসহ ১৩ উপজেলায় গত কয়েক দিন ধরে ভিপিডিপি, আরইবির অতিরিক্ত লোডশেডিং ও অতি তাপমাত্রায় নাকাল হাওরবাসী। রাত ও দিনে অন্তত পক্ষে ১০-১২ ঘণ্টা বিদু্যৎ লোডশেডিং হচ্ছে বলে গ্রাহকদের অভিযোগ। একইভাবে অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে কৃষকদের ধানিজমিগুলো পুড়ে যাচ্ছে। রাতে ঘন ঘন বিদু্যৎ আসা যাওয়ার কারণে সাধারণ মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা গরমজনিত জ্বর সর্দি ও কাশিতে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি।

নিকলী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সজীব ঘোষ জানান, অতিরিক্ত গরমে মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।

পাথরঘাটা (বরগুনা) প্রতিনিধি জানান, বরগুনার পাথরঘাটায় বেড়েই চলছে লোডশেডিংয়ের মাত্রা। দুই মাসের বেশি সময় ধরে লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণায় ভোগান্তি চরমে উঠে গেছে। ফাল্গুন ও চৈত্র মাস থেকেই গরমের সঙ্গে লোডশেডিংয়ের মাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে কয়েকগুণ। কোন নোটিশ ছাড়াই বিদু্যৎ দিনে চলে গিয়ে ২-৩ ঘণ্টার পর আসে। আবার কখন দিনে গিয়ে রাতে আসে, রাতে আসলেও অসংখ্য বার লোডশেডিং হচ্ছে। লোডশেডিংয়ে আর হঠাৎ অসহনীয় গরমে সবচেয়ে বেশি নাজেহাল রোজাদার ও মসজিদের তারাবি নামাজিরা।

পাথরঘাটা পৌরশহরের গার্মেন্টস ব্যবসায়ী কবির হোসেন, জাকির হোসেন, মঞ্জুর আলম জানান- কোনো ধরনের পূর্ব নির্দেশনা ছাড়া এভাবে হঠাৎ বিদু্যৎ বন্ধ করে দেওয়ায় ব্যবসার অনেক ক্ষতি হচ্ছে। একবার বিদু্যৎ চলে গেলে আর আসার খবর থাকে না।

বিদু্যতের মজুদ কম থাকায় জাতীয় গ্রিড হতে চাহিদার তুলনায় অনেক কম বিদু্যৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। পাথরঘাটায় চাহিদা ১০ মেগা ওয়াট বিদু্যৎ। সেখানে বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে ৩ থেকে ৫ মেগাওয়াট।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে