কুমিলস্নার চৌদ্দগ্রামে মাত্র ১১ দিনের ব্যবধানে পৃথক তিনটি ঘটনায় মা ছেলেসহ চারজনকে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে তিনটি হত্যাকান্ডই উপজেলা সদরের পৌরসদরে ঘটেছে। তারমধ্যে দুটি পারিবারিক বিরোধকে কেন্দ্র করে এবং অটোরিকশা ছিনতাইয়ের ঘটনায় হত্যাকান্ড হয়েছে বলে পুলিশ জানায়। পারিবারিক বিরোধে দুটি ঘটনার প্রধান আসামিদের গ্রেপ্তার করা হলেও অটোরিকশা ছিনতাইয়ের ঘটনায় হত্যার রহস্য এখনো উদ্ঘাটন হয়নি বলে চৌদ্দগ্রাম থানা সূত্রে জানা গেছে।
জানা গেছে, গত বুধবার ভোরে চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার পাঁচরা বেপারী বাড়িতে চাচি আয়েশা আক্তার নিপা (২৬) ও তার ছেলে আলী আহসান মুজাহিদকে (৮) লাকড়ি দিয়ে পিটিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে ভাতিজা কিশোর আবদুলস্নাহ আল শাহেদ (১৫)। নিহত গৃহবধূ আয়েশা আক্তার নিপা ওই গ্রামের দুবাই প্রবাসী আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী। ঘাতক শাহেদ প্রবাসী আনোয়ার হোসেনের মেঝ ভাই মীর হোসেনের ছোট ছেলে। সে পাঁচরা হোসাইনিয়া কওমি মাদ্রাসার কিতাব বিভাগের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। পুলিশ ঘাতক আবদুলস্নাহ শাহেদকে আটক করে এবং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শাহেদের ভাই মঈনুল হাসান শুভকে (২২) থানায় নিয়ে আসে। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে আবদুলস্নাহ আল শাহেদ পুলিশকে জানায়-সম্পত্তির বিরোধকে কেন্দ্র করে চাচা ও জেঠাদের সঙ্গে তার মায়ের ঝগড়া হতো। মা তাদের সামনে কান্নাকাটি করতেন। বিষয়টি তার সহ্য হতো না। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সে ঘরের ছাদের সিঁড়ির রুম দিয়ে কৌশলে ভেতর ঢোকে। নিপা ঘুমিয়ে পড়লে ঘরের ভিতরে থাকা শক্ত লাকড়ি দিয়ে প্রথমে চাচিকে সজোরে মাথায় আঘাত করে। এ সময় চাচি বাঁচার জন্য চিৎকার করলে পাশে ঘুমিয়ে থাকা শিশু আলী আহসান মুজাহিদ জেগে উঠলে তাকেও সজোরে আঘাত করে হত্যা করে। এরপর কৌশলে ঘরের ছাদের পাশের গাছ দিয়ে নিচে নেমে পালিয়ে যায় শাহেদ।
এ ঘটনায় গৃহবধূর বাবা জালাল আহেমদ বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেছেন। মামলার মূল আসামি কিশোর আবদুলস্নাহ আল শাহেদকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
অন্যদিকে গত সোমবার তরকারি রান্নাকে কেন্দ্র করে তাসলিমা আক্তার (৩২) নামে এক গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যা করেছে স্বামী ও তার পরিবারের লোকজন। উপজেলার মুন্সিরহাট ইউনিয়নের লনিশ্বর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত গৃহবধূ তাসলিমা ওই গ্রামের আমান উলস্নাহর স্ত্রী ও পার্শ্ববর্তী শুভপুর ইউনিয়নের শুভপুর গ্রামের তনু মিয়ার মেয়ে। এ ঘটনায় নিহতের বাবা তনু মিয়া বাদী হয়ে স্বামী আমান উলস্নাহ, ভাগিনা নাসির উদ্দিন ও ভাতিজা ইমনের নাম উলেস্নখ করে অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে চৌদ্দগ্রাম থানায় একটি মামলা করেন। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাছলিমার স্বামী আমান উলস্নাহ ও ভাতিজা ইমনকে গ্রেপ্তার করে।
এছাড়াও গত ২৪ জুন দুপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উপজেলা সদরের হায়দারপুল এলাকা শিমুল (১৩) নামের এক অটোরিকশা চালকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। শিমুল উপজেলার ঘোলপাশা ইউনিয়নের ঘোলপাশা গ্রামের সুমন মিয়ার ছেলে। তারা বেশ কয়েক বছর ধরে পৌর এলাকার রামরায়গ্রামে ভাড়া বাসায় থাকে। এ বিষয়ে শিমুলের বাবা সুমন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে থানায় একটি হত্যা মামলা করলেও বৃহস্পতিবার এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি শুভ রঞ্জন চাকমা বলেন, তিনটি হত্যাকান্ডের ঘটনার মধ্যে দুটি ঘটনার প্রধান আসামিকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। অটোচালক শিমুল হত্যার রহস্য উদঘাটন করা হয়েছে। হত্যাকারী একজন ভবঘুরে সে নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান না করায় গ্রেপ্তার করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে তাকে গ্রেপ্তারে আমাদের কয়েকটি টিম কাজ করে যাচ্ছে।