সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়াই ধান কাটতে পেরে কৃষকের হাসি

স্বদেশ ডেস্ক
  ০৩ মে ২০২৩, ০০:০০

হাওড়াঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের প্রায় ৯৯% ভাগ বোরো ধান কাটা শেষ হয়েছে। এবার চলতি বোরো মৌসুমে বাম্পার ফলন পেয়েছেন কৃষক। সেই সঙ্গে এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় নির্বিঘ্নে বৈশাখের সোনালি ফসল বোরো ধান নিরাপদে নিজেদের গোলায় তুলতে পেরেছেন। তাই কৃষকের মুখে হাসির ঝিলিক ফুটেছে। এ ছাড়াও শ্রমিক সংকটে ধান কাটা নিয়ে দুশ্চিন্তা থাকলেও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে যুবলীগ, ছাত্রলীগ, কৃষকলীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা কৃষকের সাহায্যে এগিয়ে এসেছেন। তারা ধান কেটে, মারাই করে কৃষকের গোলায় তুলে দিচ্ছেন। প্রতিনিধিদের পাঠানো বিস্তারিত খবর-

মধ্যনগর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার মানুষের আয়ের প্রধান উৎস একটি মাত্র ফসল বোরো ধান। পাশাপাশি বর্ষা মৌসুমে মাছের ভান্ডার হিসেবেও সারা দেশে পরিচিত ভাটির রাজধানী মধ্যনগর। আদিকাল থেকেই এসব এলাকার মানুষ ধান এবং মাছের ওপর নির্ভরশীল।

বিগত কয়েক বছর ধরে বোরো ধান চাষে কৃষকরা বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রতিকূলতার কবলে পড়ে, লাঞ্ছিত হয়ে অনেকে সর্বহারা হয়েছেন। ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে দিশেহারা হয়ে ঘরবাড়ি ছেড়েছেন। এ বছর প্রাকৃতিক কোনো বাধা-বিঘ্ন না থাকায়, সোনালি নতুন ধানের গন্ধের সমারোহে মুখরিত হয়েছে এলাকা। ধানের বাম্পার ফলনের ফলে কৃষকের মুখে ফুটেছে কাঙ্ক্ষিত হাসির ঝিলিক।

উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলায় এবার ধানের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখছে কৃষক। উৎপাদিত জমিতে পাকা ধান কাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। কেউ দল বেঁধে কাস্তে দিয়ে কাটছেন ধান। কেউ বা ধান কাটার যন্ত্র (কম্বাইন-হারভেস্টার) দিয়ে, একই সঙ্গে ক্ষেতের ধান কাটা, মাড়াই-ঝাড়াই করে বস্তাবন্দি করছেন।

এ বছর বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় এখন জমিতে পানি না জমলেও গত ২-৩ দিন ধরে চোখ রাঙাচ্ছে কালবৈশাখী ঝড়। তবে ২৩ এপ্রিল থেকে লাগাতার ১১ দিন ঝড়-বৃষ্টির সংকেত দিয়েছিলেন আবহাওয়ার পূর্বাভাসের কর্তৃপক্ষরা। অথচ এরকম কিছু হয়নি। তাই ঝড়-বৃষ্টির ভয়ে আধাপাকা ধানও কেটে ফেলছেন অনেক কৃষক।

উপজেলার গলহা গ্রামের বর্গাচাষি আব্দুল কুদ্দুছ মিয়া বলেন, কম খরচে বিষমুক্ত বোরো ধান নিজে চাষ করেছেন। অন্যান্য সময়ের তুলনায় এবার অশানুরূপ ফলন হয়েছে। বাজারে ধানের দামও চাহিদা মতো পাওয়ায় তিনি খুশি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মীর হোসেন আল বান্না জানান, মধ্যনগর ও ধর্মপাশায় ৩১ হাজার ৮৫২ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে। এর মধ্যে এক লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করার আশা করা যাচ্ছে। ইতোমধ্যে আবাদ করা ফসলের ৯৯% ভাগ ধান কেটেছেন কৃষকরা। নেই শ্রমিক সংকটও। তাছাড়াও ধান কাটার একাধিক অত্যাধুনিক যন্ত্র (কম্বাইন হারভেস্টার) সরকার ভর্তুকি দিয়ে, কম মূল্যে কৃষকের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। খোলা বাজারে বিজা ধানের মূল্য রয়েছে ৯৫০ টাকা, শুকনো ধানের মূল্য ১১৫০ টাকা। এ মৌসুমে বোরো ধানের ভালো ফলনে কৃষকরা নিঃসন্দেহে লাভবান হবেন।

তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়) প্রতিনিধি জানান, তেঁতুলিয়ায় ধান কাটা উৎসবের মধ্য দিয়ে দরিদ্র এক কৃষকের ধান কেটে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছেন কৃষক লীগের নেতাকর্মীরা। মঙ্গলবার আজিজনগর গ্রামের কৃষক মকবুল হোসেনের ৪০ জমির ধান কেটে মাড়াই করে দেন তারা।

সকালে মকবুল হোসেনের জমিতে নেতাকর্মীদের নিয়ে ধান কাটায় অংশ নেন কৃষকলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি আব্দুল লতিফ তারিন। ধান কাটা শেষে মাথায় করে ধান বহন করে কৃষকের বাড়িতে নিয়ে মাড়িয়ে দেওয়া হয়। ধান কাটায় অংশ নেন জেলা কৃষক লীগের সভাপ?তি মাসুদ করিম, যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট আহসান হাবীব, উপজেলা কৃষক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক রিয়াজুল মোলস্ন্যাহ, সদস্য সচিব কবির হোসেন, দেবনগর ইউপি চেয়ারম্যান সোলেমান আলী, তারা মিয়া, জালাল উদ্দিন, মজিবর রহমান, ছাত্রলীগের মোবারক হোসেন, বিপস্নবসহ শতাধিক নেতাকর্মী।

কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি আব্দুল লতিফ তারিন বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী দেশের কৃষকদের সহযোগিতা করার জন্য আমাদের নির্দেশ দেন। তাই বাংলাদেশ কৃষক লীগের সভাপতি কৃষিবিদ সমির চন্দ্র ও সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতি এমপির নির্দেশে আমরা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার আজিজ নগর গ্রামের কৃষক মকবুল হোসেনের জমির ধান কেটে দিয়েছি। কোনো কৃষকের যদি ধান কাটতে সমস্যা হয় তাহলে আমাদের জানালে কেটে দেওয়া হবে।'

পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি জানান, খুলনার পাইকগাছায় এক কৃষকের প্রায় ৫ বিঘা জমির ধান কেটে মাড়াই করে ঘরে তুলে দিলেন উপজেলা যুবলীগের সাবেক নেতারা। মঙ্গলবার উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে যুবলীগের সাবেক নেতারাসহ আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা উপজেলার গদাইপুর ইউনিয়নে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এ কাজে অংশ নেন। ধান কেটে, মাড়াই করে ঘরে তুলে দেন তারা।

জেলার পাইকগাছার গদাইপুর ইউনিয়নের বোয়ালিয়া বীজ উৎপাদন খামারের পাশে অসহায় এক কৃষকের ধান কাটা কর্মসূচির উদ্বোধন পূর্ব এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। গদাইপুর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ জিয়াদুল ইসলাম জিয়ার সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক কামরুজ্জামান জামাল। প্রধান বক্তা ছিলেন জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মাহফুজুর রহমান সোহাগ। বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগ নেতা জামিল খান, উপজেলা সাধারণ সম্পাদক শেখ কামরুল হাসান টিপু, সহ-সভাপতি সমীরন সাধু, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান রশীদুজ্জামান মোড়ল, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক মলঙ্গী, পৌর মেয়র সেলিম জাহাঙ্গীর প্রমুখ।

নকলা (শেরপুর) প্রতিনিধি জানান, স্বামী আবুল হোসেন দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। ছেলে শ্রবণ প্রতিবন্ধী। ৫৫ শতাংশ জমি অন্যের কাছ থেকে বর্গা নিয়ে করেছেন বোরো আবাদ। শ্রমিক সংকট ও মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় ধান কেটে ঘরে তুলতে পারছেন না বর্গাচাষি লুতফা বেগম। এ অবস্থায় এগিয়ে আসে ছাত্রলীগ। শেরপুরের নকলা উপজেলায় অসহায় কৃষকদের ধান কেটে বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

জানা যায়, উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক আবু হামজা কনকের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের কর্মীরা স্বেচ্ছাশ্রমে পৌরসভার তাতরাকান্দা এলাকার কৃষাণী লুতফা বেগমের ৫৫ শতাংশ, উপজেলার টালকী ইউনিয়নের ফুলপুর গ্রামের আজগর আলীর ৪২ শতাংশ, জালালপুর এলাকার শাহনাজ বেগমের ২৫ শতাংশ ও চাঁনপুর এলাকার আজমত আলীর ৭৫ শতাংশ ধান কেটে বাড়ি পৌঁছে দিয়েছে। এভাবে প্রতিদিন কোনো না কোনো অসহায় কৃষকের ধান কেটে বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছেন তারা।

ছাত্রলীগের আহ্বায়ক আবু হামজা কনক জানান, 'কৃষক বাঁচলে বাঁচবে দেশ, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ' এই স্স্নোগানকে ধারণ করে কাজ করছে ছাত্রলীগ। তাদের এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে