শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
সাংবাদিক শামছুর রহমান হত্যাকান্ড

উচ্চ আদালতের নির্দেশে দেড়যুগ ফাইলবন্দি মামলার কার্যক্রম

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর
  ১৬ জুলাই ২০২৩, ০০:০০

যশোরের শহীদ সাংবাদিক শামছুর রহমান কেবল হত্যা মামলাটির কার্যক্রমটি দেড়যুগ ধরে উচ্চ আদালতের নির্দেশে 'ফাইলবন্দি' হয়ে রয়েছে। ফলে হত্যাকান্ডের ২৩ বছরেও সাংবাদিক হত্যাকারীদের বিচারের মুখোমুখি করা যায়নি। আইনের মারপঁ্যাচে বিচার প্রক্রিয়া উচ্চ আদালতে আটকে থাকায় ক্ষুব্ধ নিহতের পরিবার ও যশোরের সাংবাদিক সমাজ। যদিও সরকার উদ্যোগ নিলেই এ হত্যাকান্ডের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করা সম্ভব বলে মন্তব্য আইনজীবীদের। এরই মধ্যে দিয়ে আজ (১৬ জুলাই) নির্মম এ হত্যাকান্ডের ২২তম বার্ষিকী পালিত হচ্ছে।

প্রথিতযশা সাংবাদিক শামছুর রহমান কেবল ২০০০ সালের ১৬ জুলাই রাতে জনকণ্ঠ যশোর অফিসে কর্মরত অবস্থায় আততায়ীর গুলিতে নিহত হন।

যশোরের আদালত সূত্র জানায়, ২০০০ সালের ১৬ জুলাই রাতে সাংবাদিক শামছুর রহমান কেবল খুন হওয়ার পর ২০০১ সালে সিআইডি পুলিশ এই মামলায় ১৬ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। সেই সময় বিগত চার দলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর কয়েকজন আসামি প্রভাব বিস্তার করায় মামলার বর্ধিত তদন্ত করে শামছুর রহমানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু সাংবাদিক নেতা ফারাজী আজমল হোসেনকে নতুন করে আসামি করা হয়।

একইসঙ্গে মামলার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী বাদ দিয়ে সাক্ষী করা হয় আসামিদের ঘনিষ্ঠজনদের। এতে একদিকে মামলার বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত হয়; অন্যদিকে দুর্বল হয়ে যায় চার্জশিট। বিতর্কিত ওই বর্ধিত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর ২০০৫ সালের জুন মাসে যশোরের স্পেশাল জজ আদালতে এই মামলার চার্জ গঠন হয়। ওই বছরের জুলাই মাসে বাদীর মতামত ছাড়াই মামলাটি খুলনার দ্রম্নত বিচার আদালতে স্থানান্তর করা হয়। এ অবস্থায় মামলার বাদী শহীদ শামছুর রহমানের সহধর্মিণী সেলিনা আকতার লাকি বিচারিক আদালত পরিবর্তনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বরে হাইকোর্টে আপিল করেন।

আপিল আবেদনে তিনি বলেন, মামলার অন্যতম আসামি খুলনার শীর্ষ সন্ত্রাসী হিরক পলাতক রয়েছে। হিরকসহ সংশ্লিষ্ট মামলার অন্যান্য আসামিদের সঙ্গে খুলনার সন্ত্রাসীদের সখ্য রয়েছে। ফলে তার (বাদীর) পক্ষে খুলনায় গিয়ে সাক্ষী দেওয়া খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। বাদীর এই আপিল আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট 'মামলাটি কেন যশোরে ফিরিয়ে দেওয়া হবে না' তার জন্য সরকারের উপর রুলনিশি জারি করেন। এরপর মামলায় বর্ধিত তদন্তে সংযুক্ত আসামি ফারাজী আজমল হোসেন উচ্চ আদালতে একটি রিট করেন। সেই রিটের নিষ্পত্তি না হওয়ায় মামলার সমস্ত কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে।

উচ্চ আদালতের নির্দেশের কারণে শামছুর রহমান হত্যা মামলার বিচারকাজ বন্ধ হয়ে আছে উলেস্নখ করে যশোরের পাবলিক প্রসিকিউটর এম ইদ্রিস আলী জানান, আপিলের দ্রম্নত নিষ্পত্তি হলে মামলার কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব। কিন্তু বাস্তবতা হলো বহু বছর ধরেই হাইকোর্টের নির্দেশনায় এই মামলার কার্যক্রম বন্ধ আছে। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা পেলে খুলনার দ্রম্নতবিচার ট্রাইবু্যনাল মামলার কার্যক্রম শুরু করতে পারবে।

নিহতের সহোদর ও যশোর সাংবাদিক ইউনিয়ন জেইউজে'র সাবেক সভাপতি সাজেদ রহমান জানান, একাধিকবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎকালে সাংবাদিক নেতাদের পক্ষ থেকে শামছুর রহমান হত্যাকান্ডের বিচারের দাবিটি গুরুত্বের সঙ্গে তোলা হয়। এছাড়া তারা একই দাবিতে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপিও দিয়েছেন। কিন্তু এ নিয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি।

প্রসঙ্গত এ মামলার চার্জশিটভুক্ত ১৬ জনের মধ্যে খুলনার শীর্ষ সন্ত্রাসী মুশফিকুর রহমান হিরক পুলিশের খাতায় পলাতক রয়েছে। আরেক আসামি খুলনার ওয়ার্ড কমিশনার আসাদুজ্জামান লিটুর্ যাবের ক্রসফায়ারে, কোটচাঁদপুর উপজেলা চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন কালু হৃদরোগে এবং যশোর সদরের চূড়ামনকাটির আনারুল প্রতিপক্ষের হামলায় মারা গেছেন। বাকি আসামিরা জামিনে রয়েছেন।

এদিকে দীর্ঘদিনেও চাঞ্চল্যকর এ মামলাটির বিচার না হওয়ায় নিহতের পরিবার ও সাংবাদিক সমাজে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর নিহতের পরিবার ও সাংবাদিক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে দাবি তোলা হয় পুরানো বিতর্কিত তদন্ত বাতিলপূর্বক মামলাটি পুনঃতদন্তের।

এদিকে, শামছুর রহমানের ২৩তম হত্যাবার্ষিকী উপলক্ষে হত্যাকান্ডের বিচার দাবিতে রোববার যশোরে বিভিন্ন সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। প্রেস ক্লাব যশোর ও যশোর সাংবাদিক ইউনিয়নসহ অন্যান্য সংগঠনের নেতারা এদিন সকালে প্রেস ক্লাবে জমায়েত হয়ে কালো ব্যাজ ধারণ। এরপর শোর্কযালি করে শহীদের কবরে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করা হবে। পরে প্রেস ক্লাবের আয়োজনে আলোচনা ও দোয়া মাহফিল এবং যশোর সাংবাদিক ইউনিয়নের আয়োজনে স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে