রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১
জনদুর্ভোগ চরমে

আশাশুনিতে নির্মাণের ৫ বছরেই নদীতে ভেঙে পড়ল ব্রিজ

আশাশুনি (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি
  ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০
সাতক্ষীরার আশাশুনিতে নির্মাণের পাঁচ বছরের মাথায় ভেঙে পড়া মরিচ্চাপ নদীর উপর নির্মিত কুন্দুড়িয়া-বাঁকড়া ব্রিজ -যাযাদি

সাতক্ষীরার আশাশুনিতে নির্মাণের মাত্র পাঁচ বছরের মাথায় ভেঙে পড়েছে মরিচ্চাপ নদীর ওপর নির্মিত (কুন্দুড়িয়া-বাঁকড়া) ব্রিজ। উপজেলার বুধহাটা ও শোভনালী দুই ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী সংযোগ সড়কের ওই ব্রিজটি এক থেকে দেড় বছর আগে ভেঙে গেলেও সংস্কারের উদ্যোগ নিচ্ছে না কেউ। দাপ্তরিক জটিলতার কারণে কোনো নির্দিষ্ট অভিভাবক না পাওয়ায় এটাকে বেওয়ারিশ ব্রিজ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন ভোগান্তির শিকার হওয়া এলাকাবাসী।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বুধহাটা ও শোভনালী ইউনিয়নকে বিভক্ত করে রেখেছে মরিচ্চাপ নদী। আর এই দুই ইউনিয়নে বাসিন্দাদের যাতায়াত ব্যবস্থাকে সহজ করতে ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে নির্মাণ করা হয় কুন্দুড়িয়া-বাঁকড়া ব্রিজ। নির্মাণের মাত্র পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই ভেঙে পড়েছে ব্রিজটি। এরপর থেকে আজ পর্যন্ত সংস্কারের কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। সংস্কার অথবা নতুন ব্রিজ নির্মাণ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে নতুন এক জটিলতা। এলজিইডি বলছে ব্রিজ তার নয়, এটা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের আওতাধীন। অন্যদিকে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা বলছেন, 'ব্রিজ আমাদের দপ্তর কর্তৃক নির্মাণ করা হলেও, এখন ব্রিজটির দুই পাশেই এলজিইডি কর্তৃক সড়ক নির্মাণ করায় এটা তাদের আওতাধীন।'

এক কথায় ভঙ্গুর ব্রিজটির সংস্কার কিংবা নতুন ব্রিজ নির্মাণের দায়িত্ব নিতে চাচ্ছে না কোনো দপ্তর। উভয় দপ্তরের দায়িত্ব সংক্রান্ত জটিলতায় ব্রিজ সংস্কার বা নতুন করে নির্মাণ না হওয়ার ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন দুই ইউনিয়নের বাসিন্দারা।

উপজেলার শোভনালী ইউনিয়নের বসবাসরত জনসাধারণের একটি বৃহৎ অংশ জেলা ও উপজেলা শহরে যেতে এবং নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ব্যবহার করে আসছেন এই ব্রিজ। প্রতিদিন শতাধিক শিক্ষার্থী এই ব্রিজ পেরিয়ে লেখাপড়া করতে আসে কুন্দুড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। ব্রিজের পূর্বপ্রান্তে অবস্থিত বুধহাটা ইউনিয়নের বাসিন্দাদের কাছেও পাশের উপজেলা দেবহাটায় যাওয়ার অন্যতম ব্রিজ এটি।

এলাকাবাসী জানায়, প্রায় প্রতিদিনই কয়েক হাজার মানুষ চলাচল করে এই ব্রিজের ওপর দিয়ে। জনগুরুত্বপূর্ণ ব্রিজ হওয়ার পরেও প্রায় দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে ভেঙে পড়ে আছে এ ব্রিজটি।

শোভনালী ইউনিয়ন অংশ থেকে অ্যাম্বুলেন্স, পিকআপ, যাত্রীবাহী ইজিবাইক, ইঞ্জিনভ্যানসহ পণ্যবাহী পরিবহণ চলাচল করতে না পারায় সবধরনের পরিবহণকে এখন উপজেলা সদরে ঘুরে আসতে হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার পথ। যার ফলে যেমন বেড়েছে পণ্য পরিবহণ খরচ, তেমনি জীবনের ঝুঁকি।

ব্রিজটি ভেঙে ঝুলে থাকার পরও অনেকটাই বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলছে বাইসাইকেল, মোটর সাইকেল, ভ্যান ও ইজিবাইক। এক্ষেত্রেও যাত্রীবাহী ভ্যান ও ইজিবাইককে তাদের যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে চালককে একাই পার হতে দেখা গেছে। অনেক সময় ব্রিজের মাঝ প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে উঠতে গিয়ে কয়েকজন মিলে ধাক্কা দিতে হচ্ছে এসব পরিবহণগুলোর।

দুইপারের স্থানীয় বাসিন্দা ও নিত্যদিনের চলাচলকারীরা জানান, এই ব্রিজ তাদের প্রতিদিনের জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভেঙে পড়ার পর থেকে আজ অবধি প্রশাসনের কেউ খোঁজ-খবর নিতে আসেনি। এই ব্রিজটির স্থলে নতুন একটা ব্রিজ করার পাশাপাশি একটা ব্রিজ পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে কীভাবে ভেঙে গেল তা তদন্ত করে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন স্থানীয়রা। এ বিষয়ে আশাশুনি উপজেলা এলজিইডির উপ-সহকারী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, 'ব্রিজটি আমাদের নয়, এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে হলে উপজেলা প্রকল্প উন্নয়ন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে